নবম শ্রেণীর হিন্দু ধর্ম ১৫তম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ প্রশ্ন সমাধান ও উত্তর।
৯ম শ্রেণীর হিন্দু ধর্ম ১৫তম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর
newresultbd.com
ভূমিকা
হিন্দু ধর্মের প্রাচীন নাম সনাতন ধর্ম। বিশ্বে প্রাচীন ধর্মসমূহের মধ্যে হিন্দুধর্ম অন্যতম প্রাচীন ধর্ম। এ ধর্মের মূলে রয়েছে ভগবান স্বয়ং নিজে।জগৎ সৃষ্টির সাথেই এই সনাতন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে এ ধর্মের বিকাশ ও প্রসার লক্ষণীয়। এই সনাতন ধর্মের প্রবর্তকরূপে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা যায়না। বহিরাগত – আর্থ সসম্প্রদায়ের ধর্মমতের সঙ্গে ধর্মমতের সংশ্লেষণে হিন্দুধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।
মহাপুরুষদের নাম
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সনাতন ধর্মের সংস্কার ও ধর্ম সাধারণ নব নব রূপ লক্ষণীয়। রাজা রামমোহন রায়, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ,প্রভু জগদ্বন্ধু, ঠাকুর অনকুল চন্দ্র, বাবা লোকনাথ, হরিচাঁদ ঠাকুর, স্বামী স্বরূপানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ,এ.সি. ভক্তি বেদান্ত, স্বামী প্রভুপাদ প্রমুখ ধর্মগুরুর গৌরবময় অবদান হিন্দুধর্মকে আধুনিকতার পরিমণ্ডলে উন্নীত করেছে। এদের সকলের প্রচেষ্টায় হিন্দুধর্ম বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে।
নিম্নে কয়েকজন হিন্দুধর্ম স্থাপনকারীদের সম্পর্কে দেওয়া হলো:–
স্বামী প্রণাবানন্দ
মাদারীপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি স্বামী প্রণাবানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম বিনোদ। তিনি খুব সংযমী ও পরিশ্রমী ছিলেন। বন্ধুদের তিনি সংযমী ও ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য আহবান জানান। তিনি বন্ধুদের নিয়ে বাজিতপুরে আশ্রম গড়ে তোলেন। [newresultbd.com] যা পরবর্তীতে বাজিতপুরে খুব পরিচিত আশ্রম হয়ে ওঠে।
পর্যায়ক্রমে মাদারীপুর, বাজিতপুর, খুলনা প্রভৃতি স্থানে সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
আশ্রম: তীর্থযাত্রীরা যেন তীর্থে গিয়ে স্বাচ্ছন্দে পুণ্যকর্ম করতে পারেন সেইজন্য তিনি ‘ভারত সেবাশ্রম’ নামে সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করে সারা ভারতে খ্যাতি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কাশী, গয়া,প্রয়াগ,বৃ্ন্দাবন, কুরুক্ষেত্র প্রভৃতি স্থানে ভারত সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
সেবাশ্রমের ভূমিকা: আশ্রমের মূল কাজ ছিল গরীব দুঃখী, আর্ত–পীড়িতদের সেবা দিতে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ,মহামারী,দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি দুঃসময়ে তিনি সেবাশ্রমের কর্মীদের নিয়ে মানুষের সেবা করে চলেন। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
সেবাশ্রমের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা: স্বামী প্রনবানন্দ অস্পৃশ্যতাকে ঘৃণা করতেন। তিনি শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নৈতিক ও অাধ্যাত্মিক ভাব জাগিয়ে তোলার কথা বলতেন। [newresultbd.com] সকলের মধ্যে সহযোগিতার ভাব গড়ে তোলার কথা বলতেন এজন্য তিনি মিলন মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। এছাড়াও তিনি আহারে,বিহারে ও আলাপে সংযম অভ্যাস করার কথা বলতেন। দেশকে নীতি ও ধর্মের পথে চালিত করতে বলতেন।
ভগিনী নিবেদিতা
ভগিনী নিবেদিতা ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মার্গারেট এএলিজাবেথ নোবেল। একজন বিদেশিনী হয়েও নিবেদিতা ভারতবাসীদের একান্ত আপন করে নিয়েছিলেন।
স্থাপনা ও স্থাপনার ভূমিকা: গুরুর নির্দেশে তিনি কলকাতার বাগবাজারে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এখানে তিনি রামায়ণ, মহাভারত থেকে সীতা, সাবিত্রী, গান্ধারী প্রভৃতি মহীয়সী নারীদের জীবনী খুব যত্নসহকারে ছাত্রদের শেখাতেন।
নিজের সাথে সম্পৃক্ততা: ভারতবাসীদের সেবায় তিনি নিজেকে ও নিজের সমস্ত ভালোবাসা উজার করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও নানাভাবে তিনি এদেশের গরিব দুঃখীদের সেবা করতেন। ভারত ও তার জনগণের জন্য তার এই মমতা দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম দিয়েছিলেন ‘লোকমাতা’।
স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দ একজন মহাপুরুষ ছিলেন। ছিলেন একজন বীর সন্ন্যাসী।
স্থাপনা: বিবেকানন্দ হাওড়া জেলার বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন স্থাপন করেন। সেবার আদর্শ নিয়ে এ মঠ প্রতিষ্ঠিত।
স্থাপনার ভূমিকা ও নিজের সম্পৃক্ততা: স্বামী বিবেকানন্দ দেশবাসীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন। সমস্ত কুসংস্কার ধ্বংস করে সকলকে মিলেমিশে থাকার কথা বলতেন। তিনি বলতেন শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। স্বাধীনতাই ধর্ম, পরাধীনতাই পাপ। [newresultbd.com] তিনি মানুষের সেবা তথা জীবের সেবাকেই ঈশ্বরের সেবা বলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ খিষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। তিনি বক্তৃতায় বললেন, ‘বিবাদ নয়, সহায়তা ;বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ; মতবিরোধ নয়,সমন্বয় ও শান্তি।’ সবাই তার বক্তৃতায় মুগ্ধ হন।
মা আনন্দময়ী
মা আনন্দময়ী ছিলেন একজন মহীয়সী নারী। একজন মহাসাধিকা। সবাই তাকে মা বলে ডাকত। তারপর থেকে তাকে সবাই তাকে মা আনন্দময়ী বলে ডকতেন।
সেবাশ্রম: জন্মভূমি খেওড়াতে আনন্দময়ী মায়ের নামে আশ্রম আছে। তার নামে একটি বিদ্যালয়ও আছে। খেওড়া আনন্দময়ী উচ্চবিদ্যালয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার নামে মন্দির আছে।বর্তমানে ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী কালিবাড়ির পাশে মা আনন্দময়ীর মন্দির আছে যেটি মা আনন্দময়ীর আদি মন্দির।
আশ্রমের ভূমিকা ও নিজের সম্পৃক্ততা: মা আনন্দময়ীর ধর্মকথা সুন্দর। তিনি বলেছেন জগতে মত ও পথের শেষ নেই।তবে সব মতের মিলের প্রয়োজন। সব পথেই সত্যকে পাওয়া যায়। [newresultbd.com] তার বাণী ছিল উদার। সব মানুষও উদার। ছোটদের জন্য তিনি নৈতিক শিক্ষামূলক উপদেশ দিয়েছেন, যেগুলো মেনে চললে আমাদের জীবন হবে সুন্দর।
রাণী রাসমণি
রাণী রাসমণি জনকল্যাণমুখী অনেক কাজ করেছেন।তিনি জগন্নাথ ক্ষেত্রের রাস্তাঘাট সংস্কার করে দেন। কালী পূজার জন্য কালীমন্দির নির্মান করেন। তিনি গঙ্গার জলকর বন্ধ করেন। রাণী তার প্রজাদের সন্তানের ন্যায় প্রতিপালন করেন। [newresultbd.com] নীলকর সাহেব প্রজাদের উপর উৎপীড়ন শুরু করলে তিনি অত্যাচার বন্ধ করেন। তিনি প্রজাদের উন্নতি কল্পে ‘টোনার খাল’ খনন করে দেন। সোনাই, বেলিয়াঘাটা ও ভবানীপুরে বাজার স্থাপন এবং কালীঘাট নির্মাণ তার অনন্য কীর্তি।
উপসংহার
হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি ইতিহাসের সনাতন ধর্মের পরিচিতির মধ্যেই বর্তমান। সনাতন ধর্ম কোন একজন মাত্র মুনি-ঋষি বা অবতার পুরুষের প্রতিষ্ঠিত ধর্ম নয়। আদিম মানুষের মনে যখন সত্য মিথ্যা, ন্যায় অন্যায় বোধ জেগেছিল এককথায় ধর্মবোধ জেগেছিল সেখান থেকে এ ধর্মের বিকাশ শুরু। আর সমাজের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ধ্যান ধারনার ফসল নিয়ে এ ধর্ম ক্রমশ বিকাশ লাভ করে। সনাতন ধর্মের মূলে রয়েছে স্বয়ং ভগবান।
[Join]