গৌতম বুদ্ধ ও জীবপ্রেম
[Tapos]বৌদ্ধধর্মে জীবপ্রেমকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গৌতম বুদ্ধের জীবন জীবপ্রেমে সিক্ত। শুধু মানুষ নয় ছোট-বড় সকল জীবের প্রতি বুদ্ধের অপরিসীম মমত্ববোধ ছিল। ‘সকল প্রাণী সুখী হোক’ – বৌদ্ধদের অন্যতম কামনা। বুদ্ধের প্রতিটি ধর্মবাণীতে রয়েছে জীবপ্রেমের অমিয় আহ্বান। সকল বৌদ্ধকে পঞ্চশীল গ্রহন করতে হয়। পঞ্চশীলের প্রথম শীলটি হচ্ছে – প্রাণিহত্যা হতে বিরত থাকব, এই শিক্ষাপদ গ্রহণ করুনছি। এই শীলের মধ্যে শুধু প্রাণীর প্রতি গভীর মমত্ববোধই প্রকাশিত হয়নি, অধিকন্তু ছোট-বড় সকল প্রাণিকে রক্ষা করার প্রেরণাও রয়েছে। তাই বাঘ, হরিণ, হাতিসহ বনের কোনো প্রাণীই শিকার বা হত্যা করা উচিত নয়। বুদ্ধের জীবপ্রেমের একটি কাহিনী নিচে তুরে ধরা হলো।
সিদ্ধার্থ ও রাজহংস
বুদ্ধের বাল্যজীবনের ঘটনা। একদিন সিদ্ধার্থ পুস্প উদ্যানে একাকী বসে ছিলেন।এমন সময় সাদা মেঘখন্ডের মতো এক ঝাঁক রাজহংস পরম আনন্দে আকাশে উড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি রাজহাঁস তীরবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় তাঁর সামনে পতিত হয়। শরাহত রাজহাঁসটি মুত্যযন্ত্রণায় ছটফট করুনছিল। সিদ্ধার্থ পরম যত্নে রাজহাঁসটিকে কোলে তুলে নিলেন। রাজহাঁসটির শরীর থেকে শর বের করলেন, ক্ষতস্থানে প্রলেপ লাগিয়ে পরম মমতায় সেবা সুশ্রুষা করে রাজহাঁসটিকে সুস্থ করে তুললেন। পরম সুখে রাজহাঁসটির দুচোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হলো এবং সিদ্ধার্থের দিকে কৃতজ্ঞচিত্তে তাকিয়ে রইল। এমন সময় বুদ্ধের জ্ঞাতি ভ্রাতা দেবদত্ত সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, “শরবিদ্ধ রাজহাঁসটি আমার। আমিই তীর নিক্ষেপ করে রাজহাঁসটিকে ভূমিতে পতিত করেছি। আমার হাঁস আমাকে দাও।” তখন মমতায় ভরা কণ্ঠে সিদ্ধার্থ বললেন, “ভাই দেবদত্ত! যে প্রাণরক্ষা করে প্রাণীর ওপর তারই অধিকার। যে প্রাণ হননে উদ্যত হয়, প্রাণীর ওপর তার অধিকার থাকতে পারে না। হাঁসটি মৃত নয়, আহত মাত্র। আমিই সেবা দিয়ে সুস্থ করে হাঁসটির জীবনরক্ষা করেছি। তাই হাঁসটি আমার। আমি এই শাক্যরাজ্য তোমাকে দিতে পারি, কিন্তু হাঁসটি দিতে পারব না।” এরুপ বলে সিদ্ধার্থ হাঁসটি আকাশে উড়িয়ে দিলেন।