0

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ। এসএসসি ব্যবসায় উদ্যেগ ৭ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ

বিষয়: ব্যবসায় উদ্যেগ, বিষয় কোড: ১৪৩, স্তর: এসএসসি, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০৫, অধ্যায়-চতুর্থ; মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়।

অ্যাসাইনমেন্ট: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ।

বিষয়বস্তু

  • সমবায় সমিতির ধারণা ও বৈশিষ্টগুলাে ব্যাখ্যা করতে পারবাে
  • বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমবায় সমিতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে

নির্দেশনা

  • আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে
  • সমবায় সমিতির ধারণা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করতে হবে
  • সমবায় সমিতির প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে হবে
  • বাংলাদেশে সমবায় ব্যবসায়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করতে হবে

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ

ক) আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারণা:

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান, দারিদ্র এবং উন্নয়শীল একটি দেশ। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের এই দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির অবদান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। পাক-ভারত উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলন যেভাবে শুরু হয়েছিল ঠিক সেই ভাবে এর আদর্শ ধরে রাখতে পারেনি। এর প্রধান কারণ ছিল সমাজের অজ্ঞতা, কুসংস্কার, রক্ষণশীলতা ইত্যাদি। স্বাধীনতা লাভের পরও এদেশে সমবায় আন্দোলন জোরদার করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত এর সফলতা সন্তোষজনক নয়। এই ব্যর্থতার পেছনে শুধুমাত্র সমবায় সমিতিকে দোষারাপ করা যাবে না। 

শিক্ষার অভাব সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি ইত্যাদি কারণে সমবায় সমিতির এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই সকল সমস্যা সমাধানপূর্বক সমবায় সমিতির আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে যা প্রয়োজন তা হলো সমবায়ের নীতি অনুধাবন ও বাস্তবায়ন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং কর্মসূচী গ্রহণ, প্রশিক্ষণের সুবিধা, ঋণ সুবিধা প্রদান, আইনগত জটিলতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ নিরসন, সুষ্ঠ হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন ইত্যাদি। অনেক মহল মনে করতে পারে এদেশে সমবায় আন্দোলন সফল হবে না কোন দিনই। কিন্তু এসব ধারণা ভুল ও অবাস্তব। 

সমবায় সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাবলম্বী হওয়ায় প্রকৃষ্টতম হচ্ছে বাংলাদেশ দুগ্ধ সমবায় ইউনিয়ন “মিল্ক ভিটা” এই সমবায় আন্দোলন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অবদানের ক্ষেত্রে উজ্জল স্বাক্ষর বহন করে। কৃষক সমবায় সমিতি, তাঁতী সমবায় সমিতি ইত্যাদির মাধ্যমে সুদূর পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নে সম্ভব হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অদমনীয় কর্মোদ্দামের মাধ্যমে সমবায় সমিতিগুলো উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। আধুনিক শহরাঞ্চলেও আজকাল সমবায়ের মাধ্যমে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের বসতি ব্যবস্থাকে টেকসই অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। 

খ) সমবায় সমিতির ধারণা:

সমবায়ের শাব্দিক অর্থ হলো সমিতির উদ্যোগ বা প্রচেষ্টায় কাজ করা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও চিন্তা থেকেই সমবায়ের উৎপত্তি। সাধারন অর্থে সমাজের নির্মল ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন নিজেদের কল্যাণের লক্ষে স্বেচ্ছায় অনুপ্রাণিত হয়ে যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে। একই ধরনের পেশায় নিয়োজিত কয়েকজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে যখন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে তখন তাকে সমবায় সমিতি বলে। 

এ সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মূল শক্তি থাকে পারস্পারিক সমঝোতা সহযোগিতা ও সমতা বিধান। সমশ্রেণী বা পেশাভুক্ত কতিপয় ব্যক্তি সমঝোতা, সহযোগিতা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করে তাকে সমবায় ব্যবসা বলে। এর প্রধান উদ্দেশ্য পারস্পারিক কল্যাণ সাধন, মুনাফা অর্জন নয়। 

১. সাধারণত নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন সমমনা ও পেশার ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছামূলকভাবে এ জাতীয় সংগঠন গড়ে তোলে। সমিতির উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধ উপায়ে সমিতির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন। সমবায়ের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, মুনাফা অর্জন নয়।

২. ২০০১ সমবায় আইনে তিন ধরনের সমবায় সমিতির উল্লেখ আছে। সেগুলো হলো-,-

(ক) প্রাথমিক সমবায় সমিতি, যার সদস্য সংখ্যা হবে ন্যুনতম ২০ জন একক ব্যক্তি এবং যাহার উদ্দেশ্য হবে বৈধ উপায়ে সমিতির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। সর্বাধিক সদস্যের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

(খ) কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি, যার সদস্য হবে ১০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি এবং উদ্দেশ্য হবে উক্ত সদস্য সমিতিগুলোর কাজ-কর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং সমন্বয় সাধন।

(গ) জাতীয় সমবায় সমিতি, যার সদস্য হবে ১০ টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি, এবং উদ্দেশ্য হবে দেশব্যাপী উক্ত সদস্য সমিতিগুলোর কাজ-কর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং সমন্বয় সাধন।

৩. সমবায় সমিতি সমবায় আইনে গঠিত একটি কৃত্রিম ও স্বতন্ত্র সত্তাবিশিষ্ট সংগঠন যার স্থায়ী ধারাবাহিকতা থাকবে, উদ্দেশ্য পূরণে যে কোন ধরনের সম্পদ অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর করার এবং চুক্তি করার অধিকার থাকবে। সমিতির একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং সমিতির নামেও অন্য কেউ মামলা দায়ের করতে পারবে।

৪. সমবায় সমিতির মূলধন সমমূল্যের কতকগুলো শেয়ারে বিভক্ত থাকে। সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্য অন্তত একটি শেয়ার ক্রয় করে সমিতির সদস্য হতে পারবেন তবে কোনো সদস্য সমিতির মোট শেয়ার মূলধনের এক-পঞ্চমাংশের অধিক শেয়ার ক্রয় করতে পারে না। সদস্যগণের দায় সাধারণত সীমিত ও শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ।

৫. ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার সকল স্তরে সমবায় সমিতিকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। সকল শ্রেণির সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্য সমিতির কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি মাত্র ভোট প্রয়োগের অধিকারী। উক্ত ভোট ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রয়োগ করতে হয়, প্রতিনিধির মাধ্যমে কোনো ভোট দেওয়া যায় না।

৬. সমবায় আইন ২০০১ অনুযায়ী সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত বা অনুমোদিত না হলে কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিসংঘ, সংগঠন বা সমিতি তার নামের অংশ হিসেবে সমবায় বা  Cooperative শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ নিবন্ধন ব্যতীত ‘সমবায়’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ।

গ) সমবায় সমিতির প্রকারভেদ:

সমবায় মূলত স্বল্পবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন লােকদের সংগঠন। যদিও বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিজেদের উদ্যোগে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বনির্ভরতা আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি গঠন করছে। তবে সমবায় বিধিমালা ২০০৪-এ পেশাভিত্তিক নিম্নোক্ত সমবায় সমিতি সমূহের নাম উল্লেখ করা হয়েছে

১. কৃষি বা কৃষক সমবায় সমিতি 

২. মৎস্যজীবী বা মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি 

৩. শ্রমজীবী সমবায় সমিতি 

৪. মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতি 

৫. তাঁতি সমবায় সমিতি 

৭. ভূমিহীন সমবায় সমিতি (সদস্যগণের সর্বোচ্চ জমির পরিমাণ হবে ৪০ শতক) 

৭. বিত্তহীন সমবায় সমিতি 

৮. মহিলা সমবায় সমিতি

৯. অটোরিক্সা, অটোটেম্পাে, ট্যাক্সিক্যাব, মটর, ট্রাক, ট্যাঙ্ক-লরি চালক সমবায় সমিতি 

১০. হকার্স সমবায় সমিতি 

১১. পরিবহন মালিক বা শ্রমিক সমবায় সমিতি 

১২. কর্মচারী সমবায় সমিতি 

১৩. দুগ্ধ সমবায় সমিতি 

১৪. মুক্তিযােদ্ধা সমবায় সমিতি 

১৫. যুব সমবায় সমিতি (১৮ হতে ৩৫ বছর বয়সী যুব ও যুব-মহিলাদের জন্য) 

১৮. গৃহায়ন (হাউজিং) সমবায় সমিতি 

১৯. ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট মালিক সমবায় সমিতি 

২০. দোকান মালিক বা ব্যবসায়ী বা মার্কেট সমবায় সমিতি সকল ধরনের সমবায় সমিতির মুখ্য উদ্দেশ্য হলাে সদস্যগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। তবে বল্পবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য সমবায়ের উদ্ভব হলেও বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিত্তশালী ব্যক্তিও সমবায় সমিতি গঠন করার সুযােগ পাচ্ছে। ফলে আশা করা যায় যে, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার ইচ্ছুক দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুবক সমবায় সমিতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

ঘ) বাংলাদেশে সমবায় ব্যবসায়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় এখনও দেশের শতকরা ৮০% ভাগ মানুষ কৃষি ও গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় যেমন: কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, মৎষ চাষি, কামার, কুমার, জেলে ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প এবং বিভিন্ন ধরনের একমালিকানা ব্যবসায় যেমন: মুদি দোকান, দর্জি দোকান, ঔষধের দোকান, সবজি বিক্রির দোকান, সেলুন, চা বিক্রির দোকান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অথচ তাদের বেশীর ভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের। ফলে তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা যেমন: শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। কিন্তু তাদের একার পক্ষে নিজেদের উন্নতি করা সম্ভব নয়। অন্য দিকে প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি, মূলধনের স্বল্পতা, উন্নত সার, বীজ ও কীটনাশকের অভাব, খন্ড, খন্ড কৃষি জমি ইত্যাদি কারনে এ দেশের অর্থনীতির প্রাণ কৃষক ও কৃষি তাদের যথাযথ অবদান রাখতে পারছেনা। আবার নিজেদের মধ্যে একতা, সহযোগিতা ও আস্থা না থাকার কারণে বিভিন্ন দালাল শ্রেণীর লোকদের দ্বারা নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে সমবায় সংগঠন। সমমনা ও সমশ্রেণীর ঐ সকল গোষ্টী নিজেদের মধ্যে সমবায় সমিতি গঠন করে নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের উন্নয়নে ও অবদান রাখতে পারে। স্বাধীনতা পর থেকে দেশে অনেক সমবায় সমিতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নে ও অবদান রাখছে। কিন্তু দেশের এবং সমাজের তুলনায় যথেষ্ট নয়। সরকারী পৃষ্টপোষকতা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা ইত্যাদির মাধ্যমে সকলকে বিশেষ করে যুবসমাজকে সমবায়ের দিকে উৎসাহিত প্রদান করতে হবে। 

Get SSC Business Entrepreneurship Assignment Answer

[Join]