0

সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা। এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান ১ম প্রথম পত্র ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা

বিষয়: সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র, বিষয় কোড: ১১৭, স্তর: এইচএসসি, মোট নম্বর: ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০৩, অধ্যায়-চতুর্থ; সমাজবিজ্ঞানের মৌল প্রত্যয়।

অ্যাসাইনমেন্ট: সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা।

বিষয়বস্তু

  • ক) সমাজকাঠামাে এবং সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • খ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • গ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ বর্ণনা করতে পারবে

নির্দেশনা

  • ক) সমাজকাঠামাের ধারণা ও উপাদান ব্যাখ্যা করতে হবে
  • খ) সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যাখ্যা করতে হবে
  • গ) সমাজকাঠামাে এবং সামাজিক স্তরবিন্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে হবে
  • ঘ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা করতে হবে
  • ঙ) সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ বর্ণনা করতে হবে

সমাজজীবনে সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা

NewResultBD.Com

সমাজ কাঠামো

একত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন সমাজের লোক গুলো উক্ত সমাজের প্রচলিত কিছু নিয়ম কানুন (রাস্ট্রীয় নিয়মের বাইরে) মেনে চলতে হয়। যে নিয়ম কানুনের উপর ভিত্তি করে উক্ত সমাজ পরিচালিত হয় এবং যে কারণে তা অন্য সমাজ থেকে ভিন্ন তাহাই সামাজিক কাঠামো।

কতগুলো সমাজ নিয়ে রাস্ট্র তৈরী হয়। রাস্ট্র পরিচালনা করার জন্য সকলে মিলে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সরকার রাষ্ট্রের পরিচালনার একটি ক্ষুদ্র অংশ। রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান।
যে সকল নিয়ম-কানুন ( সরকার ব্যতীত) এর মাধ্যমে কোন একটি সমাজ গঠন ও পরিচালিত হয় তাকেই সামাজিক কাঠামো বলে।

সামাজিক কাঠামো হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংগঠিত সেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের ধরন যা একসঙ্গে সমাজ রচনা করে। সামাজিক কাঠামো উভয় সামাজিক মিথস্ক্রিয়া একটি পণ্য এবং সরাসরি এটি নির্ধারণ করে। সামাজিক কাঠামো অবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষককে অবিলম্বে দৃশ্যমান হয় না, তবে, তারা সর্বদা উপস্থিত এবং সমাজের মানব অভিজ্ঞতার সমস্ত মাত্রা প্রভাবিত করে।

একটি প্রদত্ত সমাজের মধ্যে তিনটি স্তরের কাজ হিসাবে সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে চিন্তা করা সহায়ক: ম্যাক্রো, মেসো এবং মাইক্রো লেভেল।

সামাজিক কাঠামো: সোসাইটির ম্যাক্রো লেভেল

সমাজবিজ্ঞানীরা যখন “সামাজিক কাঠামো” শব্দটি ব্যবহার করে তখন তারা সাধারণত সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের মাপের ম্যাক্রো স্তরের সামাজিক শক্তির কথা উল্লেখ করে। সমাজবিজ্ঞানী কর্তৃক স্বীকৃত প্রধান সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি হলো পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা, গণমাধ্যম, আইন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি। আমরা এইগুলি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখি যা আন্তঃসম্পর্কিত এবং পরস্পর নির্ভরশীল এবং একসাথে সমাজের বৃহত্তর সামাজিক কাঠামো রচনা করতে সহায়তা করে।

এই প্রতিষ্ঠানগুলি অন্যদের সাথে আমাদের সামাজিক সম্পর্ক সংগঠিত করে এবং বৃহত্তর স্কেল দেখে যখন সামাজিক সম্পর্কের ধরন তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, পারিবারিক সংগঠনটি মানুষ, পিতামাতা, পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী ইত্যাদি সহ বিভিন্ন স্বতন্ত্র সামাজিক সম্পর্ক এবং ভূমিতে সংগঠিত করে এবং সাধারণত এই সম্পর্কগুলির একটি অনুক্রম রয়েছে, যা একটি শক্তি পার্থক্য একই ধর্ম, শিক্ষা, আইন এবং রাজনীতিতে যায়।

এই সামাজিক ঘটনা মিডিয়া এবং অর্থনীতি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কম সুস্পষ্ট হতে পারে, কিন্তু তারা সেখানে উপস্থিত আছে খুব। এইগুলির মধ্যে, এমন সংগঠন এবং ব্যক্তিরা রয়েছে যারা তাদের মধ্যে কি ঘটতে পারে তা নির্ধারণে অন্যদের চেয়ে বেশি পরিমাণ শক্তি ধারণ করে, এবং যেমন, তারা সমাজে আরও ক্ষমতা রাখে। এই মানুষ এবং তাদের সংগঠনগুলি আমাদের সকলের জীবনযাপনের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে।

একটি প্রদত্ত সমাজে এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ও পরিচালনার ফলে সামাজিক কাঠামোর অন্যান্য দিক যেমন সামাজিক-অর্থনৈতিক স্তরবিন্যাস , যা কেবল একটি শ্রেণি ব্যবস্থার একটি পণ্য নয় বরং পদ্ধতিগত বর্ণবাদ ও যৌনতা দ্বারা নির্ধারিত হয়, সেইসাথে অন্যান্য পক্ষপাত এবং বৈষম্যের ফর্ম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক কাঠামো একটি তীব্র স্তরবিন্যাসিত সমাজের ফলাফল যা খুব কম লোকের সম্পদ এবং ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে – এবং তারা সাদা ও পুরুষ হতে থাকে – যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের খুব কমই হয়। বর্ণিত হয়েছে যে জাতিবিদ্বেষী শিক্ষা, আইন এবং রাজনীতির মতো মূল সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে এম্বেড করা হয়, আমাদের সামাজিক কাঠামো একটি পদ্ধতিগতভাবে বর্ণবাদী সমাজেও ফলপ্রদ হয়। লিঙ্গ বৈষম্য এবং sexism সমস্যা জন্য একই বলা যেতে পারে

সামাজিক নেটওয়ার্ক: সামাজিক কাঠামোর মেসো স্তরের প্রকাশ

সোশ্যালজোলজিক্স “মেও” পর্যায়ে সামাজিক কাঠামোগুলি দেখায় – ম্যাক্রো এবং মাইক্রো লেভেলের মধ্যে – সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলিতে যেগুলি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি এবং উপরে বর্ণিত প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক সম্পর্ক দ্বারা সংগঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সিস্টেমিক বর্ণবাদ আমেরিকান সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে , যার ফলে কিছু জাতিগত সমগোত্রীয় নেটওয়ার্কগুলি দেখা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ সাদা মানুষ আজ সম্পূর্ণরূপে সাদা সামাজিক নেটওয়ার্ক আছে।

আমাদের সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিও সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি প্রকাশ, যার মধ্যে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক শ্রেণীগত পার্থক্য, শিক্ষামূলক অর্জনের পার্থক্য এবং সম্পদের মাত্রাগুলির পার্থক্য দ্বারা গঠিত হয়।

পরিবর্তে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলি আমাদের জন্য উপলব্ধ এবং উপলব্ধ হতে পারে এমন ধরণের ধরণের আকৃতির দ্বারা গঠনমূলক বাহিনী হিসাবে কাজ করে এবং বিশেষভাবে আচরণগত এবং আন্তঃসম্পর্কীয় নীতিমালা তৈরি করে যা আমাদের জীবন কোর্স এবং ফলাফল নির্ধারণের জন্য কাজ করে।

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া: দৈনন্দিন জীবনের মাইক্রো লেভেলের সামাজিক কাঠামো

সামাজিক কাঠামো নিয়মিত ও নিয়মের আকারে একে অপরের সাথে দৈনন্দিন পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্যে মাইক্রো লেভেলে দেখা যায়। আমরা এটি প্যাটার্নযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের মতো পারিবারিক ও শিক্ষার মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমাদের পারস্পরিক ক্রিয়া তৈরি করে দেখি এবং এটি জাতি, লিঙ্গ এবং যৌনতাগত দিক সম্বন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ধারণাগুলি যা অন্যদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে , আমরা কীভাবে আশা করি তাদের দ্বারা দেখা যায়, এবং কিভাবে আমরা একসঙ্গে যোগাযোগ।

স্তরবিন্যাসের অর্থ ও বৈশিষ্ট্য (Meaning and Features of Social Stratification)

সমাজ জীবনের শুরু থেকে সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজে বসবাসকারী জনসমষ্টির মধ্যে বিভিন্ন স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। সমাজবদ্ধ ব্যক্তিবর্গকে উচ্চ-নীচ স্তর ভেদে বিন্যাস করার জন্য সমাজতাত্ত্বিকগণ ভূ-বিদ্যার স্তরের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হন। পরবর্তীকালে সমাজতত্ত্বের আলোচনায় স্তরবিন্যাসের উপর (Social Strati fication) গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অধ্যাপক সরোকিন (Sorokin) মনে করেন সকল সমাজের অধিবাসী বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত (unstratified society is a myth)। Peter Worseley সমাজতত্ত্বে শব্দটি প্রচলন করেন। অসম অবস্থানের দরুন সমাজস্থ মানুষকে মর্যাদার ভিত্তিতে উচ্চ-নীচ ভেদে বিভক্ত করা হলে তাকে সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে।

স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য: সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি

বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়—

(১) সম্পত্তি, রাজনৈতিক ক্ষমতা অথবা মর্যাদার পার্থক্যের দরুন স্তরবিন্যাস ঘটে থাকে। স্তরবিন্যাসের সঙ্গে মর্যাদার প্রশ্নটি জড়িত।

(২) স্তরবিন্যাসের দরুন ব্যক্তিবর্গের জীবন ধারণের প্রণালীতে পার্থক্য সূচিত হয়।

(৩) স্তরবিন্যাসের ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্তরের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়।

(৪) স্তরবিন্যাস ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তে (0)। এই স্তরবিন্যাসের ফলে মর্যাদা অর্জিত অথবা আরোপিত হয়ে থ স্তরবিন্যাস হল সর্বজনীন কোনো না কোনো অর্থে সমস্ত সমপরিলক্ষিত হয়। ম্যাকাইভার ও পেজ স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন-

(১) মর্যাদাভিত্তিক ক্রমিক স্তর বিভাগ (২) উচ্চতর ও নিম্নতর ব্যবধানে স্বীকৃত এবং সচেতনতা; (৩) এই বিভাজন সাধারণভাবে স্থায়ী।

সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে কর্মনির্বাহী (ক্রিয়াবাদী) তত্ত্ব (Functional theory on stratification)

অধ্যাপক সরোকিন-এর মতে উচ্চ-নীচ ভেদে সমাজের জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া হল সামাজিক স্তরবিন্যাস। Social Stratification is the division of society into classes of Strata on the basis of prestige and power.”

মার্কসীয় দর্শন অনুযায়ী সামাজিক বৈষম্য ও স্তরবিন্যাস চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী প্রতিটি সমাজে স্তরবিন্যাস ও বৈষম্য হল অপরিহার্য ও চিরস্থায়ী। সমাজকে সুসংহত রাখার ক্ষেত্রে সামাজিক স্তরবিন্যাস ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সমাজবিজ্ঞানী ডেভিস ও ম্যুর সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ক্রিয়াবাদী তত্ত্বকে বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করেন (Functional theory)

ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী সকল সমাজেই স্তরবিন্যাস বর্তমান। প্রতিটি সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। পদ ও মর্যাদার দিক থেকে একটি সামাজিক ভূমিকা অধিক তাৎপর্যপূর্ণ এবং অপরটি কম তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়া সকল ব্যক্তির যোগ্যতা এবং গুণ সমান নয়। সুতরাং ভূমিকার পার্থক্যের দরুন এবং যোগ্যতার পার্থক্যের দরুন বিভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ফল লাভ করে। সামাজিক স্তরবিন্যাস এইভাবে সৃষ্টি হয় এবং যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য মর্যাদা দান করে। সুতরাং স্তরবিন্যাস বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষা করে এবং সমাজের শৃঙ্খলা সংরক্ষণ করে।

সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ক্রিয়াবাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করলে কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। (১) মানব সমাজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কয়েকটি ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ যোগ্যতা প্রয়োজন। (২) সমাজের সকল ব্যক্তি সমান দক্ষতার অধিকারী নয়। অধিক দক্ষ ও গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের অধিক সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন। (৩) অধিক মর্যাদা ও অধিক সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে একটি সমাজ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে পারে। (৪) সমাজের স্তরবিন্যাস, অর্থাৎ মর্যাদার পার্থক্যের ফলে সমাজের সংহতি রক্ষিত হয় (Stratifi cation helps integration) |

সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ক্রিয়াবাদী তত্ত্বকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সমালোচনা করা হয়।

প্রথমত, সকল সমাজে এইরূপ অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা উন্নত গুণের অধিকারী নয়, কিন্তু অধিক অর্থনৈতিক সুবিধা ও মর্যাদা লাভ করে। ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব অত্যন্ত সরল ভাবে শ্রেণীবিন্যাসকে ব্যাখ্যা করেছে।

দ্বিতীয়ত, ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী সমাজের সকল ব্যক্তি সমান প্রতিভাবান নয়। কিন্তু সামাজিক বৈষম্যই প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে অধিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও মর্যাদার দরুন অযোগ্য ব্যক্তিরা গুণের বিকাশ ঘটায়।

তৃতীয়ত, সামাজিক বৈষম্য ও স্তরবিন্যাসের ফলে সমাজের সংহতির পরিবর্তে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের পথ প্রশস্ত হয়। Inequality leads to social conflict | এই সমস্ত সমালোচনা সত্ত্বেও সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ও কর্মনির্বাহ তত্ত্বটি অত্যস্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সমাজতাত্ত্বিক উইলিয়াম ডেভিসের মতে “Social Stratification is univer sal’ অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাস হল সর্বজনীন। বিশ্বের সকল সমাজব্যবস্থায় কমবেশি স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায়। সমাজ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ প্রাচীন যুগেও দলপতির প্রভূত্বকে কেন্দ্র করে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অথবা পরিবার বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিল। সমাজতত্ত্ববিদগণ তাকে স্তরবিন্যাসের সূচনা পর্ব রূপে অভিহিত করেন। সমাজে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ে এবং স্তরভেদও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। সমাজতত্ত্ববিদগণ উল্লেখ করেন যে একটি সমাজে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই সমস্ত কাজগুলির গুরুত্ব ও মর্যাদা এক নয়। প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার প্রয়োজন। শ্রমের দিক থেকেও কোনো কাজ সহজসাধ্য এবং কোনো কাজ শ্রমসাধ্য। কাজের গুরুত্ব ও জটিলতার ক্ষেত্রে পার্থক্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মজুরি এবং সুযোগ সুবিধা দান করা হয়। সুযোগ-সুবিধা এবং মজুরির ক্ষেত্রে এই বৈষম্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায়। স্তরবিহীন সামাজিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে বিরল।

স্তরবিন্যাসের প্রকারভেদ

সামাজিক স্তরবিন্যাস চিরন্তন হলেও সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রকারভেদ পরিলক্ষিত হয় Peter Worseley-এর মতে সামাজিক স্তরবিন্যাসের তিনটি ভিত্তি আছে—(১) অর্থনীতি ভিত্তিক (Economy) (২) মর্যাদা ভিত্তিক (Status) (৩) ক্ষমতা ভিত্তিক (Power) সমাজতাত্ত্বিকগণ স্তরবিন্যাসের এই রূপগুলিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন। যথা—(১) দাসপ্রথা, (২) সামস্তপ্রথা বা ভূমিদাস প্রথা, (৩) শ্রেণী ব্যবস্থা, (৪) জাতিব্যবস্থা, (৫) ক্ষমতা।

১. দাসপ্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের এক চরম নিদর্শন হল দাসপ্রথা। প্রাচীনযুগে ইউরোপে এই প্রথা অনুযায়ী সমাজে দুই শ্রেণীর মানুষ ছিল। (ক) ক্রীতদাস ও (খ) দাস মালিক সামাজিক প্রথা অনুযায়ী ক্রীতদাসের কোনোরূপ ভূ-সম্পত্তি অথবা মানবিক অধিকার ছিল না। ক্রীতদাসগণ প্রভুর সম্পত্তি রূপে গণ্য ছিল। পৃথিবীর সমস্ত প্রাচীন সভ্যতা দাসপ্রথার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিল। দাসপ্রথার তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যায়। প্রথমত, দাস ছিল প্রভুর সম্পত্তি, দাসের ওপর প্রভুর অবাধ কর্তৃত্ব স্বীকৃত ছিল। দ্বিতীয়ত, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রীতদাসের কোনো অধিকার ছিল না। সমাজে ক্রীতদাস ছিল ঘৃণার পাত্র। তৃতীয়ত, দাসকে বাধ্যতামূলক ভাবে পরিশ্রম করতে হত। প্রাচীন যুগের পরবর্তীকালে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটে।

২. সামন্ত প্রথা মধ্যযুগে ইউরোপে সামন্ত বা ভূমিসত্ত্ব বা ‘তালুক প্রথাকে (Estate System) কেন্দ্র করে সামাজিক স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায়। Estate শব্দটি ভূমি, জমি বা তালুকে অধিগ্রহণ ও স্বত্বাধিকার হতে উদ্ভূত। অসম ভূমি বণ্টনের জন্য এক একটি তালুকের মালিক নির্দিষ্ট মর্যাদা বহন করত। মধ্যযুগীয় সামস্তপ্রথা অনুযায়ী তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত, সমাজস্থ লোকেরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলেন। প্রথম শ্রেণীতে ছিলেন যাজক সম্প্রদায়, তাদের বলা হত First Estate | দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছিলেন অভিজাত সম্প্রদায়। তাঁরা Second Estate হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণীতে ছিলেন সর্বসাধারণ Third Estate বলা হত। এই তিন শ্রেণীর কাজকর্ম এবং জীবনযাপনের রীতিতে পার্থক্য বজায় ছিল। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকটি শ্রেণীর পদমর্যাদা আইনের দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত এবং সুনির্দিষ্ট করা ছিল। আইনের চোখে সকলেই সমান ছিল না। একই অপরাধের জন্য অভিজাত সম্প্রদায়ের লোক এবং সাধারণ মানুষ ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি পেত। অন্যান্য আইনসম্মত অধিকারের ক্ষেত্রেও পার্থক্য ছিল। তৃতীয়ত, সামন্তপ্রথায় শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতেন। সাধারণ মানুষের কোনোরূপ রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। মধ্যযুগীয় ইউরোপ ছাড়া প্রাচীন ভারতবর্ষেও সামন্তপ্রথা বজায় ছিল। তবে ভারতবর্ষে সামস্ত প্রথা ছিল পৃথক ধরনের।

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ:

বার্টসন বলেন, সমাজের সদস্যরা সমাজ স্বীকৃত পন্থায় কাঙ্ক্ষিত আচরণ করবে, এমন নিশ্চয়তা প্রদানকারী ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াই হচ্ছে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের দ্বারা ব্যক্তিকে যেমন সমাজ কাঙ্ক্ষিত আচরণে বাধ্য করা হয়, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপরও চাপ প্রয়োগ করে। এখানে ইফাত সর্বক্ষেত্রে সমাজ কাঙ্ক্ষিত আচরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। যে ব্যবস্থা ব্যক্তিকে সমাজ কাঙ্ক্ষিত ধারায় আচরণ করতে বাধ্য করে, তাকেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলা হয়।

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পরিবার ও ধর্মের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। সব সমাজেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন হিসেবে পরিবার ও ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার সমাজের আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। পরিবারই শিশুর সামাজিকীকরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। শিশুকে সৎ আচরণ ও নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়। পরিবারে শিশু যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে, অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সেভাবে শিক্ষা নেয় না। কেননা, পরিবারই শিশুর নিরাপদ ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। পরিবারের সদস্যরা আদর-সোহাগ দিয়ে শিশুকে সমাজ কাঙ্ক্ষিত আচরণ করতে শেখায়। প্রয়োজনে শাসন করেও শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই মানুষ সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়। আদিকাল থেকেই ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ বাহন। আধুনিক সমাজে এর প্রভাব কিছুটা কমলেও এ প্রভাবকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কেননা, মানুষের আচার-আচরণের সঙ্গে ধর্ম বিশ্বাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

মানুষের নৈতিকতাবোধ মূলত স্বীয় ধর্ম বিশ্বাস দ্বারা চালিত। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা প্রভৃতি ধারণা ধর্ম বিশ্বাস থেকে গড়ে ওঠে। পরকালে শাস্তির ভয় মানুষকে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিরত রাখে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Get HSC Sociology Assignment Answer

[Join]