0

“বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে” – মন্তব্যটির স্বপক্ষে তোমার যৌক্তিক মত উপস্থাপন করো l

Bangla 8th Week Assignment Of Class 6

ভূমিকা:

‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি মধ্যযুগীয় কবি আবদুল হাকিমের ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবির মাতৃভাষা বাংলার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ‘কপােতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতাবলী থেকে গৃহীত হয়েছে। কপােতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেশ প্রকাশিত হয়েছে।। ‘বঙ্গবাণী’ ও ‘কপােতাক্ষ নদ’ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। নিচে আমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হল।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতা থেকে মাতৃভাষার প্রীতি:

কবি আবদুল হাকিম রচিত ‘বঙ্গবাণী’ একটি অনবদ্য কবিতা। বিষয়বস্তু বক্তব্যের গুণে ভাস্বর এ কবিতাটি আজও মুসলিম সমাজে দিক নির্দেশনার কাজ করছে। বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবির যে মাতৃভাষা প্রীতি ও স্বদেশের প্রতি যে ভালবাসা ফুটে উঠেছে তা চিরকাল বাঙালির কাছে | তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে। ‘বঙ্গবাণী’ শব্দটির অর্থ বাংলা ভাষা। এমন এক সময় ছিল যখন মুসলিম সমাজ বাংলাভাষাকে ধর্ম ও জ্ঞান চর্চার বাহন হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। আবদুল হাকিম মধ্যযুগের কবি। কিন্তু আশ্চর্য স্বাভাবিক বুদ্ধিতে তিনি এর ভ্রান্তি বুঝতে পেরেছিলেন। এ ভ্রান্তির কথাই তিনি বলেছেন ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায়।

আরবি ও ফারসি ভাষার প্রতি কবির মােটেই বিদ্বেষ নেই। আরবি ও ফারসিতে আল্লাহ ও নবীর গুণগান আছে। ইসলাম ধর্মের বহুগ্রন্থ এ ভাষা দুটিতে রচিত হয়েছে। কোরআন নাজিল হয়েছে আরবিতে। তাই এসব ভাষার প্রতি সবার পরম শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। কিন্তু যাঁরা আরবিফারসি জানেন না তাঁরা যদি মাতৃভাষায় ধর্মের কথা লেখেন ও বলেন। তাতে অন্যায় হয় না। বরং সকল মানুষ ধর্মের কথা শুনতে পারে ও বুঝতে পারে। কবির মতে- মানুষ যে ভাষাতে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে স্রষ্টা সে ভাষা বুঝতে পারেন। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যাঁরা বাংলা ভাষা বা মাতৃভাষায় ধর্মচর্চার ঘাের বিরােধী। তাঁরা বাংলা ভাষাকে ধর্মালােচনার অনুপযােগী মনে করেন এবং একে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে অভিহিত করতে চান। এদের বিরুদ্ধে কবি কঠোর মনােভাব পােষণ করেছেন।

[ArticleAds]

তিনি বলেছেন “যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।”

[ArticleAds]

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি৷ অর্থ্যাৎ যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে, তাদের জন্মের পরিচয় নিয়ে কবি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদেরকে কবি স্বদেশ ছেড়ে অন্যদেশে যেয়ে বসবাস করতে বলেছেন। বংশানুক্রমে বাংলাদেশেই আমাদের বসতি, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষায় বর্ণিত সুর ও কথা আমাদের হ্রদয় স্পর্শ করে। তাই মাতৃভাষার চেয়ে হিতকর আর কী হতে পারে।

‘কপােতাক্ষ নদ’ কবিতা থেকে মাতৃভাষার প্রীতি

বাংলা কাব্য সাহিত্যের আধুনিকতার প্রবর্তক মধুকবি মাইকেল রেনেসাঁ যগের অগ্নিপরষ। ‘কপােতাক্ষ নদ’ তাঁর একটি বিখ্যাত চতুর্দশপদী কবিতা। এ কবিতায় কবির স্মৃতি কাতরতার আবরণে অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। মাইকেলের জন্মভূমি যশােরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপােতাক্ষ নদ। এ নদটি কবির শৈশব, বাল্য, কৈশােরের নিত্যসহচরী। আর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত এ কপােতাক্ষের প্রতি কবির যে প্রেম তারই বাণীরূপ দিয়েছেন ‘কপােতাক্ষ নদ’ কবিতায়। মহাকবি মাইকেল প্রথম জীবনে নিজ ভাষার প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন। তাই বিদেশে গিয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য। কিন্তু বিদেশি সাহিত্যে সফলতা লাভে ব্যর্থ কবিরমনে পড়েছে স্বদেশের কথা।

[Join]

ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে আত্মীয়স্বজনহীন জীবনযাত্রার মাঝে যখন আশা-আকাঙ্ক্ষার দোলাচলে দোল খাচ্ছিলেন, তখন অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়ে কবি কুল কুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী কপােতাক্ষের কথা মনে করেছেন। দূর দেশে বসেও তিনি কপােতাক্ষ নদের মায়ামন্ত্র ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন। তাইতাে রােদন পিয়াসী কবির মন রূপসী বাংলার ধানসিড়ির বুকে যেখানে হংস বলাকা খেলা করে সেখানে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে ছিলেন। কবি বহু দেশে ঘুরে বহু নদী দেখেছেন, বিভিন্ন নদীর বুকে নৌকা ভাসিয়েছেন তখন তাঁর কপােতাক্ষের কথা মনে পড়েছে। কপােতাক্ষের সাথে তাঁর যে আকর্ষণ তা অন্য কোন নদে পান নি। কপােতাক্ষের স্তনে দুগ্ধ-স্রোতেরূপী |

[Ads]

যে ধারা তা কবি পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পান নি। কেননা মাতৃভূমির স্তন্যের স্বাদ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। শিশুকাল থেকেই এ নদের সাথে ছিল কবির সুগভীর মিতালী। এ নদের জল পান করেই কবি পরম তৃপ্তি পেয়েছেন। মাতৃরূপে পরম স্নেহে কবির তৃপ্তি নিবারণ করেছে এ নদ। তাই শয়নে, স্বপনে, কল্পনায় অনুক্ষণ কবি কপােতাক্ষের অমিয়ধারায় অবগাহন করতে ব্যাকুল হয়েছেন। তাই বঞ্চিত জীবনের জ্বালা বুকে নিয়ে সুদূর প্রবাসে বসেও কবি গভীর শ্রদ্ধাভরে কপােতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন।

উপসংহার

সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায়, বঙ্গবাণী’ ও ‘কপােতাক্ষ নদ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে।