0

ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন। এইচ এস সি ইসলাম শিক্ষা ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।

ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

বিষয়: ইসলাম শিক্ষা, পত্র: প্রথম, বিষয় কোড: ২৪৯, স্তর: এইচএসসি, প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে প্রথম অধ্যায় “ইসলাম শিক্ষায় মক্তব” থেকে।

অ্যাসাইনমেন্ট: ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

বিষয়বস্তু: ইসলাম শিক্ষায় মক্তব: ধারণা, কার্যাবলী, প্রয়োজনীয়তা।

নির্দেশনা

  • মক্তবের ধারণা
  • মক্তবের কার্যাবলী
  • মক্তবের প্রয়োজনীয়তা
  • বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মক্তব শিক্ষার সুবিধা গুলো বর্ণনা
  • মক্তব শিক্ষার অসুবিধা উত্তরণের উপায়

এইচএসসি ২০২২ ষষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের নমুনা উত্তর

ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব

newresultbd.Com

ক) মক্তবের ধারণা

মক্তব (مكتب‎‎) শব্দটি আরবি। এর অর্থ- লেখার স্থান শিক্ষাকেন্দ্র, বিদ্যালয় ইত্যাদি। সাধ মুসলিম বালক-বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষায়তনকে বলা হয় মক্তব। তবে মক্তব বলতে আমরা কুরআন শিক্ষার স্থানকে বুঝে থাকি। যেখানে ইসলামের প্রাথমিক, মৌলিক ও অতীব প্রয়ােজনীয় শিক্ষা দেওয়া মূল গ্রন্থ কুরআন ও হাদিসের প্রাথমিক পাঠদান করা হয় এ মক্তবে। এ মক্তবে ইবাদত বন্দেগি, ওযু, গােসল সালাত, সাওম পালনের শিক্ষা দেওয়া হয়। এখানেই ব্যবহারিক জীবনের আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, সভ্যতা ভদ্রতা, নম্রতা, নৈতিকতা, বড়দের শ্রদ্ধা, ছােটদের স্নেহ করার শিক্ষা দেওয়া হয়। 

মক্তবে হালাল-হারাম, পাকপবিত্রতা ইত্যাদি প্রয়ােজনীয় বিষয়াদি শিশুদের মনে খুব সহজভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিশুরা শৈশবে বাবা মায়ের কাছ থেকে কিছু শিক্ষা লাভের পর মক্তবে যায়। সেখানে তারা আদর্শ শিক্ষকগণের কাছে আদর্শিক ও দ্বীনভিত্তিক শিক্ষালাভ করে। মুসলিম সমাজে মক্তব শিক্ষা হাজার বছরের ঐতিহ্য অথবা তারও বেশি। মক্কায় যখন আমাদের প্রিয় নবি ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন আরব দেশে শিক্ষিত লােকের সংখ্যা ছিল মাত্র সতেরাে জন। এমতাবস্থায় রাসুল (সা.) মক্কায় সাফা পাহাড়ের পাদদেশে হযরত আরকাম (রা.) বাড়িতে ‘দারুল আরকাম’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। 

এরপর রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় স্থাপন করেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি মসজিদে নববীর বারান্দায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে সুফফা’ নামে একটি শিক্ষায়তন গড়ে তােলেন। প্রথম শিক্ষক নিযুক্ত হলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম, আবু হােরায়রা, আবুজর গিফারী (রা.)সহ আরও নিবেদিত সাহাবিগণ। [সকল এসাইনমেন্ট সমাধান সবচেয়ে দ্রুত পেতে ভিজিট করুন newresultbd.com] এ শিক্ষালয় ছিল আবাসিক বিদ্যালয়। সর্বোপরি তা ছিল একটি Open University (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)। এখানে শিশু-কিশাের যুবকবৃদ্ধ সকল বয়সের সব দেশের জ্ঞানপিপাসুরা এসে জ্ঞান আহরণ করতেন। 

পরবর্তীকালে এ ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হয়। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই মসজিদের সাথে মক্তব ও বিশাল পাঠাগার এবং গবেষণাগার গড়ে উঠেছিল। সেখানেই চর্চা হতাে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক। মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হতাে আর মজবে ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হতাে। তাই মসজিদ ও মক্তব পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল।

খ) মক্তবের কার্যাবলী

ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষাদান:

মক্তবে ইমান, আকাইদ ও নৈতিক শিক্ষার সাথে সাথে প্রয়ােজনীয় ধর্মীয় মাসআলা বুনিয়াদি শিক্ষা হাতে কলমে শেখানাে হয়। যেমন- কীভাবে ওযু গোসল করতে হয় কােন ওয়াজিব ও সুন্নত এবং কী কী কারণে ওযু নষ্ট হয়। কোন নামায কীভাবে আদায় করতে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সুন্দরভাবে শেখানাে হয়। সালাত, সাওম ইত্যাদি মৌলিক বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে ।

পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক জ্ঞান:

মক্তবে শিশু ওযু, গােসল, পাক-পবিত্রতার নিয়মকানুন শেখার সাথে সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক জ্ঞানলাভ করে এবং যার দ্বারা তার মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। সে শরীর ও পােশাক পরিচ্ছন্ন রাখতে অভ্যস্ত হওয়ার সাথে সাথে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও যত্নবান হয়। 

আদব-কায়দা শিক্ষা:

সমাজে পিতামাতা, ভাইবােন, ছােটবড়, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সহপাঠীদের সাথে কীরূপ আচরণ করতে হয় মক্তবে এসব আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া হয়। শৈশবে মক্তবে শেখা আদব-কায়দা, শিষ্টাচার শিশু কোনােদিন ভুলে না। 

মানবতাবােধ ও চেতনাবােধ জাগরণ:

মক্তবে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি, সমবেদনা ও সহযােগিতার ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিশুদের মন কাদামাটির মতাে। সুতরাং শৈশবে তাদের মানবতাবােধ ও দরদি চেতনাবােধ জাগিয়ে তােলার ফলে তাদের মধ্যে সহানুভূতি, সমবেদনা ও সহযােগিতা করার মনােভাব সৃষ্টি হয়। 

মমত্ববােধ:

মক্তবে বিভিন্ন পরিবেশের ছেলেমেয়েরা একত্রে মিলেমিশে থাকে, তাই তাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি মমত্ব, সহমর্মিতা গড়ে ওঠে। তারা সমাজের সকলের সাথে মিলেমিশে চলতে অভ্যস্ত হয়। 

সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তার: 

সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তারে মক্তবের ভূমিকা অপরিসীম। মসজিদ সংলগ্ন মক্তবগুলােতে গণশিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করে সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা অত্যন্ত সহজ হয়। 

নিরক্ষরতা দূরীকরণ: 

মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় একদিকে যেমন কোনাে শিশুই নিরক্ষর ও শিক্ষা বঞ্চিত থাকবে না। তেমনি এখানে অবসর সময়ে বা অলস সময়ে স্বল্প ব্যয়ে সফলভাবে বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করা যায়। 

ইসলামি সংস্কৃতির সাথে পরিচয়: 

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন ও প্রগতিশীল শাশ্বত জীবনব্যবস্থা। তাই স্বভাবতই ইসলামি অনুশাসনের প্রভাবে ইসলামে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রয়েছে। ইসলাম অনুমােদিত ও ইসলামি শরিয়ত নির্দেশিত মুসলিম জাতির জীবনপদ্ধতিই হচ্ছে ইসলামি সংস্কৃতি। মক্তবে শিশুরা উস্তাদজীর সাহচর্যে থেকে যেমন ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করে, তেমনি তারা ইসলামি সংস্কৃতির সাথেও পরিচিত হয়। 

স্বদেশপ্রেম: 

আর শিশুরা মক্তবে স্বদেশপ্রেম শিক্ষালাভ করে। মক্তবে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালােবাসতে হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে এবং প্রয়ােজনবােধে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অন্য জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) দেশকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি কাফিরদের অত্যাচারে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শুদ্ধ উচ্চারণ:

মক্তব শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা ছোট বয়স থেকেই আর বিশুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে শেখে এতে তারা কোরআন শুদ্ধরূপে পড়তে পারে।

গ) মক্তবের প্রয়োজনীয়তা 

শিশুদের মন কাদামাটির মতাে কোমল। এসময় তাদেরকে যেমন খুশি তেমন করে গড়ে তােলা যায়। তাই শৈশবকালীন শিক্ষা সম্পর্কে আরব সমাজে বহুল প্রচলিত উক্তি হলাে

السيئ في الفل گئف الحجر والشيئ في الشيخ كتابة الماء.

অর্থ: “শৈশবের চেষ্টা সাধনা পাথরে খােদিত নকশার ন্যায়। আর বার্ধক্যে চেষ্টা সাধনা পানির ওপর লিখনের ন্যায়।” আমাদের জাতিসত্তাকে সৎ, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তােলার জন্য সােনার মানুষ দরকার। সুনাগরিক প্রয়ােজন। আর সে সােনার মানুষ ও সুনাগরিক গড়ে তােলার কারখানা হলাে আমাদের ঐতিহ্যবাহী হাজার বছরের গড়ে ওঠা মসজিদকেন্দ্রিক মক্তব শিক্ষাব্যবস্থা। এর বিকল্প যতই খোঁজা হবে, জাতি হিসেবে আমরা ততই দেউলিয়া হব এবং পতনের দিকে এগিয়ে যাব। ইসলামি সমাজে মক্তবের গুরুত্ব ও ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। সাধারণ শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষা লাভের প্রাক্কালে মুসলিমগণ তাদের কচিকাচা সন্তানদের মক্তবে পাঠিয়ে ধর্মীয় মৌলিক জ্ঞান ও ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা দিয়ে থাকে। মক্তবের শিক্ষা স্বল্প পরিসরে হলেও এখানে শিশু মনে যে ইসলামি তাহযীব তামাদুন ও শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং ইমান-আকিদার বীজ বপিত হয়, তা সারা জীবন ফসল দিতে থাকে।

মকতবশিক্ষার মূল উদ্দেশ্যে হল দ্বীনী বিষয়ে মৌলিক শিক্ষা দান। সহীহ-শুদ্ধরূপে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত ও কুরআন মজীদের কিছু অংশ মুখস্থ করা, বিষয়ভিত্তিক কিছু হাদীস ও দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়িল ইত্যাদি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পাঠ্যসূচি। এর দ্বারা একটি শিশু অতি অল্প সময়ে দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ রাববুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা তার কোমল হৃদয়ে জাগ্রত হয়। মূলত শিশুদেরকে দ্বীন ও ঈমানের সঙ্গে পরিচিত করাই এসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।

বর্তমান যুগে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। কেননা, বর্তমান প্রজন্ম কুরআন-সুন্নাহ্র ইলম ও ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে সরে শুধু বৈষয়িক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে। অর্থ উপার্জনই হয়ে দাড়িয়েছে জীবনের পরম লক্ষ্য। ফলে সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায় ও অনৈতিক কাজের প্রসার ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদির ব্যাপকতায় সমাজ, রাষ্ট্র থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা হারিয়ে গেছে। অথচ যারা এসব কাজে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের প্রায় সবাই জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত। উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী হয়েও শুধুমাত্র ইসলামী জ্ঞান ও আদর্শের অভাবেই তারা এসব অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে।

ঘ) আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মক্তবে শিক্ষার সুবিধা 

একটি শিশুর বয়সের সাথে সাথে তার বোধের বিকাশ ঘটতে শুরু করে।প্রাথমিক শিক্ষা একজন শিশুর ভিত্তি গড়ে দেয় যে ভিত্তির উপর শিশুর বিশ্বাস , নীতি-নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা,নিয়মানুবর্তিতা, পারস্পরিক সম্মানবোধ তথা যাবতীয় মানবীয় গুণাবলী গড়ে উঠে। এর সবগুলো মিলেই গড়ে উঠে প্রাধমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা একজন শিশুর মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ব্যাপকতা, অসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যাবস্থাপনা, অবকাঠামোর ঘাটতি, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, যুগ্য শিক্ষকের অভাব, অনুপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক অপ্রতুলতা সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার পথে সবচে বড় বাধা। 

এই সবগুলো সমস্যার উপযুক্ত ও কার্যকরি সমাধান হতে পারে আমাদের গ্রাম, পারা-মহল্লা , শহর- নগরে মসজিদ মাদ্রাসায় পরিচালিত মক্তব। গত শতাব্দীতেও গড়পড়তা প্রতি মহল্লায় সক্রিয় মক্তব ছিল। সুর্যদয় হওয়া মাত্র ফজরের নামাজ পরে শিশু কিশোররা কাতার করে শৃঙ্খলার সাথে মক্তবে পড়তে আসতো। মক্তব আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। জাতি গঠনের হাতিয়ার। ধর্মিও ও অন্যান্য সকল প্রাথমিক শিক্ষা পাশাপাশি কোমলমতি শিশু কিশোরদের সবচেয়ে বেশী যে শিক্ষাটা প্রয়োজন তা হচ্ছে নৈতিকতা শিক্ষা। মক্তব আমাদের নৈতিকতা শিক্ষার সোপান । 

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত চার লক্ষের অধিক মসজিদের ইমাম সাহেব, মুয়াজ্জিন ও খাদেম মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ দীর্ঘকাল ধরে মক্তবের মাধ্যমে শিশু কিশোরদের প্রাথমিক মৌলিক জ্ঞান বিতরনের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষার স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছেন। বর্তমানে শিক্ষা কারিকুলামের জটিলতা শিশু কিশোরদের মক্তব থেকে দূরে নিয়ে গেছে। পাঠের অনুপযোগী বিষয় নির্বাচনের ফলে শিশু মনে অস্থিরতা ও অনৈকিকতার বীজ বপন হচ্ছে।যা সময়ে মহীরুহ হয়ে ব্যাক্তির পাশাপাশি সমাজকে কূলশীত করেছে।বর্তমানে তরুণ সমাজে নীতি নৈতিকতার বালাই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সততা, সম্মান বোধ, প্রীতি-স্নেহ ভালবাসা সমাজ থেকে উধাও হয়ে গেছে । তার জায়গা নিয়েছে অসততা, অসম্মান, হিংস্রতা বর্বরতা ও অহংকার । সমাজে শিশু কিশোরদের হানাহানি মারামারি কাটাকাটির ব্যপকতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোর আপরাধের মাত্রা উদ্বেগজনক আকার পরিগ্রহ করেছে যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। 

সমাজ গবেষকরা হিমশিম খাচ্ছে এই সমস্যা সমাধানের জন্য। এর একমাত্র কারন ভুল শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার হাতেখড়ি করা। নির্মিয়মান ধ্বংসাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মক্তবকে আরো সক্রিয় করে সকল শিশু কিশোরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী । সরকারী আধাসরকারী ব্যাবস্থাপনা, মক্তবের অবকাঠামোগত ও প্রশিক্ষকদের নামমাত্র হাদিয়া সুবিধা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাশাপাশি জাতিয় শিক্ষা কারিকুলাম পুনঃ বিন্যস্ত করার মাধ্যমে জাতি গঠনের সবচে শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠবে আমাদের মক্তব ইনশাআল্লাহ। সুখী, সম্বৃদ্ধ ও সফল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু হোক মক্তব থেকে।

ঙ) মক্তব শিক্ষার অসুবিধা উত্তরণের উপায় 

মক্তব শিক্ষা অসংখ্য গুণাবলী থাকলেও কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি এখনো রয়ে গেছে। যা থেকে উত্তরণের প্রয়োজন । নিন্মে কিছু বর্ণনা দেওয়া হল:– 

মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বারোপ

বক্তব্য সাধারণত আরবি শিক্ষার প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় জীবনে চলতে গেলে একটি মানুষকে তার মাতৃভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। এ জন্য মক্তব কে যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।

উপযুক্ত পাঠক্রম তৈরি করা 

মক্তব শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি সমস্যা হল উপযুক্ত পাঠক্রম তৈরি করা হয় না। সুশিক্ষার অন্যতম একটি শর্ত হলো উপযুক্ত পাঠক্রম তৈরি। তাই মক্তব শিক্ষাকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আধুনিক ও যুগোপযোগী পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কঠোর শাস্তি না দেওয়া

মক্তব শিক্ষার আরো একটি বড় সমস্যা হল সেখানে শিক্ষার্থীদের কে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়। ইসলাম ও মানবতা বিরোধী। একজন শিক্ষার্থীর কচি অবস্থায় ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে কঠোর শাস্তি দেওয়া। কঠোর শাস্তি না দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিনয়ী ভাবে পান করান তবে শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সাথে শিখবে।

প্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়তা দেওয়া

মক্তবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি আনুকূল্য ও বিত্তবানদের দানে পরিচালিত হয়। কোন কারণে যদি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে মক্তব শিক্ষার বিলাপ সাধন ঘটে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবাঞ্চিত। শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

পাঠদান সম্পর্কিত আধুনিক ও অনুকূল উপকরণ সরবরাহ 

প্রচলিত মক্তবে শিক্ষাদান পদ্ধতি আধুনিক নয়। এবং অনেক ক্ষেত্রে অনুকূল উপকরণও নেই। যে কারণে শিক্ষার্থীদের কে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করা যায় না। এতে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশের সম্ভাবনা কম থাকে।আধুনিক সরঞ্জাম ও অনুকূল উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব।

 গবেষণা বৃদ্ধি করা

সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। কিন্তু মক্তব শিক্ষা ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ গবেষণার অভাব দেখা দেয়। তাই মক্তব শিক্ষা গবেষণা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

Get HSC Islamic Studies Assignment Answer

[Join]