0

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃব্যাংকিং দেনা পাওনা নিস্পত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিরূপণ। ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের ষষ্ঠ সপ্তাহের নমুনা উত্তর।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃব্যাংকিং দেনা পাওনা নিস্পত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

অ্যাসাইনমেন্ট: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃব্যাংকিং দেনা পাওনা নিস্পত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিরূপণ।

এইচএসসি ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর

শিরোনাম: অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ ও আন্তঃব্যাংকিং দেনাপাওনা নিষ্পত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা।

ক) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা

মানব দেহের রক্ত সঞ্চালন যেমন ধমনি ও শিরা-উপশিরার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ড যাকে রক্তের পাম্প হাউস হিসেবে গণ্য করা হয়। এক কথায় দেশের পাম্প হাউজ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেকোন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বীকৃত। কেন্দ্রীয় ব্যাংককের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও মূদ্রা বাজার গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশের সার্বিক প্রয়োজনে নোট ইস্যু, ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও মূদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার নেতৃত্বদান, সরকারের ব্যাংক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সার্বিক জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)

অধ্যাপক আর. সি কেন্ট এর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা জনকল্যাণের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের প্রচলিত অর্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়োজিত থাকে।

অধ্যাপক এম. এইচ. ডী কক এর মতে, যে ব্যাংককের নোট ইস্যুর ক্ষেত্রে একক বা আংশিক একচেটিয়া অধিকার রয়েছে, সেটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাংক মুনাফার প্রতি দিকে না দিয়ে জনসাধারণের স্বার্থে এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালায়।

পি.এইচ. কলিন এর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রধান ব্যাংক, যা দেশের সার্বিক আর্থিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার নির্ধারণ করে, নোট ইস্যু করে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যাবলী খবরদারী করে এবং বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে।

ড. এস, এন, সেনের মতে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকিং সমাজের নেতা, রাজা ও সূর্য সবকিছু। নেতার মতো ব্যাংকিং রাজত্ব শাসন করে এবং সূর্যের মতো (অর্থ ও মুদ্রাবাজারে) জগতে আলো ও শক্তি জোগায়।’

মোট কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের প্রধান সরকারি ব্যাংক। এটি দেশের মূদ্রা ও ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মূদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের আর্থিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করে। এর মুল উদ্দেশ্য হলো সার্বিক জনকল্যাণ। এটি নোট ইস্যু করে বিধায় বাংলাদেশের টাকার গায়ে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাহেবের স্বাক্ষর থাকে। তবে ২ টাকার নোটের গায়ে অর্থ সচিবের স্বাক্ষর থাকে। কারণ এটি সরকারের মুদ্রা। 

খ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতা 

আধুনিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃতি নিয়ে প্রায়ই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আসল ভূমিকা কি, সে সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু চিরা-চরিত ধারণার জন্য এই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকে। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)

প্রথমত: উন্নত দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত বাস্তব প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের মত সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে সচরাচর একটি ঔপনিবেশিক জোয়াল হতে মুক্তির পর পরই দেশের অর্থনীতিতে ছক-কাটা ধরনের একটি নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে এসব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাহ্যিক সাংগঠনিক উপকরণ ও ক্ষমতাবলী অন্য সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত করে দেওয়া হলেও এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতীত ঐতিহ্য কিংবা অভিজ্ঞতা দুটিরই অভাব থাকে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে ভুল বুঝার অবকাশ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ এখন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে জাতীয় পুনর্গঠনে ব্যস্ত। কাজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলীতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোর সঠিক প্রতিফলন ঘটানো একান্তভাবে জরুরি। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী সরকারী অর্থনৈতিক নীতিমালার একটি দিক মাত্র। বেসরকারী পুঁজিবাদের উজ্জ্বল দিনগুলিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকগুলিই বেসরকারী মালিকানায় ছিল। ফলে তাদের কাজ কারবারে অনেক সময় বেসরকারী স্বার্থ প্রাধান্য পেত। তবে বর্তমান যুগে সব জায়গাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত সরকারী নিয়ন্ত্রণে থেকে জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে উর্ধ্বে স্থান দেয় এবং কখনই লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সাধারণ স্বীকৃত বৈশিষ্ট্য হল এই যে, একটি রাষ্ট্রের নগদ অর্থ-সঞ্চয় এ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা রাখতে হয়। এ ব্যবস্থা জরুরী প্রয়োজন মিটাতে সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণদানের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। 

গ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কার্যাবলী 

১. মূদ্রা প্রচলন: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো কাগজী নোট ও ধাতব মূদ্রা তৈরি, মুদ্রণ ও সরবরাহ করা।

২. মূদ্রার মুল্যমান সংরক্ষণ: বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মূদ্রার সংরক্ষণ করে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।

৩. মূদ্রা বাজার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী মূদ্রা বাজার গঠন, পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।

৪. ঋণ নিয়ন্ত্রণ: ঋণের পরিমাণ বেশি হলে মূদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ সৃষ্টির কার্যক্রম ও ক্ষমতা বিভিন্ন কৌশল ও নীতি নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৫. রিজার্ভ সংরক্ষণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মূদ্রার সাথে দেশীয় মূদ্রার মান ও বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করে সংরক্ষিত তহবিলের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অভন্তরীণ প্রয়োজনের আলোকে বৈদেশিক মূদ্রার আগমন ও নিগর্মনের নিয়ন্ত্রণ করে।

ঘ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি 

ক) পরিমাণগত পদ্ধতি

বাজারের পুরো ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার যে কৌশল কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করে, তাকে সংখ্যাত্মক বা পরিমাণগত পদ্ধতি বলে।

১. ব্যাংক হার নীতি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংকটের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে সুদের হারে ঋণ বা অগ্রীম গ্রহণ করে তাকে ‘ব্যাংক হার’ বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাংক হার বাড়ানো বা কমানোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং দেশে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রা বাজারে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক হার’ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকও জনগণকে ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং দেশে ঋণের পরিমাণ কমে যায়। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)

অন্যদিকে, দেশে ঋণের পরিমাণ কমে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক হার’ কমিয়ে দেয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে উৎসাহী হয়। খরচ কমে যাওয়ায় মুদ্রা বাজারে সুদের হার কমে যায় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার আগ্রহের কারণে ঋণের চাহিদা বেড়ে যায়।

২. খোলা বাজার নীতি

বিভিন্ন খরচ নির্বাহ করার জন্য সরকারকে মাঝে মধ্যে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। আবার অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য বাজার হতে বিভিন্ন ধরনের বন্ড, সিকিউরিটিজ, শেয়ার ইত্যাদি সরকার কিনতে পারে। এগুলো কেনাবেচার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। বাজারে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুবিধাজনক শর্তে সরকারী বন্ড বাজারে ছাড়ে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিয়ে এসব বন্ড কেনে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ কমে যায় এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। 

অন্যদিকে, বাজারে ঋণের ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বেসরকারী বন্ড, সিকিউরিটিজ, শেয়ার ইত্যাদি কিনে নেয়। ফলে বাজারে অর্থের যোগান বেড়ে যায়, যা এক পর্যায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আমানত হিসাবে জমা হয় এবং তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। খোলাবাজার নীতি খুব জনপ্রিয় এবং প্রতিটি দেশে এর প্রচলন খুব বেশি।

৩. বিধিবদ্ধ জমার হার পরিবর্তন নীতি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। একে বিধিবদ্ধ জমা বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই জমার হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

বাজারে ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিবদ্ধ জমার হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ হিসাবে দেওয়ার মতো তহবিল কমে যায়।

অন্যদিকে, বাজারে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিবদ্ধ জমার হার কমিয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আমানতের অপেক্ষাকৃত কম অংশ বিধিবদ্ধ জমা হিসাবে রাখতে হয় এবং তাদের হাতে ঋণ হিসাবে দেওয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে দেশে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

খ) নির্বাচনমূলক পদ্ধতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সে জন্য কোন অনগ্রসর খাতকে গুরুত্ব দিতে হয়। দেশের কোন একটি বিশেষ খাতের উন্নয়নের জন্য যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ খাতে ঋণ বাড়ানো বা কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে তখন তাকে নির্বাচনমূলক পদ্ধতি বা গুণগত পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ নয় বরং কোন একটি বিশেষ খাতের ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 

১. ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি

এ নীতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে খাতে বেশি ঋণ প্রয়োজন সেই খাতে ঋণ প্রদানের জন্য বাণিজ্যিক ব্যংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। যেমন, আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি চিংড়ি চাষ প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চায় তাহলে এজন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে এ খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য একটি কোটা নির্ধারণ করে দেয়। প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ঋণ সুবিধাও দেয়। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ কমাতে চাইলে ঐ খাতে ঋণের কোটা কমিয়ে দিতে পারে। এভাবে বিশেষ খাতে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বরাদ্দকরণ নীতি বলে।

২. ভোগ্যপণ্যের ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি

টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, মোটরসাইকেল ইত্যাদি ভোগ্যপণ্য কেনার খাতে ঋণের পরিমাণ কাঙ্খিত পর্যায়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর জন্য নিয়মনীতি তৈরী করে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। উগাহরণ স্বরূপ ধরি, কোন ঋণ প্রকল্পে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম পরিশোধ্য মূল্য একবারে ২০% এবং পরবর্তী ১২ মাসে সমান ১২ কিস্তিতে ঋণের বাকি অংশ ফেরত দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এ খাতে ঋণের পরিমাণ কমাতে চায় তাহলে প্রথম পরিশোধ্য মূল্য ৩০% এবং পরবর্তী ১০ মাসে সমান ১০ কিস্তিতে ঋণের বাকি অংশ ফেরত দেওয়ার নিয়ম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে করে ভোক্তাদের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। আবার ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে ও প্রথম পরিশোধ্য মূল্য কমিয়ে ভোক্তাদের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ বৃদ্ধি করে।

৩. জামানতী ঋণের মার্জিন পরিবর্তন নীতি

সাধারণত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জামানত দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। জামানতী ঋণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ মূল্যের জামানতের বিপক্ষে কত টাকা ঋণ দেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জামানতী ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ধরা যাক, এ ধরনের একটি প্রকল্পে ১০০ টাকার সম্পদ জমা রেখে ৭০ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ ৩০% মার্জিন রাখা হয়। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)

ধরুন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ খাতে ঋণের পরিমাণ কমাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জিনের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০% নির্ধারণ করে দিতে পারে। অর্থাৎ নতুন এ নিয়মে ১০০ টাকার সম্পত্তি জামানত রেখে ৬০ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। এতে ঋণ গ্রহণকারীদের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে যাবে এবং ঋণ নিতে চাইলেও আপনা-আপনি প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ কমে যাবে। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জিন কমিয়ে দিতে পারে।

৪. প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ পদ্ধতি

কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত দন্ডনীয় সুদ চার্জ করা, অতিরিক্ত বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া, ব্যাংক রেট বাড়িয়ে দেওয়া ও বিলবাট্টা করণে অতিরিক্ত সুদ ধার্য করা ইত্যাদি।

৫. নৈতিক প্ররোচনা পদ্ধতি

ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ‘নির্দেশনা’ ইস্যু না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন, দেশে বন্যার ফলে কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করতে পারে। এতে কিছুটা হলেও ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে। যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা , সেহেতু অন্যান্য ব্যাংক এ ধরনের উপদেশ উপেক্ষা করতে পারে না।

৬. প্রচারনা পদ্ধতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুলেটিন, ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা ও প্রতিবেদন ইত্যাদি প্রকাশ করে দেশের আর্থিক অবস্থা, ব্যাংকিং পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, ঋণনীতি, খাতওয়ারী ঋণের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও করণীয় তুলে ধরতে পারে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়ে, যা তাদের ঋণ ব্যবস্থাপনাকেও প্রভাবিত করে।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কখনো নিয়ন্ত্রক , আবার কখনো পরামর্শকের ভূমিকা পালন করে। 

ঙ) নিকাশ ঘরের গুরুত্ব 

আধুনিক ব্যাংকিং জগতে নিকাশ ঘরের গুরুত্ব অনেক। নিকাশ ঘরের উপরই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। 

১. দেনা-পাওনার সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তিঃ নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সদস্য ব্যাংকগুলোর পারস্পরিক দেনা-পাওনাগুলো খুব সহজে এবং দ্রুততা ও দক্ষতার নিষ্পত্তি করা যায়।

২. মিতব্যয়ী পন্থাঃ নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সদস্য ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হয়ে সুশৃংখলভাবে কম খরচে পারস্পরিক লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারে। এতে করে সদস্যদের ঘুরে ঘুরে চেক, ড্রাফ্ট, বিল সংগ্রহ এবং বন্টন করতে হয় না।

৩. সময় বাঁচায়ঃ নিকাশ ঘর ব্যবস্থায় চেক, ড্রাফ্ট, বিল ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য আদিষ্ট ব্যাংকে যেতে হয় না বলে অকল্পনীয়ভাবে সময় বেঁচে যায়।

৪. লেনদেন ত্বরান্বিত হয়ঃ নিকাশ ঘর কার্যক্রম পরিচালনার ফলে ব্যবসায়ীরা গ্রাহক বা দেনাদারদের থেকে প্রাপ্ত চেক, ড্রাফ্ট, বিল অতি স্বল্পতম সময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ভাঙ্গাতে পারে। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেন ত্বরান্বিত হয়।

৫. নগদ আমানতঃ নিকাশ ঘর ব্যবস্থা সদস্য ব্যাংকগুলোকে স্বল্প নগদ আমানতেই কাজ পরিচালনায় সাহায্য করে। ফলে বেশি আমানত নগদ রাখতে হয় না। যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

৬. অর্থ স্থানান্তরে সাহায্যঃ এই ব্যবস্থায় ব্যাংকের গ্রাহকগণ অতি সহজে এবং অতি অল্প ঝুঁকিতে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যে-কোন পরিমাণ টাকা চেকের মাধ্যমে স্থানান্তর করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

৭. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবনঃ নিকাশ ঘর ব্যবস্থায় সদস্য ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের সকল চেক, ড্রাফট, বিল ক্যাশ করার জন্য নিকাশ ঘরে জমা দেয়। পেশকৃত ও পাশকৃত চেক, বিল, ডাফট দেখে নিকাশ ঘরের আওতাধীন এলাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য সংক্রান্ত সকল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুমান করা যায়।

৮. ঋণ নিয়ন্ত্রণ সহজঃ নিকাশ ঘর ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সহজ হয়। এ সকল সুবিধার কারণে বর্তমান কালে নিকাশ ঘর এর সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবসায়ের কথা চিন্তাই করা যায় না।

Get HSC Finance, Banking and Insurance Assignment Answer

[Join]