কিভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হওয়া যায়?

কিভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হওয়া যায়? নেতিবাচক চিন্তা শরীর ও স্থাহ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমদের সবারই উচিৎ আমাদের মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনাগুলোকে দূর করা। কিন্তু কিভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হওয়া যাবে? এই বিষয়ে কয়েকজন কোরা (Quora) ব্যবহারকারীদের মতামত ও উত্তর দেখে নিই।

Mahadi Hassan এর মতে যেভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হওয়া যায়:

নেতিবাচক চিন্তাসমূহ আমাদের মনে, ঢেউয়ের মত করে আসে। যখনই এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা আপনার মনে আসছে, আপনি বুঝতে পারছেন –

  • আপনি জোর করে চিন্তাসমুহকে আটকে রাখতে যাবেন না
  • চিন্তাগুলোকে ভুলে যেতে চাইবেন না
  • চিন্তার ঢেউ আপনাকে Pass করে যেতে দিন। মনে করুন আপনি সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে, ঢেউ আপনাকে যেভাবে Pass করে যায়, সেভাবেই চিন্তা গুলোকে Pass করে যেতে দিন, মাথায় গেথে যেতে দিবেন না
  • গভীরভাবে শ্বাস নিন, শ্বাসের দিকে ফোকাস করুন
  • নেচিবাচক চিন্তাকে ফেস করতে হবে, ডাইভার্ট করতে যাবেন না
  • ভয়গুলোকে ফেস করতে হবে,ভয় পাবেন না
  • আমাদের জীবন মহাবিশ্বের সময়ের প্রবাহের তুলনায়, একফোঁটা বিন্দু থেকেও কম, এই কথাটা মনে রাখবেন। এই ছোট্ট সময়ে, নেতিবাচক চিন্তা আমাকে গ্রাস করতে পারবে না, এই ধরণের মনোভব রাখবেন।
  • মনে সাহস রাখবেন

এসকল স্টেপস অনুশীলন করতে থাকলে, আস্তে আস্তে চিন্তার ঢেউ আসা কমে যাবে। চিন্তাগুলোকে ফেস করতে থাকলে, আপনার মনের মধ্যে কনফিডেন্স চলে আসবে এবং আপনিও নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।

সৌরভ পাল এর মতে যেভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হওয়া যায়:

নেতিবাচক চিন্তা দূর করতে হলে, নেতিবাচক চিন্তার মূলে গিয়ে কাজ করতে হবে। এটা আগাছার মত, আপনি মূল ধরে তুলে না ফেললে, এটা আবার জন্মাতে শুরু করবে।

মানব মস্তিষ্ক একটি শক্তিশালী Personal computer. আপনি যেরকম ভাবে একে Direction দিবেন, এটা সেইভাবেই কাজ করবে। ভূল পথে যাওয়ার নির্দেশ দিলে এটা ভুল পথে যাবে।

আমাদের প্রতিদিনের সকল ঘটনাবলি, Brain এ Program আকারে জমা থাকে। আর আমাদের বেশিরভাগ Negative Programming অনিচ্ছাকৃতভাবে চলে আসে।

বিভিন্ন উৎস থেকে যেমন : আমাদের সহপাঠী, খবরের কাগজ, সকল প্রকার Advertisement, Tv, Social media ইত্যাদি . অন্যরা আমাদের সম্পর্কে যা বলে সেইটা আমরা বিশ্বাস করে ফেলি। আর আপনি যা বিশ্বাস করবেন, আপনার লাইফটা তেমন হয়ে উঠবে।

আপনার সফলতা, ব্যর্থতা, নির্ভর করে আপনার প্রোগ্রামিংয়ের ধরন কেমন তার উপর। নেতিবাচক চিন্তা নিশ্চয়ই আপনাকে ইতিবাচক লাইফ দিবে না।

ব্রেন বিশ্বাস করে নেয়, আপনি এটাকে যা বলেন, আপনার বলা Positive or Negative প্রোগ্রামিংয়ের উপর ভিত্তি করে, এটা আপনার লাইফের প্রতিটি মূহুর্ত কেমন হবে, সেইটা নির্ধারণ করে দেয়।

আপনাকে একটা কাজ করতে হবে, এর উৎস খুজতে হবে কোথা থেকে নেতিবাচক চিন্তা আপনার লাইফে আসছে।

হতে পারে আপনার আশেপাশে Negative mind এর লোকজন আছে। হতে পারে আপনি কোনো Unwanted Video দেখেন।

একটা উদাহরন দেয়।আপনার সামনে ২ টা দরজা আছে। একটাতে লেখা, এটাতে ঢোকা নিষেধ(এটা নেতিবাচক চিন্তা) । আর একটাতে লেখা ঢুকতে পারেন(ইতিবাচক চিন্তা) ।

আপনার মন কি চাইবে? নিষিদ্ধ যেটা, ওইটাতে কি আছে এটা দেখতে মন চাইবে। কারন নিষিদ্ধ জিনিস এর প্রতি আমাদের ঝোক বেশি।

আপনাকে সচেতন ভাবেই পছন্দ করতে হবে, কোন দরজার ভিতর আপনি যাবেন, যদি আপনি নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান।

আমাদের চারপাশ নেতিবাচক জিনিসে ভরপুর। Unconsciously, অনেক সময় অন্যের খারাপ অভ্যাস আমাদের ভিতর ঢুকে পড়ে।

মনে করুন আপনি একটা রুমে থাকছেন, সেখানে আপনার রুমমেট সকাল ৮ টা পর্যন্ত ঘুমায়, অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে, Smoking করে, সারাদিন Social Media ব্যবহার করে।

একটা সময় দেখবেন এইসব বাজে অভ্যাস আপনার ভিতর ঢুকে গেছে, যদি সচেতন ভাবে এই অভ্যাসগুলো না হওয়ার জন্য, যে পজিটিভ Program করা দরকার সেইটা না করেন।

প্রতিদিন, রাতে ঘুমানোর আগে, আর সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি ভাল কোন বই [হতে পারে আপনার ধর্মীয় গ্রন্থ বা অনুপ্রেরণা মূলক কোন বই] পড়ার অভ্যাস করতে পারেন, বেশি না ১০-১৫ মিনিট পড়লেই হবে, ১ মাস ধরে , পরিবর্তন আসবেই।

নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, নেতিবাচক চিন্তা থেকে অবশ্যই বের হতে পারবেন।

একই নেতিবাচক চিন্তা বার বার মাথায় এলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী?

BIBHAS GHOSHAL এর মতে একই নেতিবাচক চিন্তা বার বার মাথায় এলে এর থেকে মুক্তির উপায়:

সারাদিনে মনে যত চিন্তা আস তার মধ্যে বেশিরভাগ চিন্তা নেতিবাচক হয়। তার কারণ আমরা সবাই অল্প বিস্তর আত্মবিশ্বাস হীনতায় আক্রান্ত। সুতরাং ভয়, দুঃখ, দুশ্চিন্তার আবেগ এবং নেতিবাচক চিন্তা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাবে বেশি মাত্রায় এটাই স্বাভাবিক। এটা খুব সাধারন ব্যাপার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমাদের মধ্যে যে ইতিবাচক চিন্তা আসে সেটা বারবার আসছে, নাকি কম করে আসছে সেটা আমরা কখনও লক্ষ্য করি না। অথচ নেতিবাচক চিন্তা যে বারবার আসছে সেটা আমাদের ঠিক নজরে আসে? কারণ মনের নেগেটিভিটি আরো নেতিবাচক চিন্তাকে টানছে। ক্রমাগত টেনে চলেছে।

আগেকার দিনের লোকে বলত “মনে কু ডাকছে”। এর বিপরীতে “মনে সু ডাকছে” এমন কোন শব্দ আমি কোনদিন বাংলা অভিধান খুঁজে পাইনি। এমন তো নয় যে মনে ভালো চিন্তা কোন আসেনা। আমার উন্নতি হবে, আমি ভাল হব, আমি পয়সাওয়ালা হব, এরকম ইতিবাচক চিন্তাও তো আসে। তবুও আমরা ইতিবাচক চিন্তা থেকে নেতিবাচক চিন্তা কে বেশি প্রাধান্য দিই।

পুরোটাই আমাদের মস্তিষ্কের খেলা। আমরা এমন এক মধ্যবিত্ত মানসিকতার মধ্যে মানুষ হয়েছি যেখানে সুখের থেকে দুঃখ অনেক বেশি। সবসময় একটা নিরাপত্তাহীনতা আমাদের ব্যক্তিত্বের সাথে মিলে মিশে গেছে। আমাদের জীবনে একটা সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে 100 টা বিফলতার কাহিনী। জীবনে নেগেটিভিটি বা নেতিবাচক ঘটনার মাত্রা অনেক বেশি, ইতিবাচক ভাবনার থেকে।

এরকম পরিস্থিতি আমাদের সকলেরই, কারণ আমরা সকলেই মোটামুটি একই সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়েছি। আমাদের প্রত্যেকেরই মোটামুটি একটা মধ্যবিত্ত মানসিকতা রয়েছে। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া থাক আর ধর্মের বাঁধন! আমাদের ডিএনএর কোডিং টা কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখা।

এবার এই নেগেটিভ চিন্তাভাবনা যেগুলো আমাদের মনে বারবার আসে সেগুলো থেকে বেরোনোর উপায় কি?

উপায় আছে, সমস্যা আছে যখন, উপায় থাকতে বাধ্য।

নেতিবাচক চিন্তা যখন ব্রেন থেকে আসছে তখন ওষুধ টা দিতে হবে ব্রেনকেই। উপায় হলো ব্রেইনকে বোকা বানানো। আমাদের ব্রেন দুটো ভাগে বিভক্ত। ইনার মাইন্ড এবং আউটার মাইন্ড। ইনার মাইন্ড খুব চালাক। সত্যি কথা বলতে আমাদের থেকেও আমাদের ইনার মাইন্ড আরো বেশি স্মৃতিধর এবং চালাক। আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ইনার মাইন্ড রেকর্ড করে রাখে। এর আগে একবার অন্য একটা লেখায় বলেছি যে, আমাদের জীবনের সমস্ত ঘটনা ইনর মাইন্ড পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রেকর্ড করে রাখে। এই যে তথ্যগুলি রেকর্ড করে রাখে, সে গুলোকে যদি একটা ভিডিও আকারে সিনেমা হলে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সেই সিনেমাটা দেখতে সময় লাগবে প্রায় 600 বছর। ওদিকে আমাদের পরমায়ু থাকে মাত্র সত্তর আশি বছর। ইনর মাইন্ড সমস্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তথ্য সংগ্রহ করে রেখে দেয় মস্তিষ্কের ভিতর। এখানে আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলে দেওয়ার দরকার যে, আইনস্টাইনের ব্রেনে 100% কাজ করত আর আমার ব্রেইন এর 10% কাজ করে এটা কিন্তু একটা ভুল ধারণা। আমাদের সবার মগজ 100% কাজ করে। যার ব্রেনের 100% কাজ করে না সে অ্যাবনর্মাল বা স্পেশাল চাইল্ড বা প্যারালাইজড বা অ্যালজাইমার আক্রান্ত।

যাইহোক এই ইনার মাইন্ড এত চালাক চতুর হওয়া সত্ত্বেও আউটার মাইন্ড কে সে তার প্রভু বলে মনে করে। আউটার মাইন্ড যদি কোন কথা বারবার ইনার মাইকে বলে, তাহলে ইনার মাইন্ড তার প্রভু আউটার মাইন্ডের কথা শুনতে বাধ্য। এবং সে তার অসম্ভব শক্তি দিয়ে ওরকম পরিবেশ তৈরি করতে থাকে। আউটার মাইন্ড দ্বারা যদি ডাহা মিথ্যে কথাও বারবার ইনার মাইন্ড কে বলা হয় তাহলে সে সেটাকে সত্যি ভাবতে শুরু করে। সেই চিন্তা টাকে বাস্তবে পরিণত করার প্রচেষ্টা করতে থাকে। ইউনিয়ন মাইন্ডের কিছু অলৌকিক ক্ষমতা আছে যেমন, টেলিপ্যাথি, মিড ব্রেন পাওয়ার, থার্ড আই পাওয়ার বা আকর্ষণ করার শক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি, এগুলোকে শেখ কাজে লাগানো শুরু করে তার আউটার মাইন্ড বসের আদেশ পালন করার জন্য।

নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা এগুলো ইনার মাইন্ড থেকেই আসে। সুতরাং আমাদের কাজ হবে মনে মনে সবসময় এটা চিন্তা করা যে “কুচিন্তা যেটা আসছে সেটা মনের ভুল আসলে সবকিছু শুভ হবে।”

বারবার এরকম পজিটিভ চিন্তা কোরতে কোরতে ইনার মাইন্ড কে নেগেটিভ চিন্তা করাটাই ভুলিয়ে দিতে হবে। ইনার মাইন্ডের শক্তি অসম্ভব। সে যদি একবার বিশ্বাস করে যে সবকিছু শুভ হবে তাহলে জেলখানাতে বসেও আপনি রাজার জীবন যাপন করবেন।

দ্যা সিক্রেট নামে একটা ডকুমেন্টারি আছে, এই লেখা টি যারা পড়ছেন তারা অবশ্যই ইউটিউব এ টাইপ করে ডকুমেন্ট্রি টা পুরোটা দেখে নেবেন। আচ্ছা, না থাক! আমি এখানে ডকুমেন্টটি টা এমবেড করে দিচ্ছি। এটা যদি দেখেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমাদের গোটা জীবনটাই আমাদের চিন্তাভাবনার ফলাফল ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি যদি ব্যর্থ হই, আমি যদি গরিব হই, আমি যদি ক্ষমতাহীন হই, তাহলে সেটা আমার চিন্তাভাবনার কারণেই আমি হয়ে আছি। ক্রমাগত জোর করে মনকে পজেটিভ চিন্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আমার চিন্তাভাবনা টাকে যদি আমি পজিটিভ করতে পারি তাহলে আমি যেমন জীবন চাইছি সেটাই পাব। কেউ বিশ্বাস না করলেও সাইন্সের দিব্যি খেয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা হয়তো অলৌকঅলৌকিক ভাবে পাওয়া সম্ভব অথবা সাইন্স আবিষ্কার করতে পারেনি এমন কোন সূত্রের ভিত্তিতে পাওয়া সম্ভব।

অনেক কথা হল এবার তাহলে দ্যা সিক্রেট ডকুমেন্ট যেটা আমাদের দেখার পালা। বাংলায় নেই তাই হিন্দিতে দিলাম। ইনজিরি ভাষা থেকে মাসতুতো ভাষা হিন্দি টাকে আমি সেকেন্ড অপশনে রাখতে ভালোবাসি।