0

ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয়দফা, ৬৯ এর নির্বাচন ফলাফল ১৯৭১ ও বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্লেষণপূর্বক উপস্থাপন। এইচএসসি ২০২২ পৌরনীতি ৭ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট সমাধান।

ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয়দফা , ৬৯ এর নির্বাচন ফলাফল ১৯৭১ ও বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্লেষণপূর্বক উপস্থাপন

অ্যাসাইনমেন্ট: ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয়দফা, ৬৯ এর নির্বাচন ফলাফল ১৯৭১ ও বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্লেষণপূর্বক উপস্থাপন।

ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয়দফা, ৬৯ এর নির্বাচন ফলাফল ১৯৭১ ও বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্লেষণপূর্বক উপস্থাপন

ভাষা আন্দোলন ও যুক্তফ্রন্ট

ভাষা আন্দোলন: 

বাঙ্গালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এক রক্তরঞ্জিত ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি জাতির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘ দু’শত বছর শাসনের পর এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৪৭ সালে কেবলমাত্র ধর্মীয় চেতনাকে পুঁজি করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পাঞ্জাব ভিত্তিক পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতিকে সুনজরে দেখে নি। বাঙালি জাতির উপর আধিপত্য কায়েমের বিশেষ পাঁয়তারা চলছিল। তারা চেয়েছিল বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে। 

শুধু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা বিমাতা সুলভ আচরণ করছিল। রাষ্ট্রভাষার দাবিতে তৎকালীন ‘তমদ্দুন মজলিস’ সুপরিকল্পিতভাবে সুসংগঠিত আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ১৭ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেম-এর নেতৃত্বে ১ সেপ্টেম্বর ৩ সদস্য বিশিষ্ট তমদ্দুন মজলিস গঠিত হয়। 

এ সংগঠনের অন্য নেতৃদ্বয় ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও শামসুল আলম। সূচনালগ্ন থেকেই এ সংগঠনটি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিল। ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তনিয়েছিল। এ সিদ্ধান্তজোর করে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ উর্দু ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা ছিল সমগ্র পাকিস্তানে অনূর্ধ্ব শতকরা ৬.০০ ভাগ। পক্ষান্তরে, বাংলা ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা ছিল শতকরা ৫৪.৬ জন। 

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গঠিত পূর্ব বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগ এর ইশতিহারে রাষ্ট্র ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানান হয়। এতে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে এসে ঢাকার রমনা রেসকোর্সের এক জনসভায় ঘোষণা করেন, “Urdu and Urdu alone shall be the state language of Pakistan”  অর্থাৎ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার মাত্র তিন দিন পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সমাবর্তন উৎসবে তিনি আবার ঐ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন।

উপস্থিত ছাত্ররা খোলাখুলী ভাবে এ অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী পুলিশ বাহিনীকে ছাত্র-জনতার উপর লেলিয়ে দেয়। পুলিশ ছাত্র মিছিলের উপর লাঠি চার্জ করে। ধীরে ধীরে আন্দোলন পরিপক্কতার আকার ধারণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগানে ঢাকার রাজপথ মুখরিত হয়। শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর তাবেদার পুলিশ বাহিনী গুলি চালায়। ফলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বরকত, সালাম, জব্বার ও রফিক এবং নাম না জানা আরও অনেকে। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। গণ-বিস্ফোরণের কাছে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী মাথা নত করতে বাধ্য হয়। তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে মেনে নিতে বাধ্য হন। অবশেষে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 

যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কারণ

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তাৎপর্য অপরিসীম। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অভ‚তপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্ত রাঙা ইতিহাস পেরিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম বিকাশ ঘটে এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে।

১। একচেটিয়া কর্তৃত্ব বিলোপ: নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্তক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলায় বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে। সাথে সাথে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম লীগের একচেটিয়া আধিপত্যের বিলোপ ঘটে।

২। মুসলিম লীগের ভরাডুবি: মুসলিম লীগের ভারাডুবির মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যায়। গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি সদস্যরা আর তাদের প্রদেশের সত্যিকারের প্রতিনিধি নন বলে প্রমাণিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দলের ভরাডুবি হয়।

৩। স্বায়ত্তশাসনের সমর্থন: এ নির্বাচনে স্বায়ত্তশাসনের প্রতি সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের দাবির প্রতি বাঙালিদের সমর্থন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়। তারা নিজেদের ঐক্যের গুরুত্ব ও শক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। এতে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ক্রমশ জোরদার হয়।

৪। প্রতিনিধিত্ব প্রমাণ: এ নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টের সদস্যরা তাদের প্রতিনিধিত্ব প্রমাণ করে। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে তাঁরা শাসনতন্ত্রপ্রণয়নে অংশ নেন। তারা প্রথম গণপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল একটি গণপরিষদ গঠনের সিদ্ধান্তনেন।

৫। বিরোধী দলের বিকাশ: বিরোধী দলের বিকাশ ৫৪-এর নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের কোন স্থান ছিল না। এ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো জয়লাভ করে। সুতরাং এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

৬। রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি: রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির মধ্যে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তাৎপর্য নিহিত। এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষার ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের দৃঢ়তা উপলব্ধি করতে পারে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে উর্দুর সাথে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় মর্যাদা দেওয়া হয়।

৬ দফা

প্রস্তাব – ১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি:

লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;

প্রস্তাব – ২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।

প্রস্তাব – ৩ : মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:

মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু’টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ-

(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা,

(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

প্রস্তাব – ৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:

ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির সব রকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব – ৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:

(ক) ফেডারেশন ভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।

(খ) বহির্বাণিজ্য এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।

(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।

(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।

(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব – ৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান

পটভূমি 

১৯৬৬ সালে ছয় দফা উত্থাপিত হওয়ার পর দ্রæত তা বাংলার গ্রামগঞ্জে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি ছয়দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। এরই প্রেক্ষাপটে দায়ের করা হয় ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা। আগরতলা মামলা ছিল সামরিক একনায়ক আইয়ূব খানের শাসনামলের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বাঙ্গালির অধিকার আদায়ের লড়াই নস্যাৎ করতে এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির ময়দান হতে নির্মূল করতে পাকিস্তানী শাসক চক্র এ ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আর্জিতে বলা হয়, অভিযুক্তরা পাকিস্তানের একটি বিশেষ দিনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারকে উৎঘাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেছে।

পরিকল্পনা মতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে (পূর্ব পাকিস্তানকে) ‘স্বাধীন’ হিসাবে ঘোষণা করবে। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করে, ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অভিযুক্তরা ভারতীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার সাথে এ ষড়যন্ত্রের ‘নীল নকশা’ প্রণয়ন করে। অভ্যুত্থান সফল করার জন্য তারা ভারতীয়দের নিকট থেকে অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আগরতলা মামলার প্রথমদিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে যুক্ত করা হয়নি। কিন্তু ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে পূর্বের ২৮ জনসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ও পরিচালনা’র অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযোগনামায় বলা হয়, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ও ভারতের সহযোগিতায় অভিযুক্ত সামরিক সদস্যরা পূর্ব পাকিস্তানকে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিল।

আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার রাজনীতি ক্রমেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ছয় দফার স্বীকৃতি ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া ও মেনন গ্রæপ), জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ূব বিরোধী ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে । আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ছয় দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান, ব্যাংক, বীমা ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ, বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিনেন্স বাতিলসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এ কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়।

ফলাফল 

প্রথমত, গণআন্দোলন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গেলেই বলতে হয় ১১ দফার কথা। এ কর্মসূচির ফলে ছাত্র সমাজ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ১১ দফা ও ৬ দফার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশব্যাপী এক প্রচন্ড গণবিপ্লবের সৃষ্টি হয়। এ গণআন্দোলনের গতি-প্রকৃতি লক্ষ করে ক্ষমতাসীন সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং তা প্রতিহত করতে পাক সরকার হত্যা ও নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে আন্দোলন আরো তীব্র ও জোরালো হতে থাকে এবং সমগ্র দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আইয়ুব খান মুজিব সহ সকল রাজবন্দিদের বিনাশর্তে মুক্তি প্রদান করেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান শেষপর্যন্ত ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

দ্বিতীয়ত, এ আন্দোলনের সুফল হিসেবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা ও সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বীকৃতি মিলে।

তৃতীয়ত, এ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে শ্রেণী চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং শ্রেণী সংগ্রামের আংশিক বিকাশ সাধিত হয়।

চতুর্থত, এ আন্দোলনের ফলে সবচেয়ে বড় লাভ হলো স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালিদের যে জাতীয়তাবোধ ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল তা পূর্ণতা লাভ করে। এ আন্দোলনের মধ্যদিয়েই বামপন্থীদের বৃহৎ অংশ এবং ডানপন্থী সংগঠনভুক্ত সদস্যদের মধ্যে পূর্ববাংলায় পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পায়। ছাত্রলীগের সভায় স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার চেতনা জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার ফলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

পঞ্চমত, ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান জাতীয় চেতনার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল। ‘৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ‘৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পর এ ছুটি বাতিল হয়ে যায়। ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্বের মর্যাদা ফিরে পায়।

ষষ্ঠত, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেছনে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয়। বাঙালিদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং বাঙালি জাতির স্বাধিকার অর্জনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সর্বদা অটল এবং প্রতিবাদমুখর। ‘৬৯-এর গণআন্দোলন শেখ মুজিব সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের মুক্তির পথ সুগম করেছিল। মুক্তিলাভের পর শেখ মুজিব বাঙালির স্বার্থ রক্ষায় সদা সজাগ ও সক্রিয় ছিলেন। এরফলে তাঁর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর ‘৭০-এর নির্বাচনী

ম্যানিফেস্টোতে শেখ মুজিব সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও আদর্শকে সংযুক্ত করায় বামপন্থীদের সমর্থন লাভ করেন। সর্বোপরি ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পূর্ববাংলায় যে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে ‘৭০-এর নির্বাচনে তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগের পক্ষে চলে যায়। আর এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে উৎসাহী করেছিল। মোটকথা, সরকারের জনবিদ্বেষী নীতি ও শেখ মুজিবুর রহমানের জনমুখী চরিত্র ‘৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়কে সহজ করেছিল। 

৭০ এর নির্বাচন 

পটভূমি 

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবী স্বাধীনতার দাবীতে রূপান্তরিত হয়। তাই সত্তরের নির্বাচন এবং স্বাধীনতা আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উল্লেখ্য যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সমগ্র দেশব্যাপী এটাই ছিল প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

ঐ নির্বাচনী ফলাফলকে কেন্দ্র করে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বনাম শেখ মুজিব ও এদেশের মানুষের আশা আকাঙক্ষার মধ্যে যে তীব্র দ্ব›দ্ব-সংঘাত শুরু হয় তারই অনিবার্য পরিণতিতে বাংলার সংগ্রামী জনতা এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী শাসকগোষ্ঠী সত্তর সালের নির্বাচনী গণরায়কে অস্বীকার এবং বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে পাকিস্তানের ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণ-এই পটভূমিতে সুদীর্ঘ তেইশ বছর পরে ১৯৭০ সালে প্রাপ্ত-বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন ছিল খুবই তাৎপর্যমন্ডিত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে পাকিস্তানে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকায় কোন একটা দলের পক্ষে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আর তিনি বিভিন্ন দলের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মতো দেশের উপর এমন একটি শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দিতে পারবেন যা মূলতঃ কায়েমী ও স্বার্থবাদী শাসক চক্রের ক্ষমতাকেই টিকিয়ে রাখবে।

ক্ষমতাসীন সামরিকচক্র কেন্দ্রে একটি দুর্বল কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে থাকে। ইয়াহিয়া খান অতি সতর্কতার সাথে তার পরিকল্পিত পথে অগ্রসর হতে থাকেন। তিনি ছোট- বড়ো সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হতে শুরু করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক মতভেদ সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের প্রতি দ্বন্দ্বে ও সংঘাতে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করা। জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না।

সামরিক বাহিনীর রাওয়ালপিন্ডিস্থ হেডকোয়ার্টার্সে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেলদের বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দিলেই সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষা হবে। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদেরও এই অভিমত ছিল। তারা আইয়ুব খানের শেষ দিনগুলোর ঘটনাবলী উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে দেখালেন যে, জোর করে সামরিক শাসন চালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে সমগ্র পাকিস্তান একসঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে হবে। শাসক মহলের এই সব অনুমানের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।

নির্বাচনী ইস্তেহারে আওয়ামী লীগ ‘ছয় দফা’ কর্মসূচীর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা, শোষণহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিকে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনকে ‘ছয়-দফা’র উপর ‘গণভোট’ বলে উল্লেখ করেন। মুজিবের সাথে ভুট্টোর মৌলিক পার্থক্য ছিল ‘ছয়-দফা’ কর্মসূচি নিয়ে। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম হন। আওয়ামী লীগ ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পৃহা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।

নির্বাচনী ফলাফল

বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী করে। জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে আওয়ামী লীগ। ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ৮৮টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আÍপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন সদস্য সকলেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত হন;

অনুরূপভাবে পিপলস্ পার্টির ৮৮টি আসনই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত। দুটি দলই আঞ্চলিক আধিপত্য ও প্রাধান্য লাভ করে এবং দুটি দলই অন্য অঞ্চল থেকে কোন আসন লাভ করে নি। সুতরাং নির্বাচনী ফলাফলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দেশের দু’অংশের জনমত সম্পূর্ণ বিভক্ত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার বিরুজনতার রুদ্ররোষের বহিঃপ্রকাশ। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যকার বিরাজিত অর্থনৈতিক বৈষম্য বাঙালিদের মনে প্রচন্ড বিক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।

নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানের কায়েমী শাসনের ভিত্তিমূলে আঘাত হানে। বাংলাদেশের জনগণ ৬ দফা ও ১১ দফা কর্মসূচির প্রতি সুস্পষ্ট রায় প্রদানের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল যে, তারা শোষণ ও বঞ্চনার অবসান চায়।

Get HSC Civics Assignment Answer

[Join]