তোমার দেখা কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন (যেমন: প্রাচীন মসজিদ/মন্দির, জমিদারবাড়ি, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদি) ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান বিশ্লেষণ পূর্ব ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন কর। এসএসসি ইতিহাস ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।
বিষয়: বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বিষয় কোড: 153, স্তর: এসএসসি, অ্যাসাইনমেন্ট নাম্বার: 01, প্রথম অধ্যায়: ইতিহাস পরিচিতি।
অ্যাসাইনমেন্ট: তোমার দেখা কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন (যেমন: প্রাচীন মসজিদ/মন্দির, জমিদারবাড়ি, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদি) ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান বিশ্লেষণ পূর্ব ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন কর।
শিখনফল বিষয়বস্তু
- ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা, স্বল্প পরিসর ব্যাখ্যা করতে পারব;
- ইতিহাসের উপাদান ও প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারব;
- ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করতে পারব;
নির্দেশক
- ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা;
- ইতিহাসের উপকরণ উল্লেখ;
- ইতিহাসের গুরুত্ব
- ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা
ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান তার বিশ্লেষণ এবং ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা
NewResultBD.Com
ক) ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা
ইতিহাস শব্দটা ইংরেজি History শব্দের বাংলা অনুবাদ। History শব্দটি গ্রিক Historia থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। Historia বা History শব্দের আভিধানিক অর্থ অনুসন্ধান বা গবেষণা। আবার ইতিহাস শব্দটি “ইতিহ” শব্দ থেকে গঠিত হয়েছে। “ইতিহ” অর্থ ঐতিহ্য। অতএব, মানব সভ্যতার ঐতিহ্যের ধারাবাহিক বিবরণকে ইতিহাস বলে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদগণ ইতিহাসের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটা উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হল:
- ডক্টর জনসন বলেন, “যা কিছু ঘটে তা-ই ইতিহাস।” তিনি আরো বলেন, “অতীতের কাহিনী মাত্রই ইতিহাস।”
- ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতে, “ইতিহাস হলো মানব সমাজের অতীত কার্যাবলির বিবরণী।”
- টয়েনবি বলেন, “সমাজের জীবনই ইতিহাস। প্রকৃতপক্ষে মানব সমাজের অনন্ত ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।”
- ঐতিহাসিক রাপসন বলেন, “ঘটনার ক্রমিক এবং বৈজ্ঞানিক বিবরণই ইতিহাস।”
- ইতিহাস শাস্ত্রবিদ ই.এইচ.কার মনে করেন যে, “ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে অন্তহীন সংলাপ।” তিনি আরো মনে করেন যে, “ইতিহাস হলো ঐতিহাসিক ও তথ্যের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এক অব্যাহত প্রক্রিয়া।” মূলত ইতিহাস হচ্ছে অতীতকালীন সময়কার মানব সমাজের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক বিবরণী, যার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সংঘাত, সম্প্রীতি তথা মানব সভ্যতার ভাঙাগড়ার পর্যালােচনামূলক ইতিকথা।
খ) ইতিহাস রচনায় উপকরণসমূহ
ইতিহাসের উপাদান যেসব তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। ইতিহাসের উপাদানকে আবার দুই ভাগে। | ভাগ করা যায়। যথা: লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান।
১. লিখিত বা সাহিত্যিক উপাদান: ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মেও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেমন: বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র’, কলহনের ‘অজিতরঙ্গিনী, মিনহাজ-উস-সিরাজের ‘কাত-ই-নাসিরী’, আবুল ফজল-এর ‘আইন-ই-আকবরী” ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়েছে। যেমন- পঞ্চম থেকে সম শতকে বাংলায় আগত চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং ও ইসিং-এর বর্ণনা। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইনোসহ অন্যদের লেখাতেও এ অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। এসব বর্ণনা থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
সাহিত্য উপাদানের মধ্যে আরও রয়েছে রূপকথা, কিংবদন্তি, গল্পকাহিনি। তিবতীয় লেখক লামা দ্বারনাথের বর্ণনায় পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সিংহাসন আরোহণ সম্পর্কে যে বর্ণনা আছে, সেটি একধরনের কল্পকাহিনি। তবে অনেক কাহিনি আড়ালে অনেক সত্য ঘটনা থেকে যায় যা ঐতিহাসিকরা বিচার বিশ্লেষণ-অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করেন। তাছাড়া সরকারি নথি, চিঠিপত্র ইত্যাদি থেকেও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
২. অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান: যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই, সেই বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ মূলত অলিখিত উপাদান। যেমন: মুদ্রা, শিলালিপি, গুলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি। এ সমস্ত প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ধারণা করা সম্ভব প্রাচীন অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, নগরায়ণ, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের কথা। নতুন নতুন প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে পারে একটি জাতির ইতিহাস। যেমন- সম্প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার। ঐ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশে আড়াই হাজার বছর পূর্বেও নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। এই আবিষ্কারের ফলে বাংলার প্রাচীন সভ্যতার নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে অনেক ধারণা। অদূর ভবিষ্যতে নতুন ভাবে লিখতে হবে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস।
গ) ইতিহাসের গুরুত্ব
ইতিহাস হল মানুষের অতীত ঘটনা ও কার্যাবলীর অধ্যয়ন। বৃহৎ একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এটি কখনও মানবিক বিজ্ঞান এবং কখনও বা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই ইতিহাসকে মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। কারণ ইতিহাসে এই উভয়বিধ শাস্ত্র থেকেই পদ্ধতিগত সাহায্য ও বিভিন্ন উপাদান নেওয়া হয়। একটি শাস্ত্র হিসেবে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো উপবিভাগের নাম চলে আসে: দিনপঞ্জি, ইতিহাস-লিখন, কুলজি শাস্ত্র, পালিওগ্রাফি এবং ক্লায়োমেট্রিক্স। স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, যদিও কেবল লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসে সকল তত্ত্ব উদ্ধার করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি ইতিহাস পাঠ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ এবং জাতীয়তাবোধ এর জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঘ) ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা
মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের সত্য-নির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। এ কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অসীম। ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে, ভবিষ্যৎ অনুমান করতে সাহায্য করে । ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষের পক্ষে নিজের ও নিজদেশ সম্পর্কে মঙ্গল-অমঙ্গলের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তি প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি।
জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে: অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ-জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের, তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে জাতীয়তাবোধ, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।
সচেতনতা বৃদ্ধি করে: ইতিহাস – জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তােলে। উত্থান-পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলাে জানতে পারলে মানুষ ভালাে-মন্দের পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।
দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয়: ইতিহাসের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষণীয় দর্পন।
ইতিহাস পাঠ করলে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে, দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে জ্ঞান। চর্চার প্রতি আগ্রহ জন্মে।
[Join]