0

কৃষি এলাকার সাথে মানব বসতির বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন। এসএসসি ভূগোল ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

কৃষি এলাকার সাথে মানব বসতির বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন।

অ্যাসাইনমেন্ট: কৃষি এলাকার সাথে মানব বসতির বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন।

এসএসসি ভূগোল ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর

  • বিষয়ঃ ভূগোল ও পরিবেশ 
  • এসাইনমেন্ট এর ক্রমিক নাম্বারঃ ০৫
  • বিষয় কোডঃ ১১০
  • শিরোনামঃ কৃষি এলাকার সাথে মানব বসতির বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন।

ক) কৃষি এলাকায় বসতি স্থাপনের নিয়ামক এর বর্ণনাঃ

কৃষি এলাকায় বসতি স্থাপনের কয়েকটি বিশেষ নিয়ামক রয়েছে তার বর্ণনা দেওয়া হল:

১. ভূপ্রকৃতি: 

ভূপ্রকৃতি কোনো এলাকার মানুষের বসতি স্থাপনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ভূ প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে মানব বসতির ধরণ। সাধারণত পাহাড়ি এলাকার কৃষিকাজ সমতল ভূমির তুলনায় কষ্টকর হয়ে উঠে। সেই কারণে সমতল ভূপ্রকৃতি অঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজ, যাতায়াত ও অন্যান্য সুবিধার জন্য কৃষিজমির কাছাকাছি তাদের বসতি নির্মান করে। যেমন- বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে জনবসতি অধিক কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে তুলনামূলকভাবে কম।

২. পানীয় জলের সহজলভ্যতা: 

পানির অপর নাম জীবন। মানুষ এ কারণেই যে সকল স্থানে পানির উৎস আছে অথবা পানি সহজলভ্য এমন স্থানে বসতি গড়ে তোলে। প্রাচীন সভ্যতার অনেক অঞ্চলে এই পানির কারণেই মানুষ একটি বা একাধিক স্থানের বসতি গড়ে তুলেছিল। মরুময় এবং উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা বা প্রাকৃতিক ক‚পের আশেপাশে এমন বসতি গড়ে এবং এই সমস্ত বসতিকে বলা হয় আর্দ্র বসতি।

৩. মাটি: 

বসতি স্থাপনে মাটির উর্বরতার প্রভাব রয়েছে। সাধারণত উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-পোল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি ইত্যাদি দেশে মাটির প্রভাবে বিক্ষিপ্ত বসতি দেখা যায়।

৪. প্রতিরক্ষা: 

প্রাচীনকালে মানুষ ঝড়-ঝঞ্জা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পশুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজে বেড়াতো ও দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। এভাবেই বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে অর্থাৎ প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই পুঞ্জিভূত বসতি গড়ে তোলে।

৫. সামাজিক বিভিন্নতা: 

সমাজের নানা সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ও ঐতিহ্যর রীতি-নীতির পার্থক্যের জন্যই মানুষ পৃথক পৃথক বসতি স্থাপন করা শুরু করে। নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ তাদের ভাবধারা ও নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতির জন্য তাদের বসতিও আলাদা হয়।

৬. পশুচারণ: 

পশুচারণ প্রাচীনকাল থেকে মানুষের জীবনধারণের বা জীবিকা নির্বাহের উৎস। তাই পশুচারণের জন্য উপযোগী বিশাল এলাকা রয়েছে এমন স্থানে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।

৭. যোগাযোগ: 

মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই এমন স্থানকে তাদের বসতি নির্মানের জন্য পছন্দ করে যেখানে যোগাযোগের পূর্ণ সুবিধা রয়েছে। নদী তীরবর্তী স্থানে নৌ-চলাচলের এবং সমতলভূমিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকার কারণে এই সব স্থানে পুঞ্জিভূত বসতি গড়ে উঠেছে। যেমন- মিসরের নীলনদের তীরবর্তী আলেকজান্দ্রিয়াতে এই পদ্ধতিতে নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে।

খ) গ্রামীণ ও নগর বসতির ধরনঃ

সাধারণত তিন ধরনের গ্রামীণ বসতি দেখা যায় তা বর্ণনা করা হলো,

১. গোষ্ঠিবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি: 

গ্রামীন এলাকায় কোনো একটি স্থানে যখন বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বাস করে তখন তাকে বলা হয় গোষ্ঠি বা সংঘবদ্ধ বসতি। এই ধরনের বসতিগুলোর মধ্যে পারস্পারিক দূরত্ব কম। মূলতসামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যই বাসগৃহগুলো এমনভাবে গড়ে উঠে। এই ধরনের বসতির দ্বারা ছোট গ্রাম বা নগর হতে পারে। গোষ্ঠিবদ্ধ বসতিতে দেখা যায় যে যদি স্থানটি অর্থনৈতিক দিক হতে উন্নত হয় তবে সেখানে আরও বসতি ও রাস্তাঘাট গড়ে উঠবে। এভাবে এক বা একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলে গড়ে উঠা বসতিগুলো থেকেই ভবিষ্যতে নগর বা শহরে রূপান্তর ঘটে।

২. বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন বসতি: 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের বসতি দেখা যায়। মূলত: প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণেই এরূপ বসতি গড়ে উঠে। বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন বসতি হলো সেই ধরনের বসতি যেখানে একটি পরিবার অন্য একটি পরিবার থেকে বহু দূরে বিছিন্নভাবে বসবাস করে। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতিতে একত্রে এক থেকে তিনটি পরিবার এভাবে বসবাস করে। তবে এদের মধ্যে থাকা দূরত্বের জন্যই এদের বিছিন্ন বসতি বলা হয়। হিমালয়ের বন্ধুর অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত বসতিতে যারা বাস করে তাদের এক উপত্যকার অধিবাসীদের সাথে অন্য উপত্যকার অধিবাসীদের কখনোই দেখা হয় না। সুতরাং এই ধরনের বসতির বৈশিষ্ট্য মূলত তিন ধরনের । যথাক. অতি ক্ষুদ্র পরিবার নিয়ে বসতি গড়ে উঠে।

খ. এই সব বসতির অধিবাসীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোেেগর ক্ষেত্রে পরস্পর বিছিন্ন।

গ. বিক্ষিপ্ত বসতিতে প্রতিটি বসতি নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখে।

সাধারণত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের খামারবাড়িতে এই ধরনের বসতি বিন্যাস দেখা যায়। বিক্ষিপ্ত বসতি এমন ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে গড়ে উঠে যেখানে কৃষিকাজের জন্য সমতল ভূমি পাওয়া যায় না। এছাড়াও জলাভাব, ক্ষয়িত ভূমিভাগ, বনভূমি, অনুর্বর মাটি, বিল অঞ্চলের অবস্থান ইত্যাদি ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে এই ধরনের বসতি গড়ে উঠতে পারে।

৩. রৈখিক বসতি: 

গ্রামীন এলাকার নদী তীরে, রাস্তার কিনার অথবা নদীর প্রাকৃতিক বাঁধের পাশে কতগুলো বাড়ি একই সরলরেখায় গড়ে উঠে। এই সকল বাড়িকে বলা হয় রৈখিক বসতি। মূলত প্রাকৃতিক ও সামাজিক কারণে এই ধরনের বসতি গড়ে উঠে। বন্যামুক্ত সকল উচ্চভূমিতে এই ধরনের বসতি গড়ে তোলা সহজ। রৈখিক বসতিতে গড়ে উঠা পুঞ্জীভূত ঘর-বাড়িগুলোর মধ্যে কিছুটা ব্যবধান বা দূরত্ব থাকে।

সাধারণত ৬ ধরনের নগর বসতি দেখা যায় নিচে নগর বসতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো:

১. সামরিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগর: 

কোনো দেশের প্রতিরক্ষার জন্য গঠিত সামরিক ও নৌ-ঘাটির দূর্গসমূহকে ঘিরে নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটে। ফ্রান্সের লা-হাভায়, ভারতের আগ্রা, গোয়ালিয়র, স্পেনের জিব্রাল্টার এমন নগরের উদাহরণ।

২. প্রশাসনিক নগর: 

শাসন ব্যবস্থার জন্য কোনো দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য যে মূল কেন্দ্র গঠন করা হয়, সেখানে কেন্দ্রীয় শহর গড়ে উঠে। ঐ কেন্দ্রীয় শহরকে ঘিরে রাজধানী অর্থাৎ নগর সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে। যেমন- বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের নয়াদিল্লী।

৩. খনি নির্ভর শিল্পভিত্তিক নগর: 

শিল্পের বিকাশ ও উৎপত্তির উপর নির্ভর করে নগর গড়ে উঠতে পারে। শিল্পকার্য দ্বারা নতুন শহর গঠন হয়। তবে স্থায়ী শহর বা নগরের প্রতি শিল্পের আকর্ষণ বেশি হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে শিল্পে শক্তি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বেশি প্রচলিত হওয়ার কারণে যে সব এলাকায় কয়লা উত্তোলন করা হতো এমন স্থানকে ঘিরে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত নগর গড়ে উঠেছে। রাশিয়ার জোনেৎস, ভারতের রানীগঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রের পেলসিলভানিয়া এই ধরনের খনিকে নির্ভর করে গড়ে উঠা শহর।

৪. সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগর: 

সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও প্রথাভিত্তিক শহর গড়ে উঠতে পারে। যেমন-ভারতের মুম্বাই, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও চিত্রকলার উপর ভিত্তি করেও নগর গড়ে উঠে। ফ্রান্সের প্যারিসে এমন নগর গড়ে উঠেছে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ছাড়াও ধর্মীয় কারণে, বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, কোনো মহাপুরুষের সমাধি বা জন্মস্থানকে ভিত্তি করেও নগর গড়ে উঠতে পারে। যেমন- ভারতের নালন্দা, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ ইত্যাদি।

৫. বাণিজ্যভিত্তিক নগর:

প্রাচীনকালে বিনিময় প্রথার দ্বারা মানুষ তাদের নানাবিধ অভাব পূরণের উপাদান সংগ্রহ করতো। এই পদ্ধতি থেকেই পরবর্তীতে ‘‘বাজার’’ ধারণার সূচনা হয়। স্থানীয় বাজারে পণ্য কেনা-বেচার জন্য অনেক লোকের সম্মেলন ঘটে বলেই এইসব স্থানের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটে। মহাদেশীয় স্থলপথকে অবলম্বন করে প্রাচীনকালে সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পো, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়াতে নগর গড়ে উঠে। ভারতের কলকাতা, পাটনা ইত্যাদি নগরও মূলত বাণিজ্যিক লেনদেনের সুবিধার্থে নব্য জলপথের অবদানে সৃষ্টি হয়েছে।

৬. স্বাস্থ্য নিবাস ও বিনোদন কেন্দ্র: 

যে সকল স্থানে বিনোদন, অবসর যাপন এবং স্বাস্থ্য ও প্রমোদ কেন্দ্র গড়ে উঠে সে সব স্থানকে ঘিরে শহর গড়ে উঠতে পারে। যেমন-বাংলাদেশের কক্সবাজার, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, ভারতের গোয়া ইত্যাদি স্থানে বিনোদন নির্ভর শহর গড়ে উঠেছে।

গ) কৃষি এলাকায় বসতির নাম উল্লেখ করে তার ধরন ও বিন্যাস ব্যাখ্যাঃ

কৃষি এলাকার একটি বসতির নাম হলো বিক্ষিপ্ত বসতি। নিচে বিক্ষিপ্ত বসতি নির্ধারণ ও বিন্যাস আলোচনা করা হলো:

বিক্ষিপ্ত বসতি:

বিক্ষিপ্ত বসতি বলতে এমন একটি বসতিকে বোঝানো হয়, যেখানে দুটি বা তিনটি ঘরের সমষ্টি, যা একটি বা দুটি পরিবারের পাঁচ-সাতজনের আবাসস্থল। বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমির প্রায় সব জায়গায় বিক্ষিপ্ত বসতির প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।

বৈশিষ্ট্য:

১. কৃষিজমির মাঝখানে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। 

২. এ ধরনের বসতির দুই-চারটি বাড়ি থাকতে পারে।

৩. পরিবারের আকার বাড়ার কারণে বিক্ষিপ্ত বসতির সংখ্যা বাড়ছে।

অবস্থান: রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত বসতি অধিক বিদ্যমান। পুরনো ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও ধলেশ্বরী প্লাবন ভূমি এবং সিলেটের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এ বসতি দেখা যায়।

Get SSC Geography Assignment Answer

[Join]