0

পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানিদের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপন। ‌এইচএসসি  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ‌ষষ্ঠ‌ সপ্তাহের এসাইসমেন্ট ‌নমুনা‌ ‌উত্তর।‌ ‌

পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানিদের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল

অ্যাসাইনমেন্ট:‌ পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানিদের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপন। ‌

এইচএসসি  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ‌ষষ্ঠ‌ সপ্তাহের এসাইসমেন্ট উত্তর

ক) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুলুথেকেই পূর্ব বাংলা রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ট প্রতিনিধি থাকা সত্তে¡ও পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে গভর্নর  জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী উভয়পদেই নিয়োগ দেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। পূর্ব বাংলার মতামত উপেক্ষা করে পাকিস্তানের রাজধানী করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে এবং পরে তা ইসলামাবাদে স্থানান্তর করা হয়। পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনকি সংখ্যাধিক্য সত্বেও পূর্ব বাংলাকে সংখ্যা সাম্যনীতি মানতে বাধ্য করা হয়। পাকিস্তানের

জনসংখ্যার প্রায় ৫৬% বাঙালি হলেও একমাত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আমল ছাড়া ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব ২৫%-৪৭% অতিক্রম করেনি। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com) ঐ সময়ে মোট ২২১ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ৯৫ জন। আর ৯ জন সরকার প্রধানের মধ্যে মাত্র ৩ জন (খাজা নাজিমুদ্দিন, সোহরাওয়ার্দী ও মোহাম্মদ আলী বগুড়া) ছিলেন পূর্ব বাংলার। সময়ের হিসেবে ২৪ বছরের মধ্যে মাত্র ৬ বছর (২৫% সময়) পূর্ববাংলার মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জেনারেল আইয়ূব খানের আমলে (১৯৫৮-৬৯) মন্ত্রিসভার মোট ৬২ জন মন্ত্রীর মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ২২ জন (৩৫.৪৮%)। তবে এসব বাঙালিদের মধ্যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি।

খ) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্য 

প্রশাসনিক বৈষম্য

১৯৬০-৭০ সাল পর্যন্ত একটি হিসেব থেকে দেখা যায়, পাকিস্তানের মন্ত্রীপরিষদ, পররাষ্ট্র, কৃষি, সংস্থাপন, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, শিল্প, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ৬৯ জন শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে ৪৫ জনই ছিলেন পাঞ্জাবি। বাঙালি ছিলেন মাত্র ৩ জন। বেসামরিক সিএসপি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৯৪৮-৬৩ পর্যন্ত ৩৪৬ জনের মধ্যে মাত্র ১২৬ জন (৩৬.৪%) ছিলেন বাঙালি। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিলেন ২১৮ জন (৬৩.৬%)।

সামরিক বৈষম্য 

পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের প্রকাশ ঘটে সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিপত্য ছিল। ক্ষমতার শীর্ষে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তাদের এই বৈষম্যমূলক নীতি সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত বাঙালি সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। ক্রমশ এই অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবি আধিপত্য নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে প্রাদেশিক কোটা নির্ধারণ করা হয়। এতে ৬০% পাঞ্জাবি, ৩৫% পাঠান এবং বাদবাকি ৫% পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকা ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়োগ করার বিধান চালু করা হয়।

গ) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের আর্থসামাজিক বৈষম্য 

পাকিস্তানি শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র ছিল ভয়াবহ। ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। পূর্ববাংলা ছিল সম্পদশালী। এই সম্পদ এদেশবাসী ভোগ করতে পারত না। পাকিস্তানি শাসকরা তা ছিনিয়ে নিত। পুরো পাকিস্তানের আয়ের ৬০ ভাগ আয় হতো পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব হতে। অথচ আমাদের অঞ্চলে এর মাত্র ২৫ ভাগ ব্যয় করা হতো। আর বাকি সব নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৬০ ভাগ যেত পূর্বপাকিস্তান থেকে। কিন্তু পূর্বপাকিস্তানকে আমদানি দ্রব্যের মাত্র ২৫ ভাগ দেয়া হতো। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বসবাস ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু জাতীয় আয়ের মাত্র ২৭ ভাগ ব্যয় করা হতো এ অঞ্চলের জন্য। পাকিস্তানের অর্থ ভান্ডার পরিপুষ্ট হয়েছে পূর্ববাংলার সম্পদে। কিন্তু এ দেশের উন্নয়নের দিকে কোন নজর দেয়া হয়নি। (সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com) তাই উর্বর পূর্ববাংলা বার বার বন্যা ও ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। আর মলুময় পশ্চিম পাকিস্তান হয়েছে আমাদের সম্পদে শস্য-শ্যামল। শিল্পের কাঁচামাল পূর্ব পাকিস্তানে উৎপন্ন হলেও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানে যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে তারও মালিকানা থেকে যায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। কৃষি উন্নয়নের জন্য যে ঋণ পাওয়া যেত তার সিংহভাগ কৃষিভিত্তিক অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় না করে ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক এরূপ শোষণমূলক নীতি অনুসরণের ফলে ১৯৬০- এর দশকে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে।

শোষণের বিলুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাধতে থাকে এবং এ আন্দোলন ক্রমে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাঙালিরা সুস্পষ্ট বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের অশিক্ষিত রেখে তাদের শাসনকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্রের বেলায় ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টিই অবস্থিত ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। উচ্চ শিক্ষা ও  গবেষণার জন্য বিভিন্ন বৃত্তির সিংহভাগ সুবিধা পায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা। পূর্ব বাংলায় শিক্ষার্থীর

সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও আনুপাতিক হারে বিদ্যালয় সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের ফলে ১৯৪৭-৪৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববাংলায় যেখানে শিক্ষিতের হার পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি ছিল সেখানে প্রায় বিশ বছরের মধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষিতের হার পূর্ববাংলার চেয়ে অনেক বেড়ে গেল। 

ঘ) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের শিক্ষা-সংস্কৃতি বৈষম্য 

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য 

শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাঙালরিা বৈষম্যের শিকার হয়ছেলি। র্পূব   পাকিস্তানের  শিক্ষার উন্নয়নরে কোনো  চেষ্টাই তারা করেননি।   শিক্ষা খাতে বরাদ্দরে  র্পূব পাকস্তিানরে প্রতি চরম  বৈষম্য  দেখানো হয়। ১৯৫৫ সাল থকেে ১৯৬৭  খ্রিস্টাব্দে  শিক্ষা খাতে  পশ্চিম  পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৮৪  মিলিয়ন রুপি এবং পূর্ব পাকিস্তানের  জন্য ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি।  পাকিস্তানের র্সবমোট ৩৫টি  বৃত্তির ৩০টি পেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান এবং মাত্র ৫টি বরাদ্দ  পূর্ব পাকিস্তানের জন্য। 

সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্য

পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্ব বাংলার অধিবাসীরা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ। এদের ভাষা এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল হাজার বছরের পুরনো। অন্যদিকে পাকিস্তানের বাকি ৪৫ শতাংশ লোকের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল বিভিন্ন ধরণের। এদের মধ্যে মাত্র ৭.২ শতাংশ লোকের ভাষা ছিল উর্দু। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চেষ্টা করে। এছাড়াও হাজার বছরের পুরনো বাঙালি জাতির সংস্কৃতিকে মুছে ফেলে বাঙালিদের পাকিস্তানি করণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাদের এই বৈষম্য বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি। তাই পূর্ব বাংলায় সাংস্কৃতিক বৈষম্যের বিলুদ্ধে প্রথমে প্রতিবাদ এবং পরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

Get HSC Islamic History and Culture Assignment Answer

[Join]