সূরা আল বাকারার ২৩-২৪ আয়াতের অর্থ, শানেনুযুল, শিক্ষা ও ‘কুরআন মাজিদ আল্লাহর বাণী’ – এর সঠিকতা বিশ্লেষণ। এইচএসসি ইসলাম শিক্ষা ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর।
অ্যাসাইনমেন্ট: সূরা আল বাকারার ২৩-২৪ আয়াতের অর্থ, শানেনুযুল, শিক্ষা ও ‘কুরআন মাজিদ আল্লাহর বাণী’ – এর সঠিকতা বিশ্লেষণ।
এইচএসসি ইসলাম শিক্ষা ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর।
শিরোনাম: সূরা আল বাকারার ২৩ থেকে ২৪ নাম্বার আয়াতের অর্থ, শানে নুযুল, শিক্ষা ও আল কুরআন আল্লাহর বাণী সঠিকতা বিশ্লেষণ।
ক) সূরা আল বাকারার ২৩ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতের অর্থ
২৩ নং আয়াতের অর্থ
আমি আমার বান্দার ওপর যা নাযিল করেছি তাতে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে (এ কুরআন আল্লাহর বাণী নয়) তাহলে তার অনুরূপ কোন সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারী ডেকে নিয়ে এস, যদি তোমরা (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হও। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)।
২৪ নং আয়াতের অর্থ
অতঃপর যদি তোমরা এমনটা করতে না পার এবং নিঃসন্দেহে তোমরা এটা কখনও করতে পারবে না। অতএব তোমরা ভয় কর, সেই আগুনকে যার জ্বালানি হবে মানুষ এবং পাথর, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
খ) সূরা আল বাকারার ২৩ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতের শানে নুযুল
পুরো পৃথিবী বেশি যখন তাদের পাপের কারণে ধ্বংস হওয়ার পথে তখনই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তার প্রিয় নবী প্রিয় বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। এবং ৪০ বছর বয়সে তাকে নবুয়াত দান করেন। এবং তার কাছে প্রেরণ করেন মহামান্বিত আল কোরআন। মানুষের জন্য সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব। কিন্তু এই কিতাব একসাথে নাজিল হয়নি হয়েছে প্রয়োজন অনুসারে খন্ড খন্ড আকারে দীর্ঘ ২৩ বছর।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দয়াকরে যে কিতাব দিলেন কিছু বিপথগামী মানুষ সেই কিতাব কি অস্বীকার করতে থাকে। এমনকি রাসুল সাল্লালাহ সালামের নবুয়াত কে অস্বীকার করে। তারা বলে মোহাম্মদ সাল্লালাহ সালাম নাকি জাদুকর। তিনি নাকি কবি নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। আবার কেউ কেউ বলে হরযত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে নকল করেছেন। অথচ তিনি ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন। এমতাবস্থায় আল্লাহ সুবহানাতায়ালা সূরা আল বাকারার ২৩ এবং ২৩ নম্বর আয়াত নাযিল করেন।
এবং জানিয়ে দেন আমি যে আমার বান্দার উপর অবতীর্ণ করেছি তাও যদি তোমরা অবিশ্বাস করো তবে এরূপ একটি কুরআন রচনা করে দেখাও। এবং সাহায্যকারী হিসেবে নাও আল্লাহ ব্যতীত যাকে খুশি তাকে। এবং আল্লাহ তা’আলা ফলাফল ঘোষণা করে দেন নিশ্চয়ই তোমরা পারবে না। তাহলে সেই আগুন কে যার ইন্ধন হবে পাথর ও মানুষ।
গ) সূরা আল বাকারার ২৩ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতের শিক্ষা
২৩ নং আয়াতের শিক্ষা
মহান আল্লাহ কাফির-মুনাফিক তথা আল্লাহদ্রোহী শক্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেছেন, আমার প্রিয় বান্দা হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর প্রতি আমার প্রেরিত যে কিতাব (আল-কুরআন) নাযিল করেছি, তা আমার প্রেরিত কিনা, সে বিষয়ে তোমাদের মনে যদি কোন প্রকার সন্দেহ-সংশয় জেগে থাকে, তাহলে তোমরা অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে এস। না পারলে সমগ্র পৃথিবী হতে তোমাদের সকল সমর্থক ও একমনা লোকদের সাহায্য-সহায়তা নিয়ে হলেও কুরআনের একটি ছোট সূরা রচনা করে আনায়ন করো। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)।
কিন্তু না, তোমরা তা কখনই পারবে না। আল্লাহ ব্যতীত এ কাজ কেউই করতে পারবে না। জাহান্নামের আগুন ও কঠিন শাস্তিকে ভয় কর। কেননা এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। কুরআনের এ আয়াতখানা বিশ্ববাসীর প্রতি চ্যালেঞ্জ। তৎকালীন আরব বিশ্বের সমস্ত কবি-সাহিত্যিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়েও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি এবং তারা লজ্জায় নির্বাক ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আরবের অন্যতম কবি ‘লাবীদ’ কুরআনের ক্ষুদ্রতম সূরা আল-কাউসারের অনুরূপ কোন সূরা রচনায় ব্যর্থ হয়ে বলেছিলেন-البشر كلام من ھذا لیس ‘এটা কোন মানুষের বাণী নয়।’
২৪ নং আয়াতের শিক্ষা
এ আয়াতটি কুরআনের অন্যতম মুজিযা, আল্লাহর চিরন্তন ভবিষ্যদ্বাণী ও চ্যালেঞ্জ। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফির, মুশরিক ও অমুসলিমগণ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও কুরআনের অনুরূপ কোন সূরা তারা রচনা করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলার এ ঘোষণা ও চ্যালেঞ্জ শোনার পর কাফির ও মুশরিকরা ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
‘মানুষ ও পাথর হবে যার জ্বালানি’ দ্বারা বুঝা যায় যে, কেবল কাফিররাই জাহান্নামের জ্বালানি হবে না; বরং সে সাথে তাদের নিজেদের হাতে গড়া পাথরের মূর্তিসহ যেগুলোকে তারা দেবতা হিসেবে উপাসনা করত, সেগুলোও দোযখের ইন্ধন এবং জ্বালানি হবে। এসব দেবতা ও মূর্তিগুলো কোন অবস্থাতেই আল্লাহর সমকক্ষ নয়, তা সেখানে বাস্তবে দেখানো হবে।
কুরআনের আয়াতে এরূপ চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানেও এ চ্যালেঞ্জ কার্যকর রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা কার্যকর ও বলবৎ থাকবে। কিন্তু কোন যুগেই কোন পক্ষ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সে ঘোষণাই জারি করেছেন।
ঘ) রাসুল (স.) এর সর্বশেষ্ঠ মুজিযা আল কোরআন
আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহতায়ালা অসংখ্যা কর্মগত মুজেযার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক মুজেযাও দান করেছিলেন। যা পূর্ববর্তী কোনো নবীকে তিনি প্রদান করেননি। এ মুজযার নাম কোরআনে কারিম।
কোরআনে কারিম ভাষা ও ভাষার অলঙ্কার শাস্ত্রের মুজেযা। কারণ, কোরআন অবতরণের সময়টা ছিল আরবি সাহিত্যের সোনালী যুগ। সাহিত্য রচনা ছিলো আরবদের সামাজিক মর্যাদার অন্যতম উপাদান। বড় বড় কবিতা রচনা করে তারা বিশ্ববাসীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতো। মাণোত্তীর্ণ কবিতাগুলো তারা কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতো। কেউ পারলে এর সমকক্ষ কবিতা রচনা করে দেখাক! সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও সাহিত্য প্রতিভার সে যুগে কোরআনে কারিম অবতরণ করে তাদের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন আল্লাহতায়ালা। বলা হয়, কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নয়, একটি আয়াত নয়- পারলে যে কোনো একটি বাক্যের সমমানের একটি বাক্য রচনা করে দেখাও!!
পবিত্র কোরআনে কারিমের আয়াত শোনে বিশ্বসেরা আরব কবি সাহিত্যিকরা বিষ্ময়াভূত হলো। এর সাহিত্য মান ও অলঙ্কারের সামনে নত স্বীকার করলো। তারা অকপটে স্বীকার করলো, এ মানের সাহিত্য রচনা করা মানব ক্ষমতার বাইরে। তাই মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কারিম সর্ব শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা।
পূর্ববর্তী নবীদের মুজেযাসমূহ ছিলো তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ তারা নেই। তাদের মুজেযাও নেই। পূর্ববর্তী কোনো নবীকে আজকের কেউ যদি অস্বীকার করে তবে সে নবীর কোনো মুজেযা প্রমাণস্বরূপ পেশ করা যাবে না। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ দুনিয়াতে না থাকলেও তার শ্রেষ্ঠ মুজেযা কোরআনে কারিম দুনিয়াতে আছে। আজ ও আগামীতে কেউ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে অস্বীকার করে; তবে তার মুজেযা কোরআনকে তার নবী হওয়ার প্রমাণস্বরূপ পেশ করা যাবে। পবিত্র কোরআন নিজেই অস্বীকারকারীকে বলবে, আমার যে কোনো একটি বাক্যের সমমানের বাক্য রচনা করো।
মুজেযার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- কোনো জাতি যদি তার নবীর মুজেযার সঙ্গে বিরোধিতা ও শত্রুতায় লিপ্ত হয়; তবে আসমানি গজব তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেয়। পূর্ববর্তী বিভিন্ন নবীদের উম্মতের ওপর গজব তখনই এসেছে; যখন তারা তাদের নবীর মুজেযার সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছিলো। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)।
শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজেযা কোরআন। কোরআন মানবজাতির আলোর দিশারী। মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার সার্বিক দিক নির্দেশনা। তাই এ উম্মত যদি কোরআনের বিরোধিতা করে। কোরআনি জীবন ব্যবস্থার বিরোধিতা করে। কোরআনের অর্থনীতি, বিচারনীতি, নারীনীতি, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতির ইত্যাদির বিরোধিতা করে; তবে এ উম্মতের ওপরও আসমানি গজব আসবে। তবে এ উম্মত পূর্ববর্তী উম্মতদের মতো আসমানি গজবে সমূলে ধ্বংস হবে না। এটাও রহমাতুললিল আলামিনের বরকত।
এ উম্মত যখন কোরআরিন জীবন ব্যবস্থার বিরোধিতা করবে তখন বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি দ্বারা তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আজ আমাদের বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা আল্লাহর গজব। কোরআন থেকে অনেক দূরে সরে পড়ায় প্রতিনিয়ত এ গজবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ কোরআনের আনুগত্য করা। সামগ্রিক জীবন ও সমাজ ব্যবস্থাকে কোরআনের নির্দেশনার আলোকে ঢেলে সাজানো।
ঙ) আয়াতদ্বয় রিসালাত ও কুরআনের সন্দেহকারী দের প্রতি চ্যালেঞ্জ উক্তিটি বিশ্লেষণ
পবিত্র কুরআনে এ চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন স্থানে এসেছে। মক্কী সূরায়ও এমন চ্যালেঞ্জ এসেছিল। বলা হয়েছে, “এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সমর্থক এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। তারা কি বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও [সূরা ইউনুস ৩৭-৩৮) তারপর মদীনায় নাযিল হওয়া সূরাসমূহেও এ ধরনের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com)।
তাওহীদের পর এবারে রিসালাতের প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমি আমার বান্দার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি, সেটা যে আল্লাহরই পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা তোমাদের সকল সহযোগীদের সাথে নিয়ে এই ধরনের কোন একটি সূরা রচনা করে দেখিয়ে দাও! আর যদি এ রকম করতে না পার, তাহলে জেনে নিও যে, বস্ত্ততঃ এ বাণী কোন মানুষের প্রচেষ্টার ফল নয়, বরং তা আল্লাহর বাণী। তোমাদের উচিত, আল্লাহর কালাম এবং রসূলের রিসালাতের উপর ঈমান এনে সেই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চেষ্টা করা, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, উল্লেখিত আয়াত দুটি যারা রিসালাত এবং কুরআনের প্রতি অবিশ্বাস করেছিল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন তারা কোরআনের মত করে আরেকটি কোরআন তৈরি করে দেখায়। এবং পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জটি আরো ছোট করে দেয়া হয়েছে।
[Join]