পিঠা উৎসব/ বিভিন্ন ধরণের পিঠা

যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ও উৎসব পালন করে আসছে। আর এইসকল উৎসব এর মধ্যে গ্রাম বংলার প্রধান উৎসব হলো পিঠা উৎসব। কারণ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে। তাই যখন কৃষকরা নতুন ফসল ঘরে তোলে তখন তারা অনেক আনন্দের সাথে পিঠা উৎসব পালন করে। আর এই পিঠা উৎসবে সারা গ্রামের মানুষ আনন্দে মেতে থাকে তাদের পরিবার পরিজন এবং আত্নীয়-স্বজনদের নিয়ে। 

পিঠা এক ধরণের খাদ্য। এটি বিভিন্ন ধরণের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে এর প্রধান উপকরণ হলো, আটা, দুধ, চিনি ইত্যাদি। এসকল উপকরণগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরি করা হয়। এবং সকল পিঠার আলাদা নাম এবং স্বাধ রয়েছে। তবে প্রতিটি পিঠাই খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই আসুন পিঠা সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে নেওয়া যাক। 

প্রেক্ষাপট 

বহুকাল ধরে বাঙালীর লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি লোক ও নান্দনিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণতঃ পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালী সমাজে বিশেষ আদরণীয়। এছাড়াও, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষে-মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলি আয়োজনের উৎসব সবিশেষ ভূমিকা পালন করে।  

বিভিন্ন ধরণের পিঠা 

হেমন্ত মানেই নবান্ন উৎসব। আউশ ধান থেকে চাল করে প্রথম রান্নার দিনই মূলত নবান্ন। হেমন্তের রেশ কাটতে না কাটতেই আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। এজন্যই হেমন্তের নতুন চালে শীতে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। শীত মানেই বাহারি রকমের পিঠা তৈরির আয়োজন। চলুন আজ জেনে নেই তেমনই কিছু জনপ্রিয় পিঠার কথা- 

ভাপা পিঠা

Vapa

ভাপা পিঠা চালের গুঁড়া, গুড়, নারকেলের শাস দিয়ে জলীয় বাষ্পের ভাঁপে তৈরি করা হয়। ভাঁপে তৈরি করা হয় বলেই এ পিঠার নাম ভাপা পিঠা। অনেক অঞ্চলে এ পিঠা ধুপি নামেও পরিচিত। রাস্তাঘাটে এমনকি রেস্তোরাঁয়ও আজকাল ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। এ পিঠার নানা ধরনের মধ্যে আছে মিষ্টি ভাপা ও ঝাল ভাপা। 

চিতাই পিঠা 

chitoi

চালের আটা পানিতে গুলিয়ে গরম তাওয়ায় তৈরি করা হয় চিতই পিঠা। বিভিন্ন ভর্তা কিংবা মাংস দিয়ে খেতেও মজা লাগে এই পিঠা। আবার দুধ বা খেজুরের রস একসঙ্গে জ্বাল দিয়েও তৈরি করা যায় রস পিঠা বা দুধ চিতই। এ ছাড়াও ইলিশ মাছ দিয়ে এখন চিতই পিঠা বানানো হয়। পুরান ঢাকায় ডিম পিঠা খুবই জনপ্রিয়। 

পাটিসাপটা 

Patisapta

পাটিসাপটা খেলে মনে হবে একসঙ্গে কয়েকটি পাটিসাপটা খাওয়া যাবে। সুজি, ময়দা , চালের গুঁড়া, চিনি, দুধ, কোড়ানো নারকেল, ক্ষীর, মাওয়া, ঘি, লবণ এবং তেলের সংমিশ্রণে তৈরি হয় পাটিসাপটা। খেতে নরম হওয়ায় ছোট থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই এ পিঠা পছন্দ করেন।

পুলি পিঠা 

puli

খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় পুলি পিঠা খুবই জনপ্রিয়। পুলি পিঠার প্রধান উপকরণ চাল। এরপর পছন্দমতো উপকরণে নানা ধরনের পুলি পিঠা বানানো যায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের পুলি পিঠা তৈরি করা হয়। যেমন- নারকেলপুলি, দুধপুলি, ঝালপুলি, ভাপাপুলি ও ক্ষীরপুলি।

মালপোয়া বা তেলের পিঠা 

Poa

চালের গুঁড়া, চিনি, গুড় অথবা খেজুরের রস, লবণ ও তেল দিয়ে এ পিঠা তৈরি করা হয়। ডুবো তেলে ভেজে বানানো হয় বলে একে তেলের পিঠা বলা হয়। এটি খুবই মজাদার একটি পিঠা। শীতে এ পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়।

বিবিখানা পিঠা 

শীতে খেজুরের রসে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠা। খেজুরের রসের তৈরি বিবিখানা পিঠাও তার মধ্যে একটি। চালের গুঁড়া, খেজুরের ঘন রস, ডিম, লবণ সামান্য, দুধ ও ঘি দিয়ে তৈরি করা হয় মজার স্বাদের এ পিঠা।

খোলাজা পিঠা

নোয়াখালীর জনপ্রিয় পিঠা খোলাজা পিঠা। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় খোলাজালি বা খোলাজা পিঠা। মাংস দিয়ে এ পিঠা বেশ মানিয়ে যায়। তবে হাঁসের মাংস দিয়েই খেতেই বেশি মজা। আপনি চাইলে নারকেল ও গুড় দিয়ে খেতে পারেন। শীতকালে রসে ভিজিয়েও খাওয়া যায় মজাদার এ পিঠা।  

উপসংহার 

পিঠা বাঙালির খাদ্য তালিকার একটি বিশেষ অংশ। শীতে পিঠা উৎসব সকল বাঙালির ঘরে ঘরে উদযাপিত হয়। বিভিন্ন স্বাধের বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরি করে গৃহবধুরা। এবং এই তৈরিকৃত পিঠা নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আত্নীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশিদের দেওয়া হয়। এভাবেই পিঠা উৎসব পালন করা হয়।  

 

 

 

 

 

 

Leave a Comment