কলা চাষ পদ্ধতি/ কলার গুণাগুণ/ কলার দাম কত

কলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। আর কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে ভাল জন্মায়। তবে কলার উৎপত্তিস্থল হিসাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পরিগণিত হয়। আর কলা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে অন্যতম প্রধান ফল। এই কারণে  বাংলাদেশের, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, এলাকায় শত শত বছর যাবৎ কলার চাষ হয়ে আসছে। 

তবে বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছর প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতেই এর চাষ করা যায়। তাই পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বুনোজাতের কলা চাষ হয়। এছাড়াও কলম্বিয়া ইত্যাদি ল্যাটিন আমেরিকান দেশে কলা প্রধান অর্থকরী ফসল। 

কলা গাছ এর বর্ণনা 

3

কলাগাছ একটি বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মালান বলেছেন কলার জন্মভুমি হলো ভারতবর্ষ ও চীন । কিন্তু আরেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিল পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তিস্থল বলে মন্তব্য করেছেন। অধিকাংশ জাতের কলা গাছই বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। মাটির নিচে রাইজোম বা কন্দ এবং মাটির ওপরে একটি ছদ্মকাণ্ড বা সিউডোস্টেম নিয়ে এ গাছ গঠিত। কলা গাছ এর কাণ্ড ও পাতা উভয়ই সবুজ।

আমরা জানি কাঁচা কলা সবুজ এবং এটি পেকে গেলে তা হলুদ রং ধারণ করে। এছাড়া ও  কলাপাতা সরল। এর পত্রভিত পুরু ও পত্রফলক প্রশস্ত। এর পত্রফলকে দৃঢ়, মোটা, সুস্পষ্ট ও মধ্যশিরা বিদ্যমান। আর এই মধ্য শিরার দুই পাশে সমান্তরাল শিরাগুলো বিন্যাসিত হয়। 

কলার জাত

আমরা জানি যে কলা হলো Musaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর দুটি গণ আছে যথা: Ensete ও Musa। উক্ত পরিবারে প্রায় ৫০টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । Ensete গণের মাত্র ৬-৭টি প্রজাতি আছে। তবে এর মধ্যে মাত্র একটি প্রজাতির কলা এ পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় জন্মানো সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে Musa গণের প্রায় ৪০টি প্রজাতির কলা রয়েছে। তবে এর অধিকাংশ প্রজাতির উৎপত্তি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়। এছাড়া ও প্রায় সব আবাদকৃত কলাই এ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত । তবে বাংলাদেশে প্রায় ১৯টি জাতের কলা রয়েছে । এছাড়া ও পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত ৪ প্রকার যথা:

১. সম্পূর্ণ বীজমুক্ত কলা: যেমন-সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর প্রভৃতি ।

২. দু-একটি বীজযুক্ত কলা: যেমন-চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি ।

৩. বীজযুক্ত কলা: এটেকলা যেমন-বতুর আইটা, গোমা, সাংগী আইটা ইত্যাদি ।

৪. আনাজী কলাসমুহ: যেমন-ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি।

কলার গুণাগুণ 

2

বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল হলো কলা। এর মধ্যে অধিক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান। যেমন, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। ক্যালরির একটি অনেক ভালো উৎস হলো কলা। এই কারণে এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের তুলনায় বেশি। ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায় বড় মাপের একটি কলা খেলে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা যা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্‍পাদনে সাহায্য করে কলার মধ্যে থাকা আয়রন। কারণ গবেষকরা জানান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও দেহে পটাসিয়ামের উপস্থিতির কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায় । 

কলার খাদ্যগুণ 

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তার বিশ্লেষণ নিম্নরূপঃ

উপাদান

পরিমাণ

পানি (জল)

৭০.১%

আমিষ

১.২%

ফ্যাট (চর্বি)

০.৩%

খনিজ লবণ

০.৮%

আঁশ

০.৪%

শর্করা

৭.২%

মোট

১০০.০%

কলা চাষ পদ্ধতি 

4

বছরে তিন মৌসুমে কলার চারা রোপণ করা যায়। জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ হলো প্রখম মৌসুম এবং মার্চ থেকে মধ্য মে হলো দ্বিতীয় মৌসুম এবং তৃতীয় মৌসুম হলো মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর। কম পক্ষে ৫-৭ বার চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়। এরপর জৈবসার হেক্টরপ্রতি ১২ টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। 

এরপর ২–২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে এবং প্রতিটি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।  এর ঠিক ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ ও সোর্ড শাকার  চারা রোপণ করতে হবে।

আজকের 6 May 2024 বাজারে কলার মূল্য

আমরা জানি যে কলা খুবই জনপ্রিয় একটি ফল এবং অনেক শক্তিশালি ফল এটি। এই কারণে কম বেশি সবাই কলা খেয়ে থাকে। তবে একজন খেলোয়াড় এর এই খাবারটি অনেক বেশি খাওয়া উচিৎ। তাই আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন জাতের কলা কিনে থাকি।  বর্তমান বাজার অনুযায়ী কলার দাম হলো- 

অনুপম কলা- ১ হালি 

৩৫ টাকা 

সাগর কলা- ১ হালি 

২৫ টাকা 

উপসংহার 

কলা একটি শক্তিশালি ও অনেক গুনসম্পন্ন ফল। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের আরো অনেক দেশে কলা অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। কলা খেলে শরীরে শক্তি আসে। তাই আমরা বেশি বেশি করে কলা খেতে পারি। ১ টি কলার মধ্যে প্রচুর পরিমান ক্যলোরি পাওয়া যায়। আর এই কলা সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জানা অত্যন্ত জরুরি। 

Leave a Comment