0

অনাসক্ত কর্ম সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমূহ তোমার ব্যক্তি জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবে তার একটি বর্ণনা তুলে ধরো।

Class 6 Hinduism 7th Week Assignment Question

গীতায় ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে এবং ফলের আশা না করে নিজের কাজ করতে বলা হয়েছে। কাজটাই বড়, ফল যাই হোক। কর্মফলের কথা চিন্তা করতে থাকলে কাজের প্রতি একাগ্রতা আসে না। এভাবে ফলের আশা না করে কাজ করাকে বলে নিষ্কাম ফল।

এ প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- “ কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। মা কর্মফলহেতুর্ভুর্মা সঙ্গেছষ্ণকর্মণি” – গীতা: ২/৪৭

অর্থাৎ, কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলের কখনো তোমার অধিকার নেই। কর্মফলের প্রতি আসক্ত হয়ে যেন নিজ কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করোনা।

অর্জুন আত্মীয়দের সাথে যুদ্ধ করতে চাইছেন না, এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। এর কারণ আমাদের জন্ম এবং মৃত্যু ঈশ্বরের হাতে। সুতরাং, কারো মৃত্যু অর্জুনের যুদ্ধ করা বা না করার ওপর নির্ভর করে না। অর্জুন নিজেই কি জানেন কখন তার মৃত্যু ঘটবে। তাছাড়া ঈশ্বর আত্ম রূপে আমাদের মধ্যে থাকেন। তাই মৃত্যুর মাধ্যমে দেহের ধ্বংস হলেও আত্মার ধ্বংস হয় না।

এক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

ন জয়তে, ম্রিয়তে বা কদাচিৎ
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ
অজো নিত্যঃ শাশ্বতেছয়ং পুরানো
ন হণ্যতে হন্যমানে শরীরে। – গীতা-২/২০

অর্থাৎ, আত্মার কখনো জন্ম বা মৃত্যু হয় না, অথবা পূনঃ পুনঃ তার উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না। তিনি জন্মরহিত, নিত্য, শাশ্বত এবং পুরাণ।

শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না। আত্মার সনাতন, অবিনশ্বর। শুধু স্থানান্তর হয় আত্মা কিভাবে জানতে পারলে আর দুঃখ থাকে না।

তখন সুখ-দুঃখ জয় পরাজয় সমান হয়ে যায়। গীতায় যোগের কথা বলা হয়েছে। যোগ হচ্ছে কর্মের কৌশল বা উপায়। নিষ্কাম কর্ম যোগ, জ্ঞানযোগ ভক্তিযোগ দ্বারা ঈশ্বরকে লাভ করা যায়।

যিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য বা অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য আরাধনা করেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে ভক্ত বলেছেন। কৃষ্ণভক্তদের মনোবাসনা পূর্ণ করে থাকেন। তাই বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমূহ গাভী স্বরূপ, আর দুদ্ধ হচ্ছে গীতা। গীতার জ্ঞানের কথা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে শ্রবণ করেছেন।

যেমনঃ ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ – ছাত্রদের অধ্যায়ন করা হচ্ছে তাদের তপস্যা বা কর্তব্য।

আমাদের প্রত্যেকেরই আমাদের কর্ম করা উচিত। যা কিছু করা হয় তাই কর্ম। শ্রীমৎ ভগবত গীতায় প্রত্যেক কর্মের প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের স্ব-স্ব কর্ম করার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের পরিচয় আমাদের জন্ম ভেদে নয় কর্ম বেঁধে।
সুতরাং বলা যায়, জাতীয় বর্ণভেদে বংশগত নয় গুণগত ও কর্মগত।