0

সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা। এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন ২য় পত্র ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।

সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা

বিষয়: গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন ২য় পত্র, বিষয় কোড: ২৮৩, স্তর: এইচএসসি, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০২, প্রথম অধ্যায়: পরিবার ও পারিবারিক জীবন।

অ্যাসাইনমেন্ট: সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা।

বিষয়বস্তু

  • ১. পরিবারের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • ২. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজ পরিবারের কাজ বর্ণনা করতে পারবে
  • ৩. পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির ভূমিকা বর্ণনা করতে পারবে

নির্দেশনা

  • ক. পরিবারের ধারণা ও বিভিন্ন প্রকার পরিবারের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা
  • খ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজ পরিবারের কাজ বর্ণনা
  • গ. পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির ভূমিকা বর্ণনা
  • ঘ. পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব মূল্যায়ন করে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা

এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন ২য় পত্র ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর

পরিবারের ধারণা ও বিভিন্ন প্রকার পরিবারের বৈশিষ্ট্যঃ 

পরিবার হলো একটি মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। পরিবারের মধ্যেই আমরা জন্মগ্রহণ করি, বড় হই, নিজেই পরিবার গঠন করি, কর্মজীবনে অবসরে পরিবারের মাঝে ফিরে আসি এবং পরিবারেই একজন সদস্যের মৃত্যু ঘটে। এজন্যই রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, “”Home is the place where, when you have to go there, they have to take you in”- অর্থাৎ পরিবার সেই স্থান, যেখানে আপনি যখন যেতে চাইবেন তখন পরিবার আপনাকে গ্রহণ করবে। [newresultbd.com] পরিবর্তনশীল আধুনিক সমাজে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই নানারকম অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার ফলে পরিবারের গড়ন, বৈশিষ্ট্য এবং এর ভূমিকা ও কার্যাবলীতে এসেছে পরিবর্তন। পরিবারের গড়ন, বৈশিষ্ট্য এবং এর ভূমিকা ও কার্যাবলীতে পরিবর্তন এলেও পরিবার তার নিজস্ব গুরুত্ব বজায় রেখেছে এবং সময়ের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে পরিবার অদ্যাবধি তার ভূমিকা পালন করে চলছে। পরিবার আমাদের নানাবিধ প্রয়োজন মিটিয়েই টিকে আছে এবং হয়ত টিকে থাকবে।

উপরের সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে পরিবারের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন:

১) পরিবারের সদস্যরা সাধারণত রক্ত, বৈবাহিক বা দত্তকসূত্রে সম্পর্কযুক্ত;

২) পরিবার একটি স্থায়ী সংগঠন, কারণ এর সদস্যরা দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করে;

৩) পরিবার হলো উৎপাদন ও ভোগের একটি মৌলিক একক। কেননা এর সক্ষম সদস্যরা উৎপাদন করে এবং সবাই মিলে ভোগ করে;

৪) পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং বেশি বয়স্ক সদস্যদের ভরণ-পোষণসহ অন্যান্য দায়-দায়িত্ব বহন করে;

সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের কাজঃ

 সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের অনেক কার্যক্রম রয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ-

(১) জৈবিক কাজ

পরিবারের অন্যতম কাজ সন্তান-সন্ততির জন্মদান এবং লালন-পালন। এই কাজটি পরিবারের ভিত্তি। কেননা যৌনতা, নারী-পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও সন্তান-বাৎসল্যের কারণেই মানুষ পরিবার গঠন করে। অনেক উন্নত দেশে শিশু ভ‚মিষ্ঠ হওয়া থেকে লালন-পালনের নানা দায়িত্ব শিশু-সদন বা শিশুমঙ্গল প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলো পালন করে থাকে। তবে পরিবারের মধ্যে যে আদর-স্নেহ ও মায়া-মমতায় শিশু বিকশিত হয় তার বিকল্প কিছুই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

(২) শিক্ষামূলক কাজ

পরিবারকে সমাজ জীবনের শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয়। শিশুরা প্রথম শিক্ষা, বর্ণ পরিচয় ও যোগ-বিয়োগ পরিবারেই শিখে। এমনকি বড় হয়ে স্কুলে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাও পরিবারের নিয়ন্ত্রণে পূর্ণতা পায়। যেমন− পরিবারে মাতাপিতার সাহায্য ও সহযোগিতায় স্কুলের শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হয়। শুধু তাই নয়− শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষা, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, বড়দের প্রতি সম্মান ও ছোটদেরকে ভালবাসার শিক্ষা পরিবার থেকে লাভ করে। তাই শিশুশিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্ডেন প্রভৃতি থাকলেও নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবতাবোধের শিক্ষা পরিবারের মত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না।

(৩) অর্থনৈতিক কাজ

অতীতে পরিবারের মধ্যেই অর্থনৈতিক কার্যাবলী সম্পাদিত হত। শিকার, মৎস্য চাষ ও সংগ্রহ, কুটির শিল্প প্রভৃতি কাজ পরিবারের সদস্যরা সম্পাদন করে জীবন ধারণ করত। তখন তাদের চাহিদা কম ছিল বলে পরিবার সদস্যদের সকল চাহিদা প‚রণ করতে পারত। কিন্তু বর্তমানকালে অর্থনৈতিক চাহিদা বৃদ্ধি ও আয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ফলে পরিবারের সদস্যগণ অফিসআদালত, কলকারখানা ও নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে থাকে। [newresultbd.com] তবে আজকাল আবার পরিবারমুখী আয়ের পথ উন্মোচিত হয়েছে। হাঁসমুরগী পালন, মাছ চাষ, ফল ও ফুলের বাগান তৈরি, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই ও বুনন কাজ করে পরিবারের সদস্যগণ আয় বাড়িয়ে সুখ-শান্তি ও স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করছেন। পরিবারের সদস্যগণের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অর্জিত আয় পরিবারের মধ্যে খরচ করে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কাজ করে।

(৪) মনস্তাত্ত্বিক কাজ

স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালবাসা ও আদর-আপনি শিশুরা লালিত-পালিত হয়। পিতামাতার সেনেহা প্রতিপালিত শিশু সমাজে চলার পথে উদারতা, সহনশীলতা, দয়ামায়া প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী দ্বারা পরিচালিত হয়। এর ফলে সুন্দর ও সুশৃংখল সমাজ গড়ে উঠে। পরিবারের এ কাজের কোন বিকল্প সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। 

পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির ভূমিকাঃ

পরিবারের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির যে যে ভূমিকা পালন করা উচিত তার মূল উপাদান সমূহ নিচে বর্ণনা করা হলোঃ-

(১) নীতি ও ঔচিত্যবোধ আলোকে বিচার করা

প্রত্যেক সমাজে কি করা উচিত বা কি করা উচিত নয় এ ব্যাপারে সাধারণ ঐকমত্য থাকে। ধর্ম থেকে বা সমাজের গুরুজনদের নিকট থেকে এগুলো মানুষ অর্জন করে। এগুলোকেই মানুষ সামাজিক নৈতিকতা হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন− সত্য কথা বলা ঔচিত্যবোধের সহিত জড়িত। এর বিপরীতে মিথ্যা কথা বলাকে মানুষ ঔচিত্যবোধের বিপরীত মনে করে। মিথ্যাবাদী তাই সমাজে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়।

(২) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা

সামাজিক ন্যায়বিচার গণতন্ত্রের বিকাশের ফল। সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে বুঝায় ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, অফিসের বড় কর্মকর্তা থেকে ছোট কর্মচারী, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাজ, আচরণ ও ন্যায়-অন্যায় বিচারের মানদণ্ড হবে এক ও অভিন্ন। কোন অবস্থাতেই ব্যক্তিগত অবস্থা ও মর্যাদাকে গণ্য করা হবে না। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যক্তি সংযত হয়। সামাজিকভাবে স্বীকৃত ধারণার পরিপন্থী আচরণ করতে সাহস করে না। সামাজিক ন্যায়বিচার থাকলে মূল্যবোধ সংরক্ষিত ও সঞ্জীবিত হয়।

(৩) শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করা

শৃঙ্খলাবোধ সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম ভিত্তি। শৃঙ্খলা বলতে বুঝায় আইনের প্রতি আনুগত্য সৃষ্টির জন্য শাস্তিযোগ্য বিধানের দ্বারা প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ প্রশিক্ষণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আচরণ শিক্ষা করা ও মেনে চলার মানসিকতাই শৃঙ্খলাবোধ। সময়মত কাজ করা, স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, জনসভা, পারিবারিক জীবনব্যবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও বিধি-বিধান মেনে চলা মূল্যবোধের মানদণ্ডে সমাজে আদর্শ বলে গৃহীত হয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।

(৪) সহনশীলতা বজায় রাখা

সহনশীলতা বলতে বুঝায় সহ্য করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা। নিজের ইচ্ছার বিপরীত বা অন্যের পৃথক মতকে সহ্য করা বা গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতাই সহনশীলতা। এই মনোভাবের অভাবে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। আপোষ ও সমঝোতামূলক মনোভাব না থাকলে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক জীবন গড়ে তোলা যায় না। মত বিনিময় এবং অবাধে মত বিনিময়ের সুযোগ থাকলে স্বচ্ছ অভিমত সৃষ্টি হয় এবং তা সমাজ জীবনকে পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ করে। সহনশীলতা ভাল গুণ হিসেবে সমাজে স্বীকৃত। সহনশীলতা সমাজে শান্তি ও সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে। সহনশীলতা তাই সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম ভিত্তি। 

সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্বঃ

(১) ব্যক্তিগত সম্পত্তি

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, সুদূর অতীতে মানুষ বন-জঙ্গল ও পাহাড়পর্বতের গুহায় বসবাস করত এবং ফলমূল ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করত। পরবর্তীতে মানুষ সমতল ভূমিতে বসবাস আরম্ভ করে এবং চাষাবাদের সাথে পরিচিত হয়। এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও চাষাবাদের ফসল সংরক্ষণের জন্য ঘরবাড়ী তৈরি এবং সংরক্ষিত অবস্থায় বসবাসের ফলে পরিবার সৃষ্টি হয়।

(২) সহযোগিতা

মানুষ একাই সব কাজ করতে পারে না। তাই তারা একে অপরকে সহযোগিতা করে। মিলে মিশে কাজ করার মাঝেই রয়েছে আনন্দ। পরস্পর নির্ভরশীলতা ও সঙ্গপ্রিয়তার কারণে মানুষ একে অপরকে সহযোগিতা করে এবং কাছাকাছি হয়। এর সাথে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান যৌন আকর্ষণ তাদেরকে আরও নিকটবর্তী করে এবং পরিবার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(৩) সামাজিকতা

সামাজিকতার কারণে মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করে। একই কারণে আবার প্রত্যেক পরিবারের স্বতন্ত্র জীবন গড়ে উঠে। সামাজিকতার কারণে গোপনীয় ও নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পারিবারিক জীবনব্যবস্থা গড়ে উঠে।

(৪) সভ্যতাবোধ

আদিম যুগে মানুষ সভ্য জীবনের সন্ধান পায়নি। নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে সে সভ্য জীবন যাপনের উপকরণগুলো আয়ত্ত করে এবং এগুলো একান্তভাবে উপভোগের প্রেরণায় পৃথক পৃথক ভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন শুরু করে। পৃথকভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা পরিবার গঠনে উৎসাহিত করে। 

Get HSC Home Management and Family Life Assignment Answer

[Join]