রাজশাহীর আম/ রাজশাহীর আমের দাম কত

আম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। এটি বিচিত্র্য বাংলাদেশের অনন্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলের  মধ্যে অন্যতম। এই  সুস্বাদু ফলটি হলো মৌসুমি ফল। আর সারা পৃথিবীতে আম অনেক জনপ্রিয়। এবং এত পছন্দনীয় ফল পৃথিবীতে আর নেই। এমন কোন জাতি নেই যারা আম পছন্দ করেনা। তাই একে সন্মান দিয়ে ʼফলের রাজাʼ বলা হয়।  

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কম বেশি আম চাষ করা হয়। তবে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা আম এর জন্য বিক্ষাত। কারণ রাজশাহীর মাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির আম প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। রাজশাহী থেকে সারা বাংলাদেশে আম সাপ্লাই করা হয়।  

আম গাছ এর বিবরণ 

ধান চাষের চেয়ে আম চাষ লাভজনক

একটি আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মি: (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। এই আম গাছ বহু বছর বাঁচে। তবে এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এবং এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬মি: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। 

আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে.মি. লম্বা এবং ৬-১৬ সে.মি. চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপী রং এর হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।

আম চাষাবাদ 

যেভাবে ঘরের টবেই হবে আম গাছ!

আম কয়েক হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে চাষাবাদ চলছে। তবে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণ প্রধান জলবায়ুর অঞ্চল গুলোতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ভারতেই। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। 

বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। কারণ বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ আম বাজার হিসেবে “কানসাট আম বাজার”  পরিচিত। মকিমপুর, চককির্ত্তী, লসিপুর, জালিবাগান, খানাবাগান সহ বিশেষ কিছু জায়গায় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং চাহিদা সম্পূর্ণ আম পাওয়া যায়।

আম এর প্রকারভেদ  

জেনে নিন বিভিন্ন জাতের আম চেনার উপায় বিভিন্ন জাতের আম চেনার উপায়

আমের কয়েক শতাধিক জাত রয়েছে যাদের নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই সুস্বাদু ফলটি অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। আমাদের এই   বিচিত্র্য বাংলাদেশের ফলগুলোও অনেক বিচিত্র্য ধরণের হয়ে থাকে। আম এর অনেক জাত রয়েছে। আমরা এই বাংলাদেশের মৌসুমি ফল আম এর জাত গুনে শেষ করতে পারবো না  হয়তো। আর এই একেক রকম আম এর একেক রকম গুন রয়েছে। তাই এই আম আমাদের দেশের প্রায় সকল মানুষের কাছেই প্রিয় একটি ফল । 

আমের নাম 

বাংলাদেশে অনেক জাতের আম চাষ করা হয়। আর এই প্রতিটি জাত এর আম এর আলাদা আলাদা নামকরণ করা হয়েছে। তবে এসকল জাতের মধ্যে আমাদের সকলের পরিচিত কিছু জাত এর নাম হলো- লক্ষণ ভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, দুধস্বর, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, তোতাপুরী, রানীপছন্দ, হিমসাগর, ইত্যাদি। এরকম আরো হাজার প্রজাতির আম বাংলাদেশে চাষ করা হয়। 

লক্ষন ভোগ

বাংলাদেশে চাষকৃত আমের জাত এর মধ্যে লক্ষন ভোগ (লখনা)  সকলের সুপরিচিত একটি আম। এটি আকারে কিছুটা গোলাকার আকৃতির হয়ে থাকে। আর এই আমটি কাঁচা অবস্থায় এর স্বাধ অনেক টক হয়। তবে এটি পাকার পর এর স্বাধ এর পরিবর্তন হয়। কারণ লক্ষন ভোগ মিষ্টি স্বাধ এর জন্য বিক্ষাত। লক্ষন ভোগ আম পেকে যাওয়ার পর এর স্বাধ অনেক মিষ্টি হয়। এই কারণে এই জাতের বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে এবং এর চাষ অনেক বেশি হয়। 

ফজলি 

ফজলি আম আমাদের সকলের অতি পরিচিত একটি আম এর জাত। এই ফজলি আম আকারে লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে। তবে এই আমটি কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। কারণ ফজলি আম কাঁচা অবস্থায় অনেক মিষ্টি থাকে। তবে ফজলি আম অধিকাংশ মানুষ কাঁচা খেয়ে থাকে। 

খিরসাপাত

খিরসাপাত আম এর মিষ্টি স্বাধ এর জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশে সকল আমের জাতের মধ্যে এটি সকলের কাছে সেরা। কারণ এই আমটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং ‍সুমিষ্ট। এই আমটির বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই বাজারে সব থেকে খিরসাপাত আম ক্রয় এবং বিক্রয় হয়। 

আশ্বিনা 

আশ্বিনা আম হলো টক এর রাজা। এই আমটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ এটির স্বাধ টক হয়ে থাকে। আশ্বিনা আম পাকার পরেও অল্প অল্প টক থেকেই যায়। এই কারণে এই আমকে টক এর রাজা বলা হয়। 

উৎপাদন 

২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাপী আমের উৎপাদন (রিপোর্টে ম্যাঙ্গোস্টিন এবং পেয়ারা অন্তর্ভুক্ত ছিল) ছিল প্রায় ৫৬ মিলিয়ন টন, যার মধ্যে শুধু ভারতেই হয়েছে বিশ্বের মোট ৪৬% (২৬ মিলিয়ন টন) (টেবিল দেখুন)। ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং মেক্সিকো পরবর্তী বৃহত্তম উৎপাদক দেশ ছিল।

পাইকারি পর্যায়ে আমের দাম আকার, জাতের বিভিন্নতা এবং অন্যান্য কারনে কমবেশি হয়। ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সমস্ত আমের জন্য কৃষি বিভাগের রিপোর্টকৃত এফওবি দাম বাক্সপ্রতি (৪কেজি/বাক্স) আনুমানিক ৪.৬০ মার্কিন ডলার (গড় সর্বনিম্ন দাম) থেকে ৫.৭৪ মার্কিন ডলার (গড় সর্বোচ্চ দাম) পর্যন্ত ছিল।  

উপসংহার 

আম একটি মৌসুমি ফল। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কম বেশি আম চাষ হয়। আর এই আম এর স্বাধ এর জন্য একে ফলের রাজা বলা হয়। আমে অনেক পুষ্টিগুণ থাকে। তাই আম এর সময়  আমাদের উচিৎ বেশি বেশি আম খাওয়া। কারণ আম খেলে শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। এই কারণে আমাদের আম সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে রাখা উচিৎ। 

 

Leave a Comment