বিটিআরসির অনিবন্ধিত মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস

বাংলাদেশ যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ( বিটিআরসি)।  বিটিআরসি সম্প্রতি মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস চালু করেছে । বর্তমানে যে সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।  নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট কে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত  নিয়েছে বিটিআরসি।  সুতরাং বর্তমানে বাংলাদেশ বৈধ এবং অবৈধ সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট গুলোই বৈধতা পাচ্ছে  রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে। তাই বিটিআরসি মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া চলছে।

৩০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকা সকল দেশি-বিদেশি হ্যান্ডসেট বৈধতা পেতে যাচ্ছে।  এমন একটি খবর দেশের সকল গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার হচ্ছে।  অতএব এ বিষয়টি সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে।  কারণ ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট  বৈধ করতে না পারলে পরবর্তীতে মূল্য দিতে হবে। সুতরাং  বিটিআরসির মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রচার সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে।

অনেক মোবাইল ফোন রয়েছে যেগুলো বিদেশ থেকে বৈধভাবে কেনা অথবা উপহার পাওয়া।  অপরদিকে সেসব মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই নাম্বার বিটিআরসির ডাটাবেজে নেই।  সেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট গুলো ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের যে কোন মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত করে নিতে হবে।  তা না হলে পরবর্তীতে মোবাইল হ্যান্ডসেট গুলো বৈধকরণে সমস্যা হবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট লোকাল অপারেটরের সাথে সংযুক্ত করলে অটোমেটিক ভাবে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। 

এখন আমি বিটিআরসির মোবাইল হ্যান্ডসেট  রেজিস্ট্রেশন প্রসেস সম্পর্কে আলোচনা করব।  সুতরাং যারা ভাবছেন তাদের মোবাইল হ্যান্ড সেটটি বৈধ কিনা?  তারা দয়া করে আমাদের লেখাগুলো সম্পূর্ণ পড়ুন।  লেখাগুলো সম্পন্ন করলে আপনারা বুঝতে পারবেন কিভাবে আপনার মোবাইল ফোনটির  আইএমইআই নাম্বার বিটিআরসি ডাটাবেজে  রয়েছে কিনা।

যেভাবে বৈধ-অবৈধ সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে:

বিটিআরসি বাংলাদেশে ব্যবহৃত সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন এর জন্য একটি অটোমেটিক সিস্টেম তৈরি করেছে।  আগামী ৩০ জুনের মধ্যে যেকোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট যেকোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে।  সুতরাং মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কোনো ধরাবাধা নিয়ম কানুন নেই।  শুধুমাত্র হ্যান্ডসেটটি একটি সিম এর সাথে সংযুক্ত করে চালু করলেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে।  অর্থাৎ যে কোন সিম কোম্পানির নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হলেই হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নাম্বার বিটিআরসির ডাটাবেজে সংযুক্ত হবে।  আর বিটিআরসির ডাটাবেজে  মোবাইল ফোনের আইএমইআই যুক্ত থাকবে সেটাই বৈধ বলে বিবেচিত হবে। 

১ জুনের পরে মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস

৩০ জুলাই পর্যন্ত বিটিআরসির মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস একরকম।  ৩০ জুলাই এর পর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে বিটিআরসির মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস অন্যরকম। আমরা জানি ৩০ জুলাই পর্যন্ত বিটিআরসি মোবাইল হ্যান্ডসেট  রেজিস্ট্রেশন প্রসেস স্বয়ংক্রিয়  উপায়ে করবেন।  ১ জুলাই থেকে নতুন হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন এর জন্য ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।  অর্থাৎ ১ জুলাই এরপর থেকে বিটিআরসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি বাতিল করবেন। অতএব এখন একটি প্রশ্ন সবার মনেই জাগতে পারে।  তাহলে  ১ জুলাই থেকে বিটিআরসি কিভাবে নতুন হ্যান্ডসেটগুলোর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন।

১ জুলাই থেকে নতুন ক্রয় করা  এবং দেশের বাহির থেকে ক্রয় কৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের রেজিস্ট্রেশন প্রসেস শুরু হবে। ১ জুলাই থেকে যেসব হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে তার মধ্যে কোনটির অবৈধ হয়ে থাকলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।  এবং এসএমএস প্রদানের সময় হতে তিন মাস পর্যন্ত গ্রাহক মোবাইল হ্যান্ড সেটটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই তিন মাস সময়ের মধ্যে গ্রাহক তার মোবাইল হ্যান্ড সেটটি বৈধ করে নিলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে।  আর যদি তিন মাসের মধ্যে হ্যান্ডসেটটি বৈধ করা না হয় অর্থাৎ অবৈধ বলে বিবেচিত হয় তাহলে  সেই হ্যান্ডসেটে কোন সিম কাজ করবেনা। অর্থাৎ কোন বাংলাদেশি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক  সেই মোবাইল গ্রহণ করবে না। 

বিদেশ থেকে কেনা অথবা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট দেশে  রেজিস্ট্রেশন করার পদ্ধতি:

বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে যারা বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট কিনে দেশে নিয়ে আসেন। আবার অনেকে রয়েছেন যারা বিদেশ থেকে দেশে প্রিয়জনের কাছে হ্যান্ডসেট উপহার পাঠান।  এখন একটি প্রশ্ন উঠছে যে বিদেশ থেকে কেনা এবং উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট দেশে চালু করা হলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই  সচল হবে।  এধরনের গ্রাহককে ১0 দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা দলিল দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য এসএমএস পাঠানো হবে।  ১0 দিনের মধ্যে সঠিক তথ্য দলিল দিয়ে  নিবন্ধন করলে হ্যান্ডসেটটি বৈধ বলে বিবেচিত হবে।  আর যদি হ্যান্ডসেটটি অবৈধ বলে বিবেচিত হয় তাহলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।  সেই সকল গ্রাহকদের জন্য  ঐ  হ্যান্ডসেটটি তিন মাস পর্যন্ত সচল থাকবে। 

আনঅফিসিয়াল ফোন রেজিস্ট্রেশন প্রসেস:

  1. বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে গ্রাহককে একাউন্ট খুলতে হবে
  2. স্পেশাল রেজিস্ট্রেশন সেকশনে গিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নাম্বার টি প্রদান করতে হবে
  3.  প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর ছবি স্ক্যান কপি (যেমন পাসপোর্ট / ভিসা / ইমিগ্রেশন এর তথ্য এবং ক্রয় রশিদ ইত্যাদি আপলোড করতে হবে
  4. আপলোড হয়ে গেলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে প্রসেস সম্পন্ন করতে হবে

হ্যান্ডসেটটি বৈধ বলে বিবেচিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে।  বৈধ না হলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।  গ্রাহক হ্যান্ডসেটটি চালু করা থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সুযোগ পাবে। পরীক্ষামূলক সময় পার হয়ে গেলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি। এই  প্রসেসটি সম্পন্ন করার জন্য মোবাইল অপারেটর এর কাস্টমার কেয়ারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

এখানে আরেকটি বিষয় সকলের জেনে রাখা উচিত।  বর্তমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন বিদেশ ফেরত ব্যক্তি বিনা শুল্কে দুটি হ্যান্ডসেট দেশে আনতে পারবেন।  এছাড়াও আরও 6 টি হ্যান্ডসেট শুল্ক প্রদান করার শর্তে দেশে নিয়ে আসতে পারবেন। সুতরাং একজন ব্যক্তি মোট আটটি হ্যান্ডসেট দেশে নিয়ে আসতে পারবেন। তার মধ্যে 2 টি হ্যান্ডসেটের জন্য কোন প্রকার শুল্ক প্রদান করার প্রয়োজন নেই।  বাকি 6 টি ফোনের জন্য শুল্ক প্রদান করতে হবে।

যেকোনো মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই / চেক করার পদ্ধতি:

যেকোনো মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই / চেক করার পদ্ধতি:
যেকোনো মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই / চেক করার পদ্ধতি:
  1. যে কেউ চাইলেই যে কোন হ্যান্ডসেট এর বৈধতা যাচাই করতে পারেন।  বৈধতা যাচাই করার জন্য মোবাইলে *১6১6১#  নম্বরে ডায়াল করতে হবে।
  2. এরপর স্ক্রিনে অপশন আসবে সেখান থেকে স্ট্যাটাস চেক সিলেক্ট করতে হবে।
  3.  এরপর একটি বক্স আসবে সেখানে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ১5 ডিজিটের আইএমইআই নাম্বারটি লিখে পাঠাতে হবে।
  4.  এরপরে হ্যাঁ বা না অপশন সংবলিত একটি বক্স আসবে।
  5.  সেখানে হ্যাঁ সিলেট করে নিশ্চিত করতে হবে।
  6.  পরবর্তীতে একটি মেসেজের মাধ্যমে হ্যান্ডসেটটি  বৈধ না অবৈধ  তা জানানো হবে।

সতর্কতাঃ 

কারো নিকটে যদি বিদেশ থেকে কেনা কোন হ্যান্ডসেট বন্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে তার ৩০ জুনের পূর্বে সিম সংযুক্ত করে সচল করে নিতে হবে।  তা না হলে পরবর্তীতে সেই হ্যান্ডসেটটি অবৈধ তালিকায় চলে যেতে পারে।  সুতরাং ৩০ জুনের মধ্যেই সকল হ্যান্ডসেট বৈধ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

উপসংহার:

সবশেষে একটি কথাই বলবো সরকারের মোবাইল হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন  এর উদ্যোগটি অত্যন্ত যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত।  এ সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটের একটি বৈধ ডাটাবেস সরকারের নিকট থাকবে।  এছাড়াও সরকার মোবাইল হ্যান্ডসেটের উৎস থেকে সঠিকভাবে কর আদায় করতে সক্ষম হবে।