জানা থেকে অজানায় গমন ইপ্রকৃত আরােহের প্রাণধারণাটির যৌক্তিক বিশ্লেষণ। এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।
বিষয়: যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র, বিষয় কোড: ১২২, স্তর: এইচএসসি, মোট নম্বর: ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০৪, অধ্যায়-তৃতীয়; আরােহের প্রকারভেদ।
অ্যাসাইনমেন্ট: জানা থেকে অজানায় গমন ইপ্রকৃত আরােহের প্রাণধারণাটির যৌক্তিক বিশ্লেষণ।
বিষয়বস্তু
- ১. প্রকৃত আরােহের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
- ২. প্রকৃত আরােহের প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারবে
- ৩. বৈজ্ঞানিক আরােহের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
- ৪. বৈজ্ঞানিক আরােহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবে
- ৫. অবৈজ্ঞানিক আরােহের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
- ৬. বৈজ্ঞানিক আরােহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবে
- ৭. বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরােহের সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে পারবে
নির্দেশনা
- ক) আরােহমূলক লম্ফ, প্রকৃত আরােহ ও প্রকৃত আরােহের প্রকারভেদ উপস্থাপন
- খ) বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরােহের সংজ্ঞা উদাহরণসহ লেখা
- গ) বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরােহের সংজ্ঞা দিয়ে সম্পর্ক ব্যাখ্যা
- ঘ) জানা থেকে আজানায় গমনই প্রকৃত আরােহের প্রাণ- ধারণাটির যৌক্তিকতা নিরূপন ও নিজস্ব মত উপস্থাপন
জানা থেকে অজানায় গমন ইপ্রকৃত আরােহের প্রাণধারণাটির যৌক্তিক বিশ্লেষণ
এসাইনমেন্ট ক্রমিক নংঃ 04
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ জানা থেকে অজানা গমনই প্রকৃত আরোহের প্রাণ।
বিষয় কোডঃ ১২২
বিষয়ঃ Logic.
ক) আরোহের প্রকারভেদ
আরোহমূলক লম্ফ
কতিপয় বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত স্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলাে আরােহমূলক লম্ফ। আরােহ অনুমানে আমরা কিছু থেকে ‘সকলে, জানা থেকে অজানায়, নিরীক্ষিত থেকে অনিরীক্ষিততে পদার্পণ করি। এভাবে কতিপয় জানা ঘটনাকে ভিত্তি করে অজানা ঘটনায়, বিশেষ থেকে সার্বিক ঘটনায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে আরোহমূলক লম্ফ বলে। যেমন- আমার চারপাশে যত কাক দেখেছি সেগুলাে সব কালাে। আমার এই অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, সকল কাক হয় কালাে’ । এরূপ বিশেষ থেকে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বলে আরােহমূলক লম্ফ।
আরোহকে তিন ভাগে ভাগ হয়েছে, যথা
(১) বৈজ্ঞানিক আরোহ
(২) অবৈজ্ঞানিক আরোহ এবং
(৩) সাদৃশ্যানুমান
(১) বৈজ্ঞানিক আরোহ
যুক্তিবিদ মিল-এর মতে বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সার্বিক বাক্য অনুমানের পদ্ধতিকে আরোহ বলে। আরোহ অনুমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জানা থেকে অজানায় গমন এবং আরোহমূলক উল্লম্ফন। এর কোন ব্যতিক্রম কখনো লক্ষ্য করা যায় না। সুতরাং বৈজ্ঞানিক আরোহের ক্ষেত্রে মিল বলেন, যে আরোহমূলক অনুমানে আরোহমূলক উল্লম্ফন আছে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত আরোহ। মিল এবং বেইন এর মতে আরোহ মূলক উল্লম্ফন হলো আরোহের প্রাণ।
(২) অবৈজ্ঞানিক আরোহ
সংজ্ঞা কার্যকারণ সম্বন্ধ ছাড়াই শুধু নিয়মানুবর্তিতা নীতি বা প্রতিক‚ল দৃষ্টান্ত বিহীন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিকে অবৈজ্ঞানিক বা অপূর্ণ গণণামূলক আরোহ বলে। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে পাওয়া আমাদের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এই শ্রেণীর আরোহের মূল ভিত্তি। উদাহরণস্বরূপ
প্রকৃতির রাজ্যে ব্যতিক্রমহীন ভাবে কতগুলো কালো কাক দেখে এবং অন্য কোন বর্ণের কাক না দেখে যদি অনুমান করা হয় যে, ‘সব কাক হয় কালো’ তবে এটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে। কেননা এখানে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় ছাড়াই শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহায্যে আমরা সার্বিক বাক্যটি গঠন করেছি।
(৩) সাদৃশ্যানুমান
সাদৃশ্যানুমান হচ্ছে প্রকৃত আরোহের অন্তর্গত তৃতীয় এবং শেষ প্রকরণ। সাদৃশ্য কথাটি সাধারণভাবে উপমা বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ দুইটি বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়ে কিছু কল্পনা করা হলে বলা হয় যে, উপমা দেয়া হলো। যেমন ‘মেয়েটির চোখ থেকে মুক্তার মতো দু’ফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়লো’ একথা বলা হলে অশ্রুকে মুক্তার সাথে উপমা দেয়া হয়। [সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com] কিন্তু এ ধরণের উপমা যুক্তিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় নয়। যুক্তিবিদ্যায় ‘উপমা’ কথাটি দ্বারা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কোন যুক্তি বা অনুমান কে বুঝানো হয়। অনুপাতের সমত্ব, অর্থে সাদৃশ্যানুমান বা সাদৃশ্যামূলক অনুমান এর ইংরেজী Analogy প্রতিশব্দটি উদ্ভুত হয়েছে গ্রীক Analogia শব্দ থেকে। পাটিগণিতে একে অনুপাতের সমত্ব বলা হয় সেই অর্থে মণীষী এরিষ্টটল Analogia শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তাই তিনি দুই এর সাথে ‘এক এর’ এবং ‘চার এর’ সাথে ‘দুই এর’ সম্বন্ধের মধ্যে একটা। সাদৃশ্য দেখিয়ে গাণিতিক আকারের বিষয়টি ব্যক্ত করেন- ১:২: : ২:৪। অর্থাৎ চারটি স্বতন্ত্র পদের মধ্যে দ্বিতীয়টির সাথে প্রথমটির সম্বন্ধ এবং চতুর্থটির সাথে তৃতীয়টির সম্বন্ধ সম্মান হলে পদ চারটিকে সাদৃশ্যমুলক বলতে হবে। ‘সম্বন্ধের সাদৃশ্য’ অর্থে সাদৃশ্যানুমান এরিস্টটলের এই গাণিতিক অর্থের সাথে মিল রেখে যুক্তিবিদ হোয়েটলী, জেভেন্স, প্রমুখ সাদৃশ্যমূলক অনুমানকে ‘সম্বন্ধের সাদৃশ্য’ হিসাবে উল্লেখ করে। উদাহরণস্বরূপ, রাজার সাথে প্রজাদের সম্বন্ধ সাদৃশ্যমূলক।
গুণগত সাহায্য, অর্থে সাদৃশ্যানুমান সাদৃশ্যমূলক অনুমান প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ কফী মনীষী এরিস্টটল কে সমর্থন করে বলেন যে, দু’টি বস্তুর মধ্যে সম্বন্ধের সাদৃশ্যের মূলে আবশ্যিকভাবে
বস্তু দু’টির অন্তর্নিহিত গুণের সাহায্যে থাকা বাঞ্জনীয়। কাজেই এই হিসাবে সাদৃশ্যমূলক অনুমানের সমকালীন অর্থ, সম্বন্ধের সাদৃশ্য কে অতিক্রম করে গুণগত সাদৃশ্য পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ মঙ্গলগ্রহ পৃথিবীর মতই একটি গ্রহ এবং এই দুই এর মধ্যে কিছু গুণগত বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। যেমন দু’টি হলো গ্রহ, উভয়ের আবহাওয়াই নাতিশীতোষ্ণ, দুটি গ্রহেই রয়েছে মাটি আর পানি। গ্রহ দু’টি গ্রহেই রয়েছে মাটি আর পানি। গ্রহ দু’টি এসব গুণগত সাদৃশ্য দেখা বলা যায় যে, পৃথিবীর মতো মঙ্গলগ্রহেও ‘প্রাণ’এর অস্তিত্ব আছে।
খ) বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের সংজ্ঞা
বৈজ্ঞানিক আরোহ এর সংজ্ঞা
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের উপর নির্ভর করে কয়েকটা বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে একটা সাধারণ সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য স্থাপন করার পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক আরোহ বলে। দৃষ্টান্তস্বরূপ:
রহিম হয় মরণশীল।
করিম হয় মরণশীল।
∴ সকল মানুষ হয় মরণশীল।
আমরা রহিমকে মরতে দেখেছি, করিমকে মরতে দেখেছি। এখন আমরা কয়টি বিশেষ সত্যের উপর ভিত্তি করে যখন অনুমান করি ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’ তখন এই সার্বিক সত্যটি আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্যে থাকেনা। এর কিছু অংশ মরণশীলতা ছাড়া বাকি সম্পূর্ণই আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে, তা যে সত্য হবে এর নিশ্চয়তায় এবং বিশেষ থেকে সার্বিক গমনের পিছনে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকা আবশ্যক। সে কারণেই আরোহ অনুমানের কাজ হচ্ছে আবিষ্কার, বিশ্লেষণ ও প্রমাণ করা।
সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com
অবৈজ্ঞানিক আরোহের সংজ্ঞা
অবৈজ্ঞানিক আরোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ মিল বলেন, কোন বিষয় সম্পর্কে যে বাক্য সত্য বলে জানা যায়, তা যদি সমজাতীয় সব বিষয় সম্পর্কে সত্য হয়, তাহলে সে সত্যের ভিত্তিতে একটা সাধারণত বাক্য প্রতিষ্টার সার্বিক উদাহরণ প্রক্রিয়াই হল অবৈজ্ঞানিক আরোহ। বেইনের মতে, এর ব্যতিক্রম কখনও লক্ষ্য করা যায়নি বলে এক্ষেত্রে কেবল অনুক‚ল দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। তবে অবৈজ্ঞানিক আরোহের ক্ষেত্রে সাধারণত অনুকূল দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিকূল দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কার্য-কারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা না করেই এরূপ যুক্তির সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ কারণে এর মাধ্যমে কোন বৈজ্ঞানিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। তাই এর বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই বললেই চলে। তাই পূর্ণাঙ্গ আরোহের বিপরীত একে অপূর্ণ গণনামূলক বা অপূর্ণাঙ্গ আরোহ বলা হয়। আবার সাধারণ মানুষ সহজ সরলভাবে কেবল অনুকুল দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে একে লৌকিক আরোহ বলে।
গ) বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য
সাদৃশ্যঃ
১. বৈজ্ঞানিক আরোহ যেমন প্রকৃত আরোহ তেমনি অবৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃত আরোহের অন্তর্গত একটি অন্যতম প্রকরণ।
২. বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহ উভয়েরই লক্ষ্য থাকে সিদ্ধান্ত হিসাবে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য প্রতিষ্ঠা করা।
৩. বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহ নির্বিশেষে উভয়েই পর্যবেক্ষণ এবং প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির উপর নির্ভরশীল।
৪. বৈজ্ঞানিক আরোহের মতো অবৈজ্ঞানিক আরোহ পদ্ধতিতেও রয়েছে প্রকৃত আরোহের মূল বৈশিষ্ট্য আরোহমূলক লম্ফ।
৫. বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক উভয় প্রকার আরোহের সিদ্ধান্ত সব সময় সার্বিক যুক্তিবাক্য হয়ে থাকে।
বৈসাদৃশ্য
১. মূলনীতি প্রয়োগের পার্থক্যঃ বৈজ্ঞানিক আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি এবং কার্য-কারণ নীতি এ দু’টি পরম নিয়মের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত হিসাবে সার্বিক সংশ্লেষক বাক্যপ্রতিষ্ঠা করা হয়। পক্ষান্তরে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে শুধু প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ব্যবহার করে সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত স্থাপন করা হয়।
২. নিশ্চয়তার মাত্রাগত পার্থক্যঃ বৈজ্ঞানিক আরোহে কার্য-কারণ সম্পর্ক স্থাপন করা হয় বলে এর সিদ্ধান্ত নিশ্চিত। অপরপক্ষে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত কার্য-কারণের উপর ভিত্তি করে হয় না বলে এর সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য।
৩. অপনয়ন সুত্র প্রয়োগের পার্থক্যঃ বৈজ্ঞানিক আরোহ বিশ্লেষণের সাহায্যে গ্রহণ করা হয় বলে এই পদ্ধতিতে অপনয়নের মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়।অপরপক্ষে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে বিশ্লেষণের কোন প্রচেষ্টা অবৈজ্ঞানিক আরোহে বিশ্লেষণের কোন প্রচেষ্টা থাকে না বলে এতে অপনয়নের সূত্র প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
৪. স্তর অতিক্রমের পার্থক্যঃ বৈজ্ঞানিক আরোহের বেলায় নিরীক্ষণ, বিশ্লেষণ, অপণয়ন, প্রকল্প গঠন, সার্বিকীকরণ এবং সিদ্ধান্ত প্রণয়নের বিভিন্ন স্তরগুলো অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত টানতে হলে এসব স্তর অতিক্রম করতে হয় না। শুধু প্রতিক‚ল দৃষ্টান্তবিহীন অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এর সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫. দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণের পার্থক্যঃ বৈজ্ঞানিক আরোহে সদর্থক ও নঞর্থক উভয় প্রকার দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আরোহে শুধু সদর্থক দৃষ্টান্তগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের সম্পর্ক
১. অবৈজ্ঞানিক অনুমান যেমন প্রকৃত আরোহ তেমনি বৈজ্ঞানিক আরোহও প্রকৃত আরোহ।
২. অবৈজ্ঞানিক অনুমান ও বৈজ্ঞানিক আরোহ উভয়ের মধ্যেই আরোহের প্রাণ হিসাবে আরোহমূলক লম্ফ বর্তমান, অর্থাৎ উভয়ই জানা থেকে অজানায় গমন করে।
৩. উভয় পদ্ধতিতেই বাস্তব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং কতগুলো সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে।
৪. অবৈজ্ঞানিক ও বৈজ্ঞানিক আরোহের মূল উদ্দেশ্য থাকে সিদ্ধান্তকে বস্তুগত সত্য হিসাবে স্থাপন করা, অর্থাৎ বস্তুগত সত্য উভয় অনুমানের লক্ষ্য।
ঘ) জানা থেকে অজানা গমনই প্রকৃত আরোহের প্রাণ ধারণার যৌক্তিকতা নিরূপণ
আবােহ অনুমানের জানা আশ্রয়বাক্য থেকে অজানা সিদ্ধান্তে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরোহমূলক লম্ফ বলে। যেমন- ক, খ ও গ নামক ব্যক্তির মৃত্যু দেখে সকল মানুষ হয় মরণশীল’ এরূপ অনুমান করার প্রবণতা হলো আরোহমূলক লম্ফ। আরোহমূলক লক্ষ ছাড়া প্রকৃত আরোহের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ কারণে আরোহমূলক লম্ফকে আরোহের প্রাণ বলা হয়।
আরোহে আমরা জানা থেকে অজানায় গমন করি অর্থাৎ দেখা ঘটনা থেকে অদেখা বিশেষ দৃষ্টান্তসমূহ প্রত্যক্ষ করি এবং তা থেকে সার্বিক সিদ্ধান্ত অনুমান করি। এভাবে আমরা জানা থেকে অজানার উদ্দেশ্য লম্ফ প্রদান করি। এই লম্ফ প্রদানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মিল এবং বেইন মনে করেন যে, আরোহমূলক লম্ফ হচ্ছে আরোহের প্রাণ। যে অনুমানে এই বৈশিষ্ট্যটি নেই, সে অনুমান আরোহ নয়।
আরোহ দু’টো পূর্ব অনুমানের উপর নির্ভর করে। যথা
(ক) প্রাকৃতির রাজ্যের নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। প্রথমেই এই সত্যটা স্বীকার করে না নিলে আরোহ জানা থেকে অজানায় বিশেষ থেকে সার্বিক সিদ্ধান্তে আমরা যেতে পারিনা। প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিতে বিশ্বাসের ফলেই আমরা বিশেষ কয়েকটা দৃষ্টান্ত দেখে সার্বিক সিদ্ধান্ত অনুমান করতে পারি। প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নিয়মের ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত উপনীত হবার আগে অবশ্যই কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতে কার্যকারণ সম্পর্কটা আবিষ্কার করতে হবে।
(খ) কার্যকারণ নিয়মের অর্থ হচ্ছে: প্রতিটি ঘটনারই একটি বিশেষ কারণ আছে। সমস্ত পার্থিব ব্যাপারই কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত। যেমন, কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতেই আমরা ‘মানুষ’ ও ‘মরণশীলতা’র মধ্যে একটা কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করি। এর পরেই আমরা প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি আবিষ্কার করি। এর পরেই আমরা প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির উপর ভিত্তি করে আরও অনুমান করতে পারি যে, ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে জানা থেকে অজানা গমন করা হয় তাই এটিকে প্রকৃত আরোহের প্রাণ উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি ।
Get HSC Logic Assignment Answer
[Join]