0

দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রয়োজন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, বিকাশ সাধন, সামাজিক মানসিক বিকাশ গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন। নবম শ্রেণীর শারীরিক শিক্ষা দ্বাদশ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রয়োজন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, বিকাশ সাধন, সামাজিক মানসিক বিকাশ গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন।

শ্রেণী: ৯ম, বিষয়:  শারীরিক শিক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট নং ১, প্রথম অধ্যায় সুস্থ জীবনের জন্য শারীরিক শিক্ষা।

অ্যাসাইনমেন্ট: “দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রয়োজন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, বিকাশ সাধন, সামাজিক মানসিক বিকাশ গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন”

সংকেত:

  • শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা
  • শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
  • শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি

“দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রয়োজন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, বিকাশ সাধন, সামাজিক মানসিক বিকাশ গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন”

শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা:

শারীরিক শিক্ষা ও শিক্ষার সম্পর্ক সম্বন্ধে সি. এ. বুচার (C.A. Bucher) বলেছেন-“শারীরিক শিক্ষা, শিক্ষার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শারীরিক শিক্ষা হলো সুনির্দিষ্ট শারীরিক কাজকর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা।” এ উক্তি থেকে বোঝা যায় শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক।

ডি.কে. ম্যাথিউস বলেছেন- শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা।

হপ স্মিথ ও ক্লিফটন বলেছেন- বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত অঙ্গসঞ্চালনের নাম শারীরিক শিক্ষা।

জে. বি. ন্যাশ বলেছেন- “শারীরিক শিক্ষা গোটা শিক্ষার এমন একদিক যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহের ও স্বভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।”

উল্লিখিত উক্তিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শারীরিক শিক্ষার মূল কথা হলো- দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন।

শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

সাধারণভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এই ধারণার মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য করি না। অনেক সময় একের জায়গায় অন্যটিকে ব্যবহার করি। কিন্তু এই দুই ধারণা সমার্থক নয়। এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। লক্ষ্য হলো চূড়ান্ত গন্তব্যস্থল আর উদ্দেশ্য হলো সেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ত ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহ। যেমন- সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠার ক্ষেত্রে লক্ষ্য হলো ছাদ, আর সিঁড়ির এক একটি ধাপ হলো উদ্দেশ্য। লক্ষ্যের অস্তিত্ব মানুষের কল্পনায়, তার রূপায়ণ সম্ভব হয় না। কিন্তু উদ্দেশ্য হলো বাস্তব। মানুষ উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারে এমনকি তার পরিমাপও সম্ভব। শারীরিক শিক্ষাবিদগণ শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বেশ কয়েকটি অন্তবর্তী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন শারীরিক শিক্ষাবিদগণ শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে নিম্নলিখিত মত ব্যক্ত করেছেন: উইলিয়ামস্-এর মতে “শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, সামাজিক ও অন্যান্য দিকের সুষম উন্নতি ঘটিয়ে ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের চেষ্টা করা”।


বুক ওয়াল্টার বলেছেন— “শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিকসমূহের সুসমন্বিত বিকাশ সাধন”। এই বিকাশ সাধনের উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও নিয়মনীতি অনুসারে পরিচালিত খেলাধুলা, ছন্দময় ব্যায়াম এবং জিমন্যাস্টিকস্ ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহণ। এগুলোই শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে স্বীকৃত। বিশেষজ্ঞগণ কিছু উদ্দেশ্য সম্পর্কে একমত হলেও কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে মতের ভিন্নতাও প্রকাশ করেছেন। কয়েকটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতামত থেকে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। বিভিন্ন চিন্তাবিদদের মতামত বিবেচনা করে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা-

১. শারীরিক সুস্থতা অর্জন।

২. মানসিক বিকাশ সাধন।

৩. চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন।

৪. সামাজিক গুণাবলি অর্জন।

১. শারীরিক সুস্থতা অর্জন

ক. খেলাধুলার নিয়মকানুন মেনে ভালো করে খেলতে পারা।

খ. কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করা।

গ. স্নায়ু ও মাংসপেশির সমন্বয় সাধনে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

ঘ. দেহ ও মনের সুষম উন্নতি করা।

ঙ. সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করা।

চ. সহিষ্ণুতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।

২. মানসিক বিকাশ সাধন

ক. উপস্থিত চিন্তাধারার বিকাশ সাধন।

খ. নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।

গ. সেবা ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

ঘ. বিভিন্ন দলের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে উঠা।

৩. চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন

ক. আনুগত্যবোধ ও নৈতিকতা বৃদ্ধি পাওয়া।

খ. খেলাধুলার মাধ্যমে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হওয়া।

গ. খেলোয়াড়ি ও বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব গড়ে উঠা।

ঘ. প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব গড়ে উঠা।

ঙ. আত্মসংযমী হওয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।

৪. সামাজিক গুণাবলি অর্জন

ক. নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করা।

খ. বিনোদনের সাথে অবসর সময় কাটানোর উপায় জানা।

গ. বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করা।

ঘ. সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা।

শারীরিক শিক্ষাবিদদের মতামত থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধারণ শিক্ষার মতোই ব্যক্তিসত্তার সর্বোচ্চ ও সুষম বিকাশ সাধন করে থাকে এবং পরিকল্পিতভাবে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জনে সাহায্য করে।

শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ও বিনোদনমূলক যে সমস্ত কর্মসূচি পরিলক্ষিত হয় তাকে শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি বলে। একজন শারীরিক শিক্ষক যে সমস্ত ক্রীড়াকর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন তাই শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।

শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়

১. অত্যাবশ্যকীয় ক্রীড়া কর্মসূচি (Compulsory Sports Programme)

২. অন্তঃক্রীড়াসূচি (Intramural Sports)

৩. আন্তঃক্রীড়াসূচি (Extramural Sports)

১. অত্যাবশ্যকীয় ক্রীড়া কর্মসূচি (Compulsory Sports Programme)

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সরকারি নির্দেশাবলি, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক ক্লাস, প্রতিযোগিতা, প্রাত্যহিক সমাবেশ ও স্থানীয় নির্দেশনা ইত্যাদি সবই অত্যাবশ্যকীয় ক্রীড়াকর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। এই কর্মসূচিগুলো একজন শারীরিক শিক্ষকের অবশ্যই পালন করতে হয়। সরকারি নির্দেশনাবলি বলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক যে সমস্ত নির্দেশনা, যেমন: প্রাত্যহিক সমাবেশ করতে হবে, প্রতিদিন/ সপ্তাহে ৩টি ক্লাস নিতে হবে, আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে, জাতীয় দিবসগুলোতে খেলাধুলা করাতে হবে ইত্যাদিকে বোঝায়। স্থানীয় নির্দেশনা বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়মকানুনসমূহকে বুঝিয়ে থাকে যেমন— স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, বার্ষিক ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করা, দৈহিক উন্নতির পরিমাপের পরীক্ষা নেওয়া, টিফিন প্রোগ্রাম পরিচালিত করা ইত্যাদি।

২. অন্তঃক্রীড়াসূচি (Intramural Sports)

ইন্ট্রামুরাল একটি ল্যাটিন শব্দ। Intra অর্থ ভিতরে এবং Mural অর্থ দেয়াল। তাহলে সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় দেয়ালের ভিতরে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের চারি দেয়ালের মধ্যে বা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আকারে যে সমস্ত খেলাধুলা হয় তাকে ইন্ট্রামুরাল স্পোর্টস বলা হয়। যেমন— বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, নবম শ্রেণি বনাম দশম শ্রেণি ক্রিকেট ম্যাচ, অথবা ষষ্ঠ শ্রেণি ক ও খ শাখার মধ্যে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। যদি হাউজ থাকে তাহলে হাউজে হাউজে যে প্রতিযোগিতা হয় তাও এর আওতায় পড়ে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক বা বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বা ১ম বর্ষ বনাম ২য় বর্ষের মধ্যে যে সমস্ত প্রতিযোগিতা হয় সেগুলোও ইন্ট্রামুরাল স্পোর্টসের অন্তর্গত। অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে যে খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতা হয় তাকে ইন্ট্রামুরাল স্পোর্টস বলে।

৩. আন্তঃক্রীড়াসূচি (Extramural Sports)

Extra অর্থ বাইরে, Mural অর্থ দেয়াল অর্থাৎ দেয়ালের বাইরে যে সমস্ত খেলাধুলা হয় তাকে আন্তঃক্রীড়াসূচি (Extramural Sports) বলা হয়। যে সমস্ত খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতা এক স্কুলের সাথে অন্য স্কুল, এক কলেজের সাথে অন্য কলেজের মধ্যে খেলা হয় তাকে আন্তঃক্রীড়া প্রতিযোগিতা বলা হয়। যেমন- আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃক্লাব ইত্যাদি প্রতিযোগিতা বোঝায়। এ সমস্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজ দলের যোগ্যতা যাচাই করা যায়। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বিভিন্নমানের খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করে। ফলে ভালো খেলোয়াড়ের সাহচর্যে এসে তাদের আচার-ব্যবহার, উন্নতমানের কৌশল ইত্যাদি থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পারে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দলগত সমঝোতা ও উৎকর্ষ বাড়ে, প্রতিযোগিতার মনোভাব ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায় ৷

Get Class 9 Physical Education Assignment Answer

[Join]