লিচুর পুষ্টিগুণ/ লিচুর জাত/ বাংলাদেশে লিচু চাষ পদ্ধতি

লিচু একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হিসেবে আমাদের সকলের কাছে অতি পরিচিত। আর এটি দক্ষিণ-পূর্ব চীনের কুয়াংতুং এবং ফুচিয়েন প্রদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এবং সেখানে ১১শ শতক থেকে এর চাষাবাদ হওয়ার কথা লিপিবদ্ধ আছে। 

চীন হল প্রধান লিচু উৎপাদনকারী দেশ, এরপরেই আছে ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ, মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো। লিচু গাছ একটি লম্বা চিরহরিৎ গাছ। এই গাছ থেকে রসাল শাঁসযুক্ত ছোট ছোট ফল পাওয়া যায়। ফলটির বহিরাবরণ অমসৃণ ও লালচে গোলাপি বর্ণের; যা খাওয়া যায় না। আবরণটির ভেতরে থাকে সুমিষ্ট রসাল শাঁস। বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবারের সাথে এটি পরিবেশন করা হয়।

লিচুর বীজের মধ্যে মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল গ্লাইসিন থাকে যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণে অপুষ্টিতে ভোগা ভারতীয় বা ভিয়েতনামি শিশুদের যারা লিচু খায় তাদের মধ্যে এনসেফেলোপ্যাথির প্রাদুর্ভাবজনিত হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়, যা মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। এর কারনে তাদের মৃত্যু ঘটারও নজির রয়েছে। 

লিচু চাষাবাদ 

লিচুচাষে বদলে গেছে ৩০ হাজার পরিবার

চীনের দক্ষিণাঞ্চল, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য ক্রান্তীয় অঞ্চল, ভারতীয় উপমহাদেশ ও আরও অনেক দেশের ক্রান্তীয় অঞ্চলে লিচু বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয়। কারণ  লিচু উৎপাদনের জন্য হিম-মুক্ত ক্রান্তীয় জলবায়ু এবং তাপমাত্রা −৪ °সে. এর নিচে থাকে না এমন পরিবেশ প্রয়োজ। তাই লিচু গাছ উৎপাদনে গ্রীষ্মের উচ্চ তাপ, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা সমৃদ্ধ জলবায়ু প্রয়োজন। 

লিচুর প্রায় ২০০ জাত রয়েছে। আর এদের মধ্যে ঠাণ্ডা ও গরম জলবায়ুতে যথাক্রমে ধীরে দ্রুত ও পরিপক্ব হয় এমন জাতও আছে। তবে চীনে বাণিজ্যিকভাবে শুধুমাত্র ৮ টি জাতেরই চাষ করা হয়ে থাকে। তাই সৌন্দর্যবর্ধক এবং ফলদায়ক গাছ হিসেবেও লিচু গাছ লাগানো হয়। এছাড়া  লিচু গাছের পরিণত ডালের বাকল কেটে কাঁটা স্থানে আবাদ মাধ্যম দিয়ে ঢেকে দিয়ে মূল বের হওয়ার জায়গা রেখে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখার মাধ্যমে কলম তৈরি করা হয়।

যেসব গাছ থেকে লিচুর ভাল ফলন পাওয়া যায় না, সেগুলোর কিছু ডাল কেটে দিলে সেগুলো বেশি ফল উৎপাদন করবে। আর এশিয়ার বাজারগুলোতে সাধারণত তাজা অবস্থায় লিচু বিক্রি করা হয়। এছাড়াও ফ্রিজে রাখলে লাল আবরণটি বাদামি হয়ে যায় কিন্তু তাতে স্বাদের কোন পরিবর্তন হয় না। তাছাড়া এটি বোতলজাত করেও সারা বছর বিক্রি করা হয়। কারণ এটি খোসাসহ শুকানো হলে, ফলের ভেতরের শাঁস সংকুচিত ও ঘন হয়ে যায়। 

লিচুর জাত 

পুষ্টিগুণে অনন্য বিদেশী ফল রাম্বুটান | Adhunik Krishi Khamar

বর্তমানে লিচুর অনেক জাত রয়েছে। তাই সেগুলোর নামকরণ ও শনাক্তকরণে যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। কারণ একই জাতের ফল ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠলে তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য হতে পারে। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় জাতগুলোর নামও আলাদা হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া সহ এশিয়ার দক্ষিণপূর্ব দেশগুলোতে প্রধান জাতগুলোর ক্ষেত্রে চীনা নামটিই ব্যবহার করা হয়। 

ভারতে একডজনেরও বেশি জাতের লিচু চাষ করা হয়। আর “গ্রোফ” জাতটি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে চাষ হওয়া অন্য জাতগুলো চীন থেকে আমদানি করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যে “গ্রোফ” জাতটিকে উন্নয়ন করা হয়েছে। আর উৎপাদনের অঞ্চল ও দেশের উপর ভিত্তি করে লিচুর অনেক জাতই বিখ্যাত। 

চীনের বিখ্যাত লিচুর জাত

চলতি মাসেই বাজারে উঠবে দিনাজপুরের লিচু

সানিয়েহং, বৈতানজিঙ, বায়লা, শুইডং, ফিজিক্সিয়াও, ডাজৌ, হিয়ে, নিউমিকি, গুইই, হুয়াঝি, লানজু এবং চেনজি। ভিয়েতনামে সবচেয়ে বিখ্যাত জাত হল ভাই থিয়েউ হাই ডুওং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মরিশাস, ব্রুউস্টার এবং হাক আইপিসহ বেশ কয়েকটি চাষের উপর ভিত্তি করে উৎপাদন করা হচ্ছে।  ভারতে একডজনেরও বেশি জাতের চাষ করা হয়, যেগুলোর মধ্যে আছে শাহী, দেহরা দুন, আর্লি লার্জ রেড, কালকাটিয়া, গোলাপ-সুগন্ধি।  

লিচুর পুষ্টিগুণ 

পাকা ও মিষ্টি লিচু চেনার উপায়

কাঁচা লিচুর শাঁসে ৮২% পানি, ১৭% শর্করা, ১% আমিষ ও সামান্য স্নেহ থাকে। কাঁচা লিচুর শাঁসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে; প্রতি ১০০ গ্রামে ৭১ মি.গ্রাম যা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়তার ৮৬%। কিন্তু এছাড়া আর কোন পুষ্টি উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে না।

উপসংহার

লিচু অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। আর বাংলাদেশে লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। এই কারণে বাংলাদেশেও বর্তমানে লিচুর চাষ হয়। তবে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এই লিচুর চাষ করা হয় না। তাই বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে লিচুর দাম একটু চওড়া। আমাদের এই ফলটি সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে রাখতে হবে। 

 

Leave a Comment