মূলত লেবু হলো রুটেসি পরিবারের ছোট চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। এটি দক্ষিণ এশিয়া সাধারণত, উত্তর পূর্ব ভারতের একটি স্থানীয় গাছ।এই গাছের উপবৃত্তাকার হলুদ ফলটি সারা বিশ্বে রান্নার কাজ এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারের মূল কারণ হলো এটির রস। এটির রস রান্না ও পরিষ্কারের উভয় কাজেই ব্যবহার করা হয়।
[Adsene]লেবুর শাঁস এবং খোসাও রান্না এবং বেকিংয়ে ব্যবহৃত হয়। লেবুর রসে প্রায় ২.২ পিএইচ এর প্রায় ৫% থেকে ৬% সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। এই কারণে এটি টক স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। লেবুর রস টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় এটিকে পানীয় এবং খাবার, যেমন লেবুর শরবত এবং ‘লেবু মেরিংয়ে পাইয়ের’ মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
[Adsene]আজ আমরা এই পাঠ থেকে লেবু সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আসুন লেবুর ইতিহাস, লেবুর বৈচিত্র, লেবুর পুষ্টিগুণ, রস, খোসা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
লেবুর ইতিহাস
লেবুর উৎপত্তি স্থান অজানা। যদিও লেবু আসামে উত্তর বার্মা বা চীনে প্রথম জন্মেছিল বলে ধারণা করা হয়। একটি জিনোমিক গবেষণায়, এটি টক কমলা ও সাইট্রনের মধ্যে একটি সংকর বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
[Adsene]লেবু খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পরে, প্রাচীন রোমের সময়কালে, দক্ষিণ ইতালির নিকট হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। তবে সেগুলো ব্যাপকভাবে চাষ করা হত না। এরপরে পারস্য, তারপরে ইরাক ও মিশরে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে লেবুর প্রচলন করা হয়। আরবি ভাষায় লিখিত একটি প্রবন্ধে সাহিত্যে সর্বপ্রথম লেবুর বর্ণনা পাওয়া যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বাগানগুলোতে লেবু গাছকে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হত।
পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের জেনোভায় প্রথম লেবুর পর্যাপ্ত চাষ শুরু হয়। পরে ১৪৯৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিস্প্যানিওলায় তাঁর ভ্রমণে লেবুর বীজ নিয়ে আসলে আমেরিকায় লেবুর প্রচলন ঘটে। স্প্যানিশ বিজয় পুরো বিশ্ব জুড়ে লেবুর বীজ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। এটি মূলত একটি শোভাবর্ধক উদ্ভিদ এবং ওষুধের জন্য ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে ফ্লোরিডা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্রমবর্ধমানভাবে লেবু রোপণ করা হয়।
লেবুর বৈচিত্র
লেবুর ‘ইউরেকা’ জাতটি বছরব্যাপী এবং প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এটি সুপারমার্কেটে প্রচলিত একটি লেবু। আর সারা বছর জুড়ে একসাথে ফল ও ফুল উৎপাদন হওয়ার কারণে এটি ‘ফোর সিজনস’ নামেও পরিচিত। এবং বাসাবাড়িতেও এই জাতের লেবুর গাছ পাওয়া যায়। বৈচিত্র্যময় সবুজ এবং হলুদ রঙের খোসার গোলাপী শাঁসের ইউরেকা জাতের লেবুও আছে।
[Adsene]লিসবন লেবুর সাথে ইউরেকা এবং সুপারমার্কেটে অন্যান্য প্রচলিত লেবুর খুব মিল। এটি ইউরেকা জাতটির চেয়ে মসৃণ, খোসা পাতলা এবং এর বীজ কম থাকে বা থাকে না। সাধারণত এটিতে ইউরেকা জাতটির চেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়।
[Adsene]‘ফেমিনেলো সেন্ট টেরেসা’ বা ‘সোরেরেন্টো’ হল ইতালির স্থানীয় লেবুর একটি জাত। এই লেবুর খোসার উপরের অংশ তেলে ভরপুর। ঐতিহ্যগতভাবে এই জাতটি লিমোনসেলো তৈরিতে ব্যবহৃত ।’ইয়েন বেন’ হল লেবুর একটি অস্ট্রেলিয়ান জাত।
[Adsene]লেবুর পুষ্টিগুণ
ভিটামিন সি লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এ থাকে। আর লেবু হলো ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস, যা ১০০ গ্রাম রেফারেন্স পরিমাণে দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৬৪% সরবরাহ করে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি পরিমাণে কম থাকে।
[Adsene]লেবুতে পলিফেনলস, টের্পেনস এবং ট্যানিন সহ অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। লেবুর রসে বাতাবিলেবুর রসের চেয়ে কিছুটা বেশি সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে (প্রায় ৪৭ গ্রাম/লিটার)। লেবুর রসে জাম্বুরার রসের প্রায় দ্বিগুণ এবং কমলার রসের প্রায় পাঁচগুণ বেশি সাইট্রিক এসিড পাওয়া।
[Adsene]লেবুর রস
শরবত, কোমল পানীয় এবং ককটেল তৈরিতে লেবুর রস ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ও এটি মাছ মেরিনেড করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এবং এটির অ্যাসিড মাছের অ্যামাইনো যৌগগুলোকে অনুদ্বায়ী অ্যামোনিয়াম লবণে রূপান্তর করার মাধ্যমে নিরপেক্ষ করে। এই কারণে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়। আর এটির অ্যাসিড মাংসের শক্ত কোলাজেন ফাইবারকে আংশিক হাইড্রোলাইজ করে এটিকে কোমল করে তোলে। তাই যুক্তরাজ্যে, বিশেষত শ্রোভ মঙ্গলবারে, প্যানকেকে প্রায়শই লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।
[Adsene]লেবুর খোসা
লেবু মরোক্কোতে বয়াম বা নুনের পিপায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এর ফলে লবণ খোসা ভেদ করে, সেটাকে নরম করে এবং তাদের ঠিক রাখে। এর কারণে তারা প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হয়। সংরক্ষিত লেবুগুলো বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহৃত হয়। সিসিলিয়ান, ইতালিয়ান, গ্রীক এবং ফরাসি খাবারগুলিতেও সংরক্ষণ করা লেবু পাওয়া যেতে পারে।
[Adsene]উৎপাদন
২০১৮ সালে, বিশ্বে লেবুর উৎপাদন ছিল ১৯.৪ মিলিয়ন টন । শীর্ষ উৎপাদক ছিল ভারত, মেক্সিকো, চীন, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং তুরস্ক; যারা সম্মিলিতভাবে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ৬৫% উৎপাদন করেছিল।
[Adsene]আজকের 3 June 2025 বাজারে লেবুর মূল্য
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে লেবু কিনে থাকি। তবে এখন রমজান মাস। রমজান মাসে সবাই বেশি বেশি শরবত বা এ ধরণের পাণীয় খেয়ে থাকে। তাই যে কোন ধরণের শরবত বা পানীয়র মধ্যে লেবুর রস মিশানো হয়। কারণ লেবুর রস মেশানোর ফলে স্বাধ এবং সুগন্ধ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে লেবুর মূল্য হলো-
|
দেশি লেবু- ১ হালি |
৪০ টাকা |
|
চাইনা লেবু- ১ হালি |
২০ টাকা |
উপসংহার
লেবু দীর্ঘদিন থেকে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। লেবুর রস দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পাণীয় খাদ্য তৈরি করা হয়। এছাড়া ও লেবুর রস বিভিন্ন রান্নাকৃত খাদ্যে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাই আমাদের লেবু সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার।
