গম এর মূল্য/গম চাষ পদ্ধতি

গম একটি কৃষিজ পণ্য। তাই ফসলি জমিতে গম এর ফসল ফলানো হয়। কারণ বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যে যোগান দিতে ধান এর পাশাপাশি গম ও বিশেষ গুরুত্ব রাখে। তাই কৃষকরা তাদের ফসলি জমিতে ধান এর পাশাপাশি গম ও চাষ করে থাকে। কারণ ধান চাষ করে যেমন লাভবান হওয়া যায়। সেরকম গম চাষ করেও চাষিরা অনেক লাভবান হয়ে থাকেন। 

বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। তবে এই ভাত এর পাশাপাশি মানুষ রুটি বা এ জাতিয় খাদ্য খেয়ে থাকে। আর এই রুটি বা এ জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে হলে আটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের আটা আমরা লক্ষ করে থাকি। তবে এর মধ্যে প্রধান এবং সবার পরিচিত আটা হলো গম এর আটা। তাই আমাদের গম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। চলুন গম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি। 

গম কী? 

1

গম একটি কৃষিজ পণ্য। আর এই পণ্যটি সাধারণত খাদ্যদ্রব্য হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। ফসলি জমিতে এটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করা হয়। আর এই চাষকৃত গম নির্দিষ্ট নিয়মে সংগ্রহ করে আটা তৈরি করা হয়। কৃষিজাতীয় পণ্য ধান এর পরে গম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি একটি মৌসুমি ফসল। 

ভাতের পর বাংলাদেশে যে খাদ্যটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেটি হলো আটা ও ময়দা। আর আটা-ময়দা আসে গম থেকে। তাই বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সকালের নাস্তার একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকে গমের আটা বা ময়দার রুটি-পরোটা। যদিও বাংলাদেশে গমের চাষ যতটা প্রসার লাভ করার কথা ছিল ততটা হয়নি, তবুও যে পরিমাণ জমিতে গমের চাষ হয় সেই জমিতে আধুনিক পদ্ধতি মেনে চাষ করলে গমের ফলন বেশি পাওয়া যেতে পারে। তাই আসুন গম চাষ সেম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি। 

গম চাষের মৌসুম ও জাত 

গম এর  বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ  পর্যন্ত। এ সময় বোনা যায় এমন জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাঞ্চন, আকবর, অগ্রণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব, সোনালিকা। কিন্তু কিছু কিছু জাত আছে যেগুলো কিছুটা তাপ সহনশীল, সেগুলো ডিসেম্বর মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত বোনা যেতে পারে। এই জাতগুলো হলো- সুফী, বিজয় ও প্রদীপ। 

গম চাষের জন্য উপযুক্ত জলবায়ু 

 সাধারণত গ্রীষ্ম ও অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু হতে শুরু করে নাতিশীতোষ্ঞ ও তুন্দ্রাঞ্চলীয় জলবায়ুতেও গম জন্মে থাকে।  তাই বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫-৪৫ ইঞ্চি অর্থাত্ ৩৮০-১১৪৩ মিলিমিটার গম চাষের জন্য খুব উপযোগী। তবে ১০-৭০ ইঞ্চি অর্থাত্ ২৫৪-১৭৭৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বার্ষিক গড়পড়তা বৃষ্টিতেও গম ভালো জন্মে। একদিকে সাইবেরিয়া ও মেরু অঞ্চলের প্রবল শৈত্যেও গম গাছ টিকে থাকতে পারে। এবং অন্যদিকে ২১-২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়ও গম চাষ করা যায়। তবে গরম আবহাওয়ায় ফুল ফুটার সময় ঠান্ডা পরিবেশ বর্তমান থাকা প্রয়োজনীয়। অন্যথায় গম গাছে দানার উৎপত্তি হয় না।  ভূমির উচ্চতার দিক হতেও গম অদ্ভুত রকমে খাপ খাওয়াতে পারে৷ সমুদ্র সমতল হতে ১০,০০০ ফুট অর্থাৎ ৩১০০ মিটার উচ্চতায়ও গম জন্মাতে দেখা যায়। 

গম চাষের জন্য মাটির ধরণ 

উঁচু ও মাঝারি দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী৷ কারণ লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। তাই সাধারণত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যায়। দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম। কারণ সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় এমন ভারী অর্থাৎ এঁটেল ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও গমের চাষ করা হয়। 

গম চাষ পদ্ধতি 

3

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেই গমের চাষ বেশি লক্ষ করা যায়। বৃহত্তর দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর জেলা ছাড়াও দেশের মধ্যাঞ্চলে কম-বেশি গমের চাষ হয়ে থাকে। কারণ গম চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি বেশি উপযোগী। তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম। তাই সহজে পানি নিষ্কাশিত হয়, এমন এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়। তবে লবণাক্ত মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

বোনার জন্য একর প্রতি গম বীজের প্রয়োজন হয় ৪৮ কেজি বা বিঘা প্রতি ১৬ কেজি। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% বা তার বেশি হলে ভালো হয়। ৮০% এর নিচে হলে প্রতি ১ ভাগ কমের জন্য একরপ্রতি ৪০০ গ্রাম গম বীজ বেশি বুনতে হয়। তবে ৬০% এর নিচে হলে সেই গম বীজ বোনা উচিত নয়। বোনার আগে গম বীজ প্রোভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে) বা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে) দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। বীজ শোধন করলে বীজবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং নতুন গজানো চারা সুস্থ ও সবল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে গমের ফলন শতকরা ১০-১২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

সারিতে অথবা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। তবে সারিতে বুনলে জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে বা বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে সরু নালা করে ২০ সেমি. দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি. গভীরতায় বীজ বুনতে হয়। ধান কাটার পরপরই পাওয়ার টিলারচালিত বীজ বোনার যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্পতম সময়ে গম বোনা যায়। এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে জমি চাষ, সারিতে বীজ বপন ও মইয়ের কাজ করা যায়। 

সার প্রোয়োগ

আমরা জানি গমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য জমি চাষ করার সময়ই প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। সেচ সহ শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশে ৬০০-৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০-৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০-৪০০ গ্রাম এমওপি এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হয়। সেচ সহ চাষের বেলায় চারার ৩ পাতা হলে প্রথম সেচের পর দুপুরে মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়।

অন্যদিকে সেচ ছাড়া চাষের বেলায় সব ইউরিয়া (শেষ চাষের সময়+উপরি প্রয়োগের সময় দেয়) সার একত্রে শেষ চাষের সময় অন্যান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে বোরনের ঘাটতি দেখা দিলে বা বোরন ঘাটতি থাকলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম করে বোরিক এসিড শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। যেসব জমিতে দস্তা সারের ঘাটতি থাকে এবং আগের ফসলে দস্তা সার ব্যবহার করা হয়নি সেসব জমিতে শতকপ্রতি ৫০ গ্রাম করে দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার শেষ চাষের সময় দেয়া ভালো।

বর্তমান 28 April 2024 বাজারে গম এর মূল্য কত? 

2

মানুষের খাদ্যের চাহিদা পুরন করার জন্য গম একটি বিশেষ গুরুত্ব পালন করে। গমের আটা বা ময়দা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরি করা যায়। বর্তমান 28 April 2024 বাজার অনুযায়ী গম এর দাম হলো- 

দেশি গম-১ মন 

১২০০ টাকা 

উপসংহার 

বাংলাদেশের খাদ্য তালিকায় ভাত এর পর আটা বা ময়দার চাহিদা সব থেকে বেশি। আর এই আটা আসে গম থেকে। তাই আমাদের গম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই কারণে ওপরে গম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

Leave a Comment