0

বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই।

বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “বিদ্রোহী ” কবিতাটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা থেকে সংকলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা “বিদ্রোহী “।”বিদ্রোহী” বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা। রবীন্দ্রযুগে এই কবিতার মধ্যে এক প্রাতিম্বিক কবিকণ্ঠের আত্মপ্রকাশ ঘটে – যা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক বিরল স্মরণীয় ঘটনা। বিদ্রোহী কবিতায় আত্মজাগরণের উন্মুখ কবির সদম্ভ আত্মপ্রকাশ ঘােষিত হয়েছে। কবিতায় সর্গবে কবি নিজের বিদ্রোহী কবিসত্তার প্রকাশ ঘটিয়ে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের শাসকদের শাসন ক্ষমতার ভীত কাপিয়ে দেন। এই কবিতায় সংযুক্ত রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। কবি সকল অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পুরাণের শক্তি উৎস থেকে উপকরণ উপাদান সমীকত করে নিজের বিদ্রোহী সত্তার অবয়ব রচনা করেন। কবিতার শেষে রচিত হয় অত্যাচারীর অত্যাচারের অবসান কাম্য। বিদ্রোহী কবি উৎকণ্ঠ ঘােষণায় জানিয়ে দেন যে, উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দনরােল যতদিন পর্যন্ত প্রশমিত না হবে ততদিন এই কবিসত্তা শান্ত হবে না। এই চির বিদ্রোহী অভ্রভেদী চির উন্নত শিররূপে বিরাজ করবে।

বিদ্রোহী কবিতায় কবি নিজেকে যে যে রুপে উপস্থাপন করেছেনঃ

কবি কবিতার শুরুতেই বলেছেন তার মস্তক উৰ্ধ কারন তিনি আত্ম জাগরণে উন্নখ।হিমালয় পর্বত তার মস্তক পর্যবেক্ষণ করে নিজের শিখর নত করে রেখেছে।

কবি বলেছেন তিনি চিরদুর্দম যাকে দমন করা যায় না,তিনি দুর্বিনীত যে অন্যায়কারীর সাথে বিনীত ভাব দেখান না, তিনি নৃশংস অর্থাৎ তিনি দুঃসাহসিক ভাবে অন্যায়কারীকে দমন করেন।

“আমি অনিয়ম উশৃংখল” -দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন তিনি বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা প্রণীত কোনাে নিয়ম বা আইন শৃংখলা মানেন না।

“আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লােকালয়, আমি শশ্মান”- দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন তার সত্তা পরিপূর্ণ। তিনি যেমন নিজ হাতে যেমন কিছু গড়ে তুলতে পারেন তেমনি তিনি সব কিছু আবার ধংস ও করতে পারেন।তিনি নিজেকে লােকালয়ের সাথে তুলনা করেছেন যেখানে রয়েছে জন জীবনের কোলাহল অন্যদিকে তিনি নিজেকে বলেছেন, শশ্মান যেখানে শুধুই দেখা যায় লাশের মিছিল।

আমি বেদুইন দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন তিনি সুদূর আরবের ভবঘুরে এক জাতির মতােই। তার নেই কোনাে বাসস্থান নেই কোনাে পিছুটান। শুধুই সময়ের সাথে ছুটে চলাই যার ধর্ম।

কবি নিজেকে চেঙ্গিস খান বলেছেন। আসলে এখানে কবি বুঝাতে চেয়েছেন তিনিও চেঙ্গিস খানের মতােই একজন দুর্ধর্ষ যােদ্ধা। যিনি নিজের জাতিকে রক্ষার জন্য জীবন যেমন দিতে পারেন, তেমনিই জীবন নিতেই পারেন।

নজরুল নিজেকে বলেছেন তিনি অবমানিতের মরম বেদনা অর্থাৎ একজন ব্যাক্তি যার সাথে অবমাননা করা হয়েছে তার বেদনা অনেক তীব্র। নজরুল নিজেকে সেই বেদনার সাথে একাত্বতা করে দিতে পেরেছেন কারণ তিনি অবমানিতের বেদনা অনুভব করতে পারতেন।

তিনি আরাে বলেছেন, তিনি পথিক কবির গভীর রাগিনী, এখানে তিনি পথিক কবি বলতে বাউল কে বুঝিয়েছেন, বাউল পথে পথে হেঁটে তার একতারায় তােলেন গভীর সুর।

কবি নিজেকে নিদাঘ তিয়াশা বলেছেন, নিদাঘ অর্থ গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রখরতায় চারিদিক যেন শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। এমন সময় সকল জীব থাকে খুব তৃষ্ণার্ত। আর এই তৃষ্ণা এতটাই তীব্র যে তৃষ্ণা মিটানাের জন্য প্রাণীকুল সর্বদা সচেষ্ট থাকে। কবি নিজেকে তাই গ্রীষ্মের তৃষ্ণা বলেছেন।

কবি নিজেকে অর্ফিয়াসের বাঁশরি বলেছেন। দেবতা অর্ফিয়াস তার বাঁশির সুরের মায়াজালে সকলের মন জয় করতেন।কবিও নিজেকে সেই বাঁশির মতাে বলেছেন যে সবার মন জয় করতে পারে।

কবি নিজেকে বলেছেন পরশুরামের কঠোর কুঠার। পরশুরাম পিতার আদেশে নিজ মাতাকে কুঠার দ্বারা হত্যা করেন। এখানে পরশুরামের কঠোর হৃদয়ের আভাস পাওয়া যায়। কবিও তেমনি নিজেকে পরশুরামের কুঠার এর সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন ক্ষেত্র সাপেক্ষে কবি হয়ে উঠতে পারেন অনেক কঠোর।

কবিতায় ব্যবহৃত ঐতিহ্য ও পুরাণের ব্যবহারঃ

মহাদেব মহাপ্রলয়ের সময় তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন, গজাসুর ও কালাসুরকে বধ করেও তিনি তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন। এই তান্ডব নৃত্যকলার উদ্ভাবক হিসেবে তাকে নটরাজ ডাকা হয়।

পৃথু ছিলেন অত্রি বংশের অত্যাচারী রাজা বেন এর পুত্র। রাজা বেন এর মৃত্যুর পর তার ডান বাহু থেকে পৃথুর জন্ম। প্রজা কল্যানার্থে পৃথু পৃথিবীকে বশ করেন। তার রাজত্বকে বলা হয় পৃথু।

ভূলােক মানে পৃথিবী, দ্যুলােক মানে স্বর্গ, আর গােলক মানে বিষ্ণুলােক অথবা স্বর্গে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের বাসস্থান। কৃষ্ণ-রাধার বৃন্দাবন এখানেই অবস্থিত। ঋগ্বেদে রুদ্র বজ্রের দেবতা, গ্রীক মিথের ‘থর’ এর মত। ক্ষেপে গেলে বজ্র ছুড়ে মারেন। ইনি ব্রহ্মার পুত্র। তার ক্রোধে নেমে আসে ধ্বংস আর মহামারী।

ভীম পাঁচ পান্ডবদের একজন। কুন্তির গর্ভে এবং বায়ুর ঔরসে এর জন্ম। দুর্যোধন তাকে হত্যার জন্য তার খাবারে বিষ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পানিতে ফেলে দেন। পানিতে নাগরাজ বাসুকীর কৃপায় ভীম বেঁচে যান এবং আরাে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন। কবি ‘ভাসমান মাইনে’র সাথে ভীম বিশেষন সম্ভবত একারনের এনেছেন। ‘

ধুর’ শব্দের অর্থ জটাভার বা ত্রিলােকের চিন্তাভার। শিব তার মাথায় জটাভার ধারণ করেন। অথবা ত্রিলােকের চিন্তাভার ধারণ ও বহন করেন। এসকল ভার বহন ও ধারণের কারণে তারই নাম ধূর্জটি।

সাগ্নিক মানে যে আগুন সবসময় জ্বলে। জমদগ্নি হলেন চার প্রকার বেদেই পন্ডিত বৈদিক ঋষি। রেনুকা ছিলেন তার স্ত্রী। একদিন গােসল করতে গিয়ে রাজা চিত্ররথকে তার স্ত্রীদের সাথে জল-ক্রীড়া করতে দেখে রেনুকা কামােত্তেজিত হয়ে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রীর চেহারা দেখে জমদগ্নি ভুল সন্দেহ করে বসেন এবং রেনুকাকে হত্যা করতে তার পুত্রদের নির্দেশ দেন। একে একে চার পুত্র অপারগতা প্রকাশ করলে ক্রোধান্ধ জমদগ্নি তাদের সবাইকে অভিশাপ দিয়ে পাথর করে দেন।

ইন্দ্রানী ইন্দ্রের স্ত্রী এবং তার ‘সুত’ বা পুত্রের নাম জয়ন্ত। রমায়নে ইনি বিক্রমের সাথে রাক্ষসসেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।

একদা সমুদ্র মন্থনের ফলে সমুদ্রের তলা থেকে ভয়ঙ্কর বিষ উঠে আসে, যাতে পৃথিবী ধংসের উপক্রম হয়। ব্রহ্মার অনুরােধে শিব বা মহাদেব সেই বিষ শুষে নেন। বিষের প্রভাবে তার গলা নীল হয়ে যায়। তাই তাকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ বা কৃষ্ণ কণ্ঠ।

ব্যোমকেশ মানেও শিব। স্বর্গ থেকে গঙ্গায় অবতরন কালে তার জটা আকাশময় ছড়িয়ে গিয়েছিল বলে এই নাম। অযােধ্যার রাজা সগরের অশ্বমেধযজ্ঞের অশ্ব চুরি করেছিলেন ইন্দ্র। সেই অশ্ব খুজতে খুজতে সগরের ৬০,০০০ সন্তান পাতালে কপিলের আশ্রমে গিয়ে তা খুঁজে পায়। কপিল মুনিকে ঘােড়াচোর ভাবার কারনে কপিল মুনি তাদের পুড়িয়ে ছাই করে দেন। একমাত্র গঙ্গার জলের ছােয়া পেলে এরা আবার বেঁচে উঠবেন। কিন্তু গঙ্গা তাে থাকেন স্বর্গে, শুরু হল তাকে পৃথিবীতে আনার উপাসনা। সগর ব্যর্থ, অংশুমান ব্যর্থ, দীলিপও ব্যর্থ। অবশেষে ৪র্থ পুরুষ ভগীরথ ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলেন। অতঃপর শিবের সহায়তায় গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল।

চেঙ্গিশ খান ছিলেন মঙ্গোলিয়ান সম্রাট এবং দুর্ধর্ষ সমরনায়ক। যুবক চেঙ্গিসের স্ত্রীকে অপহরন করে নিয়ে যায় আরেক গােত্র প্রধান। চেঙ্গিস খান তার নিজ গােত্রকে পুনর্গঠিত করে অপহরনকারী গােত্রকে নৃশংস ভাবে পরাস্ত করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। এরপর অন্যান্য মােঙ্গল গােত্রদের একীভুত করে অর্ধেক বিশ্ব জয় করেন।

ইসলাম ধর্মমতে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরুর আগে ইস্রাফিল নাম্মী ফেরেস্তা শৃঙ্গার বাজাবেন।

পিনাক-পানি শিবের অন্য নাম। পিনাক নামে তার ব্যবহৃত সরঞ্জাম যা যুদ্ধে ধনুক হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন, অন্যসময় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে। ধর্মরাজ যমের অন্যনাম, যিনি নরকের অধীশ্বর দেবতা এবং দেবগনের মধ্যে সবচে পুন্যবান। দন্ডের সাহায্যে ইনি জীবের প্রান সংহার করেন।

দুর্বাসা ক্ষ্যাপাটে এক মুনি। এমন ক্ষ্যাপা যে নিজের স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন যে তার শত ত্রুটি তিনি মার্জনা করবেন, এবং ঠিক ১০১ তম বার শাপ দিয়ে পুরিয়ে ছাই করে ফেলেছিলেন। এর শাপে ইন্দ্ৰ শ্ৰীষ্ঠ হন, শকুন্তলা দুষ্মন্ত কর্তৃক পরিত্যাক্তা হন, মানে পান থেকে চুন খসলেই তিনি রেগে গিয়ে শাপশাপান্ত দিয়ে অস্থির করে ফেলতেন।

বিশ্বামিত্র ছিলেন ব্রহ্মাৰ্ষি, যিনি ক্ষত্রিয় হয়ে জন্মেও তপস্যাবলে ব্রাহ্মন হয়েছিলেন। তার অধ্যবসায় দৃষ্টান্তমূলক।

রাহু এক দানব, যিনি দেবতা সেজে কৃষ্ণের দেয়া সুধা পান করার সময় চন্দ্র আর সুৰ্য্যের কারনে ধরা পরে যান। ক্রুদ্ধ বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্রের আঘাতে এর মাথা কেটে ফেললেও স্বর্গসুধা পানের কারনে ততক্ষনে সে অমরত্ব লাভ করেছে। সেই থেকে মাথার নাম রাহুই থাকল, আর দেহের নাম হল কেতু। রাহু চান্স পেলেই চন্দ্র সুৰ্য্যকে গিলে ফেলে গ্রহন ঘটায়।

অর্ফিয়াস বা ওর্ফেউস একটি গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র, যিনি বাদ্যযন্ত্রের সুরের মুর্হনায় পাথরেও প্রান সঞ্চার করতে পারতেন।
শ্যাম মানে কৃষ্ণ, ইনিও তার বাঁশি বাজিয়ে মুগ্ধ করতেন।

যুগল কন্যা সমুদ্র মন্থনের সময় উখিত কৌস্তভ মনি যা বিষ্ণু ও কৃষ্ণ বক্ষে ধারন করতেন।

ছিন্নমস্তা দশ মহাবিদ্যা বা দশ প্রকার শক্তির রুপের একটি। চন্ডী অসুর বধের সময় দুর্গার এক ভীষন রূপ।

পরশুরাম জমদগ্নি ও রেনুকার পঞ্চম পুত্র।কুঠার ছিল তার প্রিয় অস্ত্র। একবার ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্য জমদগ্নির আশ্রমে এসে আশােভন আচরন করেন। পরশুরাম তখন আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন না। ফিরে এসে ঘটনা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি কার্তবীর্যকে ধাওয়া করেন, এবং পরে হত্যা করেন। এতে কার্তবীর্যের পুত্ররা জমদগ্নিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার শােধ নেন। এবার পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে সারা পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নিঃশ্চিহ্ন করতে পন করেন এবং পরপর একুশ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করে তবে থামেন।

বলরাম ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই। গদা যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তার প্রিয় অস্ত্র ছিল হল বা লাঙ্গল, তাই তাকে হলধরও বলে। কুরুক্ষত্রের যুদ্ধে ইনি নিরপেক্ষ থাকলেও, কংস হত্যায় তিনি কৃষ্ণ কে সহায়তা করেছিলেন। দুর্যোধন ও ভীমের গদাযুদ্ধে ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের উরু ভেঙ্গে দিলে বলরাম যারপরনাই ক্ষিপ্ত হয়ে পান্ডবদের আক্রমন করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাকে শান্ত করেছিলেন।

ভৃগু প্রাচীন সপ্তর্ষিদের অন্যতম। একবার মুনিঋষিরা ব্রহ্মা, শিব আর বিষ্ণুর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা মিমাংশার জন্য ভৃগুর দ্বারস্থ হন। ভৃগু প্রথমে ব্রহ্মা ও পরে শিবের সাথে দেখা করেন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ক্ষেপিয়ে দেন। সবশেষে তিনি বিষ্ণুর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখেন বিষ্ণু ঘুমাচ্ছেন। তখন তাকে জাগাতে তিনি তার বুকে লাথি মারেন। ঘুম ভেঙ্গে বিষ্ণু ভৃগুর এই ধৃষ্টতায় রাগান্বিত না হয়ে বিনয় প্রদর্শন করতে থাকলে, ভৃগু বিষ্ণুকে শ্রেষ্ঠ বলে মত দেন।

কবির বিদ্রোহী সত্তা সমাজের যেসব অসাম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, সেগুলাে চিহ্নিতকরণঃ

কবি তার বিদ্রোহী কবিতায় তার বিদ্রোহী সত্তার আবির্ভাব অনেক বলিষ্ঠ ভাবে এবং উপমার দ্বারা প্রকাশ করেছেন। এই কবিতায় কবি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজে নিত্যদিন ঘটে যাওয়া অসমতা গুলাের বিরুদ্ধে। এই কবিতাতে কবি লিখেছেন ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন কে কেন্দ্র করে, ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ জনগনের উপর করেছে অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন। অত্যাচারে নিষ্পেষিত হয়ে মানুষ হয়ে যায় ভীতু কাপুরষ। আর হারিয়ে ফেলে। নিজের “আমিত্যকে”,নিজের সত্তাকে দিয়ে দেয় বিসর্জন, কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যায় অবিচার সহ্য না করে প্রতিবাদ করে, হয়ে উঠে বিদ্রোহী। নজরুল,তেমনই একজন। এই কবিতাটিতে তার বিদ্রোহী মনােভাবের বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে নজরুল সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তির কথা বলেছেন। নজরুল একজন অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, তার মতে, মানুষে মানুষে ধর্মের কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাত হওয়া উচিত না। প্রত্যেক ধর্মের প্রতি ছিল নজরুলের গভীর জ্ঞান ও শ্রদ্ধা। এইজন্যই তাে কবি তার কবিতায় হিন্দু পুরাণ থেকে যেমন উপমা ব্যবহার করেছেন,তেমনিই করেছেন ইসলামিক ইতিহাস থেকে।তিনি আরাে যেসকল অসাম্যের কথা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে জাতি বিদ্বেষ, বর্ণ বিদ্বেষ, মানুষের মাঝে শ্রেণী বৈষম্য। মানুষ মাত্রই সৃষ্টির সেরা জীব। বৈচিত্রই মানুষকে করে অনন্য। কিন্তু সমাজে কিছু নিচু মানসিকতার মানুষ আছে যারা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে ধর্ম, বর্ণ,জাতি, গােত্র,পেশা ইত্যাদি বিবেচনা করে।কবি নজরুল সমাজের এসকল অসাম্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিরােধিতা করেন।

বর্তমান সময়ের নানারকম অসাম্যের প্রেক্ষাপটে “বিদ্রোহী’ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা যাচাইঃ

বিদ্রোহী কবিতায় কবি তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন অসমতা তুলে ধরেছেন। বর্তমান সময়ে আমরা সমাজে নানা রকম অসমতা দেখতে পাই। এসকল অসাম্যের প্রেক্ষাপটে “বিদ্রোহী” কবিতার প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করা হলােঃ

বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে মানুষে মানুষে সাম্প্রদায়িকতা,দ্বিধাদ্বন্দ।কারনে অকারণে একে অপরকে কাদা ছােড়াছুড়ি করছে। সমঝোতা ও সহমর্মিতা মানুষের মাঝে খুজে পাওয়া যায় না।

সমাজের মানুষ আজও শ্ৰেণী বৈষম্যের শিকার। উচ্চ বিত্তশালী লােক নিম্নবিত্তশালীদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে। নিম্নবিত্ত পরিবার গুলােকে কোন প্রকার সুযােগসুবিধা দেয়া হয় না। যদিওবা দেয়া হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বড়লােক আরও বড়লােক হচ্ছে আর গরীব হচ্ছে আরও গরীব। ন্যায্য পাওনা দেয়া হলে দরিদ্রতা তাদের গ্রাস করতে পারতাে না ।

আরও দেখা যায় জাতি বিদ্বেষ। ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠীরা যে আমাদের মতােই এদেশের নাগরিক তা অনেকে মানতেই চায় না। তাদেরকে সকলে ছােট চোখে দেখে,অযােগ্য মনে করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিক থেকে তারা পিছিয়ে পড়ার কারণ আমাদের সকলের অসচেতনতা। শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের সুযােগ সুবিধা খুবই সীমিত। অন্যদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবেও তাদের অধিকার আদায় বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নেই।

আর না বললেই নয়। বর্ণ বৈষম্যতাে যেন সমাজে খুটি গেড়ে ফেলেছে। গায়ের রঙ যদি হয় কাল বা শ্যামলা তাহলে জীবনের প্রতিটি পদে তাদেরকে অপমানের সম্মুখীন হতে হয়। তাদের যােগ্যতা দ্বারা বিচার করা হয় না,বিচার করা হয় বাহ্যিকতা দেখে। অনেকে তাে ঘৃণা করে যেন তারা মানুষ নয় পশু।

তাহলে আমরা বুঝতে পারছি, “বিদ্রোহী” কবিতায় কবি পূর্বেই যেসব অসাম্যের কথা বলে গিয়েছেন,বর্তমান সমাজে আমরা সেসকল অসাম্য দেখতে পাই।তাই এই প্রেক্ষাপটে মানুষকে সচেতন করার জন্য “বিদ্রোহী” কবিতার কোন বিকল্প নেই।

Get All HSC Bangla Assignment Answer