বসত বাড়িতে গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর খামার তৈরি করতে চাইলে নির্ধারিত সম্পূরক খাবার প্রয়ােগের উপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ। এসএসসি কৃষি ৭ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।
বিষয়: কৃষি শিক্ষা, বিষয় কোড: ১৩৪, মোট নম্বর: ১৬, স্তর: এসএসসি, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০১
অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনাম: বসত বাড়িতে গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর খামার তৈরি করতে চাইলে নির্ধারিত সম্পূরক খাবার প্রয়ােগের উপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ।
বিষয়বস্তু
- ১. সম্পূরক খাদ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারবে
- ২. মাছের ও পশু-পাখির সম্পূরক খাদ্য তালিকা তৈরি করতে পারবে
- ৩. মাছ ও পশু-পাখির সম্পূরক খাদ্যের। প্রয়ােগ পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারবে
- ৪. মাছ ও পশু-পাখির দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিপুষ্টির জন্য সম্পূরক খাদ্যের প্রয়ােজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে পারবে
নির্দেশনা
প্রথম অধ্যায়: পাঠ্যবই এর প্রথম অধ্যায়ের ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
- সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি
- সম্পূরক খাদ্যের উৎস
- সম্পূরক খাদ্যের উপকারিতা
- পশু পাখির সম্পূরক খাদ্যের প্রকারভেদ
- পশু পাখির সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়ােগ
বসত বাড়িতে গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর খামার তৈরি করত নির্ধারিত সম্পূরক খাবার প্রয়ােগ
সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও উৎস
দেহের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা), জু-প্লাংকটন (প্রাণীকণা) খুদিপানা, ছােট জলজ পতঙ্গ, পুকুরের তলদেশের কীট, লাভা, কেঁচো, ছােট ছােট শামুক, ঝিনুক, মৃত জৈব পদার্থ ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। কিন্তু মাছ চাষের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য পুকুরে অধিক ঘনত্বে পোনা ছাড়া হয়। এ অবস্থায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক উৎপাদন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এমনকি সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধি করলেও তা যথেষ্ট হয় না। এজন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে বাহির থেকে অতিরিক্ত খাদ্য দিতে হয়। একে সম্পূরক খাদ্য বলে।
যেমন-চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, ফিশ মিল ইত্যাদি। গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি মাছ উদ্ভিদভোজী বলে এদের জন্য খুদিপানা, কুটি পানা, শাকসবজির নরম পাতা, ঘাস কেটে সম্পূরক খাবার হিসাবে পুকুরে দেওয়া যায়। মাছকে সরবরাহকৃত সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন-আমিষ, স্নেহ বা তেল, শর্করা, খনিজ লবণ ও ভিটামিনের মাত্রা যেন চাহিদা অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় মাত্রায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়ােজন। যে সম্পূরক খাবার এ সকল পুষ্টি উপাদান যথাযথ মাত্রায় রেখে তৈরি করা হয় তাকে সুষম সম্পূরক খাদ্য বলে। মাছের সম্পূরক খাদ্যের উৎস মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। উৎসের উপর ভিত্তি করে এসব উপাদানকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) উদ্ভিদজাত
খ) প্রাণিজাত
উদ্ভিদজাত: উদ্ভিদজাত খাদ্য উপাদানের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে- চালের কুঁড়া, গম ও ডালের মিহিভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা, চিটাগুড়, খুদিপানা, রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট, বিভিন্ন নরম পাতা যেমন- মিষ্টি কুমড়া, কলাপাতা, বাঁধাকপি ইত্যাদি।
প্রাণিজাত: প্রাণিজাত কয়েকটি খাদ্য উপাদান হচ্ছে শুটকি মাছের গুঁড়া বা ফিশমিল, রেশম কীট মিল, চিংড়ির গুড়া (স্রিম্প মিল), কাঁকড়ার গুঁড়া, হাড়ের চূর্ণ (বোন মিল), শামুকের মাংস, গবাদিপশুর রক্ত (ব্লাড মিল) ইত্যাদি।
সম্পূরক খাদ্যের উপকারিতা
১। মাছকে নিয়মিত সম্পূরক খাবার সরবরাহ করলে অধিক ঘনত্বে পোনা ও বড় মাছ চাষ করা যায় ।
২। অল্প সময়ে বড় আকারের সুস্থ সবল পোনা উৎপাদন করা যায়।
৩। পােনার বাঁচার হার বেড়ে যায়।
৪। মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫। মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
৬। মাছ পুষ্টির অভাবজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে।
৭। সর্বোপরি কম সময়ে জলাশয় থেকে অধিক মাছ ও আর্থিক মুনাফা পাওয়া সম্ভব হয়।
পশুপাখির সম্পূরক খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া
ক) ইউরিয়া মােলাসেস খড়:
ইউরিয়ার সাহায্যে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ উপকরণ খড় : ২০ কেজি, ইউরিয়া :১ কেজি, পানি : ২০ লিটার, একটি মাঝারি আকারের পাত্র, বস্তা ও মােটা পলিথিন ।
তৈরির পদ্ধতি
১। প্রথমে একটি বালতিতে ১ কেজি ইউরিয়া ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে ।
২। ডডালের চারদিকে গােবর ও কাদা মিশিয়ে লেপে শুকিয়ে নিতে হবে।
৩। এবার ডােলের মধ্যে অল্প অল্প খড় দিয়ে ইউরিয়া মেশানাে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
৪। সমস্ত খড় সম্পূর্ণ পানি দ্বারা মিশিয়ে ডােলের মুখ বস্তা ও মােটা পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
৫। দশ দিন পর খড় বের করে রােদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
খ) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক
উপকরণ
গমের ভুসি : ৩ কেজি
ঝােলাগুড় : ৬ কেজি
ইউরিয়া : ৯০ গ্রাম
লবণ : ৩৫ গ্রাম খাবার
চুন : ৫০০ গ্রাম।
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স : ৫০ গ্রাম এবং কাঠের ছাঁচ (১ কেজি ব্লক তৈরির জন্য)।
তৈরির পদ্ধতি
১। প্রথমে একটি লোহার কড়াইতে সামান্য ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ ঝােলাগুড়সহ জ্বাল দিয়ে সামান্য ঘন করতে হবে।
২। কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে এর মধ্যে ইউরিয়া, চুন, লবণ, গমের ভুসি যােগ করে ভালােভাবে মেশাতে হবে।
৩। এরপর ছাঁচের মধ্যে কিছু ভুসি ছিটিয়ে মিশ্রিত দ্রব্যগুলাে ভরে ব্লক তৈরি করতে হবে ।
৪। ব্লকগুলাে শুকনাে আলাে বাতাসযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
গ) অ্যালজি বা শেওলা
অ্যালজি চাষের প্রয়ােজনীয় উপকরণ,
অ্যালজির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর বা জলাধার, পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি, মাসকলাই বা অন্যান্য ডালের ভুসি ও ইউরিয়া
অ্যালজির উৎপাদন পদ্ধতি
১। প্রথমে সমতল ও ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করতে হবে। জলাধারটি লম্বায় ৩ মিটার, চওড়ায় ১.২ মিটার এবং গভীরতায় ০.১৫ মিটার হতে পারে। এর পাড় ইট বা মাটির তৈরি হতে পারে। এবার ৩.৩৫ মিটার, ১.৫২ মিটার চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম জলাধারটির তলা ও পাড় ঘেঁকে দিতে হবে। তবে জলাধারটির আয়তন প্রয়ােজন অনুসারে ছােট বা বড় হতে পারে। তাছাড়া মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতে অ্যালজি চাষ করা যায়।
২। এরপর ১০০ গ্রাম মাসকলাই বা অন্য ডালের ভুসিকে ১ লিটার পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে হেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে একই ভুসিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করে পরবর্তীতে গরুকে খাওয়ানাে যায়।
সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com
৩। এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমাণ কলের পরিষ্কার পানি, ১৫-২০ লিটার পরিমাণ অ্যালজির বীজ এবং মাসকলাই ভুসি ভেজানাে পানি ভালাে করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ২-৩ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের পানিতে ভালােভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।
৪। এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকালে কমপক্ষে তিনবার উক্ত অ্যালজির পানিকে নেড়ে দিতে হবে । পানির পরিমাণ কমে গেলে নতুন করে পরিমাণ মতাে পরিষ্কার পানি যােগ করতে হবে। প্রতি ৩/৪ দিন পর পর পুকুরে ১-২ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভালাে হয়। ৫। এভাবে উৎপাদনের ১২-১৫ দিনের মধ্যে অ্যালজির পানি গরুকে খাওয়ানাের উপযুক্ত হয়। এসময় অ্যালজির পানির রং গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। অ্যালজির পানিকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানাে যায়। প্রতি ১০ বর্গমিটার পুকুর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লিটার অ্যালজির পানি উৎপাদন করা সম্ভব।
বাজারে তৈরি সম্পূরক খাদ্য
পশুপাখির উৎপাদন চলমান রাখার জন্য এদেরকে বাজারে তৈরি বিভিন্ন সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
১. আমিষ সম্পূরক খাদ্য – যেমন, প্রােটিন কনসেনট্রেট
২. খনিজ সম্পূরক – ভিটামিন ও খনিজ প্রিমিক্স
৩. খাদ্যপ্রাণ সম্পূরক – ভিটামিন ও খনিজ প্রিমিক্স ।
পশুপাখির সম্পূরক খাদ্যোর প্রয়োগ পদ্ধতি
ক) ইউরিয়া মােলাসেস খড় প্রয়োগ পদ্ধতি:
১। একটি গরুকে দৈনিক ২-৩ কেজি ইউরিয়া মেশানাে খড় খাওয়াতে হবে।
২। খড়ের সাথে দৈনিক ৩০০ গ্রাম ঝােলাগুড় মিশিয়ে দিতে হবে।
খ) ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক প্রয়োগ পদ্ধতি:
১। একটি গরুকে দৈনিক ৩০০ গ্রাম ব্লক জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে দিতে হবে।
২। প্রথমে ব্লক জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে না চাইলে ব্লকের উপর কিছু ভুসি ও লবণ ছিটিয়ে দিতে হবে।
গ) অ্যালজি বা শেওলা প্রয়োগ পদ্ধতি:
১। সব বয়সের গরুকে অর্থাৎ বাছুর, বাড়ন্ত গরু, দুধের বা গর্ভবতী গাভী, হালের বলদ সবাইকে সাধারণ পানির পরিবর্তে অ্যালজির পানি খাওয়ানাে যায় ।
২। এ ক্ষেত্রে গরুকে আলাদা করে পানি খাওয়ানাের প্রয়ােজন নেই।
৩। অ্যালজি পানি দানাদার খাদ্য অথবা খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানাে যায় ।
৪। অ্যালজির পানিকে গরম করে খাওয়ানাে উচিত নয়, এতে অ্যালজির খাদ্যমান নষ্ট হতে পারে।
৫। খামারের ৫টি গরুর জন্য ৫টি কৃত্রিম পুকুরে অ্যালজি চাষ করতে হয় যাতে একটির অ্যালজির পানি শেষ হলে পরবর্তীটি খাওয়ানাের উপযুক্ত হয়।
ঘ) বাছুরের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি :
বাছুরের বয়স অনুসারে দৈনিক ০.৫ থেকে ৩ লিটার পর্যন্ত খাওয়ানাে যায়। মিল্ক রিপ্লেসার (Milk Replacer) তৈরির একটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলাে:
কাফ স্টাটার (Calf Starter) : বাছুরের খাবার উপযােগী বিশেষ দানাদার খাদ্য মিশ্রণ যাতে ২০% এর অধিক পরিপাচ্য আমিষ ও ১০% এর কম আঁশযুক্ত খাদ্য থাকে। কাফ স্টাটারের একটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলাে
বাছুরের বয়স অনুসারে দৈনিক ০.৫ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত খাওয়ানাে যায়।
[Join]