কাকতাড়ুয়া (Kaktarua) – সেলিনা হোসেন (Selina Hossain) উপন্যাসটি ৯ম-১০ম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য বইয়ের একটি অধ্যায়। সেলিনা হোসেন রচিত “কাকতাড়ুয়া” অধ্যায় এর লেখক পরিচিতি, গল্প, উপন্যাস, শব্দার্থ ও টীকা, পাঠ পরিচিতি, অনুশীলনী, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
কাকতাড়ুয়া
পরদিন গায়ের রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে আগুন লাগে। পুড়ে যায় সবগুলাে ঘর। শুধু মানুষের জীবন বাঁচে, আর গরু-ছাগলগুলাে বাঁচানাে যায়। কোথা থেকে কীভাবে আগুন লাগল- হদিস করতে পারল না বাড়ির লােকজন।
রাজাকার কমাণ্ডার কাজের মেয়েটিকে আচ্ছা করে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল। তার ধারণা, কাজের মেয়েটি রান্না করার পরে নিশ্চয় পাঠখড়িগুলাে চুলাের পাশে রেখে দিয়েছিল। সেখান থেকে আগুন লেগেছে। বাড়ির বাইরের জামগাছের নিচে বসে মেয়েটি অনেকক্ষণ কাদল। বুধা মেয়েটিকে দুটো জিলাপি দিয়ে বলল, খা।
মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি পাটখড়ি চুলার পাশে রাখিনি, বুধা। আমি জানি না কীভাবে আগুন লাগল ।
বুধা ওর পাশে বসে। তারপর কোমরে গুঁজে রাখা মলমের ছােট্ট কৌটাটা ওর হাতে দিয়ে বলে, যেখানে যেখানে কেটেছে সেখানে লাগিয়ে দে।
মলম?
হ্যা, তাের জন্য এনেছি। রাজাকার কমাণ্ডার যখন তােকে মারছিল তখনই বুঝেছিলাম যে এই মলমটা তাের লাগবে।
লাগিয়ে দে জ্বালাপােড়া কমবে। আহা রে যুদ্ধের জন্য আমাদের কত কিছু সইতে হয়।
যুদ্ধ। মেয়েটি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। যুদ্ধ কোথায়? আগুন লাগা কি যুদ্ধ?
ধর,এক রকম তাই। আমি এমনি বললাম। ভাের নাম কী রে?
ফুলকলি।
চল আমার সঙ্গে।
কোথায়?
আতা ফুপুর বাড়িতে।
ওখানে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে থাকবি।
এখন গেলে ওরা আমাকে মারবে।
মারবে না। এরা এখন ঘর-দুয়ার নিয়ে ব্যস্ত। এদের মেজাজ ঠাণ্ডা হােক, তারপরে আসবি। তাের তাে কেউ নেই। কোথায়ই ৰা যাবি। আয় ।
বুধা ফুলকলির হাত ধরে টানে। দুজনে সবার চোখ এড়িয়ে পথে নামে। যেতে যেতে ছেলেটি বলে, তাের কি খুব কষ্ট হচ্ছে, ফুলকলি?
মলম লাগানাের পর জ্বালা কমেছে। যুদ্ধের সময় কত জ্বালা যে সইতে হয়।
তুই বারবার যুদ্ধের কথা বলছিস কেন?
তুই কি যুদ্ধ করছিস?
হ্যা।
কার সঙ্গে?
শক্রর সঙ্গে।
শত্রু।
তাহলে তুই-ই কি আগুন…
আগুন! আগুন! অামাদের চারদিকে আগুন। আয় দৌড়াই।
বুধা ফুলকলির হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। মেয়েটি হোঁচট খেতে খেতে সামলে নেয়। একসময় দম নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে বলে, আমি সব বুঝতে পেরেছি, বুধা। আমি তাের শত্রু নই।
আমি তাে জানি তুই আমার শত্রু নস্। আমরা দুজনে এক! ওই বাড়িতে কিছু ঘটলে আমি তােকে জানিয়ে দেব। ফুলকলি এখন থেকে তােকে আমি জয় বাংলা ডাকব।
জয় বাংলা, জয় বাংলা জয় বাংলা, জয় বাংলা বলতে বলতে ফুলকলি আবার ছুট দেয়। এবার ওদের দম ফুরােয় । ওরা একদৌড়ে আতা ফুপুর বাড়িতে এসে ওঠে। ফুলকলি ফিসফিসিয়ে বলে, এখন থেকে তােকে আমি যুদ্ধ ডাকব, বুধ।
ডাকিল, তবে একা পেলে। সবার সামনে ডাকিস না ।
আচ্ছা। ফুলকলি ওর দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায়। বুধা চেঁচিয়ে ডাকে, ফুপু, ফুপু। আমি এসেছি।
খুব ভালো করেছিস। ওমা ফুলকলি যে? তােদের বাড়িতে আগুন লেগেছে না?
মালিক ওকে খুব মেরেছে, ফুপু। তােমার হাঁড়িতে পান্তা আছে, ফুপু? আমাদের খেতে দাও।
সেদিন ভােরবেলা আতা ফুপুর রান্নাঘরে বসে পেট ভরে পান্তা ভাত খায় ও কী আনন্দ। অনেক দিন পরে আতা ফুপুর উঠোনে ও কাকতাড়ুয়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বােলতাটা কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেলে মনে হয় বােলতার ডাকের ভেতর থেকে অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছে। শব্দটা অন্য রকম। আগে শােনেনি। এটা কি যুদ্ধের শব্দ? রাইফেলের শব্দ ও চিনে গেছে। মেশিনগান কেমন তাও জানে। এসব মিলিয়ে যে শব্দ হয়, সেটাই বুঝি যুদ্ধের শব্দ! কাছ থেকে এই শব্দটি ওর শােনা হয়নি। ঠিক সে সময় রাজাকার কুদ্স ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।
তাের মনে কি খুব আনন্দ? কাকতাড়ুয়া সেজেছিস কেন?
ও হি-হি করে হাসে। হাসির তােড়ে ওর কাকতাড়ুয়া ভঙ্গি আর ঠিক থাকে না। ওর শরীরে ঝাঁকুনি ওঠে।
হাসছিস কেন? তাের হয়েছে কী? কমান্ডারের বাড়ি পুড়েছে তাতে গাঁয়ের মানুষ সবাই দুঃখ করছে। আর তুই হাসছিস? ঢং করে আবার কাকতাড়ুয়া সাজা হয়েছে।
হাসৰ না কেন? কাকতাড়ুয়াকেও মানুষের মতাে লাগে যে।।
বানর একটা।
ঠিকই, তােমার মতাে। আমি তােমার মতাে হয়েছি। কী আনন্দ ধেই, ধেই। নৌকা চালাও হেঁইও।
কুদুস কষে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তােলার আগেই ও লাফ দিয়ে সরে যায়।
হাতের কাছে পেলে তুলে একটা আছাড় মারব, শয়তান। মিঠু কোথায় বল?
নদীর তলে খুঁজে দেখ। আমাকে জিজ্ঞেস কর কেন? আমি কি ওদের গাজ্জিয়ান?
শুয়ােরের বাচ্চা।
মেশিনগান বল, আমার নাম মেশিনগান।
হারামজাদা।
কুদ্স ওকে তাড়া করে। ও লাফ দিয়ে ছােটে। কচুরিপানাভরা পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে একডুবে ওপারে গিয়ে ওঠে। মাথার সঙ্গে লেগে থাকে কচুরিপানা। ওকে অন্য রকম দেখায়। ও মাথা থেকে কচুরিপানা সরায় না। ভাবে, ফুলকলি সামনে থাকলে হেসে গড়িয়ে পড়ত। বলত, তুই একটা ভাল্লুক। থলথলে চর্বিভরা শরীর। ফুলকলির অনেক দুঃখ। দেশটা স্বাধীন হলে ফুলকলির আর দুঃখ থাকবে না। ওর ভেতরে দেশ স্বাধীন করার জোশ জেগে ওঠে।
পরদিন্ অনেক রাতে একজন মুক্তিযােদ্ধা আসে ওর কাছে। চুপিচুপি ডাকে, জয় বাংলা।
ওর সাড়া নেই। ঘুমে নিঃসাড়। ঘুমের ভেতরে স্বাধীনতার স্বপ্ন ওকে এক আশ্চর্য দেশে নিয়ে যায়। সেখানেও ও আর ফুলকলি হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। চারদিকে ফুল-পাখিতে ভরা। হাজার প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। ও ধরার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু ধরতে পারে না। অন্যদিকে ফুলকলি শত শত প্রজাপতি ধরে ওর কোচড় ভর্তি করে ফেলে। ফুলকলি উজ্জ্বল মুখে ঘুরে বেড়ায়। তারপর একসময় ওর কাছে এসে বলে, বুধা, এ সব প্রজাপতি তাের জন্য। তুই যে আমার জন্য একটা যুদ্ধ জিতেছিস।
ও চেঁচিয়ে বলে, আমি জিতেছি?
হ্যা রে জিতেছিস। দেখ চারদিকে কেমন বাজি ফুটছে। দেখ তাের মাথায় আমি প্রজাপতি ছড়িয়ে দিচ্ছি।
ও দেখতে পায় ওর পুরাে শরীরে প্রজাপতি জামার মতাে সেঁটে আছে। ও ভীষণ খুশি হয়ে একটি প্রজাপতি ধরে আকাশে ওড়াতে থাকে। ফুলকলি হাততালি দেয়।
তখন ওর ঘুম ভেঙে যায়। কে যেন ওকে ডাকছে।
বঙ্গবন্ধু? এই মেশিনগান?
ও ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। আশ্চর্য, ঘরে এত আলাে কেন? রাত না দিন?
এই যুদ্ধ উঠে আয়। কি রে তাের ঘুম কি ভাঙেনি? আমার ডাক কি তাের কানে পৌছাচ্ছে না?
আশ্চর্য, কার কণ্ঠ? বােলতাটা কি কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেল? ওর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমি তাে তােমাদের জন্য বসে আছি। এত দিন আসােনি কেন? আমার কাছে পৌছাতে তােমাদের এত সময় লেগেছে কেন?
চুপ করে আছিস কেন, কাকতাড়ুয়া?
হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসে। ওকে দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরে মুক্তিযােদ্ধা শাহাবুদ্দিন। শাহাবুদ্দিন তাে ছবি আঁকে। আর্ট কলেজে পড়ে। তা হলে শাহাবুদ্দিনও যুদ্ধ করছে। ওহ্ যুদ্ধ, যুদ্ধ।
বুধা শাহাবুদ্দিনকে স্যালুট করে। শাহাবুদ্দিন ভুরু কুঁচকে বলে, কি রে স্যালুট করলি কেন?
আপনি তাে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার। স্যালুট করব না? কী যে বলেন?
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই একটা বাহাদুর ছেলে আমি শুনেছি।
ছেলেটি হাসতে থাকে। তারপর শাহাবুদ্দিনের হাত ধরে মাচানের ওপর এসে বসে।
আলি আর মিঠুর কাছে তাের কথা শুনেছি। তুই তাে এই গাঁয়ে একাই যুদ্ধ করছিস।
যুদ্ধ? আমি?
হ্যাঁ রে। ওই যে বাড়িগুলাে পুড়িয়েছিস, এটাও যুদ্ধ। এবার বড় যুদ্ধ করতে হবে।
সেটা কী?
মিলিটারির ক্যাম্পটা উড়িয়ে দেব আমরা। তুই থাকবি আমাদের সঙ্গে।
রেকি করার কাজটা তােকে করতে হবে।
এ আর এমন কী কঠিন কাজ, খুব পারব।
জানি তাে তুই পারবি। শােন কয়টা সেপাই পাহারা দেয়, কয়জন তাঁবুর ভেতর থাকে, মেশিনগানটা কোথায় ফিট করে রেখেছে—সৰ খবর নিয়ে আসবি। আমি আবার দুদিন পরে আসব । যা ঘুমিয়ে পড়।
কীভাবে ফিরবেন?
নৌকায় নদী পেরিয়ে চলে যাব। ভয় পাস না ।।
ছেলেটি আবার নিজের খড়ের বিছানায় ফিরে আসে। গুটিসুটি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমুলাের আগে ওর মনে হয়, ভয় কী সে তো ও কবেই ভুলে গেছে। নতুন করে আর ভয়ের কী আছে ওর জীবনে। এখন তো ওর জীবনের চারদিকে ভাক-ডুমাডুম ঢােল বাজছে। এই বাজাের নিচে ওর ভয় চাপা পড়ে গেছে। ওকে আর ভয়ের ভূত ধরতে পারবে
; বরং ও এখন ওর শৈশবের আনন্দের দিনগুলাে খুঁজে পায়। যখন বাবা-মা বেঁচেছিল সে সব দিন। কত দিন বাবার সঙ্গে হাটে গিয়েছে। ইলিশ মাছ কিনেছে। মা রান্না করেছে। ইলিশের গন্ধে ওর ভাইবেলে বসে থাকত চুলাের পাশে। শীতকালে মা ভাপা পিঠা বানাত। কী আনন্দের ছিল সে সব দিন। স্বাধীনতার স্বপ্নে ও আবার সে সব দিনের আনন্দ ফিরে পেয়েছে। এখন ওর আর কোনাে ভাবনা নেই। মরণেও ভয় নেই।
পরদিন ও একগাদা পেয়ারা নিয়ে মিলিটারি ক্যাম্পে যায়। গায়ের স্কুলঘরটি দখল করে ওরা ক্যাম্প বানিয়েছে। সামনের মাঠে বেশ কতগুলাে তাবু টাঙানাে । ও এত দূর থেকে তাবু দেখতে পায় না। কিন্তু দৃশ্যটি ওর মাথায় আছে।
সেটা পরিষ্কার। দুপাশের ধানখেতের ভেতর দিয়ে সােজা চলে যাওয়া লম্বা পথটা পেরিয়ে ডান দিকে এগােলে স্কুলঘর। মা-বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে ওর স্কুল বন্ধ। এর মধ্যে দুই বছর পেরিয়েছে। স্কুলের স্মৃতি ও মনে করতে চায় না। এটা বুকের ভেতর বন্ধ করে রেখেছে। চমৎকার নকশা করা রঙিন একটা বাক্স আছে বুকের ভেতর। গত দুই বছরে সে বাক্স খােলার ইচ্ছে ওর হয়নি। এখন ওই স্কুলের দিকে যত এগােচ্ছে ততই মাথার ভেতর বােলতার শব্দ তীব্র হয়ে উঠছে। দুই বছরে কত হাজার বার স্কুলের আশপাশে ঘুরেছে। স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলেছে। রাতে স্কুলের বারান্দায় ঘুমিয়েছে, আর দুকান ভরে শুনেছে ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ। আশ্চর্য! মাথার ভেতর প্রবল শ্রাবণ মাস। রাতভর বৃষ্টি। ও ডান হাতের ওপর মাথা রেখে স্কুলের খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। কঠিন রাত শেষ হবে না বুঝি। সেদিন ওর কেয়ামতের দিনের কথা মনে পড়েছে। মৌলৰি সাহেব বলেছেন, কেয়ামতের দিন মাথার এক হাত ওপরে সূর্য নেমে আসবে। এমন বৃষ্টিমুখর শ্রাবণের রাতে ওর কেয়ামতের দিনের সূর্যের কথা মনে পড়ছে কেন? সূর্য কি শব্দ করে? বৃষ্টির শব্দ নয়, চারদিকে তুমুল ঘন্টাধ্বনি। টুং-টং-টং। কবেই তাে স্কুলের দিনগুলাে শেষ হয়ে গেছে। তুমুল ঘণ্টধ্বনি কেন ওকে টানে? শ্রাবণ মাসের প্রবল বৃষ্টি ওর দুচোখ বেয়ে গড়াতে থাকে। ও মােছে না।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম স্কুলের দিকে যাচ্ছে। মাথার ওপর খাঁ-খাঁ দুপুর। চড়া রােদ। ও জানে, এই যুদ্ধের সময় আবার শ্রাবণ মাস এসেছে। বৃষ্টি নেই। চড়া রােদে ওর শরীর ঘামতে থাকে । জামার পকেট পেয়ারা। কোমরে গোজা পেয়ারা। ভাসা। ও ভাবে, একটি পেয়ারা কি খাবে? ভাবতে ভাবতে অনেকটা পথ চলে আসে। পেয়ারাগুলো তাে হাতে বন্দুক নিয়ে লােহার টুপি মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা লােকগুলাের জন্য নিয়েছে। ওদের সঙ্গে পেয়ারা খাওয়ার আড্ডা জমিয়ে তুলবে বলেই না এত উঁসা পেয়ারা সগ্রহ করা ।।
নদীর ধারে গাছগুলাের পেয়ারা খেয়েই তাে ওর রাত কেটে যায়। ও বেশ গান গাইতে গাইতে এগােতে থাকে।এগােতে চঞ্চল হয়ে ওঠে। আশ্চর্য, এত কাছ থেকে সৈনিকগুলােকে ওর দেখা হয়নি। ওদের চোখে চোখ পড়লে ওর দৃষ্টি কেপে ওঠে না। ও বুঝে যায় প্রাণহীন দৃষ্টি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে দৃষ্টিতে ভাষা থাকে না, সে রকম দৃষ্টিহীন মানুষকে ওর মানুষই মনে হয় না।
ক্যাম্পে পৌছে ও প্রথমে নিজে একটি পেয়ারায় কামড় দেয়। আরেকটি পেয়ারা এগিয়ে দেয় প্রথম সৈনিকটির দিকে। ইশারায় বলে, খাবে?
লােকটি দাঁত কেলিয়ে হেসে পেয়ারাটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় ওর হাত থেকে। কামড় দিয়ে বলে, বহুত আচ্ছা, বহুত মিঠা। আর হ্যায়?
ছেলেটি সবগুলাে পেয়ারা বের করে মাটিতে ফেলে দেয়। আশপাশ থেকে আরও দু-চারজন সেপাই এগিয়ে আসে। দুজন পেয়ারাগুলাের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ভাললাগুলাে বাছতে থাকে। তিন-চারটে তুলে নিয়ে একজন জিজ্ঞেস করে, তুমকো নাম কেয়া?
ও বিগলিত হেসে উত্তর দেয়, কাকতাড়ুয়া।
কেয়া বাত? কাক… বাকিটুকু আর উচ্চারণ করতে পারে না। হেসে গড়িয়ে পড়ে সবাই। একজন ওর পিঠ চাপড়ে দেয়। ও ওদের পাশে পা ছড়িয়ে বসে চারদিকে দেখতে থাকে। ক্যাম্পের প্রতিটি জায়গা ও ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে পরিমাপ করে। লােকগুলাে বেশ মনােযােগ দিয়ে পেয়ারা খাচ্ছে। রােদে-গরমে ওদের গাল বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে। ওর হাসি পায়। হা-হা করে হাসতে থাকে। ঠিক সেই মুহুর্তে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আহাদ মুন্সি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে, এই বেয়াদব, হাসছিস কেন?
লােহার টুপি কি মানুষের মগজ খায়?
কী বললি? আহাদ মুন্সি ভুরু কুঁচকে তাকায়।
ও আবার একই কথা বলে। আহাদ মুন্সির চোখ লাল হয়ে ওঠে।
সেদিনও তুই আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছিলি। আজও করলি। তাের নাম কী?
কাকতাড়ুয়া।
কাকতাড়ুয়া! ঠিক করে বল?
কাকতাড়ুয়া।
বলতে বলতে ও হেসে গড়িয়ে পড়ে। তারপর সুর করে বলতে থাকে, লােহার টুপি মানুষ খায়, মানুষ খায়…।
আহাদ মুন্সি চেঁচিয়ে ওঠে, পাগল না ছাই। আস্ত বদমাশ একটা। এই, ওকে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখ।
আহাদ মুন্সির সঙ্গে তিনজন রাজাকার ছিল। ওরা খুব মজা পায়। শক্ত করে দুহাত চেপে ধরে দু-চারটে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, আর বদমাশি করবি তাে জানে মেরে ফেলব। ঘুঘু দেখেছ, কিন্তু ফাদ দেখনি, চাঁদ।
ওরা ওকে কাকতাড়ুয়া বানানাের উৎসবে মেতে ওঠে। হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চায় মাঠের মাঝখানে। ও এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছ কেন? আমি তাে হেঁটে যেতে পারি । ভয় পেয়ে আমি পালাই না।
ইস, বড় বড় কথা।
বলবে না। বাপ-মা-ভাইবােন সব তো খেয়েছে।
খবরদার বাজে কথা বলবে না।
ইস, নৰাৰ। নৰাব হয়েছে ! মার এক থাপ্পড়।
মারাে না মেরেই ফেল। লােকে জানুক যে আমি স্বাধীনতার যুদ্ধে শহিদ হয়েছি।
কী বললি?
যা বলেছি তা তাে দুকান দিয়ে শুনেছই। আবার কী?
তখন একজন ওর গালে ঠাস করে চড় মারে। ও রুখে দাঁড়িয়ে বলে, আমি শােধ নিতে জানি।
আবার কথা।
দুজনে ওর দুহাত চেপে ধরে। অন্য জন পা ধরে চ্যাংদোলা করে নেয়। ও বলে, তিনজনে মিলে একজনকে মারছ লজ্জা করে না?
লজ্জা কিসের? মেরে ভূত করে ফেলব। তখন বুঝবি। আজ ছেড়ে দিলাম। বাপ-মা মরা ছেলে বলে রেহাই পেলি। ওরা ওকে মাঠের মাঝখানে এনে ধাম করে ফেলে দেয়। ও নড়েচড়ে না। উঠে দাড়ায় না। চিত হয়ে শুয়েই থাকে। চোখ বােজা। ওরা মাঠের মাঝখানে একটি বাঁশ পুঁতে বাঁশের সঙ্গে শরীরটা বাধে। আর একটি বাঁশের ওপর রাখে ওর ডান হাত। অন্যটিতে বা হাত। ওর গায়ের জামাটা বেঁধে দেয় মাথায়। তারপর রান্নাঘর থেকে হাঁড়ির নিচের কালি এনে মুখে লাগায়। বুক-পিঠও আঁকাবাঁকা রেখায় ভরিয়ে দেয়। তারপর হি হি করে হাসতে হাসতে তিনজন রাজাকার চলে গেলে ওর চোখ জ্বলে ওঠে। কাঠফাটা রােদের দারুণ গরমে সেপাইগুলাে দেখতে পায় ওর জ্বলে ওঠা চোখ। কিন্তু ওরা সে চোখের ভাষা বুঝতে পারে না। ভাবে, রােদে ছেলেটির খুব কষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া একটু আগে ওর দেওয়া পেয়ারা খেয়ে ওদের খুব মায়া হয়েছে। ওরা ওর নতুন ভঙ্গি দেখে। এভাবে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায়,এটা ওদের ধারণায় নেই। ওরা জানে গুলি করতে, জানে যে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলতে। তাই শান্তির এই নতুন ঢংটায় ওরা মজাই পায়। অনেকক্ষণ ধরে ওকে দেখে। পেয়ারা খাওয়ার কৃতজ্ঞতায় ওর শাস্তি মওকুফ করে দেওয়ার কথা ওদের মনেই আসে না। ছেলেটির ভাষায়, লােহার টুপি ওদের মগজ খেয়েছে। সন্ধ্যার সময় ওরা ছেলেটির বাধন খুলে দিয়ে বলে, ভাগ হিয়াসে।।
ও ভাগে না। ওরা যেভাবে ভাগতে বলেছে, তার মানে উধ্বশ্বাসে দৌড়ে পেরিয়ে যেতে হবে ক্যাম্পের সামনের মাঠটি। সেটা ও করতে পারবে না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, এখানে ওকে আবার ফিরে আসতে হবে। ও খুব শান্ত পায়ে হেঁটে মাঠটা পার হয়। হাঁটতে কষ্ট হয়। মাথা ঝিমঝিম করে। কিন্তু শরীরের কষ্টটা তেমন নয়, ভেতরে সুখের পুঁটিমাছ রুপালি ঝিলিক তুলে সাঁতরায়। কত দিন আগে জেলেদের নৌকায় মাছ ধরতে গেলে জালভরা রুপালি পুঁটি দেখে ওর এমন আনন্দ হয়েছিল। কী আশ্চর্য, কোনাে কোনাে দৃশ্য কখনাে মুছে যায় না। কোনাে কোনাে দৃশ্য অন্য আরেকটি ঘটনার রেশ ধরে হুবহু তেমন আনন্দ বা দুঃখ তৈরি করে। ও বুঝে যায়, আজ রাতে ওর পােড়া ঘরে একটি মশাল তৈরি হবে। সেটি পুড়িয়ে দেবে আহাদ মুন্সির নতুন ভােলা ছনের ঘর ।।
পরদিন সকালে সেই তিন রাজাকার যখন ওকে খুঁজতে আসে, দেখতে পায় প্রবল জ্বলে ও কোকাচ্ছে। মা, মা বলে চিৎকার করছে। পানি খেতে চাইছে। খড়ের বিছনায় গড়াচ্ছে বলে খড়ের কুটো লেগে যাচ্ছে ওর গায়ে। ওকে ভয়ানক জীবের মতাে লাগছে। কিম্ভুতকিমাকার। ওর পাশে কেউ নেই। নেড়ি কুকুরটা মাচানের নিচে চিত হয়ে শুয়ে আছে । চারদিকে সুনসান। ওদের ভয় করে। ওরা ওকে ডাকতে সাহস পায় না। ভাবে, একে ডাকলে ওর ভূতটা ওদের কাধে লাফিয়ে চড়বে। মেরেও ফেলতে পারে ওদের। ওরা দ্রুত পায়ে পালিয়ে যায়। একজন বলে, ছেলেটি শুধু পাগল নয়, আজ ওকে একদম ভূতের মতাে লাগছে। কালি মাখানাে মুখটা দেখে আমার গা ছমছম করছিল।
ঠিক বলেছিস। আমারও ভয় করছিল। তা ছাড়া ছেলেটা কেমন করে যে কথা বলে। শুনলে গা হিম হয়ে যায়। আমার গায়ে কাঁপুনি ওঠে।
ওই ভূতটার তত জ্বর। তা হলে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দিল কে? আরেকজন রাজাকারের প্রশ্ন। ওর চেহারায়ও ভয়ের চিহ্ন। তিনজনে ভয়ে কাবু হয়ে গেছে।
অন্যজন বলে, রাতের বেলা নিশ্চয় মুক্তিবাহিনীর কেউ আসে। আমি এখন বুঝে গেছি। আমাদের আরও জোরদার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঠিক বলেছিস। আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমরা আরও সতর্ক না হলে মুক্তিবাহিনী আমাদের মেরে ফেলবে। দিন দিন ওদের দাপট বাড়ছে।
আমার মনে হয় বুধারও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যােগ আছে।।
আরে ধুরাে, ওইটুকু ছেলেকে কে পাত্তা দেবে । ও কি বন্দুক চালাতে জানে? নাকি গ্রেনেডের পিন খুলতে শিখেছে?
শুনলি না সেদিন কীভাবে শহিদ হওয়ার কথা বলল।
বাপ-মা নাই ভাে এ জন্য মরণে ভয় নাই। পাগল।
আমার মনে হয় না ছেলেটা অত পাগল।
জ্বর হয়েছে। পাশে তাে কেউই নাই। দেখিস আজ রাতে ওটা মরবে। জ্যান্ত থাকতেই তাে ও ভূত হয়েছে।
ঠিক বলেছিস। তিনজনে হা-হা করে হাসতে হাসতে কত পায়ে হেঁটে চলে যায়। দুদিন পর গভীর রাতে একজন ওকে ফিসফিসিয়ে ডাকে, যুদ্ধ ও যুদ্ধ? জয় বাংলা? বঙ্গবন্ধু?
ও চমকে উঠে বসে। এত নামে ওকে ডাকলে ওর সব দুঃখ ধুয়ে যায়। যে নদী দিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের নৌকা দ্রুত বেগে চলে যায়, সে নদীটা এমন একটা নামের নদী হয়। নদীর নাম যমুনা, করতােয়া, না পদ্মা, সেটা ও ভাবতে চায় না। ভাবে, নদীর নাম জয় বাংলা বা বঙ্গবন্ধু হলে ক্ষতি কী?
ও দুই লাফে উঠে বাইরে আসে।
কেমন আছিস মানিকরতন? ভালাে।
শাহাবুদ্দিন ভাই তুমি কেমন আছ?
তোর জ্বর ভালো হয়েছে রে?
ও হেসে ওঠে, ওটা তাে ভাল্লুকের জ্বর। যায় আর আসে। যুদ্ধের সময় কি জুরের কথা এত ভাবলে চলে?
না ভাবতে হবে। সুস্থ না থাকলে যুদ্ধ করবি কীভাবে? শরীরের তাে শক্তি চাই। ঠিক বলিনি?
যাই বাড়িতে। মাকে এগুলাে দিলে মা রাঁধবে। তবেই না আমাদের খাওয়া হবে। তুমি অনেক দিন আমাদের বাড়িতে যাওনি। আজ চলাে।
হ্যাঁ চল । চাচিকে দেখে আসি ।
ও কুন্তির হাত ধরে হাঁটতে থাকে।
পরদিন ও দেখতে পায় মাটি কাটার দল ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছে। ও এক দৌড়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
ফজু চাচা, আমি আপনাদের সঙ্গে মাটি কাটৰ ।
পারবি? ওই তাে শরীর! তাের গায়ে কি বল আছে? যা, ভাগ।
কাজ না করলে খাব কী? আমার খিদে পায় না? আমার কি কেউ আছে?
ও ফুপিয়ে কেদে ওঠে। কান্নার এমন ধ্বনি তােলে যে অন্যরা থমকে যায়।
হয়েছে, হয়েছে, কাদতে হবে না।
সবাই মিলে ওকে সান্ত্বনা দেয়।
আয় আমাদের সঙ্গে। দলে থাকলে আহাদ মুন্সি তােকে না করতে পারবে না। ও দলে মিশে যায়। গামছায় পেঁচিয়ে মাইনটা কোমরের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছে। গায়ে ঢােলা জামা। বােঝাই যায় না যে ভেতরে কিছু আছে।
বাঙ্কার কাটা শুরু হয়েছে। সবাই ব্যস্ত। কোদালের কোপে উঠে আসছে মাটির ঢেলা। আহাদ মুন্সির ছেলে মতিউর কাজের তদারকি করছে। লােকজনকে ধমকি-ধামকি দিয়ে অস্থির করে তুলেছে।
বুধাকে দলে নেওয়ার জন্য ফজু মিয়াকে বকাবকি করে। কিন্তু একটু পরে কাজে ওর আগ্রহ দেখে খুশি হয়। দৌড়ে দৌড়ে মাটিভরা ঝুড়ি নিয়ে ও পুব দিকে ফেলে আসতে যায়। মাটি ঢেলে খালি ঝুড়ি নিয়ে আবার দাড়ায় ফজু মিয়ার সামনে। ওর এমন চটপটে কাজের ভঙ্গি দেখে মতিউর মনে মনে প্রশংসা না করে পারে না। ভাবে, মা-বাবা মরে গিয়ে ছেলেটা বখে গেছে। নইলে একটা কিছু হতে পারত। দুপুর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি দেখে ও খুশিমনে ভাত খেতে বাড়ি যায়।
বিকেলের মধ্যে বাঙ্কারের কাজ শেষ। সবাই খুশি। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে পারবে। ফজু মিয়া মুখ-হাত ধুয়ে গামছা দিয়ে মুছতে মুছতে ভাবে, যা দিনকাল পড়েছে, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে কি থাকা যায়! ঠুস করে একটা গুলি এসে যে বুক ফুটো করে দেবে। এই শুয়ােরের বাচ্চারা তাে পাখির মতাে মানুষ মারে।
সেই মুহুর্তে ছেলেটি ফজু মিয়াকে বলে, চাচা, আমি একবার ভেতরটা দেখে আসি? বাঙ্কার কেমন এ তাে আর এই জীবনে দেখা হবে না।
যাবি তাে যা। ভেতরে ঢুকে দেখে আয়। কিন্তু সাবধান, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিৰ আমরা ।
ফজু মিয়ার কাছ থেকে বাড়ি ফেরার কথা কে শুনতে চায়, ওর পায়ে ক্ষিপ্র গতি! মুহুর্তের মধ্যে বাঙ্কারে ঢুকে দুহাতে কাঁচা মাটি সরিয়ে পুঁতে ফেলে মাইনটা। তারপর শিস বাজাতে বাজাতে উঠে আসে। ফজু মিয়া জিজ্ঞেস করে, কি রে, কেমন হয়েছে?
দারুণ! ঢুকলে আর উঠতে মন চায় না। দেখাে সেপাইগুলাে ওটার ভেতর থেকে আর উঠতে চাইবে না। ফজু মিয়া হাসতে হাসতে ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে, পাগল।
ছেলেটি চোখ নাচিয়ে বলে, রাতের বেলা ওরা বাঙ্কারে শুয়ে হাউইবাজি দেখৰে। আহা রে আমি যদি এই বাঙ্কারে থাকতে পারতাম।
ফজু মিয়া ওকে এক পাশে টেনে ফিসফিসিয়ে বলে, আল্লাহ্ মাফ করুক। এখানে থাকার ভাগ্য যেন আমাদের না হয়। এটা হলাে ওদের কবর।
ও ফজু মিয়ার পা ধরে সালাম করে ভো দৌড় দেয়। কেন ও সালাম করল, কেন ও দৌড়াচ্ছে ফজু মিয়া বুঝতে পারে । বােঝে, বেলা পড়ে আসবে। ওকে বাড়ি ফিরতে হবে ।
ছেলেটি দৌড়াতে দৌড়াতে নদীর ধারে আসে। সন্ধ্যার আঁধার হয়েছে । ঝােপের ধারে লুকিয়ে থাকা শাহাবুদ্দিনের কাছে পৌছে যায় ও। শাহাবুদ্দিন ওকে জড়িয়ে ধরে, তাের জন্য উৎকণ্ঠায় আমি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ।
পুঁতে রেখে এসেছি। কোনাে ভুল হয়নি। এখন শব্দটা শােনার জন্য বসে থাকব।।
শাবাশ ছেলে। নে, মুড়ি খা ।
দুজনে মিলে গুড়-মুড়ি খায়। পেঠ ভরলে আঁজলাভরা নদীর পানিতে তিয়াষ মেটায়। শাহাবুদ্দিন বলে, বাঙ্কারকে সহজ করলে কী হয়, বল তাে?
বাকার।
আর একটু ছােট করলে?
বার।
আর একটু ছােট
বক্কর। এবার মাঝখানের অক্ষরটাকে সামনে নিয়ে আয়।
কবর।
ও উত্তেজিত হয়ে বলে, বৰ্কর, বর; কবর, কবর। শাহাবুদ্দিন ভাই ওদের কবর।
সেই মুহুর্তে কয়েকজন সেপাই বাঙ্কারে পজিশন নেওয়ার জন্য ঢুকলে পায়ের চাপে বিস্ফোরিত হয় মাইন। প্রচণ্ড শব্দ ছড়িয়ে পড়ে গায়ে, সেই সঙ্গে আর্তচিৎকার। শাহাবুদ্দিন ছেলেটির হাত ধরে লাফিয়ে নৌকায় ওঠে। ক্যাম্পের উল্টোদিকে ছুটে যায় নৌকা। দক্ষ মাঝি এক টানে অনেক দূরে চলে আসে। সন্ধ্যার অন্ধকার চারদিকে। আকাশে ফুটিফুটি তারা।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। বুধার কয় ভাইবােন কলেরায় মারা যায়?
ক. ৩ জন
খ, ৪ জন
গ. ৫ জন
ঘ. ৬ জন
২। চঞ্চু কথার অর্থ কী?
ক. পা
খ. পাখা
গ. ঠোট
ঘ. কান
৩। হরিকাকুর সঙ্গে বুধার কোথায় দেখা হয়েছিল?
ক. জামতলায়
খ. ফসলের মাঠে
গ. বাজারে
ঘ. রাস্তায়
৪। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিল কে?
ক. মতিউর
খ. আহাদ মুন্সি
গ. হাশেম মিয়া
ঘ. হরিবাবু
৫। নিজের বােঝা নিজে বইব। বুধার এ বক্তব্যে ফুটে ওঠে —
ক. সাহস
খ. আত্মবিশ্বাস
গ. স্বনির্ভরতা
ঘ. দেশপ্রেম
৬। বিদেশি মানুষ এবং নিজেদের মানুষ সবার ওপর বুধার ঘৃণা বাড়তে থাকে কেন?
ক. যুদ্ধ করার জন্য
খ. অত্যাচার করার জন্য
গ. বিরােধিতা করার জন্য
ঘ. গণহত্যার জন্য
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৭ ও ৮নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
‘কবর’ নাটকে বর্ণিত ইন্সপেক্টর হাফিজ ভাই শহিদদের একটা গণকবরে মাটি চাপা দিতে চাইলে গােরখুড়েরা আপত্তি জানায়। তাদের বক্তব্য, মুসলমানের লাশ দাফন নাই, কাফন নাই তার ওপর আলাদা একটা কবর পাবে না তা হতে পারে না কভি নেহি।
৭। উদ্দীপকের গোরখুঁড়েদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি হলাে—
ক. আহাদ মুন্সি
খ. মতিউর
গ. বুধা
ঘ. কুন্দুস
৮। এরূপ সাদৃশ্যের কারণ হলাে—
ক. দেশপ্রেম
খ. প্রতিবাদী মনােভাব
গ. সচেতনতা
ঘ. প্রতিশােধ স্পৃহা
৯। আমরা লড়াই না করলে গ্রামটা একদিন ভূতের বাড়ি হবে’ । কেন ভূতের বাড়ি হবে?
- গণহত্যার কারণে
- লােকজন পালিয়ে যাওয়ায়
- গ্রামটি জনশূন্য হওয়ায়
কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
১০। যুদ্ধে শত্রুরা কখন হেরে যায়?
ক. সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে
খ. আধুনিক অস্ত্র থাকলে
গ. উন্নত প্রশিক্ষণ থাকলে
ঘ. সৈন্যসংখ্যা বেশি হলে
কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের mcq
উপন্যাস গদ্যে লেখা এক ধরনের কী?
ক. কাহিনি
খ. শোকগাথা
গ. কবিতা
ঘ. গল্প
উমবার্তো একো কোন দেশের অধিবাসী?
ক. ফ্রান্স
খ. ইতালি
গ. আমেরিকা
ঘ. রাশিয়া
ale অর্থ কী?
ক. শ্লোক
খ. গল্প
গ. উপন্যাস
ঘ. গীতিকবিতা
উপন্যাসের চর্চা হয়-
ক. প্রায় চারশ বছর
খ. প্রায় আড়াইশ বছর
গ. প্রায় তিনশ বছর
ঘ. প্রায় একশ বছর
সাধারণভাবে উপন্যাস কয়টি উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে?
ক. ৩
খ. ৪
গ. ৫
ঘ. ৬
আখ্যানভাগ অর্থ কী?
ক. কাহিনি-সমগ্র
খ. সংলাপ
গ. বর্ণনার ভঙ্গি
ঘ. চরিত্র নির্বাচন
বাংলা উপন্যাসের বয়স কত?
ক. একশ বছর
খ. দেড়শ বছর
গ. দুইশ বছর
ঘ. আড়াইশ বছর
মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে কোন শাসনের সূত্রপাত ঘটলে?
ক. ইংরেজ
খ. ব্রিটিশ
গ. জমিদার
ঘ. গণতান্ত্রিক
‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ কার রচনা?
ক. শরৎচন্দ্র
খ. রবীন্দ্রনাথ
গ. বঙ্কিমচন্দ্র
ঘ. বিভূতিভূষণ
সেলিনা হোসেন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
ক. যশোর
খ. রংপুর
গ. রাজশাহী
ঘ. বরিশাল
কখন সেলিনা হোসেন লেখালেখি শুরু করেন?
ক. চল্লিশের দশকে
খ. পঞ্চাশের দশকে
গ. ষাটের দশক
ঘ. সত্তরের দশক
বড়দের জন্য প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের উপন্যাস সংখ্যা কত?
ক. ত্রিশ
খ. বত্রিশ
গ. তেত্রিশ
ঘ. চল্লিশ
বাংলাদেশের মানুষ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কোন লেখকের লেখার জগৎ?
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
খ. সেলিনা হোসেন
গ. হুমায়ুন আজাদ
ঘ. জহির রায়হান
‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ সেলিনা হোসেনের কী ধরনের রচনা?
ক. প্রবন্ধ
খ. ছোটগল্প
গ. নাটক
ঘ. উপন্যাস
‘সুরমা চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ সেলিনা হোসেন কোথা থেকে পান?
ক. বাংলাদেশ
খ. ভারত
গ. আমেরিকা
ঘ. লন্ডন
কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেলিনা হোসেন সম্মান সূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হন?
ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
খ. রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
গ. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ঘ. দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মজীবনে সেলিনা হোসেন কী ছিলেন?
ক. ডাক্তার
খ. সাংবাদিক
গ. বাংলা একাডেমির পরিচালক
ঘ. বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক
কার কাছে পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ সব সমান?
ক. কুন্তি
খ. আহাদ মুন্সি
গ. আতা ফুপু
ঘ. বুধা
বুধা ভাত মাংস পেট পুরে খেতে পায়-
ক. শুক্রবারে
খ. বিয়েবাড়িতে
গ. ঈদের দিন
ঘ. কুলখানিতে
রাত পোহাবার আগে চলে যায়-
ক. শিলু
খ. বিনু
গ. তিনু
ঘ. তালেব
বিনুর চোখ কেমন ছিল?
ক. ডাগর
খ. অপূর্ব
গ. কানা
ঘ. রক্ত ওঠা
বুধার কয় ভাইবোন কলেরায় মারা যায়?
ক. ৩ জন
খ. ৪ জন
গ. ৫ জন
.ঘ ৬ জন
সেবার কলেরায় মহামারীতে উজাড় হয়ে যায় গাঁয়ের-
ক. সব লোক
খ. এক-তৃতীয়াংশ লোক
গ. অর্ধেক লোক
ঘ. এক-চর্তুাংশ লোক
এক রাতে বুধা কত জন মানুষকে হারায়?
ক. ৫ জন
খ. ৬ জন
গ. ৭ জন
ঘ. ৮ জন
কে বুধার কাছে মুক্তি চায়?
ক. কুন্তি
খ. ফুলকলি
গ. মিঠু
ঘ. বুধার চাচি
কে বুধাকে সইতে পারেনি?
ক. মতিউর
খ. আহাদ মুন্সি
গ. মিঠু
ঘ. বুধার চাচি
কাকতাড়ুয়া সেজে কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে বুধার মাথায় কিসের ছায়া নেমে আসে?
ক. মেঘের ছায়া
খ. বিমানের ছায়া
গ. শকুনের ছায়া
ঘ. পাখির ছায়া
বাজারে আগুন লাগায়-
ক. আহাদ মুন্সি
খ. মিলিটারি
গ. ডাকাত
ঘ. অন্য গ্রামের লোক
পোড়া বাজারের দিকে তাকিয়ে বুধার-
ক. কাঁদতে ইচ্ছা করে
খ. প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে
গ. দুঃখ হয়
ঘ. চোখ লাল হয়
মিলিটারি আসার পরদিন গাঁয়ের মানুষ কী করে?
ক. পালাতে থাকে
খ. মিছিল করে
গ. মুক্তিবাহিনী গঠন করে
ঘ. রাজাকার হয়ে যায়
হরিকাকুর সঙ্গে বুধার কোথায় দেখা হয়েছিল?
ক. জামতলায়
খ. ফসলের মাঠে
গ. বাজারে
ঘ. রাস্তায়
বুধার মতে যে পালায়- সে কী?
ক. খারাপ
খ. বুদ্ধিমান
গ. ভিতুর ডিম
ঘ. হাঁদারাম
মিলিটারি প্রথমবার আসার কত মাস পর দ্বিতীয়বার আসে?
ক. এক মাস
খ. দেড় মাস
গ. দুই মাস
ঘ. আড়াই মাস
দ্বিতীয়বার এসে মিলিটারি গ্রামে কী বানায়?
ক. ক্যাম্প
খ. মসজিদ
গ. বাজার
ঘ. বাঙ্কার
গাঁয়ে মোট কতবার মৃত্যুর উৎপাত ঘটেছে?
শ. দুই বার
খ. তিন বার
গ. চার বার
ঘ. পাঁচ বার
চোখ লাল হলে বুধার ভেতরে কী জাগে?
ক. কান্নাবার আবেগ
খ. স্মৃতিকাতরতা
গ. কিছু করার ইচ্ছা
ঘ. ঘৃণা
অনেক রাতে কিসের শব্দে বুধার ঘুম ভাঙে?
ক. কুকুরের ডাকে
খ. আগুনের তাপে
গ. মানুষের চিৎকারে
ঘ. গুলির শব্দে
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কত তারিখে হয়েছে?
ক. ৭ মার্চ
খ. ২৬ মার্চ
গ. ২১ ফেব্রুয়ারি
ঘ. ১৬ ডিসেম্বর
যুদ্ধের কত বছর আগে বুধা বাবা-মা-সবাইকে হারিয়েছে?
ক. এক বছর
খ. দুই বছর
গ. তিন বছর
ঘ. চার বছর
কারা খায় দায়, ফুর্তি করে আর মানুষ ধরে নিয়ে যায়?
ক. মুক্তিযোদ্ধারা
খ. হানাদাররা
গ. গ্রামের লোকজন
ঘ. রাজাকাররা
শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিল কে?
ক. মতিউর
খ. আহাদ মুন্সি
গ. হাশেম মিয়া
ঘ. হরিবাবু
বিদেশি মানুষ এবং নিজেদের মানুষ সবার ওপর বুধার ঘৃণা বাড়তে থাকে কেন?
ক. যুদ্ধ করার জন্য
খ. অত্যাচার করার জন্য
গ. বিরোধিতা করার জন্য
ঘ. গণহত্যার জন্য
গাঁয়ের মানুষ কত ভাগে ভাগ হয়ে গেছে?
ক. দুই ভাগে
খ. তিন ভাগে
গ. চার ভাগে
ঘ. পাঁচ ভাগে
লড়াই না করলে গ্রাম কিসের বাড়ি হয়ে যাবে?
ক. পরির বাড়ি
খ. রাজাকারের বাড়ি
গ. জিনের বাড়ি
ঘ. ভূতের বাড়ি
যুদ্ধে শত্রুরা কখন হেরে যায়?
ক. সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে
খ. আধুনিক অস্ত্র থাকলে
গ. উন্নত প্রশিক্ষণ থাকলে
ঘ. সৈন্যসংখ্যা বেশি হলে
আহাদ মুন্সির ঘর কয় চালা?
ক. দোচালা
খ. চার চালা
গ. ছয় চালা
ঘ. আট চালা
কীভাবে বুধা আলির তেলের দাম শোধ করবে?
ক. গায়ে খেটে
খ. টাকা দিয়ে
গ. ফল দিয়ে
ঘ. ধান দিয়ে
মিঠু আর আলির মতে বুধা কেরোসিন তেল দিয়ে-
ক. বাতি জ্বালাবে
খ. ঘরের কাঠে দেবে
গ. ভালো কিছু করবে
ঘ. অন্যায় কাজ করবে
আগুন লাগায় ঘুমন্ত মানুষগুলো কী নিয়ে বেরিয়ে আসতে ব্যস্ত?
ক. বন্দুক নিয়ে
খ. জীবন নিয়ে
গ. টাকা নিয়ে
ঘ. জামা কাপড় নিয়ে
আহাদ মুন্সির বড় ছেলের নাম কী?
ক. কুদ্দুস
খ. মিঠু
গ. মতিউর
ঘ. আলি
রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে কাজ করে কে?
ক. বুধা
খ. কুন্তি
গ. মিঠু
ঘ. ফুলকলি
বুধা ফুলকলিকে কী খেতে দিল?
ক. আম
খ. বিস্কুট
গ. জিলাপি
ঘ. ভাত
রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে কিছু ঘটলে কে বুধাকে জানিয়ে দেবে?
ক. কুন্তি
খ. মিঠু
গ. আলি
ঘ. ফুলকলি
কখন ফুলকলির দুঃখ থাকবে না?
ক. নতুন চাকরি পেলে
খ. রাজাকার কমান্ডার মারা গেলে
গ. বুধা বড় হলে
ঘ. দেশ স্বাধীন হলে
স্বপ্নের আশ্চর্য দেশে বুধা কাকে পাশে দেখতে পায়?
ক. কুন্তি
খ. মিঠু
গ. ফুলকলি
ঘ. আলি
‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে উল্লিখিত শাহাবুদ্দিন কোথায় পড়ে?
ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
খ. ঢাকা কলেজে
গ. আর্ট কলেজে
ঘ. হাই স্কুলে
শাহাবুদ্দিনের মতে গ্রামে কে একাই লড়াই করছে?
ক. আলি
খ. মিঠু
গ. বুধা
ঘ. আহাদ মুন্সি
কখন বুধার মা ভাপা পিঠা বানাত?
ক. গ্রীষ্মকালে
খ. বর্ষাকালে
গ. শীতকালে
ঘ. শরৎকালে
“কেয়ামতের দিন মাথার এক হাত উপরে সূর্য নেমে আসবে।” কার কথা?
ক. শিক্ষকের
খ. মৌলবির
গ. আহাদ মুন্সির
ঘ. বুধার বাবার
পাকিস্তানি সেনাদের কাছে বুধা তার নাম কী বলে?
ক. বুধা
খ. বঙ্গবন্ধু
গ. যুদ্ধ
ঘ. কাকতাড়ুয়া
বেয়নেট দিয়ে মানুষ মারতে কারা মজা পায়?
ক. মিলিটারিরা
খ. রাজাকাররা
গ. মুক্তিযোদ্ধারা
ঘ. গ্রামবাসী
মাঠে বুধাকে কাকতাড়ুয়া সাজানোর পর কখন সে ছাড়া পায়?
ক. দুপুরে
খ. বিকেলে
গ. সন্ধ্যায়
ঘ. রাতে
কখন শাহাবুদ্দিন বুধার ছবি আঁকবে?
ক. বুধা মারা গেলে
খ. দেশ স্বাধীন হলে
গ. বুধা অসুস্থ হলে
ঘ. শাহাবুদ্দিন ছুটি পেলে
কুন্তি শাপলা তুলেছে কেন?
ক. ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচার জন্য
খ. বিক্রির জন্য
গ. ফুলের মালা বানানোর জন্য
ঘ. গরুকে খাওয়ানোর জন্য
মাটি কাটার আবদার নিয়ে বুধা কার কাছে যায়?
ক. আহাদ মুন্সির
খ. মিলিটারির
গ. ফজু মিয়ার
ঘ. মতিউরের
‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে উল্লিখিত ফজু মিয়ার মতে বাঙ্কার কী?
ক. ভালো ঘর
খ. লুকিয়ে থাকার স্থান
গ. কবর
ঘ. গুদামঘর
বাঙ্কার তৈরির কাজে অগ্রগতি দেখে কে প্রশংসা করে?
ক. মিলিটারি
খ. আহাদ মুন্সি
গ. ফজু মিয়া
ঘ. মতিউর
ঝোপের ধারে লুকিয়ে থাকে-
ক. শাহাবুদ্দিন
খ. মিঠু
গ. আলি
ঘ. মতিউর
নৌকায় বুধা কিসের ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ে?
ক. অসুস্থ হওয়ার
গ. কাকতাড়ুয়ার
গ. মৃতের
ঘ. নিলডাউন
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। পাকসেনারা থানায় ঘাটি স্থাপন করলে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করলে কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। তিনি পাকসেনাদের ঘায়েল করার জন্য তাদের সাথে যােগাযােগ শুরু করেন। আর গােপনে সব খবর পৌঁছে দেন, প্রস্তুত থাকতে বলেন। একদিন সুযােগমতাে পাক সেনাদের গ্রামে এনে ভাঙা পুলের গােড়ায় দাঁড় করিয়ে কলিমদ্দি দফাদার তা পার হতে গিয়ে পরিকল্পনামাফিক জলে পড়ে যান। সাথে সাথে গর্জে ওঠে ওৎ পেতে থাকা মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র। আর খতম হয় সব কজন। পাকসেনা।
[su_spoiler title=”ক. বুধা প্রায়ই কী সাজত? ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
বুধা প্রায়ই কাকতাড়ুয়া সাজত।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”খ. আধা-পােড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে। কেন?” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
‘আধা-পোড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে।” কারণ সেদিকে তাকিয়ে হানাদার বাহিনীর প্রতি বুধার ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহা বাড়তে থাকে। অন্যায় কিছু দেখলেই বুধার খুব রাগ হয়। আর রাগ হলে তার চোখ লাল হতে থাকে।
হানাদাররা হঠাৎ করে একদিন বুধাদের গ্রামে এলো। বাজারের অনেক মানুষকে গুলি করে মারলো। অবশেষে আগুন দিয়ে বাজারটা পুড়িয়ে দিল। তারা যাওয়ার পরে গ্রামের মানুষেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো। বুধা নিজেও মাটির হাড়িতে করে ডোবা থেকে পানি নিয়ে আসে। পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতি ওর রাগ বাড়তে থাকে। ও মনে মনে ফুঁসতে থাকে। প্রতিশোধ নেয়ার কথা ওর মনের ভেতর ঢুপকঢাপ শব্দ তোলে। এক সময় আগুন নিভে গেলে আধা-পোড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”গ. উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাথে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা করাে।” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
“কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধা অত্যন্ত কৌশলী কিশোর। তার এ চরিত্রের সাথে উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাদৃশ্য রয়েছে। শক্তি দিয়ে সবকিছু হয় না।
পৃথিবীতে শক্তির চেয়ে বুদ্ধির মূল্য অনেক বেশি। শক্তি দিয়ে যে কাজ সাধন করা অসম্ভব, বুদ্ধি দিয়ে সে কাজ করা খুবই সহজ। বুদ্ধিমত্তার কারণেই মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। যারা বোকা, তারা শক্তি দিয়ে সব কাজ সাধনের চেষ্টা করে।
উদ্দীপকে কলিমদ্দি দফাদারের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ পাওয়া ঘায়। পাকসেনার থানায় ঘাটি স্থাপন করে। ফলে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করে। তখন কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। পাক হানাদারদের বুঝতে না দিয়ে তিনি তাদের দলের লোক হিসেবে অভিনয় করেন। এমন ভাব করেন, যেন মনে হয় তিনি রাজাকার দলে যোগ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, গোপনে তিনি যোগাযোগ রাখেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। একদিন তিনি মিলিটারিদের ভাঙা পুলের সামনে নিয়ে আসেন। পুলে উঠে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। আর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকবাহিনী ধ্বংস হয়ে ঘায়। কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসেও এমন কৌশল লক্ষ্য করা যায় বুধার চরিত্রে। বুধা শ্রমিকদের সঙ্গে বাঙ্কার বানাতে যায়। বাঙ্কার তৈরি করা মানে হানাদারদের শক্তি বেড়ে যাওয়া। বুধা সবার শাহাবুদ্দিনের কথা মত সে বাঙ্কারের তলায় মাইন পুঁতে দিয়ে আসে। হানাদার বাঙ্কারে ঢুকে মাইনে পা দিতেই সব ধ্বংস হয়ে ঘায়। এভাবেই উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাথে বুধার চরিত্রের মিল পাওয়া যায়।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”ঘ. উদ্দীপকটি কাকতড়িয়া” উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে কি? যুক্তিসহ প্রমাণ করাে। ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
না, উদ্দীপকটি “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না। কারণ উদ্দীপকের দিকটিই কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের একমাত্র দিক নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এদেশের বুকে তা-ব চালিয়েছিল, অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছিল। তারা ভেবেছিল ংলার মানুষ ভিতু। অন্দ্রের মুখে এরা পিছু হটবে। বাঙালী তাদের চিন্তাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিল। বাঙালিরা মহা প্রতিরোধ গড়ে তোলে হানাদারের বিরুদ্ধে। অবশেষে ত্রিশ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অজিত হয় কাঙ্খিত স্বাধীনাতা। দেশপ্রেম। পাকসেনার থানায় ঘাটি স্থাপন করে। ফলে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করে। তখন কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। পাক হানাদারদের বুঝতে না দিয়ে তিনি তাদের দলের লোক হিসেবে অভিনয় করেন।
এমন ভাব করেন, যেন মনে হয় তিনি রাজাকার দলে যোগ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, গোপনে তিনি যোগাযোগ রাখেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। একদিন তিনি মিলিটারিদের ভাঙা পুলের সামনে নিয়ে আসেন। পুলে উঠে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। আর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকবাহিনী ধংস হয়ে যায়। “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসেও এমন চরিত্রের খোঁজ পাওয়া ঘায়। সেই চরিত্রটির নাম হচ্ছে বুধা। সে পাগলের মত আচরণ করে, যাতে কেউ তাকে সন্দেহ করতে না পারে। সে রাজাকার কমান্ডার আর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগায়। হানাদারদের খবর সংগ্রহ করে, কাজের সুযোগে বাঙ্কারে মাইন পুতে পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে বুধার পেয়েছে। রাজাকারদের তা-বে মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে। হানাদাররা বুধার গ্রামে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ চালায়। জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের পরে গ্রাম। অসংখ্য মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও বুধার প্রতি মানুষের ভীষণ ভালোবাসা ও বুধার কর্মঠ জীবন “কাকতাড়ুয়া, উপন্যাসে ফুটে উঠেছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।
[/su_spoiler]
২। ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে গর্জে ওঠে কলেজপড়ুয়া আবু সাঈদ। আঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক গেরিলা আক্রমণে অতিষ্ঠ পাকসেনারা। অপারেশন জ্যাকপটের সফল অভিযানের পর পাকসেনারা আবু সাঈদের গ্রামে আক্রমণ করে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। একসময় আবু সাঈদ জানতে পারে স্বজন হারানাের খবর। কিন্তু সে আপসহীন। তার একটাই প্রতিজ্ঞা,এ দেশের মাটি থেকে ওদের তাড়াতেই হবে।
[su_spoiler title=”ক. কে বুধাকে ‘মানিকরতন’ বলে ডাকত? ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
হরিকাকু বুধাকে “মানিকরতন” বলে ভাকতেন।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”খ. ‘এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ। এ কথা বলার কারণ কী? ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ।” “কাকতাড়ুয়া, উপন্যাসে এ কথাটি বলেছে বুধা, পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে। “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে বুধার মাধ্যমে কিশোর মানসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। কিশোর বুধার মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার দিকটি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। গ্রামে কলেরার আক্রমণে বুধার মা-বাবা, ভাইবোন সবাই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। সে সময় যে মৃত্যু বুধা দেখেছিল, তা ঘটেছিল একটি বিশেষ রোগের কারণে। আর যুদ্ধের সময়ে এখন যে মৃত্যু বুধা দেখছে তা ভিন্ন রকম মানুষের নির্মমতায় শুরু হয়েছে। বুধার চিরচেনা পথ ধরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে জিপে করে পাকিস্তানী সেনারা তার গ্রামে প্রবেশ করে। বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। তাদের নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা প্রসঙ্গে বুধা এ মন্তব্যটি করে।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কাহিনী কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের যে বিশেষ দিকটির ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা করো।” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
উদ্দীপকের কাহিনী “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার অমিত সাহস ও স্বদেশপ্রেমের দিকটি ইঙ্গিত করে। মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকে। অনেক সময় সেই ভালোবাসা সাধারণ্যে প্রকাশ পায় না। দেশ যখন শত্রু “কবলিত হয়। আর তা প্রকাশ পায় বৈশাখি ঝড়ের মত। ১৯১ সালে পাকিস্তানি হানাদারের সামনেও বাঙালি এমনই ঝড়ের মত ঝাপিয়ে পড়েছিল। দেশকে শত্র“মুক্ত করেছিল প্রবল বীব্রমে। পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এঁতিহাসিক এই মারের ভাষণ শুনে তার মনে দেশকে শন্রু “মুক্ত ও স্বাধীন করার বাসনা জাগে। সেই লক্ষ্যে সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। একের পর এক নেতৃত্ব দেয় গেরিলা আন্রমণের। সফলভাবে শেষ করে অপারেশন জ্যাকপট। পাকসেনারা আবু সাঈদের গ্রামে হামলা চালায়। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়।
আর যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকেই সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের এত অত্যাচারেও সে থামে না। বরং শপথ করে দেশকে শক্রু “মুক্ত করার। এ রকমের মানসিকতা “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার মধ্যেও পাওয়া যায়। বুধা কিশোর। কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধ মনে করে না। এ সুযোগ সে পুরোপুরি কাজে লাগায়। রাজাকার কমান্ডার আর শান্তি কমিটির চেয়্যারম্যানের বাড়িতে সে আগুন দেয়। মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয় শত্র“র বাঙ্কার। দেশকে শত্র“মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা তার মনেও কাজ করে। এভাবেই উদ্দীপকের সাইদের মুক্তিযুদ্ধের কার্যন্রম “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার দেশপ্রেমের দিকটি ইঙ্গিত করে।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”ঘ. উদ্দীপকের আবু সাঈদ-এর মনােভাবই যেন কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের মূল বক্তব্য। যুক্তিসহ প্রমাণ করাে। ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
“কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধার মাধ্যমে কিশোর মানসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। যা উদ্দীপকের আবু সাঈদের মানসিকতায়ও পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের আদেশে হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা বাংলার বুকে চালায় তাণুব। নির্বিচারে হত্যা করে অসংখ্য মানুষ। মা-বোনের দেয়। বাংলার মানুষ মুখ বুজে এ অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেনি। যুদ্ধের মাধ্যমে এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। হানাদার পরাজিত করে অর্জন করেছে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। উদ্দীপকে আবু সাঈদের সাহসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সাঈদ কলেজে পড়ে। সে দেশকে শক্ত “মুক্ত করার শপথ নেয়।
সেই লক্ষ্যে সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। একের পর এক নেতৃত্ব দেয় গেরিলা আক্রমণের। সফলভাবে শেষ করে অপারেশন জ্যাকপট। পাকসেনারা আবু সাঈদের গ্রামে হামলা চালায়। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকেই সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। এক পর্যায়ে সে স্বজন হারানোর সংবাদ পায়। কিন্তু সে দমে যায় না। “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধাও সমান সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। সে অনাথ কিশোর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে কৌশলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ । সবাই ভাবে বুধা পাগল। কিন্তু বুধা আসলে দেশের জন্য জীবন বাজি রাখতে সদা প্রস্তুত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে মূল বক্তব্য হল কিশোর মানসিকতায় দেশপ্রেম ও ত্যাগী মনোভাব। বুধা জীবনের প্রতি টান প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে তার ভেতর আবার জীবনবোধ জেগে ওঠে। দেশকে শন্রু “মুক্ত করার দারুণ নেশা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বারবার শত্রুর সাথে মরণখেলায় মেতে ওঠে। এই দেশত্মবোধই “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে মূল বিষয়। উদ্দীপকের আবু সাঈদের চরিত্রেও এই একই বিষয় প্রকটিত।
[/su_spoiler]
৩। জমিদার মফিজ খার নাম শুনলে প্রজারা ভয়ে কাঁপতে থাকে। তার হুকুমের অবাধ্য হলে সে প্রজার আর রক্ষা নেই। ইদানীং তার চেলা হিসেবে কাজ করছে হাসেম ব্যাপারি। সারাক্ষণ তাকে কুপরামর্শ দেয় আর নানা অজুহাতে প্রজাদের হালের বলদ, ঘরের টিন, পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে আসে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গ্রাম। ছাড়া করে। গ্রামের সালিস-বিচার সবই হাসেম ব্যাপারির ইঙ্গিতে চলে। তাই সাধারণ মানুষ কানাঘুষা করে হাসেম ব্যাপারি যেন জমিদারের জমিদার।
[su_spoiler title=”ক. শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান কে ছিল? ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
শান্তি কমিটির চেয়্যারম্যান ছিল আহাদ মুন্সি।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”খ. যে মানুষের দৃষ্টিতে ভাষা নেই, বুধার মতে সে মানুষ কেন মানুষ নয়? ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
যে মানুষের দৃষ্টিতে ভাষা নেই, সে মানুষকে বুধার মানুষ মনে না করার কারণ, বুধা প্রাণহীন মানুষকে মানুষই মনে করে না। কারণ, তারা দেশের শব্রু। বুধা পেয়ারা নিয়ে মিলিটারি ক্যাম্পে যায় তথ্য সংগ্রহ করতে। মিলিটারির খুব কাছাকাছি গেলেও তার ভয় লাগে না। অথচ এসব মিলিটারিই অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। বুধা মিলিটারির দিকে তাকিয়ে ছিল। কোন ভাষা নেই সে দৃষ্টিতে। সাধারণত প্রাণহীন দৃষ্টি হিংত্র হয়, এই হিংস্রতা বুধা দেখেছে। যে মানুষের দৃষ্টিতে ভাষা নেই, সে মানুষকে বুধার মানুষ মনে করে না।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”গ. উদ্দীপকের হাসেম ব্যাপারির সাথে কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বর্ণিত আহাদ মুন্সি চরিত্রের সাদৃশ্যের দিকটি ব্যাখ্যা করাে। ” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে আহাদ মুন্সি একটি দালাল ও নিষ্ঠুর চরিত্র এবং উদ্দীপকের হাসেম ব্যাপারীও এ দালালী ও নিষ্ঠুরতায় বিশ্বাসী। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের মানুষের ওপর তীব্র নির্মমতা চালায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। তখন হানাদারদের সঙ্গে যোগ দেয় এদেশেরই কিছু স্বার্থপর লোক। তারা সম্পদ লুগ্ঠন করে, নারীদের জোড় করে হানাদারদের হাতে তুলে দেয়; তখন হেন অপরাধ নেই, যা তারা করেনি। উদ্দীপকে মফিজ খাঁর চরিতেও এমন নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায়। জমিদার হওয়ার কারণে সে সাধারণ প্রজাদের ওপর অত্যাচার চালায়। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে হাসেম ব্যাপারী। জমিদারের কাছের লোক হওয়ায় সে মানুষের ওপর পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে আসে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গ্রামছাড়া করে। “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে আহাদ মুন্সিও বর্বর হানাদারদের সহযোগী। হানাদারদের দোসর হয়ে সে গ্রামের লোকজনের ওপর নির্যাতন চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নানা তথ্য সরবারহ করে সে হানাদারদের সাহায্য করে। গ্রামের মানুষদের জোড় করে সেনাদের বাঙ্কার নির্মাণ করতে নিয়ে যায়। তার আদেশেই বুধাকে জোড় করে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয় ও মাঠের মাঝখানে। আহাদ মুন্সির এ ধরনের অন্যায় অত্যাচারের সাথে উদ্দীপকের হাসেম ব্যাপারীর চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
[/su_spoiler]
[su_spoiler title=”ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটিই ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের একমাত্র দিক নয়- যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখ।” style=”fancy” icon=”plus-circle”]
উদ্দীপকের দিকটিই “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের একমাত্র দিক নয়- মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠি নানাভাবে পূর্ব ংলার মানুষের শোষণ করে। বাঙালি এর প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় নানা অত্যচার ও বর্বরতা। তারা গণহত্যায় মেতে ওঠে। সমস্ত দেশ ল-ভ- করে দিতে শুরু করে। বাঙালি এক সময় জেগে ওঠে। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির সাহস ও শক্তির কাছে অবশেষে হার মেনে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ব্যাপারী। সে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়। মানুষ তার ভয়ে কাপত। কারণ সে কারও পুকুরের মাছ, কারও গোয়ালের গরু আবার কারও ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যেত।
“কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে এমন চরিত্রধারী হল আহাদ মুন্সি। সে হানাদারদের দোসর। এ সুযোগে সে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিগীড়ন চালায়। গ্রামের মানুষকে ভয় দেখিয়ে সে হানাদারদের কাজ করতে বাধ্য করায়। বাঙ্কার খোড়ার জন্য সে মানুষদের ধরে নিয়ে যায়। “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে আহাদ মুন্সির চরিত্রই মূল বিষয় নয়; মুল বিষয় হল কিশোর বুধার চেতনায় দেশপ্রেম ও সাহসী রূপ। কারণ সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা কৌশলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বুধার একাকী জীবন, কলেরার প্রকোপ, দারিদ্রের টানাপোড়ন, হানাদারদের পৈশাচিকতা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও সাফল্য ইত্যাদি দিকগুলো “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে প্রকাশ পেয়েছে। এসব দিক উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের দিকটিই “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের একমাত্র দিক নয়।
[/su_spoiler]