0

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধির নিয়মের যথার্থতা যাচাই। এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্র চতুর্থ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

HSC Logic 4th Week Assignment 2021

স্তর: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১, বিভাগ: মানবিক, বিষয়: যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র, বিষয় কোড: ১২১, মোট নম্বর: ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০৩, অধ্যায় তৃতীয়: যুক্তির উপাদান।

অ্যাসাইনমেন্ট: ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধির নিয়মের যথার্থতা যাচাই।

শিখনফল/বিষয়বস্তু:

  • ক) পদের ব্যার্থ ও জাত্যৰ্থ ব্যাখ্য করতে পারবে। পদের ব্যার্থ ও জাত্যর্থের তুলনা করতে পারবে;
  • খ) পদের ব্যাপ্তির ধারণা বর্ণনা করতে পারবে;
  • গ) পদের ব্যাপ্তির নিয়ম বর্ণনা করতে পারব;
  • ঘ) A; E, I এবং 0 বাক্যে পদের ব্যাপ্তি ব্যাখ্যা করতে পারবে;

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • পদের ব্যাপ্তির ধারণা;
  • পদের ব্যাপ্তির সাধারণ নিয়ম উল্লেখ করে A; E, I এবং O বাক্যে ব্যাখ্যা;
  • উদাহরণসহ ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থ ব্যাখ্যা;
  • বাস্তবউদাহরণের সাহায্যে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হ্রাসবৃদ্ধির নিয়মের বিশ্লেষণ;

এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা চতুর্থ সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধি ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদেরব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হাসবৃদ্ধিGet HSC Logic Assignment Answer

[Join]

ব্যাপ্তির নিয়ম উল্লেখপূর্বক বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হ্রসবৃদ্ধির নিয়মের যথার্থতা যাচাই 

ক) ব্যাপ্তির ধারণা উপস্থাপন

ব্যাপ্তরি হলো একটি পদ দ্বারা নির্দেশিত প্রতিটি ব্যক্তি বা ব্যক্তিবাচক বুঝনোর একটি বিশেষ ধর্ম বা গুণ (property)। ব্যাপ্তরি ইংরেজি প্রতিশব্দ distribution দ্বাদশ শতকে উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন distributio থেকে পদকে নির্দেশনা তত্তে¡র অংশ হিসেবে প্রকাশ করার জন্য distributio শব্দটি ব্যবহার করা হতো এবং সার্বিক মানক (universal quantifier, যেমন: সব, সকল, যে কোন ইত্যাদি) ব্যবহার করে এর দ্বারা একটি পদের স্বধর্ম নির্দেশিত হতো। যেমন, কুকুর পদটির ক্ষেত্রে ‘সকল কুকুর হয় বিশ্বস্ত’; এখানে কুকুর পদটি ব্যাপ্য কারণ প্রত্যেকটি কুকুরই নির্দেশ করা হয়েছে।
বিপরীতভাবে, ‘একটি কুকুর পিয়নকে তাড়া করেছে’-এ বাক্যে একই পদ কুকুর ব্যাপ্য নয়; কারণ এখানে একটি মাত্র কুকুরকে নির্দেশ করা হয়েছে। দ্বাদশ শতক থেকেই ব্যাপ্তরি ধারণাটি সহানুমানের বৈধতা নিরূপণের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ব্যাপ্তরি মানে হলো ব্যাপকতা বা প্রসারতা। একটি যুক্তিবাক্যে একটি পদ কতটুকু ব্যাপ্তি বা ব্যাপকতা নিয়ে ব্যবহৃত হয় তাই হলো ঐ পদের ব্যাপ্তরি। সহজভাবে বলা যায় যে, যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত দু’টি পদ যে সব শ্রেণিকে নির্দেশ করে সেসব শ্রেণির সকল সদস্য না কতিপয় সদস্যকে প্রকাশ করছে তা বোঝানোর জন্য ব্যাপ্তরি কথাটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ তাদের ব্যক্ত্যর্থের দিক থেকে যতটুকু বিস্তার লাভ করে তাকে পদের ব্যাপ্তরি বলে। পদের ব্যাপ্তরি সম্পর্কে যুক্তিবিদ এইচ.ডবিøউ.বি. যোসেফ (H.W.B. Joseph) বলেন, “একটি পদ যখন তার সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ কোনো যুক্তিবাক্যে নির্দেশ করে তখন পদটি পূর্ণব্যাপ্য; আর তা না হলে অব্যাপ্য।”

যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত পদসমূহ দুইভাবে তাদের ব্যক্ত্যর্থকে প্রকাশ করতে পারে। যেমন:

ক. পূর্ণ ব্যাপ্য পদ

খ. অপূর্ণ ব্যাপ্য পদ

খ) ব্যাপ্তরি নযি়ম এর ব্যাখ্যা

গুণ ও পরিমাণের যুক্তভিত্তিতে যুক্তিবাক্যকে চার ভাগে ভাগ করা হয়;

যথা: সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (A), সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য (E), বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য (I) ও বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্য (O)।
A বা সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য: A যুক্তিবাক্যের উদ্দ্যেশ পদ ব্যাপ্য; কিন্তু বিধেয় পদ অব্যাপ্য। এ যুক্তিবাক্যটি একটি সার্বিক বাক্য বলে এর উদ্দেশ্যে পদ ব্যাপ্য। কারণ A বাক্যে উদ্দেশ্য পদ পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ সহকারে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি একটি সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে এর বিধেয় পদ অব্যাপ্য। কারণ এর বিধেয় পদটি পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয় না। যেমন: ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’ একটি সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য। এই যুক্তিবাক্য ‘মানুষ’ পদটি সামগ্রিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ বলতে পৃথিবীর সকল মানুষকেই নির্দেশ করা হয়েছে। কাজেই বাক্যটিতে উদ্দেশ্য ‘মানুষ’পদটি, ব্যাপ্য হয়েছে। কিন্তু বিধেয় ‘মরণশীল’ পদটি সামগ্রিক অর্থে গ্রহণ করা হয়নি। ‘মরণশীল’ পদে আংশিক ব্যক্ত্যর্থ মানুষের ক্ষেত্রে স্বীকার করা হয়েছে। কারণ মরণশীল জীবের সবাই মানুষ নয়। মানুষ ছাড়াও অনেক মরণশীল জীব আছে। মরণশীল জীবের ব্যক্ত্যর্থ খুবই ব্যাপক। এর একটি অংশকেই শুধু মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তাই উল্লিখিত উদাহরণের মরণশীল পদটি অব্যাপ্য।

E বা সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য: E যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্য। E যুক্তিবাক্যটি একটি সার্বিক যুক্তিবাক্য বলে এর উদ্দেশ্য পদটি পূর্ণ ব্যাপ্য হয়। কারণ E বাক্যে উদ্দেশ্য পদ পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ সহকারে ব্যবহৃত হয়। আবার, ঊ বাক্যটি একটি নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে এর বিধেয় পদটি পূর্ণ ব্যাপ্য। কারণ, E বাক্যের বিধেয় পদও পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ সহকারে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ‘কোনো মানুষ নয় দেবতা’। এ যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘মানুষ’ পদটি সামগ্রিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে মানুষ বলতে পৃথিবীর সকল মানুষকে নির্দেশ করা হয়েছে। কাজেই এ যুক্তিবাক্যে ‘মানুষ’ পদটি ব্যাপ্য। আবার, দেবতা পদটিকেও সামগ্রিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘দেবতা’ পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থকেই ‘মানুষ’ পদটির ক্ষেত্রে অস্বীকার করা হয়েছে। মানুষ ও দেবতার মধ্যে আসলে কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই এ যুক্তিবাক্যে দেবতা পদটিও ব্যাপ্য।

I বা বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য: I যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই অব্যাপ্য। I বাক্যটি একটি বিশেষ যুক্তিবাক্য বলে এর উদ্দেশ্য পদ আংশিক ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হয়। আবার I যুক্তিবাক্যটি একটি সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে এর বিধেয় পদটি পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হতে পারে না। তাই বিধেয় পদটিও অব্যাপ্য। যেমন: ‘কিছু গরু হয় লাল’। এই যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘গরু’ পদটিকে আংশিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে গরু শ্রেণির একটি অংশের উপর একটি বক্তব্য আরোপ করা হয়েছে। কাজেই উদ্দেশ্য গরু পদটি অব্যাপ্য। আবার বিধেয় ‘লাল’ পদটিকেও আংশিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘লাল’ পদটির আংশিক ব্যক্ত্যর্থ ‘গরু’ শ্রেণির কতিপয় সদস্যের উপর আরোপ করা হয়েছে। কেননা লাল বস্তুর সবই গরু নয়। গরু ছাড়াও জগতে আরো অনেক লাল বস্তু রয়েছে। ‘লাল’ পদের ব্যক্ত্যর্থ খুবই ব্যাপক। এর একটি অংশকেই শুধু গরুর ক্ষেত্রে স্বীকার করা হয়েছে। কাজেই বিধেয় লাল পদটিও অব্যাপ্য।

O বা বিশেষ নজ্ঞর্থক যুক্তিবাক্য: O যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য কিন্তু বিধেয় পদটি ব্যাপ্য। কারণ, O যুক্তিবাক্যটি একটি বিশেষ বাক্য বলে এর উদ্দেশ্য পদটি পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হতে পারে না। তাই এর উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য। কিন্তু O যুক্তিবাক্যটি একটি নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে এর বিধেয় পদটি পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ নিয়ে ব্যবহৃত হতে পারে। তাই এরবিধেয় পদটি পূর্ণ ব্যাপ্য। যেমন: ‘কিছু গরু নয় লাল’। এই যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ‘গরু’ পদটি আংশিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ‘গরু’ শ্রেণির একটি অংশ সম্পর্কে একটি বক্তব্য অস্বীকার করা হয়েছে। কাজেই উদ্দেশ্য ‘গরু’ পদটি অব্যাপ্য কিন্তু বিধেয় ‘লাল’ পদটি এ যুক্তিবাক্যে সামগ্রিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ ‘লাল’ পদের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থকেই ‘গরু’ শ্রেণির কতিপয় সদস্য সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে। কাজেই উল্লিখিত যুক্তিবাক্যে বিধেয় লাল পদটি ব্যাপ্য।

গ) ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থ

কোন পদকে ব্যবহার করার সময় আমরা প্রথমে চিন্তা করি কোন কোন বস্তুর উপর পদটি প্রযোজ্য এবং পরে চিন্তা করি পদটি যে সমস্ত বস্তুর উপর আরোপিত তাদের সকলের মধ্যে কী কী গুণ বর্তমান। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় পদের দুটি দিক আছে। একটি হলো সংখ্যার দিক, আরেকটি হলো গুণের দিক। সংখ্যার দিকটাকে বলা হয় পদের ব্যক্ত্যর্থ (Denotation)। আর গুণের দিকটাকে একটা বিশেষ অর্থে বলা হয় জাত্যর্থ (Connotation)। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ব্যক্ত্যর্থের দিক থেকে পদটি তার পরিমাণ বা সংখ্যার নির্দেশ দেয় এবং জাত্যর্থের দিক থেকে তার আবশ্যিক গুণের নির্দেশ দেয়। আর পদ মানেই তার মধ্যে ব্যক্ত্যর্থ অথবা জাত্যর্থ কিংবা উভয়ের উপস্থিতি অনিবার্য।

ব্যক্তার্থ:

একটি পদের ব্যক্তার্থ বলতে ঐ পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তুগুলোর উপর আরোপ করা যায় সেই বস্তু বা বস্তুগুলোকে বুঝায়। যুক্তিবিদগণ ব্যক্ত্যর্থের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন- কোন পদ একই অর্থে যে বিশেষ বস্তু বা বস্তুসমষ্টির উপর প্রযোজ্য হয় সেই বিশেষ বস্তু বা বস্তু সমষ্টিইাহল ঐ পদের ব্যক্ত্যর্থ। উদাহরণস্বরূপ ‘মানুষ’ পদটি মানুষের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত মানুষের) প্রতি আরোপ করা যায়। তাই ‘মানুষ’ পদের ব্যক্ত্যর্থ হল সব মানুষ।

জাত্যর্থ:

একটি পদের জাত্যর্থ বলতে ঐ পদ যে গুণ বা গুণাবলীর বিশেষভাবে উল্লেখ করে সেই গুণ বা গুণাবলীকে বুঝায়। অর্থাৎ যে গুণ বা গুণাবলী কোন শ্রেণীর সকল বস্তুতেই বর্তমান বা যে গুণ আছে বলে ঐ বস্তুগুলো এরূপ হয়েছে সেই গুণ হল ঐ শ্রেণীবাচক পদের জাত্যর্থ। যুক্তিবিদগণের মতে- যখন কোন পদ বিশেষ বস্তু বা বস্তু সমষ্টির অন্তর্গত সাধারণ ও অনিবার্য গুণ বা গুণসমষ্টিকে নির্দেশ করে তখন সেই সাধারণ ও আবশ্যিক গুণকেই পদটির জাত্যর্থ বলে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ পদটির জাত্যর্থ হলো প্রাণিত্ব (Animality) বা জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি (Rationality)|। কারণ এ দুটি গুণ মানুষের মানুষ হিসাবে তার আবশ্যিক গুণ এবং এ গুণ দু’টি আছে বলেই মানুষ- মানুষ। অতএব, আমরা বলতে পারি, ব্যক্ত্যর্থ ব্যক্তি বা বস্তুকে এবং জাত্যর্থ ব্যক্তি বা বস্তুর অন্তর্গত আবশ্যিক গুণকে নির্দেশ করে। এক কথায় আমরা বলতে পারি, ব্যক্ত্যর্থ পদের সংখ্যা বা পরিমাণের দিক নির্দেশ করে এবং জাত্যর্থ পদের মধ্যকার আবশ্যিক গুণের নির্দেশ করে। উল্লেখ্য পদের এরূপ তাৎপর্য অনুসারে কোন কোন যুক্তিবিদ্ ব্যক্তর্থকে পদের বিস্তৃতি এবং জাত্যর্থকে পদের গভীরতা বলে অভিহিত করেছেন।

ঘ) যর্থাথতা যাচাই

ক. পদের ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে:

মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ হচ্ছে ‘সকল মানুষ’। এখন অন্যান্য প্রাণীকে এর সাথে যুক্ত করে এর ব্যক্ত্যর্থ বাড়ালে ব্যক্ত্যর্থ দাঁড়াবে ‘সকল প্রাণী’ (সকল মানুষ + অন্যান্য প্রাণী)। কিন্তু এতে করে মানুষ পদের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি থেকে বুদ্ধিবৃত্তি বাদ পড়ে সকল প্রাণীর জাত্যর্থ দাঁড়াবে শুধু ‘জীববৃত্তিতে’। কারণ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে ‘বুদ্ধিবৃত্তি ‘ নেই। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হলে যে, ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে।

খ. পদের ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে:

মানুষ শ্রেণী থেকে অসৎ মানুষদের বাদ দিয়ে এর সংখ্যা বা ব্যক্ত্যর্থ কমালে ব্যক্ত্যর্থ দাঁড়াবে ‘সকল সৎমানুষ’। সকল মানুষ>সকল অসৎ মানুষ। মানুষের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির সাথে আরেকটি জাত্যর্থ এসে যোগ হয়ে সকল সৎ মানুষের জাত্যর্থ হবে জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সততা। অর্থাৎ জাত্যর্থ বেড়ে যাবে। এতে প্রমাণ করা গেল যে, ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে।

গ. পদের জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে:

মানুষ পদের জাত্যর্থ হচ্ছে ‘জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। এখন এর সাথে সভ্যতা যোগ করলে জাত্যর্থ দাঁড়াবে জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সভ্যতা। ফলে এ তিনটি জাত্যর্থধারী পদের ব্যক্ত্যর্থ হবে ‘সকল সভ্য মানুষ’। আর এতে করে মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে। কারণ সকল মানুষের ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে সকল সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ কম। কারণ এখানে অসভ্য মানুষেরা বাদ পড়েছে। ফলে প্রমাণিত হল যে, জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে।

ঘ. পদের জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে:

মানুষ পদের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি থেকে বুদ্ধিবৃত্তিকে বাদ দিলে এর জাত্যর্থ দাঁড়াবে কেবল জীববৃত্তি-তে। এতে করে মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ বেড়ে গিয়ে সকল মানুষ থেকে সকল প্রাণীতে দাঁড়াবে। কারণ জীববৃত্তি গুণটি সকল প্রাণীতেই বর্তমান। আর সকল প্রাণীর সংখ্যা সকল মানুষের চেয়ে বেশী। সুতরাং এতে প্রমাণিত হল যে, জাত্যর্থ কমলে ব্যক্ত্যর্থ বাড়ে। ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থের বাড়া-কমার নিয়মটি ছকের সাহায্যে আরও ভালভাবে বুঝানো যেতে পারে।

Image

উপরের ছকে জীবের ব্যক্ত্যর্থ সবচেয়ে বেশী, কিন্তু জ্যত্যর্থ সবচয়ে কম। মানুষের ব্যক্ত্যর্থ জীবের চেয়ে কম, কিন্তু জাত্যর্থ বেশী। শিক্ষিত মানুষের ব্যক্ত্যর্থ মানুষের চেয়ে কম, কিন্তু জাত্যর্থ বেশী। এ ছকে শিক্ষিত মানুষ থেকে মানুষের এবং মানুষ থেকে জীবের দিকে গমন করলে দেখা যায় যে, ব্যক্ত্যর্থ ক্রমেই বাড়ে এবং জাত্যর্থ থেকে শিক্ষিত মানুষের দিকে গমন করলে জাত্যর্থ ক্রমেই বাড়ে এবং ব্যক্ত্যর্থ ক্রমেই কমে। অর্থাৎ এর দ্বারা প্রমাণিত যে, ব্যক্ত্যর্থ বাড়লে জাত্যর্থে কমে এবং জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্ত্যর্থ কমে।

ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থর হ্রাস-বৃদ্ধির এ নিয়ম দুটি চিত্রের সাহায্যে বুঝানো যেতে পারে।

উপরিউক্ত চিত্রগুলোকে শিক্ষিত মানুষ থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে প্রাণীতে গমন করতে

Image

ব্যক্ত্যর্থের পরিধি যতই বড় হচ্ছে জাত্যর্থের পরিধি ততই ছোট হয়ে আসছে। আবার জাত্যর্থের পরিধি যতই বড় হচ্ছে ব্যক্ত্যর্থের পরিধি ততই ছোট হয়ে আসছে। অর্থাৎ এতে দেখা যাচ্ছে যে ব্যক্ত্যর্থের পরিধি বাড়লে জাত্যর্থের পরিধি কমে যাচ্ছে। আবার জাত্যর্থেও পরিধি বাড়াতে গেলে ব্যক্ত্যর্থের পরিথি কমে আসছে। সুতরাং এতে প্রমাণ হল যে ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থে বিপরীত ক্রমে বাড়ে কমে।