আনারস এর উপকারীতা/ আনারস চাষ পদ্ধতি/ আনারস এর নামকরণ

আনারস এক ধরণের সিুমিষ্ট ফল। আর এটি এক প্রকারের গুচ্ছফল। তবে এই ফলের আরো অনেক নাম রয়েছে। আর এর অন্যান্য নামগুলো হলো- Pineapple,] Ananas, Ananus, Bahunetraphalam, Anamnasam। এছাড়াও এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus Merr. এই ফলের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। তবে বর্তমানে ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশ্বের সর্বত্রই এর চাষের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। কোস্টারিকা, ব্রাজিল এবং ফিলিপিন্স এই তিনটি দেশ একত্রে বিশ্বের সমগ্র আনারস উৎপদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে। 

উদ্ভীদবিদ্যা 

আনারস-এর নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ - রোদ্দুরে

আনারস একটি বহুবর্ষজীবী ভেষজ, যা ১.০ থেকে ১.৫ মি লম্বা হয়। তবে কখনও কখনও এটি আরও লম্বা হতে পারে। এই গাছের শক্ত, মোমযুক্ত পাতা সহ একটি ছোট, মজুত কান্ড রয়েছে। আর এর ফল তৈরি হওয়ার সময় এটি সাধারণত ২০০টি পর্যন্ত ফুল উৎপাদন করে। তবে কিছু বড়-জাতের ফলে এর চেয়ে বেশিও উৎপাদিত হতে পারে। 

এতে একবার ফুল ফোটে। আর এই ফুলের পৃথক ফল একসাথে মিলিত হয়ে একাধিক ফল তৈরি করে। প্রথম ফল উৎপন্ন হওয়ার পর, প্রধান কান্ডের পাতার অক্ষে পার্শ্ব অঙ্কুর উৎপাদিত হয়। এই সাকারগুলি বংশবিস্তার করার জন্য অপসারণ করা যেতে পারে, বা মূল গাছে অতিরিক্ত ফল দেওয়ার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে।

পরাগায়ন 

বন্য পরিবেশে আনারস প্রাথমিকভাবে হামিংবার্ড দ্বারা পরাগায়িত হয়। তবে কিছু কিছু বন্য আনারস রাতের বেলা বাদুড় দ্বারা পরাগায়িত হয়। এর চাষের ক্ষেত্রে যেহেতু বীজের উন্নয়ন ফলের গুণমানকে হ্রাস করে, তাই পরাগায়ন হাত দ্বারা সঞ্চালিত হয় এবং বীজ শুধুমাত্র প্রজননের জন্য রাখা হয়। এই কারণে হাওয়াইতে ২০ শতক জুড়ে শিল্পগতভাবে আনারস চাষ এবং টিনজাত করা হয়েছি। এবং হামিংবার্ড আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। 

আনারস এর ইংরেজী নামকরণ 

ক্যানসারসহ ৯ রোগের চিকিৎসায় আনারস

সর্ব প্রথম আনারস ফলের ইংরেজিতে উল্লেখ পাওয়া গেছে আন্দ্রে থেভেটের দ্য নিউ ফাউন্ড ওয়ার্ল্ড অর অ্যান্টার্কটাইকের ফ্রেঞ্চ অনুবাদ থেকে। এটি ১৫৬৮ সালের অনুবাদ যেখানে তিনি একে একটি Hoyriri হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে আধুনিক রিও ডি জেনিরোর কাছে বসবাসকারী টুপিনাম্বার লোকেরা এই ফল চাষ করে খেতো, এবং তখন একেই আনারস বলে বিশ্বাস করা হয়।

পরবর্তীতে একই ইংরেজি অনুবাদে, তিনি একই ফলটিকে “Pine apple এর পদ্ধতিতে তৈরি করা নানা” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যেখানে তিনি আরেকটি টুপি ভাষার শব্দ nanas ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ‘চমৎকার ফল’। এই শব্দের ব্যবহার অনেক ইউরোপীয় ভাষা দ্বারা গৃহীত হয়েছিল এবং উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক দ্বিপদ নাম Ananas comosus এটি থেকেই এসেছে। 

আনারস উৎপাদন 

২০১৮ সালে সারা বিশ্বে আনারসের উৎপাদন ছিল ২৭৯ লক্ষ টন। সবথেকে বেশি উৎপাদন করছিল কোস্টা রিকা। এরপর বৃহত্তম উৎপাদক হিসাবে যথাক্রমে রয়েছে ফিলিপাইন, ব্রাজিল এবং থাইল্যান্ড।

আনারস চাষাবাদ 

শখের আনারস বাগান এখন পর্যটন কেন্দ্র | ৮ জুন, ২০২১

আড়াআড়ি ভাবে সারি করে কোদাল দিয়ে জমি হালকা ভাবে তৈরী করে, বর্গাকার, আয়তাকার ও কুইন্সাল পদ্ধতিতে আনারস চারা লাগানো হয়। চুন, ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় সার প্রয়োগ করা হয়। গোবর, টিএসপি জমি তৈরি কালে এবং ইউরিয়া ও মিউরেট অব পটাশ সার ফুল আাসার আগে প্রয়োগ করা হয়। 

আনারস গাছ কড়া রোদ সহ্য করতে লেবু, নারিকেল, সুপারী, কাজু বাদাম ও পেপে ইত্যাদি ফল বাগানে হালকা ছায়ায় আনারস ফলানো হয়। ফুল নিয়ন্ত্রন ও ফলের আকার বড় করতে হরমোন ব্যবহার করা হয়। মিলিবাগ পোকার উপদ্রবে সুমিথিয়ন, প্যরাথিয়ন ঔষুধ দিয়ে স্প্রে করা হয়। জানা যায়, কলার মত আনারস গাছে ফল দেয়ার পর প্রধান গাছটি মরে যায় (ঔষধী উদ্ভিদ) এবং সে গাছের কান্ড থেকে আবার নতুন চারা গজায়। 

চাষাবাদ এর অঞ্চল 

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল ও জামালপুর সদর উপজেলায় আনারস উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল শালবনের একাংশ। শাল বন এলাকার মাটি আনারস চাষের উপযোগী। এখানের জলবায়ু আনারসের অনুকূল। তাই বৃহত্তর ময়মনসিংহে আনারসের চাষ প্রধানত হয় গড় অঞ্চলেই। 

আনারস এর উপকারীতা 

আনারসের যত উপকারিতা - banglanews24.com

প্রতিদিন নিয়মিত আনারস খেলে আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়। কারণ আনারস একটি পুষ্টিকর ফল। তাই আমাদের উচিৎ নিয়মিত আনারস খাওয়া। আসুন যেনে নেওয়া যাক আনারস এর উপকারীতাগুলো- 

পুষ্টির অভাব দূর করে

প্রাকৃতিক ঔষধ আনারস

আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে আনারস খেলে দেহে এসব পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকবে না।

হাড় সুস্থ করে 

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাংগানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

চোখের জন্য উপকার 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।

উপসংহার 

আনারসি একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। তাই এটি খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও এটি খেলে আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই আমাদের সকলের নিয়মিত আনারস খাওয়া উচিৎ। 

Leave a Comment