সার্বজনীন পেনশন রেজিষ্ট্রেশন, আবেদন এবং নিবন্ধন করার নিয়ম আমাদের ওয়েবাসাইটে আজ আলোচনা করা হবে । বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার দ্বারা এক নতুন পেনশন প্যাকেজ বের করেছে যার ফলে বাংলাদেশ এর সকল নাগরিক এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবে এবং সবাই এই প্যাকেজটি নিতে পারবে । যার ফলে বেসরকারি কর্মকর্তারা সহ একজন ছাত্র এই প্যাকেজটি নিতে পারবে । তবে অনেকেই এই পেনশন সম্পর্কে অবগত নয় । তাই আজকের আমাদের এই লিখার মাধ্যমে সার্বজনীন পেনশন রেজিষ্ট্রেশন, আবেদন এবং নিবন্ধন করার নিয়মসহ যাবতীয় যা কিছু রয়েছে সকল কিছু আলোচনা করা হবে ।
সার্বজনীন পেনশন কি ?
পেনশন মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তারা পেয়ে থাকে । আর এই পেনশন মূলত নসরকারী কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন থেকে একটি সল্প পরিমান টাকা কেটে নিয়ে সরকার তা জমা করতে থাকে যার ফলে সেই সরকারী কর্মকর্তা অবসর গ্রহন করার পরও যেন টাকা পেতে থাকে এবং তাদের আয় যেন আসতে থাকে । তবে এই সুবিধার আওতায় অর্ন্তভুক্ত ছিল শুধু সরকারী কর্মকর্তারা আর তাই অনেক চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়িকরা পর্যন্ত অবসর গ্রহন করার পর তাদের আয় বন্ধ হয়ে থাকে নাহলে তাদেরকে অন্য কোনো কাজ করতে হয় জীবিকা চালানোর জন্য । আর তাই সরকার দ্বারা সার্বজনীন পেনশন এর ঘোষণার মাধ্যমে সবাইকেই সুযোগ করে দেয়া হয়েছে পেনশন নেয়ার । আর এই পেনশনটি প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে ৫০ বছর অব্দি সকলেই নিতে পারবে । আর এই পেনশন এর মোট ৪ ধরনের প্যাকেজ রয়েছে । সেইগুলো আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ।
সর্বজনীন পেনশন প্যাকেজ সমূহ
সর্বজনীন পেনশন প্যাকেজ এর মোট ৪টি প্যাকেজ রয়েছে । আর এই ৪টি প্যাকেজ এর মধ্যে থেকে আপনাকে এই পেনশন এর সেবা গ্রহন করতে হবে । আর এই ৪টি প্যাকেজগুলো হলো ঃ
-
প্রবাস
-
প্রগতি
-
সুরক্ষা
-
সমতা
আর ঠিক এই ৪টি প্যাকেজ এর মধ্যে থেকে আপনাকে প্যাকেজ এর সেবা গ্রহন করতে হবে তাছাড়া আপনি নিতে পারবেন না ।
প্রবাস পেনশন প্যাকেজ বিবরণ
প্রবাস পেনশন প্যাকেজ মূলত প্রবাসীদের জন্য কারণ আমাদের দেশে প্রায় অনেক মানুষ বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে এবং দেশের জন্য ও পরিবারের জন্য দিনরাত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করছে কিন্তু তাদের কাজের একটি সময়সীমা রয়েছে এরপর তাদেরকে দেশে ফিরে আসতে হবে আর এর ফলে তাদের অনেকেরই দেশে এসে নতুন ভাবে কিছু না কিছু কাজ করতে হবে উপার্জন এর জন্য তবে এই প্রবাস পেনশন প্যাকেজ এর মধ্যে যদি প্রবাসিরা পেনশন এর সেবা নিতে থাকে তবে তাকে আর কোন চিন্তা করতে হবে না তাছাড়া তাদের পরিবারকেও চিন্তা করতে হবে না । আর আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারকেও তাক্কা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না । আর নিচে আমরা প্রবাস পেনশন প্যাকেজ বিবরণ এবং হিসাব দিয়ে দিলাম ।
প্রগতি প্রবাস পেনশন প্যাকেজ বিবরণ
প্রগতি প্রবাস পেনশন প্যাকেজ মূলত বেসরকারি কর্মচারী/প্রতিষ্ঠান এর জন্য করা হয়েছে । আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ বেসরকারি কর্মচারী হিসেবে উপার্জন করছে । কিন্তু তাদের বেতন থেকে কিছু টাকা কেটে নিলেও তাদেরকে অবসর গ্রহন করার পর কেটে নেয়া টাকা যেইটা নেয়া হয়েছিলো সেইটা দিয়ে দেয়া হয় কিন্তু তাদের কে কোন রকম পেনশন দেয়া হয়ে না আর তারা কোন রকম পেনশন স্কিম প্যাকেজও পেয়ে থাকে না তাই এই সার্বজনীন পেনশন তাদের কে অনেক বড় একটি সুযোগ দিয়ে দিবে । আর তাদেরকেও আর কোন চিন্তাভাবনা করতে হবে না । আর নিচে আমরা প্রগতি পেনশন প্যাকেজ বিবরণ এবং হিসাব দিয়ে দিলাম ।
সুরক্ষা পেনশন প্যাকেজ বিবরণ
এই পেনশন এর মধ্যে শুধু তারাই অর্ন্তভুক্ত যারা নিজেদের থেকে কোন উপার্জন করে বা ব্যবসা বানিজ্য করে থাকে । তাদের জন্যও এই পেনশন স্কিম খুবই গুরুত্বপুর্ন । কারণ তারাও সারাজীবন ব্যবসা করবে না যার ফলে তাদের যদি নিজস্ব একটি সেভিংস থাকে বা পেনশন পেয়ে থাকে তবে তারাও নিশ্চিন্তে উপার্জন করতে পারবে । আর এইখানে আমরা সুরক্ষা পেনশন প্যাকেজ বিবরণ এবং হিসাব দিয়ে দিলাম ।
সমতা পেনশন প্যাকেজ বিবরণ
এই প্যাকেজটি মূলত স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের জন্য হয়ে আছে । আমাদের দেশে অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে । অনেকে দিনমজুর হিসেবে আয় করে তবে একটি সময় যাওয়ার পর তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায় । শারীরিক ভাবে হয়তো দুর্বল হয়ে ওঠে আবার অনেক রকম বিপদেরও সম্মুখিন হয়ে থাকে আর তাই তাদের জন্য এই পেনশন স্কিমটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যেইখানে সরকার থেকে তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে । আর এই সমতা পেনশন প্যাকেজ বিবরণ এবং হিসাব নিচে দেয়া হলো ।
কিভাবে সার্বজনীন পেনশন (upension.gov.bd) রেজিষ্ট্রেশন করবেন ?
রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য আপনাকে কিছু ধাপ অনুসর করতে হবে । আর আমরা এইখানে সেই ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো । তাই আপনি আমাদের দেয়া ধাপগুলো ভালোমতো অনুসরন করতে পারলেই আপনার রেজিষ্ট্রেশন করা হয়ে যাবে । নিচে রেজিষ্ট্রেশন এর ধাপ দেয়া হল ।
-
- আপনাকে সবার আগে এই www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে যেতে হবে এরপর পেনশনার রেজিষ্ট্রেশন এর ওপর ক্লিক করতে হবে ।
-
- এরপর উপরে দেয়া ছবির মতো একটি পেজ আসবে সামনে ” সেইখানে আপনাকে আমি সম্মত আছি” তে ক্লিক করতে হবে । আর ক্লিক করার পর নিচে দেয়া ছবির মতো নতুন একটি পেজ আসবে আপনার সামনে ।
-
- উপরের দেয়ার ছবির মতো পেজ আসার পর আপনাকে সকল তথ্য দিতে হবে এরপর ক্যাপচা পূরণ করে পরবর্তী পেইজ এ ক্লিক করতে হবে । এরপর নতুন পেইজ আসবে আপনার সামনে ।
-
- উপরের ছবির মতো পেইজ আসার পর আপনাকে স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য,নমিনি তথ্য গুলো পূরণ করতে হবে । তবে আপনাকে এই তথ্যগুলো খুব সাবধানে পূরণ করতে হবে যেনো কোন ভুল না হয় । আর সবকিছু হয়ে গেলে সম্পুর্ন ফর্ম এ গিয়ে ভালোমতো চেক করে নিবেন
- এরপর সাবমিত করে দিবেন আর সম্পুর্ন ফর্মটি ডাউনলোড করে নিবেন ।
ঠিক ছবিগুলোর মতোই আপনাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে আর যদি আপনি তাও বুঝতে না পারেন বা ভুলে গিয়ে থাকেন তবে নিচে দেয়া ছবিটি ডাউনলোড করে রেখে দেন । আর সকল পদ্ধতিগুলোই এক আপনাকে শুধু ভালোমতো ফর্ম পুরন করতে হবে । নিচে আমরা সেই ছবিটিও দিয়ে রাখলাম ।
সার্বজনীন পেনশন শর্তাবলি
সার্বজনীন পেনশন এর কিছু শর্ত রয়েছে । আপনি যদি সেই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন তবেই আপনি সার্বজনীন পেনশন প্যাকেজটি নিতে পারবেন আর সার্বজনীন পেনশন নেয়ার পরও কিছু শর্ত থাকবে যেইগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে ।
- আপনার বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর এর মধ্যে হতে হবে ।
- আপনি যদি সরকারী কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তবে আপনি এই সার্বজনীন পেনশনটি নিতে পারবেন না ।
- আপনি যদি সার্বজনীন পেনশন এর চাঁদা ১০ বছরের কম দিয়ে মারা যান তবে আপনার নমিনি আপনার দেয়া চাঁদা ফেরত পাবে তবে আপনি যদি ১০ বছর চাঁদা দেয়ার পর মারা যান তবে আপনার নমিনি চাইলে সার্বজনীন পেনশনটি চালু রাখতে পারবে তার জন্য তাকে চাঁদা দিতে হবে ।
- আপনি যখন থেকে এই সার্বজনীন পেনশন চালু করবেন তখন থেকে ৬০ বছর হওয়া অব্দি যত বছর বাকি রইবে ঠিক ততবছর পর্যন্ত আপনি প্যাকেজটি নিতে পারবেন বা তার কম।
- আপনি ৩ মাস যদি চাঁদা না দিয়ে থাকেন তবে আপনার পেনশনটি বন্ধ হয়ে যাবে আর যদি চালু করতে চান তখন আপনাকে জরিমানা দিয়ে চালু করতে হবে ।
- আপনি চাইলে চাঁদার টাকা বাড়াতে পারবেন আবার কমাতে পারবেন ।
ঠিক এইগুলোই মূলত শর্ত যেইগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে সার্বজনীন পেনশন এর জন্য ।
সার্বজনীন পেনশন নেয়া উচিত কি না ?
বাংলাদেশ সরকার সার্বজনীন পেনশন চালু হওয়ার পর থেকে অনেকেরই একটাই কথা নেয়া উচিত হবে কি না। তবে আপনি যদি ৪ ক্যাটাগরির মধ্যে একজন হন তবে আপনার অবশ্যই নেয়া উচিত । কারণ আমরা সবাই চায় আমাদের আর আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সবসময় উজ্জ্বল হোক । তবে আমাদের অবসর নেয়ার পর আমাদের আর্থিক দিক বিবেচনা করে এই পেনশনটি নেয়া উচিত । এতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ এ আর্থিক ভাবে অভাব দেখা দিবে না আবার আপনার অবর্তমানে আপনার নমিনিও আপনার টাকা পাবে । তাই আপনি চাইলে এই সার্বজনীন পেনশন নিতে পারেন ।
শেষ কথা
আশা করি আমাদের দেয়া সকল সার্বজনীন পেনশন রেজিষ্ট্রেশন, আবেদন এবং নিবন্ধন করার নিয়ম তথ্য আপনার কাজে দিয়েছে। তবে আপনি যদি এই সার্বজনীন পেনশনটি নিতে চান তবে আমাদের দেয়া ধাপগুলো অনুসরন করে খুব সহজে নিতে পারবেন । আর যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখিন হয়ে থাকেন তবে আমাদেরকে অবশ্যই জানাবেন তবে আপনাকে সার্বজনীন পেনশনটি নেয়ার সময় আপনার বয়সের সাথে মিল রেখে আমাদের দেয়া হিসাব দেখে হিসাব করে নিতে হবে দিয়ে আপনার কাছে সেরা প্যাকেজটি গ্রহন করে নিতে হবে । এইভাবে সার্বজনীন পেনশন নেয়া হয়ে থাকে ।