পেয়ারার পুষ্টিগুণ/ পেয়ারার উপকারীতা/ পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ফল হিসেবে আমাদের সকলের কছে অতি পরিচিত। আর এটি একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল। তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে (Maroon Guava) রেড আপেলও বলা হয়। আর পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava । 

পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। এগুলো মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশি জন্মে। তাই অনুমান করা হয় ১৭শ শতাব্দীতে পেয়ারা আসে। এটি ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ক্যালসিয়াম প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ।  

পেয়ারার বৈশিষ্ট্য 

Buy Goava online from Mondal Grocery

পেয়ারা এক ধরণের দ্বিবীজপত্রী বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। আর পেয়ারার সরল পত্রগুলির প্রান্ত অখণ্ড, পত্রাগ্র ভোঁতা ও পুষ্প উভলিঙ্গ। এর পুষ্পে পাঁচটি দল ও পাঁচটি বৃত্যংশ বর্তমান। এছাড়াও এই ফল মিষ্টস্বাদ ও বীজপূর্ণ। তাই উন্নত জাতের পেয়ারায় বীজের পরিমাণ কম থাকে। 

উত্তর প্রদেশে সফেদা আর চিত্তিদার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই সফেদা গোলাকার, খোসা মোলায়েম এবং শাঁস সাদা ও মিষ্ট। এই কারণে বিহারে সফেদা, হরিঝা ও হাবসী জনপ্রিয়। হাবসীর শাঁস লাল এবং মিষ্টত্বে একটু কম হলেও অনেকের কাছেই এর স্বাদ বেশ পছন্দের। 

পেয়ারা চাষ পদ্ধতি 

বাড়ির ছাদে টবে পেয়ারা চাষ পদ্ধতি – Sonali Krishi

আমাদের দেশে সর্বত্র অঞ্চলে পেয়ারা চাষ হয়ে থাকে। কারণ শীত ও উষ্ণ উভয় অঞ্চলেই পেয়ারা জন্মায়। তাই পেয়ারা অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু উদ্ভিদ। এটি অন্য ফসলের চেয়ে অনেক বেশি খরা সহ্য করতে পারে । এ কারণে কখনও কখনও বিনা সেচেই জীবীতবান থাকে। এর বীজ অথবা গুটিওকলমের চারা বর্ষার শুরুতে আষাঢ়-শ্রাবণে বসানো যায়। 

গুটিকলম সবচেয়ে উপযোগী এবং বাংলাদেশে এর বিপুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ১×১×১ হাত গর্তে ১৫-১৬ হাত অন্তর ভালো জাতের এক বছর বয়সের কলম রোপণ করা যায়। এর দু-তিন বছরেই গাছে ফুল-ফল জন্মায়। বছরে দু-বার বসন্ত ও বর্ষাকালে ফুল ধরে। এবং বসন্তের ফুলের ফল পাকে বর্ষায় আবার বর্ষার ফুলের ফল পাকে শীতে। 

শীতের ফলই গুণমানে উৎকৃষ্ট আর বাজারদর ভালো থাকায় চাষীদের কাছে তা বেশ লাভজনক। তাই অনেক সময় চাষীরা বসন্তের ফুলে সেচ বন্ধ করে ঝরিয়ে দিয়ে থাকেন। এবং কেবল শীতেই ফল পাকতে দেন। তবে পেয়ারা চাষের প্রধান অন্তরায় এর ডগা শুকানো রোগ। এই রোগ একবার জমিতে এলে একে একে গাছগুলি শুকিয়ে যেতে থাকে। আক্রান্ত গাছগুলি সম্পূর্ণরূপে তুলে পুড়িয়ে ফেললে তবে পার্শ্ববর্তী গাছগুলিতে এর সংক্রমণ প্রবণতা কমে। 

পেয়ারার পুষ্টিগুণ 

goava (2) - Padma News

বিশেষজ্ঞদের মতে জানা যায় যে, একটি পেয়ারায় ৪টি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুণ থাকে।  বিশেষ করে ভিটামিন সি বেশি পরিমাণ এ থাকে রয়েছে। এছাড়াও একটি পেয়ারায় রয়েছে চারটি আপেল ও চারটি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুণ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ পানি, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি, কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ। আর পেয়ারা ভিটামিন সি–এর ভালো উৎস। কারণ এতে ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি মুখগহ্বর, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে।

পেয়ারা খাওয়ার উপকারীতা 

ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ফল। তাই এটি খেলে আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়। কারণ পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণ এ ভিটামিস থাকে। আসুন পেয়ারর উপকারীতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি। 

রোগ প্রতিরোধ 

পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। এই কারণে এটি শরীরে  রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি প্রদান করে। দেহের কোথাও কেটে গেলে ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ 

ক্যানসার প্রতিরোধেও পেয়ারা খুব ভালো কাজ করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে এই ফল। প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে পেয়ারা খুবই উপকারী। 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি 

কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন এ–এর ভালো উৎস। এতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা রাখা প্রয়োজন। 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ 

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তচাপ ও রক্তের লিপিড কমে আসে। পেয়ারাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপিনসমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা নিয়মিত খেলে তা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

উপসংহার 

এই আর্টিকেল পড়ে আমরা পেয়ারর পুষ্টিগুণ এবং এরিউপকারীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছে। আমরা সকলেই জানি পেয়ারা অনেক পুষ্টিকর একটি ফল। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে এর চাষ হয়। আর এই ফলটি খেলে আমাদের শরীরে খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। এই কারণে আমাদের পেয়ারা সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে রাখা উচিৎ।  

 

Leave a Comment