0

শুধু আনন্দ লাভই নয়, খেলা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটায় এবং বয়স বাড়ার সাথে খেলার ধরনও পাল্টায় – যৌক্তিকতা মূল্যায়ন। এইচএসসি শিশুর বিকাশ ৬ষ্ট সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

শুধু আনন্দ লাভই নয়, খেলা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটায় এবং বয়স বাড়ার সাথে খেলার ধরনও পাল্টায় - যৌক্তিকতা মূল্যায়ন।

অ্যাসাইনমেন্ট: শুধু আনন্দ লাভই নয়, খেলা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটায় এবং বয়স বাড়ার সাথে খেলার ধরনও পাল্টায় – যৌক্তিকতা মূল্যায়ন।

শুধু আনন্দ লাভই নয়, খেলা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটায় এবং বয়স বাড়ার সাথে খেলার ধরনও পাল্টায়

ক. শিশুর বিভিন্ন ধরনের খেলা

খেলাকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যেমন- (১) সক্রিয় খেলা ও (২) নিষ্ক্রিয় খেলা। সক্রিয় খেলা বলতে শিশু যখন কোন খেলনা দিয়ে খেলে বা কোন কাজ করে আনন্দ পায় অর্থাৎ এখানে শিশু নিজেই খেলায় ব্যস্ত; যেমন আবিষ্কারমূলক, গঠনমূলক, নাটকীয় এবং পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে খেলা ।

নিষ্ক্রিয় খেলা হল শিশু যখন কোন কিছু থেকে আনন্দ পায়; যেমন- অন্যদের পর্যবেক্ষণ করা, ছবি দেখা, গল্প শোনা, কমিক বা কার্টুন দেখা, গান শোনা, টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি। এখানে শিশু যখন ক্লান্ত থাকে এবং সক্রিয় খেলা খেলতে চায়না তখন অন্যের খেলা দেখে অথবা অন্যের কাছ থেকে গল্প বা গান শুনে আনন্দ পায়। আবার খেলার স্থান অনুযায়ীও খেলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যেমন

(১) বহিরাঙ্গণ খেলা ঃ খোলা পরিবেশে যে খেলা হয়। সাইকেল চালানো, দোলনায় দোল খাওয়া, দড়ি লাফানো, স্লাইডে চড়া, খেলনা ট্রেনে চড়া, বালি দিয়ে খেলা ইত্যাদি। (২) অভ্যন্তরীণ খেলা ঃ বাড়ির কক্ষের ভিতর যে খেলা হয়; যেমন- ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানো, ছবি আঁকা, ছবি দেখা, পুতুল খেলা ইত্যাদি।

খেলার মাধ্যমে শিশুর অতৃপ্ত ইচ্ছার তৃপ্তি ঘটে। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে দু ধরনের খেলারই প্রয়োজন আছে।

সক্রিয় খেলা

(১) আবিষ্কারমূলক খেলা : ছোট শিশুরা খেলনা ভেঙ্গে, কামড়িয়ে, আঁচড়িয়ে, দুমড়ে মুচড়ে এবং খুঁটিয়ে দেখে। খেলনা নেড়েচেড়ে কোন শব্দ হয় কিনা দেখে। এতে শিশুর সব কয়টি ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার করে, আনন্দ পায় এবং জ্ঞান অর্জন করে।

(২) গঠনমূলক খেলা : শিশুরা যতই বড় হয় ততই তারা বাস্তব এবং কল্পনার মধ্যে পার্থক্য বের করতে পারে এবং গঠনমূলক খেলায় মনোযোগ দেয়। ৫ বছরের শিশু গঠনমূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে। ছেলেরা ইটের পর ইট সাজিয়ে অথবা ব্লক দিয়ে বিভিন্ন জিনিস গড়তে পারে। বালি দিয়ে বাড়ি তৈরি করে, কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন বস্তু তৈরি করে। ছবি এঁকে তাদের সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়। মেয়েরা পুতুলের জামা তৈরি করে, মালা গাঁথে, রান্নাবান্নার সরঞ্জামের প্রতি আগ্রহ দেখায়। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে এবং জ্ঞান অর্জন করে।

(৩) নাটকীয় খেলা বা কাল্পনিক খেলা ঃ তিন বছর বয়সের আগে শিশুরা নিজেরা অন্যের ভূমিকায় সাজে ও কথা বলে, এবং তাদের মত কাজ করতে পছন্দ করে। শিশু পুতুলকে রোগী বানিয়ে চিকিৎসা করে। নতুন ভাই বোনের আগমনে পুতুলকে নতুন শিশু ভেবে মায়ের মত সেবা যত্ন করে খেলতে খেলতে শিশু পুতুলকে মারে এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে। এতে মানসিক শান্তি পায়। শিশুরা ফেরিওয়ালা সাজে, মায়ের মত করে ঘর ঝাড়ু দেয়, বিছানা করে, রান্না করে। আবার দল বেধে খেলে। এতে ভাষার বিকাশ হয়, শিশু সামাজিক হয়।

পারিবারিক খেলা ঃ দুই বছরের আগে শিশুরা পরিবারের সদস্যদের সাথে সহজ খেলা খেলে। এখানে প্রতিটি খেলায় একজনের সাথে খেলে এবং একজনের পর আর একজন খেলে। এধরনের খেলা হলো “আমার হাতে কি আছে বলত?” অথবা “বিড়ালটি বাজার করতে গিয়েছে।”

প্রথম শৈশবে আরও বেশি সদস্যদের সাথে খেলে; যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী অথবা এসময় তাদের পাশে যারা থাকে। এগুলো সাধারণত অভ্যন্তরীণ খেলা। আবহাওয়া ভাল থাকলে এরা বাইরেও খেলতে পারে। অভ্যন্তরীণ খেলার মধ্যে ধাঁধাঁ, মিউজিকেল চেয়ার, লুকানো জিনিস খুঁজে বের করা। বহিরাঙ্গণ খেলা হলো দৌড়ানো, পালানো, লুকিয়ে থাকা এবং খুঁজে বের করা।

প্রতিবেশিদের সাথে খেলাচার-পাঁচ বছরের শিশুরা পারিবারিক খেলা খেলতে পছন্দ করে না। তারা তাদের সমবয়সীদের সাথে খেলতে পছন্দ করে। এখানে অনেক প্রতিযোগিতা। এখানে দুই এর বেশি সমবয়সী থাকে এমনকি এরা দলগতভাবে খেলে যেমন মূর্তি সাজা, নেতাকে অনুসরণ করা, লুকানো খেলা ইত্যাদি। শিশু যতই বড় হয় ততই বড়দের অনুসরণ করে। তাদের খেলা হয়- বেস বল, ফুটবল, বাস্কেট বল ইত্যাদি ।

স্বাধীন ও অনিয়ন্ত্রিত খেলাএ ধরনের খেলায় শিশু কোন নিয়ম মেনে চলে না। শিশু একাই খেলে। সাধারণত ২ বছর ৬ মাস বয়সের শিশুরা এ ধরনের খেলা খেলে থাকে। যেহেতু বড়দের হস্তক্ষেপ থাকে না সে জন্যে শিশু নিজের খেয়াল খুশী মত যখন ইচ্ছা তখন খেলে। ৩ বছর বয়স হলেই শিশুরা তার নিজস্ব পছন্দমত জিনিস সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। সংগ্রহের প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। ছেলেরা খেলনা গাড়ি, গাড়ির ভাঙ্গা অংশ, মার্বেল, পয়সা, ডাকটিকেট, পেন্সিল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। অন্যদিকে মেয়েরা পুতুল, পুঁথির মালা, কলম, ছবি, গহনা, ডেকচি, পাতিল ও রান্নার সরঞ্জাম সংগ্রহ করে।

অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা : শিশু খেলনার প্রতি মনোযোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত এ ধরনের খেলা খেলে। হাত পা ছোড়াছুড়ি, আঙ্গুল মুখে দেয়া, নিজের দুধের বোতল ধরে রাখা, ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিকে তাকান ইত্যাদি। এতে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নড়ে ফলে ভাল ব্যায়াম হয়, রক্ত চলাচল হয়, মাংসপেশী সতেজ ও সবল হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৌড় ঝাপ, সাইকেল চড়া, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, সক্রিয় সংঘবদ্ধ খেলা যেমন ফুটবল, ভলিবল ইত্যাদি খেলে।

বই পড়া ঃ ২ বছর বয়স থেকেই শিশুর বই এর প্রতি ঝোঁক দেখা যায়। উজ্জল বড় আকার তাদের আকৃষ্ট করে। ছবি দেখিয়ে গল্প শোনালে মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং গল্পের পাঠকের অঙ্গভঙ্গি ও গলার স্বর পছন্দ করে।

ছবি আঁকা: ছবি আঁকার মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতা বেড়ে যায়, পেশী সঞ্চালন সুসমন্বিত হয় এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। শিশু প্রথমে হিজিবিজি আঁকে। পরবর্তীতে ছবির বিষয়বস্তু মোটামুটি চেনা যায়। যে জিনিস থেকে তার আগ্রহ বাড়ে সে ধরনের ছবি আঁকতে চায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছবির সূক্ষ্ম অংশগুলো বোঝা যায়। ছেলেরা গাড়ি, প্লেন পিস্তল ইত্যাদি আঁকে, অন্যদিকে মেয়েরা ফুল, মানুষ, গাছ ইত্যাদি আঁকতে পছন্দ করে।

নিষ্ক্রিয় খেলা

ছবি দেখা ঃ ছোট শিশু বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত উজ্জল রংয়ের ছবি দেখে আনন্দ পায়। টেলিভিশন দেখে, ছবি দেখে শিশুরা বস্তুর অর্থ খুঁজে পায় দেখার সময় বিভিন্ন প্রশ্ন করে ছবির অর্থ বোঝে। খবরের কাগজের ছবি, বিভিন্ন ম্যাগাজিন, টেলিভিশনে বিভিন্ন এ্যাড দেখে আনন্দিত হয়। জন্তু, জানোয়ার কিংবা পশুপাখির ছবির বই শিশু পছন্দ করে। সঙ্গীতের প্রতি শিশুর আকর্ষণ বাড়ে। গান বাজনা সে মনোযোগ দিয়ে শোনে। একই সাথে হাত পা নেড়ে সে বিভিন্নভাবে নাচে। বড় শিশুরা কার্টুন ছবি দেখতে পছন্দ করে।

গান শোনা : গানের সুর এবং ছন্দ যদি শ্রুতিমধুর হয় তাহলে অনেকসময় শিশু নিজেই গাইতে থাকে। একই সুর তারা বার বার শুনতে পছন্দ করে এবং আনন্দ লাভ করে। ছন্দবহুল গান শিশুরা পছন্দ করে।

গল্প শোনা ঃ সহজ, সরল এবং প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত গল্প শিশুরা পুরোপুরি উপভোগ করে। পছন্দনীয় গল্প শিশু বার বার শুনতে চায়। শিশুরা ছন্দমূলক ছবি ও কবিতা পছন্দ করে এবং তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে। অনেক সময় সাধারণ গল্প বক্তার উপস্থাপনার কারণে পছন্দ ও অপছন্দ নির্ভর করে। একবার গল্প পছন্দ করলে বার বার শুনতে চায়। অবাস্তব এবং রূপকথার গল্প তাদের মন ছুঁয়ে যায়। যেসব গল্প শিশুদের মন ছুঁয়ে যায় সেগুলো হলঃ

পারিবারিক জীবনের উপর গল্প, স্কুল জীবনের গল্প, শিশুদের বিষয়ে গল্প, যাদের চিনে যেমন ডাক পিয়ন অথবা পুলিশ অফিসার এবং তাদের পেশা, সব ধরনের পশুপাখি, শিশুকে গল্পের প্রধান চরিত্র করলে, বাপ মা, দাদা-দাদি এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে গল্প, পাঁচ বছরের শিশুরা পরীর গল্প, অবাস্তব গল্প, সামান্য অংশের গল্প, ছবিসহ অন্য দেশের লোকজন, তাদের জীবনযাপন, ইত্যাদি প্রথম শৈশবের থেকে দুঃসাহসিক গল্প পছন্দ করে।

অন্যকে দেখে আনন্দ পাওয়া শিশু অন্যদের খেলা দেখে অথবা তাদেরকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে আনন্দ পায়। বাড়িতে কাজের লোক যেসব কাজ করে সেগুলোও শিশুদেরকে ব্যস্ত রাখে। বাড়িতে পোষা জন্তুর সাথে শিশু ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারে। শিশুকালে চিড়িয়াখানা পরিদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এতে শিশু বইয়ের ছবির সাথে মিল দেখে আনন্দ লাভ করে। অনেক সময় শিশু তার অজানা খেলা বা নতুন ধরনের খেলা অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। এতে শিশু যেমন ব্যস্ত থাকে তেমনি উপভোগ করে এবং সামাজিক হয়। কমিক বই অথবা কার্টুন দেখা ঃ কার্টুন কমিকের রং থাকে উজ্জ্বল এবং আঁকা ছবি থাকে সহজ এতে বুঝতে সহজ হয়।

কেউ যদি পড়ে বুঝিয়ে দেয় তাতে শিশু আনন্দিত হয়। অবাস্তব গল্প হওয়া সত্ত্বেও তাদের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বাবা মাকে সতর্ক হতে হবে কারণ অনেক সময় ভয়ের ছবি দেখে শিশুর আনন্দের চেয়ে ভয় বেশি পায় । টেলিভিশন দেখাউপযোগী প্রোগ্রাম হলে টেলিভিশন হতে পারে শিক্ষা, বিশ্রাম এবং আমোদ প্রমোদের মাধ্যম। ভয়ের ছবি দেখলে দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা হবে। মারামারি, খুনখারাবির ছবি শিশুদেরকে দেখতে দেয়া উচিত নয়।

খ. শিশুর বিকাশে খেলা

খেলা সময় নষ্ট করা নয়। এমনকি ছোট শিশুদের ব্যস্ত রাখারও কোন উপায় নয় অথবা বাবা-মা যখন নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত তখন তাদেরকে ব্যস্ত রাখা নয়। বরং স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও ভাল ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যে খেলা জরুরী। অন্য কোন কার্যাবলী যা না পারে খেলা তাই করতে পারে খেলা শিশুকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের সুযোগ দেয়। যে সব শিশুরা সারাদিন খেলে তারা, যাদের খেলার সুযোগ কম তাদের চেয়ে পরবর্তী জীবনে ভালভাবে খাপ খাওয়াতে পারে।

ছোট শিশুর জীবনে খেলা অত্যন্ত মূল্যবান। খেলার মাধ্যমে ছোট শিশুরা যে ধরনের উপকার পায় তা হল খেলা শরীরের অতিরিক্ত শক্তি বের করে দেয়, শরীরের বিভিন্ন অংশের বিকাশ হয়; যেমন- হাড়, পেশী এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। ব্যায়াম হয় ফলে ক্ষুদা বাড়ে এবং ঘুম ভাল হয়। শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখায়। সারা জীবনের জন্য কার্যকরী অনেক দক্ষতার বিকাশ হয়। সক্ষমতার বিকাশ হয়। সৃজনশীলতার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। পরিবেশের বিভিন্ন জিনিসের অর্থ আবিষ্কার করতে সুযোগ দেয়। রাগ, ভয়, হিংসা এবং দুঃখ থেকে অব্যাহতি পেতে উপায় হিসেবে কাজ করে। অন্যান শিশুদের সাথে কীভাবে মিশবে তা শেখার সুযোগ হয়। ভাল খেলোয়াড় হতে শেখায়, তার অর্থ হল জয়-পরাজয় মেনে নিতে পারে। আইন কানুন অনুসরণ করতে সুযোগ দেয় ইত্যাদি।

যদি শিশুরা খেলা থেকে উপকার পেতে চায় তবে তাদের অতিরিক্ত শক্তি থাকতে হবে। খেলার সময় শিশু শান্তভাবে থাকে, যথেষ্ট সরঞ্জাম, খেলার জায়গা এবং খেলার সঙ্গী থাকতে হবে। খেলার বিভিন্ন রকম তালিকা থাকতে হবে। কিন্তু এই বিভিন্নতার সাথে সমন্বয় থাকতে হবে। গুরুত্ব অনুসারে খেলার প্রয়োজনীয়তাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় : শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে সামাজিকতা শিক্ষা দেয়, নৈতিকতার সুষ্ঠু বিকাশ হয় এবং জ্ঞান অর্জন করে ।

শারীরিক সুস্থতা

খেলাধূলা শরীরকে ভাল রাখে। শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়ার ফলে ভাল ব্যায়াম হয়, রক্তচলাচল ভাল হয়, মাংশপেশী সতেজ ও সবল হয় এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপক্ব হয়। অঙ্গসঞ্চালন খেলা মাংসপেশীর সমন্বয় সাধনের সাহায্য করে এতে মাংসপেশীসমূহ শক্ত হয়। ছবি আঁকার ফলে হাত এবং চোখের সমন্বয় সাধন হয়। শিশুর হাত, বাহু, চোখ এবং মাংশপেশীর সমন্বয় সাধন হয়। এতে দক্ষতার প্রশিক্ষণ এবং ব্যায়াম হয় ফলে হাতের সঞ্চালন প্রক্রিয়া ভাল হয়। মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা বাড়ে। প্রধানত খেলার মাধ্যমেই দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিপকৃতা সাধিত হয়।

মানসিক সুস্থতা

খেলা মনের জড়তা, দুঃখ ও বেদনা কমিয়ে দেয়। মানসিক অবসাদ দূর করে এবং কাজের জন্য মনকে সবল ও সতেজ করে। ক্লান্তি ও হতাশা দূর করতে যেমন বিশ্রাম ও নিদ্রার প্রয়োজন তেমনি জড়তা দূর করে শরীরকে সবল ও সতেজ করার জন্য খেলার প্রয়োজন। শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক রকম উৎকন্ঠা, উদ্বেগ ও অশান্তি দেখা দিতে পারে। খেলার মাধ্যমে দুঃখ, ক্ষোভ ভোলা যায় এবং আবেগ প্রকাশ করা যায়। শিশু বইয়ের চরিত্রের সাথে নিজেদের সনাক্ত করে একাত্ম হয়ে আবেগ প্রকাশ করতে পারে। গল্প করে, ছবি দেখে ভয়, ঘৃণা, আনন্দ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে হালকা হতে পারে খেলা প্রয়োজন ও ইচ্ছা মেটাবার একটি ভাল উপায়। এতে রাগ, ভালবাসা প্রকাশ করা যায়। হিংসার বশবর্তী হয়ে অনেক সময় নিজের পুতুলকে মারে। এতে মনের ক্ষোভ মেটে এবং মনটা হালকা হয়, সুস্থ আবেগের বর্হিপ্রকাশ ঘটে। শিশুর মানসিক বিকাশ সুষ্ঠু হয়। সামাজিকতা শেখায়।

দলীয় খেলায় অংশগ্রহণ করে শিশু সামাজিক হয়। শিশু শিখে কিভাবে অন্যের সংগে মিশতে হয়, কীভাবে তাদের সাথে সহযোগিতা করতে হয়। নেতৃত্ব নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে এবং নিজের কর্মদক্ষতা তুলনা করতে পারে। খেলার মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান হয়, দলের রীতিনীতি শেখে। গঠনমূলক খেলায় শিশুরা নিজেদের সমালোচনা করতে শেখে। নাটকীয় খেলার মাধ্যমে সামাজিক বোধের সৃষ্টি হয়। অন্যথায় শিশু একাকী ও অসামাজিক হয় ।

নৈতিক শিক্ষা লাভ

শিশুরা পরিবার থেকেই নৈতিকতা শিক্ষা লাভ করে থাকে। খেলতে যেয়ে শিশু খেলার রীতিনীতি এমন সুষ্ঠুভাবে পালন করে যা পরিবারের রীতিনীতি থেকে কঠোর। শিশুকে দলে গ্রহণযোগ্য হতে হলে তাকে হতে হবে সত্যবাদী, সৎ, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং ভাল খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব। খেলার দলে থাকতে হলে হারজিত নিয়ে দুঃখ না করে খেলোয়াড়সুলভ আচরণ করতে হয়। মন খারাপ করা ভাল খেলোয়াড়ের লক্ষণ নয়। তাকে দলের কঠোর রীতিনীতি পালন করতে হবে। এভাবেই শিশুর নৈতিক চরিত্র গড়ে ওঠে।

জ্ঞানের বিকাশ

খেলার মাধ্যমে শিশু স্বাধীনভাবে এবং আগ্রহ সহকারে স্বেচ্ছায় শেখে। শিশুর মধ্যে অবস্থিত সহজাত শক্তি এবং প্রবৃত্তিই হচ্ছে শিক্ষার উৎস।

বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিয়ে খেলার ফলে শিশু খেলার সরঞ্জামের সাথে পরিচিত হয় এবং চিনতে শেখে। বয়স বাড়ায় সাথে সাথে বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলা আবিষ্কার করতে যেয়ে অনেক তথ্যের অধিকারী হতে পারে। বই পড়া, সক্রিয় খেলা, ছবি আঁকা, টেলিভিশন দেখা, ইত্যাদি শিশুর জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটায়। এতে অনেক আনন্দ পায়। কার্টুন, বই, টেলিভিশন, সিনেমাতে যা দেখে তা আরও জানার জন্য আগ্রহী করে তোলে। নাটকীর খেলার মাধ্যমে সে বাস্তব জগৎ ও কাল্পনিক জগতের তফাৎ বুঝতে পারে এবং ভাষার বিকাশ ঘটে। নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতার সাথে অন্যদের তুলনা করতে পারে। অনুসন্ধানমূলক খেলার মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজও চালিয়ে যেতে পারে। খেলার ভূমিকা পালন করে নিজের ভূমিকার সাথে পরিচিত হয়।

গ. বিভিন্ন বয়সের খেলা

২ বছর বয়স থেকে শিশু কল্পনাপ্রবণ হয়, খেলনাকে জীবন্ত মনে করে এবং খেলনার সাথে কথা বলে।

৩ বছরের শিশু খেলনা সামগ্রী দিয়ে কোন ব্লক তৈরি করতে চায়। একই ব্লক দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে। ৪ বছরের শিশু বিভিন্ন বাঁধা নিয়ে খেলার প্রতি আকর্ষিত হয় এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই খেলে ।

৫ বছরের শিশু ছবি আঁকে, কাগজ দিয়ে নৌকা বানায়, ব্লক দিয়ে বাড়ি, গাড়ি বানাতে পারে।

৬ বছরের শিশুদের মধ্যে দক্ষতা অর্জনকারী খেলা খেলতে দেখা যায়। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক খেলা, দলীয় খেলা ও নিয়মতান্ত্রিক খেলা দেখা যায়। সেসময় শিশু নেচে নেচে গান গায়, ছড়া বলে এবং কবিতা পড়ে। পরীক্ষামূলক ও সন্ধানমূলক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে ।

ঘ. খেলা পরিচালনার সময় বিবেচ্য

১)  শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ খেলার প্রতি স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে । শিশুদের নিরাপত্তার উন্নয়ন আঘাত প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিশুদের ঘটনা বা আঘাতের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে তারে বলে মনে করা হয়। উদীয়মান গবেষকরা বলছে যে শিশুদের বহিরঙ্গন ঝুঁকির কারণে খেলার উপর অনেক বেশি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাই শিশুর খেলার পরিচালনার ক্ষেত্রে শিশুর নিরাপত্তার দিকটি বিশেষ বিবেচনায় রাখা উচিত।

২) শিশুদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার জন্য অনুকূল পরিবেশের অনুসন্ধান ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।

৩) গরমে অনেক শিশুর ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি হয়। তাই শিশুদের খেলা পরিচালনা করার জন্য মনোরম ও শীতল পরিবেশ যুক্ত মাঠের বিষয়টি যথাযথ বিবেচনার সাথে দেখতে হবে। 

৪) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে খর্বকায়ত্ব ও লম্বার তুলনায় কম ওজনের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি খেলাধুলায় ব্যয়িত শক্তি সমন্বয়ের জন্য যেন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। 

৫) শিশুর বয়স,  উচ্চতা,  ওজন ও মানসিক অবস্থার উপার বিবেচনা করে খেলার বিষয় নির্ধারণ করা।

৬) শিশুদের জন্য তাদের খেলায় বৈচিত্র আনায়ন করা।  এবং শিক্ষামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। শিশুদের যেন ছোটবেলা থেকেই গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে ওঠে যে সকল বিষয় বিবেচনায় আনা ।

৭) নিষ্ক্রিয় খেলা সমূহের মধ্যে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা । যেন ভিন দেশের সংস্কৃতিতে  তারা  মারাত্মকভাবে আকৃষ্ট না হয়ে যায়।

৮) নিষ্ক্রিয় খেলা সমূহের মধ্যে হতে তাদেরকে ভীতিকর ও প্রতিহিংসামূলক বিষয়গুলোকে না দেখানো।

ঙ. আদর্শ খেলনার বৈশিষ্ট্য

শিশুদের জন্য সঠিক খেলনা সামগ্রীসব সময়ে শিশুদের আগ্রহ, সক্ষমতা ও চাহিদা মেটাতে পারে। সব ধরনের খেলাতে আগ্রহ জাগাতে উদ্দীপিত করতে পারে। যদি বাবা-মা প্রতিটি শিশুর চাহিদা, আগ্রহ ও সক্ষমতা সম্পর্কে আলাদাভাবে ভাবেন তা হলে তাঁরা শিশুর জন্য ভাল খেলনা সামগ্রী বাছাই করতে পারবেন। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতার কথা ভেবে খেলনা এবং অন্যান্য সামগ্রী পছন্দ করতে হবে।

ছোট শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রী নির্বাচন করতে গেলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন ঃ

  • একই খেলনায় বিভিন্ন ধরনের খেলার সুযোগ থাকতে হবে।
  • শিশুর বয়স এবং বিকাশ উপযোগী হবে। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও ভাষার বর্ধন উপযোগী হবে।
  • খেলনা হবে হালকা, পাতলা এবং আকার হবে ছোট।
  • বিভিন্ন বিকাশ লাভে সহায়ক হবে। শিশুর উদ্ভাবনী শক্তি, সংগঠন ক্ষমতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, মনোযোগ আকর্ষণ ইত্যাদি বিকাশে সহায়ক হবে।
  • খেলনার প্রতি শিশুর আকর্ষণ বোধ থাকতে হবে।
  • যে ভাবেই শিশু ব্যবহার করুক তা নিরাপদ হতে হবে। ধারাল এবং ক্ষতিকর খেলনা পরিহার করে বিপদমুক্ত হতে হবে।
  • বড়দের সাহায্য ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে এবং নড়াচড়া করার সুযোগ থাকবে।
  • অন্য শিশুদের সাথে খেলার সুবিধা থাকবে। ঘরে এবং বাইরে খেলার সুযোগ থাকবে।
  • খেলার পরিবেশের মত উপকরণ হবে।
  • শিশুর পছন্দমত রংয়ের খেলনা হবে, রং এর প্রতি আগ্রহ বাড়াতে আবেদন রাখতে পারবে।
  • শিশুর আগ্রহ ও সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করবে।
  • যেন বিশেষ শিক্ষাগত মূল্য থাকে। চিন্তা ও মেধা চর্চায় সহায়ক হবে।

সব শিশু একই ভাবে খেলেনা। নানা কারণে একই বয়সের শিশুদের মধ্যে খেলার আগ্রহ, নমুনা ও প্রকাশে তারতম্য দেখা যায়; যেমন- লিঙ্গ, পরিবেশ, বুদ্ধি, স্বাস্থ্য ইত্যাদির কারণে।

এমন অনেক খেলনা আছে যা সব ছোট শিশুকে আকৃষ্ট করে। প্রায় বেশির ভাগ শিশুই মমি করা জন্তু পছন্দ করে যেগুলো দেখতে আসল জন্তুর মত এবং এমন ব্লক যা দিয়ে গাড়ি বানানো যায়। তারা এমন ধরনের খেলার সরঞ্জাম পছন্দ করে যাতে বেয়ে উঠতে পারে, পায়ে ঘুরার চেয়ে দ্রুত চারদিকে ঘুরতে পারে অথবা আকাশে উড়তে পারে। খেলনা বাছাই করার আগে দেখতে হবে কোন খেলনা নিয়ে শিশু বেশিক্ষণ খেলে এবং প্রায়ই খেলে। এ ধরনের খেলনা শিশু অন্যদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, শিশুকে খেলনার দোকানে নিয়ে গেলে বলতে হবে যেটি বেশি পছন্দ করে সেটাই কিনতে পারবে। এতে শিশুর আগ্রহ সম্পর্কে বাবা-মা বুঝতে পারবেন।

বিভিন্ন বয়সের খেলার বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। শিশুর খেলা সরল থেকে জটিল হয়। ছোট শিশুরা একাই খেলতে চায়। তাদের খেলা হলো কোন কিছু ঠেলা, টানাটানি করা, শব্দ করে খেলনা ফেলে দেয়া, দুধের বোতলের দিকে তাকিয়ে মজা পাওয়া ইত্যাদি। তাদের খেলা স্বত:স্ফূর্ত ও অনিয়ন্ত্রিত।

ইন্দ্রিয় ও অঙ্গের সমন্বয়তা হলে শিশু নিজের পায়ের আঙ্গুল মুখে দেয়, নাভিতে আঙ্গুল দেয়, হাতের কাছে যা পায় মুখে দেয়।

লিঙ্গ ভেদে খেলার তফাৎ হয় যেমন ছেলেরা ফুটবল খেলে, পিস্তল ছোড়ে, পাইলট সাজে, ড্রাইভার সাজে অন্যদিকে মেয়েরা মায়ের মত শিশু লালন-পালন, রান্নাবান্না ইত্যাদি খেলা খেলে থাকে।

Get HSC Sisur Bikash Assignment Answer
[Join]