0

প্রাচীন মিশরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন। এইচএসসি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।

HSC Islamic History and Culture 6th Week Assignment 2022

বিষয়: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পত্র: প্রথম, বিষয় কোড: ২৬৭, স্তর: এইচএসসি, প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে প্রথম অধ্যায় “ প্রাক ইসলামী আরব” থেকে।

অ্যাসাইনমেন্ট: প্রাচীন মিশরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন।

বিষয়বস্তু: প্রাচীন সভ্যতা সমূহের বৈশিষ্ট্য এবং এগুলোর প্রভাব উল্লেখ করতে পারবে।

নির্দেশনা

  • প্রাচীন সভ্যতা সমূহের (মিশর, সুমেরীয়, গ্রিক, হিব্রু, রোমান) সংক্ষিপ্ত পটভূমি উল্লেখ
  • সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যা
  • প্রাচীন সভ্যতা সমূহের ধর্মীয় বিশ্বাস উল্লেখ
  • মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের প্রভাব ব্যাখ্যা

এইচএসসি ২০২২ ষষ্ঠ সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের নমুনা উত্তর

প্রাচীন (মিশরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রিক ও রোমান) সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান পর্যালোচনা

NewResultBD.Com

ক) প্রাচীন সভ্যতা সমূহের পটভূমি 

  • মিশরীয় সভ্যতা

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিস্তৃতিকাল খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০-৫২৫ পর্যন্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে মিশরে প্রথম সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। যার একটি ছিল উত্তর মিশর অপরটি ছিল দক্ষিণ মিশর (উচ্চ মিশর)। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়ে নীলনদের অববাহিকায় একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এ সময় থেকে মিশর প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে। প্রথম রাজবংশের শাসন আমল শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে। তখন থেকে মিশরের ঐতিহাসিক যুগের শুরু। একই সময়ে নিম্ন ও উচ্চ মিশরকে একত্রিত করে ‘নারমার’ বা ‘মেনেস’ একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরোহিত হন। তিনি প্রথম ফারাওএর মর্যাদাও লাভ করেন।

  • সুমেরীয় সভ্যতা

মেসােপটেমীয় অঞ্চলে বসতি গড়ে তােলায় প্রথম নেতৃত্ব দেয় সুমেরীয়রা। সুমেরী একটি জাতির নাম। তাদের আদি বাসস্থান ছিল মেসােপটেমিয়ার (বর্তমান ইরাক) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এলামের পাহাড়ি অঞ্চলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে এদের একটি শাখা মেসােপটেমিয়ার দক্ষিণে বসতি গড়ে তােলে। তাদের নামানুসারে এ অঞ্চলটির নাম সুমেরীয় অঞ্চল। আর তাদের সভ্যতাকে বলা হয় সুমেরীয় সভ্যতা। সুমেরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দের পূর্বেই সুমেরু নগর গড়ে তোলে।

  • গ্রিক সভ্যতা

গ্রিসের মহাকবি হোমারের ‘ইলিয়ড’ ও ‘ওডিসি’ মহাকাব্য দুটিতে বর্ণিত

চমকপ্রদ কাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্যকে খুঁজে বের করার অদম্য ইচ্ছা উৎসাহিত করে তোলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের। উনিশ শতকের শেষে হোমারের কাহিনী আর কবিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বেরিয়ে আসে এর ভিতরের সত্য ইতিহাস। ঈজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে এবং এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কৃত হয় এক উন্নততর প্রাচীন নগর সভ্যতা। সন্ধান মেলে মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশত নগরীর ধ্বংস স্তুপের। ইউরোপ মহাদেশের এই অঞ্চলেই প্রথম সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। 

  • হিব্রু সভ্যতা

বর্তমান প্যালেস্টাইন অঞ্চল ঘিরে প্রাচীনকালে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেটি হিব্রু সভ্যতা নামে পরিচিত। হিব্রু সভ্যতার মূল অবদান হলাে ধর্মীয় ক্ষেত্রে। খ্রিস্ট ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম সমগ্র বিশ্বজুড়ে এক ঈশ্বরের আরাধনার যে কথা প্রচার করেছে। তার প্রথম সূচনা ঘটিয়েছে হিব্রুরা। প্যালেস্টাইনের জেরুজালেম নগরীকে কেন্দ্র করে হিব্রু সভ্যতার বিকাশ ঘটে। প্যালেস্টাইনের পূর্বদিকে রয়েছে জর্ডান, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, উত্তরে লেবানন ও দক্ষিণে সৌদি আরব। হিব্রুদের উৎপত্তির ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়। তারা নৃতাত্ত্বিকভাবে একটি নতুন জাতি নয়। হিব্রুদের নামের উৎপত্তি সম্পর্কেও সন্দেহ রয়েছে। জানা যায় যে হিব্রুদের শত্রু। তাদের ‘খাবিরু’ অথবা ‘হাবিরু’ বলে অভিহিত করত। সম্ভবত এই নামটি অপভ্রংশ হয়ে হিব্রু হয়েছে। 

  • রোমান সভ্যতা 

ইউরােপ মহাদেশের দক্ষিণ ভাগে ইতালী অবস্থিত। ইতালীর দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর থেকে উত্তরে আল্পস পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইতালীর তিন দিকে সাগর। ইতালীর একটি নদীর নাম হলাে টাইবার। এই টাইবার নদীর দক্ষিণ তীরে প্রাচীন যুগে | বিখ্যাত রােম নগরীর পত্তন ঘটে। সাতটি পর্বতের মধ্যবর্তী সমতলভূমি নিয়ে রােম নগরী গঠিত হয়। সে সময়ে ইতালীর ভৌগােলিক অবস্থা বসবাসের জন্য তেমন অনুকূল ছিল না। খনিজ সম্পদ বলতে ছিল মর্মর পাথর, সামান্য কিছু তামা, সােনা এবং লােহা। তবে উর্বর জমি থাকায় কৃষির বিকাশের সুযােগ ছিল যথেষ্ট। প্রাচীন রােম ছিল অরক্ষিত ও চারদিকে উন্মুক্ত।

খ) সভ্যতা সমূহের উল্লেখযোগ্য অবদান

  • মিশরীয় সভ্যতা

চাষাবাদ: 

নীলনদের তীরে প্রাচীন মিশরীয়গণ চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল ফলাত। তাদের ফসল বন্যার কবল হতে রক্ষার জন্য তারা তৈরি করত বাঁধ। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচ দেয়ার জন্য খাল কেটে গড়ে তুলেছিল পানি সেচের ব্যবস্থা। মিশরীয়রাই প্রথম সরকারি ব্যবস্থাপনায় চাষাবাদ চালু করে।

কারখানা নির্মাণ: 

প্রাচীন মিশরীয়গণ খনি হতে আহরণ করত তামা আর টিন। এ দুই ধাতু হতে তারা তৈরি করত ব্রোঞ্জ। পাথরের চেয়ে ব্রোঞ্জের অস্ত্র ও দ্রব্যসামগ্রী বেশি কার্যকর। তাই এসব দ্রব্য তৈরির জন্য গড়ে ওঠে ছােট ছােট কারখানা। খনি, ধাতু, কাচ, বয়ন, মৃৎ, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য মিশর প্রসিদ্ধ ছিল।

রাষ্ট্রের উদ্ভব: 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে সবকিছু বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। তাই প্রয়ােজনের মুখে প্রাচীন মিশরের মানুষ একটি প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তােলে। যােগ্য ব্যক্তি হতেন তাদের দলপতি। তার কথা সবাই মান্য করত। এভাবে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন রাজা। প্রাচীন মিশরের রাজাদের বলা হতাে ‘ফারাও’। সূর্য দেবতার সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন আমানরে। ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজা মেনেস প্রথম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একই সাথে রাজা ও | প্রধান পুরােহিত ছিলেন।

  • সুমেরীয় সভ্যতা

ডুঙ্গির আইন: 

পৃথিবীর প্রথম আইন সংকলন। এই আইন ছিল প্রতিশােধমূলক। পরবর্তী অনেক সভ্যতা এই আইন অনুসরণ করে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য: 

সুমেরীয়গণ চারপাশের দেশগুলাের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। ফিলিস্তিন, ফিনিশিয়া, ক্রীট, ইজিয়ান দ্বীপমালা, এশিয়া মাইনর এবং মিশরের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ভারতের সাথেও তাদের ব্যবসায়িক যােগাযােগ ছিল বলে ধারণা করা হয়। 

বিজ্ঞানে তাদের অবদান: 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুমেরীয়দের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তারা জলঘড়ি, চন্দ্র পঞ্জিকা আবিষ্কার করেন। তারা জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চাও করতেন। গণিতশাস্ত্রেও তারা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রেখেছিল বলে জানা যায়। ৩৬০ ডিগ্রিতে বৃত্ত বিভাগ, ৬০ ভিত্তিক গণনা পদ্ধতি চালু করে।

ভাস্কর্য ও স্থাপত্য:

সুমেরীয়গণ ভাস্কর্য নির্মাণেও ভূমিকা রেখেছেন। সিলমােহর নির্মাণ করে ও ধাতব দ্রব্য খােদাই করে তারা মূর্তি তৈরি করত। চিত্রশিল্পের বিকাশে তাদের দক্ষতা কম নয়। জিগুরাট নির্মাণে উন্নত স্থাপত্য রীতি ব্যবহার করে।

  •  গ্রিক সভ্যতা

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে: 

গ্রিকরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর হয়েছিল। তারা প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন। তারা প্রমাণ করেছিল, পৃথিবী একটি গ্রহ এবং নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়। গণিত ও চিকিৎসা শাস্ত্রে তারা যথেষ্ট অবদান রেখেছিল। 

স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে: 

প্রাচীন গ্রিকরা স্থাপত্যকলায় অপূর্ব দক্ষতা দেখাতে পেরেছিল। অপূর্ব কারুকার্যমণ্ডিত বড় বড় স্তম্ভের উপর তারা প্রাসাদ তৈরি করত । গ্রিক স্থাপত্যের উদাহরণ হিসেবে মন্দির পার্থেনন এবং এথেন্সে দেবী এথেনার মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। | গ্রিক ভাস্করগণ মনে করত দেবতারা মানুষের মতাে দেহধারী। তাই দেবতার মূর্তি তৈরি করতে গিয়ে তারা মানুষের মূর্তি তৈরি করায় খুব ভক্ত হয়ে পড়ে। ভাস্করদের মধ্যে ফিদিয়াসকে গ্রিসের সবচেয়ে খ্যাতিমান ভাস্কর বলে বিবেচনা করা হতাে। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দেবী এথেনার মূর্তি ভাস্কর্যের ইতিহাসে দুর্লভ সংযােজন। 

সংগীত চর্চার ক্ষেত্রে: 

সংগীত চর্চায় গ্রিকরা যথেষ্ট উৎসাহী ছিল। সংগীত চর্চা করতে গিয়ে তারা অনেক বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন করে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে ভালাে গাওয়ার প্রয়ােজন থেকেই সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের বিকাশ হয়েছিল।

ব্যবসা-বাণিজ্য: 

গ্রিসের উপকূলে বেশ কিছু সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠেছিল। এ কারণে গ্রিকরা ব্যবসায়ী ও নাবিক হিসেবে দক্ষতা অর্জন করে। তাদের বাণিজ্য জাহাজ ইজিয়ান সাগর ও কৃষ্ণসাগর পাড়ি দিত। অপর্যাপ্ত কৃষি জমি থাকায় গ্রিকরা ৭৫০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরের তীরে বেশকিছু উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।

  • হিব্রু সভ্যতা

হিব্রু আইন:

হিব্রুদেরও আইন তৈরীতে এ্যামোরাইটদের ন্যায় যথেষ্ট অবদান আছে। তবে তাদের আইন অনেকটা হাম্মুরাবীর আইনের দ্বারা প্রভাবিত। ব্যাবিলনীয় আইনের অনুকরণে তারা যে আইন তৈরী করে তা ‘ডিউটোরোনোমিক কোড’ নামে পরিচিত ছিল। এই কোড হাম্মুরাবীর আইনের চেয়ে অনেকটা পরিশুদ্ধ বলে মনে করা হয়। তাদের প্রণীত অনুশাসনে গরীব- দুঃখীদের স্বার্থরক্ষা, মানবতা, সু বিচার, সুদ গ্রহণে শাস্তির ব্যবস্থা এবং দাসদের মুক্তির যথাযথ ব্যবস্থার উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে এই আইনের প্রয়োগের ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মজবুত হয়।

হিব্রু সাহিত্য:

হিব্রুদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের সাহিত্য কর্ম ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ এবং ‘অ্যাপক্রিপা’য় লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুসার (আ:) এর অনেক বাণী ওল্ড টেস্টামেন্টে সংগৃহীত করা হয়েছে। “উইজডম অব সলোমন” একটি শ্রেষ্ঠ ইহুদী সাহিত্য গ্রন্থ। এ ছাড়া “সোলেমানের গীতিকা” হিব্রুজাতির জনপ্রিয় গীতিকা। ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ এর দ্বিতীয় পুস্তক ছিল মূলত মুসা (আ:) এর জীবনবৃত্তান্ত। ষষ্ট পুস্তকটি মহাকাব্যের মানসম্মত ছিল।এখানে হিব্রু বীর ও জনগনের ঘটনাবহুল জীবন কাহিনী বিবৃত হয়েছে। অষ্টম পুস্তকে নারীদের অবস্থান ও চরিত্র করুণ রসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। হিব্রু শিল্পকলা এবং স্থাপত্য অতুলনীয়। দাউদ (আ:) জেরুজালেমকে ঐশ্বর্যশালী তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করেন। জেরুজালেমে এখনো অনেক স্থাপত্য তাঁর কীর্তি বহন করছে যা আজও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

হিব্রু দর্শন:

গ্রীকদের পূর্বে হিব্রুরা বিষ্ময়কর দর্শনের জন্ম দিতে পেরেছিল। এই দর্শন মানুষ ও জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছিল। পুরাতন টেস্টামেন্টে তাদের অনেক দার্শনিক-মতবাদ পাওয়া গিয়েছিল। বিশেষ করে Book of Proverbs এবং Apocryphal Book of Ecclesiasticus- পুরাতন টেস্টামেন্টের এই দুই অংশে হিব্রæদের প্রাথমিক দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন রয়েছে। 

  • রোমান সভ্যতা

লিখন পদ্ধতি: 

ষষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বের শুরুতে রােমে একটি লিখন পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল। এ লেখা ব্যবহার করা হতাে আইন ও চুক্তিপত্র তৈরিতে।সমাধি ফলকের গায়ে রােমান লিপি পাওয়া যায়। 

দর্শন শাস্ত্রে অবদান:

দর্শন চর্চা সবচেয়ে বেশি হয়েছে রােমে। রােমের সবচেয়ে জনপ্রিয় দার্শনিক মতবাদের নাম স্টোয়িকবাদ। এ মতবাদের সাফল্যের পেছনে ‘সেনেকা’, ‘এপিকটেটাস’, ‘মার্কাস অর্লিয়াস’ এই তিন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাঁরা মনে করতেন সুখ লাভ করার জন্য প্রয়ােজন শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সত্যবাদী হওয়া। 

সাহিত্যে অবদান: 

সম্রাট অগাসটাস সীজারের যুগে সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নতি হয়। এ যুগের কবি হােরাস, ভার্জিল যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ভার্জিলের মহাকাব্য ইনিড’ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ওভিদ ও লিভি ছিলেন এ যুগের দুইজন খ্যাতিমান কবি।

ইতিহাসে অবদান: 

ইতিহাস চর্চায় রােমানদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ টেসিটাস এ যুগে রােমে জন্মগ্রহণ করেন। রােমান কবি লিভি ঐতিহাসিক হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। 

স্থাপত্যে অবদান: 

সম্রাট হাড্রিয়ানের তৈরি ধর্মমন্দির প্যনথিয়ন রােমের একটি বড় স্থাপত্য নিদর্শন। রােমে কলােসিয়াম’ নামে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাট্যশালা তৈরি হয়েছিল। এখানে একসাথে ৫,৬০০ জন দর্শক বসতে পারত। ভাস্কর্যের নিদর্শন হিসেবে রােমে পাওয়া গেছে অনেক মূর্তি। এগুলাে ছিল সম্রাট, কর্মকর্তা ও দেবতাদের মূর্তি। 

বিজ্ঞানে অবদান: 

বিজ্ঞানে রােমদের অবদান বেশি নয়। রােমের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বড় প্লিনি’ হলেন বিখ্যাত। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে কয়েক খণ্ড বিশ্বকোষ রচনা করেছিলেন। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বিজ্ঞানী সেলসাস। ইটালিতে বসবাসকারী অপর দুজন বিজ্ঞানী গ্যালেন ও রুফাস বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যদিও তারা রােমান ছিলেন না। 

গ) প্রাচীন সভ্যতা সমূহের ধর্মীয় বিশ্বাস 

  • মিশরীয় সভ্যতা

প্রাচীন মিসরীয়রা বিশ্বাস করত যে, প্রকৃতিকে দেবদেবীরাই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে। তাই প্রাচীন মিসরীয় সমাজে ধর্মের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। আর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব ছিল অত্যন্ত প্রকট। প্রধান ধর্মীয় নেতা ছিল রাজা বা ফারাও। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল ‘আমন রে’ । নীলনদের দেবতা নামে খ্যাত ছিল ওসিরিস ।মিসরীয়রা আত্মার অবিনশ্বরতা ও পূনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিল। তাদের ধারণা ছিল দেহ ছাড়া আত্মা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভে বঞ্চিত হবে। এজন্যই তারা ফারাও বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞান-সম্মত পদ্ধতিতে মমি প্রস্তুত করত। মমিকে যুগ পরস্পরায় অক্ষত রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় সমাধি স্তম্ভ পিরামিড। তবে ধর্ম বিশ্বাসে ন্যায় অন্যায়ের

বা পাপ-পূণ্যের বিশ্বাসও জড়িত ছিল। মিসরীয় সমাজে পুরোহিতদের দৌরাত্ম ছিল ব্যাপক। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭৫ অব্দে রাজা চতুর্থ আমেনহোটেপের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। তিনি প্রধান পুরোহিতদের মন্দির থেকে বহিস্কার করে একক দেবতা এটন (বা একেশ্বর) এর পূজা করার নির্দেশ দেন। তাদের ধারণা ছিল, পাপ-পূণ্যের বিচারের মাধ্যমে পুণ্যবানকে সুখময় স্থানে ও পাপীকে অন্ধকার ঘরে নিক্ষেপ করা হবে।

  • সুমেরীয় সভ্যতা

অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার ন্যায় সুমেরীয়রা অনেক দেব দেবীতে বিশ্বাসী ছিল। তাদের এক একটি দেবতা এক একটি নামে পরিচিত ছিল। যেমন বিখ্যাত দেবতা ‘শামাশ’ (সূর্যদেবতা), ‘এনলিল’ (বৃষ্টি, বন্যা ও বায়ুর দেবতা), পানির দেবতা ‘এনকি’, প্লেগ রোগের বিশেষ দেবতা ‘নারগাল’ এবং ‘ইস্টারা’ (নারী জাতির দেবতা) নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তাদের প্রধান দেবতা ছিল নার্গাল। সুমেরীয় সভ্যতায় মিসরীয় সভ্যতার অনেক প্রভাব থাকলেও পরকালের ধারণা বা পুর্নরুজ্জীবন (স্বর্গ-নরক) ধারণা জন্ম লাভ করেনি মিসরীয়দের মধ্যে। সম্ভবতঃ এই কারণে সুমের অঞ্চলে মৃতদেহকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার অট্টালিকা, সমাধি বা মমির প্রবণতা দেখা যায় না। তাই তারা মৃতদেহকে কবর দিতো। 

  • গ্রিক সভ্যতা 

গ্রিকবাসীরা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করত। তারা বড় বড় যােদ্ধাদের পূজা করত। তাদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। দেবতা এপােলা ও দেবী এথেনাও ছিলেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের নির্দেশমতাে পুরােহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। ধর্মমন্দিরে রাখা হতাে দেবমূর্তি। উৎসবের সময় মূর্তির গায়ে পরান হতাে পরিচ্ছন্ন কাপড়। নগর রাষ্ট্রের মানুষ ডেলােস দ্বীপে অবস্থিত ডিলফীর মন্দিরে রাখা এপােলাে দেবতার পূজা করত।

  • হিব্রু সভ্যতা

তাওরাত বা ওল্ড টেস্টামেন্ট হিব্রু ধর্মের (ইহুদী জাতির) প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মুসা (আ:) এর নেতৃত্বে তারা একেশ্বরবাদের প্রতীক হিসেবে যেহোভার আরাধনায় আকৃষ্ট হয়। মুসা (আ:) এর মৃত্যুর পর হিব্রু ধর্ম কুসংস্কারে পতিত হয়। নিরাকার আল্লাহর স্থলে জেহোভাকে তারা আকার-বিশিষ্ট একেশ্বর বলে মনে করত। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দে পারস্যের হাতে জেরুজালেমের পতন ঘটলে হিব্রুরা পারস্যের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্দীদশায় থাকার পর এক পর্যায়ে হিব্রুদের মধ্যে নব চেতনার উদ্ভব হয়। এ যুগে ইহুদীরা জরথুস্ত্র ধর্মের প্রভাবে আসে এবং আবার একেশ্বরবাদে আকৃষ্ট হয়। 

  • রোমান সভ্যতা

রোমানরা গণপ্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে শাসনকার্যে ধর্মীয় প্রভাব বা পুরোহিততন্ত্র পাকাপোক্ত হয়ে বসতে পারেনি। তাদের দেবদেবীর মধ্যে গ্রিকদের মতো মানবিক গুণাবলী আরোপিত হয়। এক্ষেত্রে গ্রিক ধর্মের সঙ্গে রোমীয় ধর্মের বৈসাদৃশ্য থেকে সাদৃশ্যই বেশী পরিলক্ষিত হয়। বিখ্যাত গ্রিক দেবতা জিউস, রোমানদের নিকট আকাশের দেবতা জুপিটার হিসেবে খ্যাত। গ্রিক দেবতা এথেনার জায়গায় রোমীয় দেবতা মিনার্ভা স্থান দখল করে। রোমের প্রেমের দেবতা ছিলেন ভেনাস। বাতাস এবং সমুদ্রের দেবতা নেপচুন রোমানদের নিকট খুবই জনপ্রিয় ও শক্তিশালী ছিল। রোমীয় ধর্মচর্চা ছিল রাজনৈতিক ও ইহজাগতিক।

ঘ) মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের প্রভাব 

নগর পরিকল্পনা:

সিন্ধুসভ্যতার এলাকায় যেসব শহর আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে সবচেয়ে বড় শহর। ঘরবাড়ি সবই পােড়ামাটি বা রােদে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলাের বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বােঝা যায় যে, সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা উন্নত নগরকেন্দ্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাের নগর পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তাগুলাে ছিল সােজা। প্রত্যেকটি বাড়িতে খােলা জায়গা, কৃপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের জন্যে ছােট নর্দমাগুলােকে মূল নর্দমার সাথে সংযুক্ত করা হতাে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতাে। পথের ধারে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপােস্ট।

পরিমাপ পদ্ধতি:

সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা দ্রব্যের ওজন পরিমাপ করতে শিখেছিল। তাদের এই পরিমাপ পদ্ধতির আবিষ্কার সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে বিবেচিত। তারা বিভিন্ন দ্রব্য ওজনের জন্য নানা মাপের ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বাটখারা ব্যবহার করত। দাগ কাটা স্কেল দিয়ে দৈর্ঘ্য মাপার পদ্ধতিও তাদের জানা ছিল।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য:

সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রেখে গেছে। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পঁচিশ কক্ষের বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে।

আর্থ-সামাজিক অবস্থা:

সিন্ধু সভতার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষি নির্ভর। তাছাড়া অর্থনীতির একটি বড় দিক ছিল পশুপালন। কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি মৃৎপাত্র নির্মাণ, ধাতুশিল্প, বয়নশিল্প, অলঙ্কার নির্মাণ, পাথরের কাজ ইত্যাদিতেও তারা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। এই উন্নতমানের শিল্পপণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সেখানকার বণিকরা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ রক্ষা করে চলত। বণিকদের সাথে আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, মধ্য এশিয়া, পারস্য, মেসােপটেমিয়া, দক্ষিণ ভারত, রাজপুতনা, গুজরাট প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ ছিল।

Get HSC Islamic History and Culture Assignment Answer

[Join]