প্রাচীন বাংলার মানচিত্র অঙ্কন করে জনপদগুলোর চিহ্নিত করো এবং তোমার বর্তমান জেলা কোন জনপদের অধীনে ছিল তার বর্ণনা। এসএসসি ইতিহাস ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।
Assignment: প্রাচীন বাংলার মানচিত্র অঙ্কন করে জনপদগুলোর চিহ্নিত করো এবং তোমার বর্তমান জেলা কোন জনপদের অধীনে ছিল তার বর্ণনা
এসএসসি ইতিহাস পঞ্চম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর
প্রাচীন বাংলার মানচিত্র অঙ্কন করে জনপদগুলো চিহ্নিত করা হল এবং আমার বর্তমান জেলা কোন জনপদের অধীনে ছিল তার বর্ণনা দেওয়া হল:
ক) প্রাচীন বাংলার মানচিত্র অঙ্কন করে জনপদগুলো চিহ্নিতকরণ:
(খ) প্রাচীন জনপদ গুলাের গুরুত্ব:
প্রাচীন যুগে বাংলা (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) এখনকার বাংলাদেশের মতাে কোনাে একক অখন্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল তখন ছােট ছােট অংশে বিভক্ত ছিল। বাংলার এ অঞ্চলগুলােকে তখন সমষ্টিগত ভাবে নাম দেওয়া হয় ‘জনপদ’। বাংলা নামের একটি অখন্ড দেশের জন্ম একবারে হযনি। এর যাত্রা শুরু হয় জনপদগুলাের মধ্য দিয়ে। উকীর্ণ শিলালিপি ও বিভিন্ন সাহিত্যগ্রন্থে প্রায় ষােলােটি জনপদের কথা জানা যায়। তবে প্রতিটি অঞ্চলের সীমা সবসময় একই রকম থাকেনি। কখনােও কোনা জনপদের সীমা বেড়েছে, আবার কখনাে কমেছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য জনপদের বর্ণনা দেওয়া হলাে:
গৌড়: ‘গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় গৌড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য। বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌররাজ বলা হতাে। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান । বাংলায় মুসলমানদের বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবর্তীকেও গৌড় বলা হতাে।
বঙ্গ: বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ – পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে ‘ বঙ্গ বলে একটি জাতি বাস করতাে। তাই জনপদটি পরিচিত হয় ‘বঙ্গ’ নামে । প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুইটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায় একটি ‘ বিক্রমপুর, আর অন্যটি ‘নাব্য’। বর্তমানে ‘ নাব্য বলে কোনাে জায়গার অস্তিত্ব নেই। ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিচু জলাভূমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পুন্ড্র: প্রাচীন বাংলার জনপদগুলাের মধ্যে অন্যতম হলাে পুন্ড্র। বলা হয় যে, পুণ্ড্র বলে একটি জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বর্তমান বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে এ পুণ্ড্র জনপদটির সৃষ্টি হয়েছিল । পুদের রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়,প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ।
হরিকেল: সপ্তম শতকের লেখকরা হরিকেল নামে অপর একটি জনপদের বর্ণনা করেছেন। এ জনপদের অবস্থান ছিল বাংলার পূর্ব প্রান্তে । মনে করা হয়, আধুনিক সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই জনপদ বিস্তৃত ছিল।
সমতট: পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে সমতটের অবস্থান। কেউ কেউ মনে করেন, সমতট বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম । গঙ্গা – ভাগীরথীর। পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মােহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতাে সমতট । কুমিল্লা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে বড় কামতা এর রাজধানী ছিল। কুমিল্লার ময়নামতিতে কযেকটি প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে । শালবন বিহার এদের অন্যতম।
বরেন্দ্র: বরেন্দ্রী বরেন্দ্র বা বরেন্দনি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়। এটিও উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। অনুমান করা হয়, পুষ্ট্রের একটি অংশ জুড়ে বরেন্দ্রর অবস্থান ছিল । বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেক অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলাজুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস্তৃত ছিল
তাম্রলিপ্ত: হরিকেলের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সপ্তম শতক থেকে এটি দণ্ডভুক্তি নামে পরিচিত হতে থাকে।
চন্দ্রদ্বীপ: প্রাচীন বাংলায় আরও একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম পাওয়া যায়। এটি হলাে। চন্দ্রদীপ। বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
গ) প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের ধারণা:
২০০০০ বছর পূর্বের প্রস্তর যুগের এবং প্রায় চার হাজার বছরের পুরনাে তাম্রযুগের | ধ্বংসাবশেষ বাংলা পাওয়া গেছে। ইন্দ্র- আর্যদের আসার পর অঙ্গ বন্ধু এবং মগধ। রাজ্য গঠিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব দশম শতকে। এই রাজ্যগুলি বাংলা এবং বাংলার আশেপাশে স্থাপিত হয়েছিল। অঙ্গ বঙ্গ এবং মগধ রাজ্যের বর্ণনা প্রথম পাওযা যায অথর্ববেদে প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। মহাভারতে পৌন্ড্র রাজ বাসুদেব এর উল্লেখ পাওযা যায় । এছাড়া চেদি রাজ্য আধুনা ভাওযাল এর কাছে অবস্থিত। মগধরাজ | জরাসন্ধ মহাপরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন। মহাভারতে পাওয়া যায় চিত্রসেন ও সমুদ্রসেন ভীমের দিগ্বিজয় আটকে দিয়েছিল। এবী বঙ্গের অতি পরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাংলার অধিকাংশ অঞ্চলই শক্তিশালী রাজ্য মগধের অংশ ছিল। মগধ ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয় আর্য রাজ্য। মগধের কথা রামায়ণ এবং মহাভারতে পাওয়া যায । বুদ্ধের সময়ে এটি ছিল ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের মধ্যে একটি। মগধের ক্ষমতা বাড়ে বিম্বিসারের (রাজত্বকাল ৫৪৪| ৪৯১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এবং তার ছেলে অজাতশত্রুর (রাজত্বকাল ৪৯১ – ৪৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) শাসনকালে বিহার এবং বাংলার অধিকাংশ স্থানই মগধের ভিতৱে বিহার এবং বাংলার আধকাংশ স্থানহ মগধের ভিতরে ছিল। ৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য। গ্রেটের সেনাবাহিনী মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয়। এই সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং গঙ্গা নদীর কাছাকাছি বাংলার বিশাল বাহিনীর মুখােমুখি। হতে ভয় পেয়ে যায়। এই বাহিনী বিপাশা নদীর কাছে বিদ্রোহ ঘােষণা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে। আলেকজান্ডার তখন তার সহকারী কইনাস (Coenus) এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল। মৌর্য সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে উঠেছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। | এই সাম্রাজ্য অশােকের রাজত্বকালে ভারতের অধিকাংশ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবধি বিস্তার লাভ করেছিল। পরবর্তীকালে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে ওঠে যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে, বাংলাদেশ ও সম্ভবত পাকিস্তানের কিছু অংশেও বিস্তার লাভ করেছিল।
ঘ) আমার বর্তমান নিজ জেলা যে জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তার ব্যাখ্যা:
আমার বর্তমান নিজ জেলা হচ্ছে বিক্রমপুর। এ জেলা হচ্ছে তকালীন বঙ্গ জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে ‘ বঙ্গ ‘ বলে একটি জাতি বাস করতাে। তাই জনপদটি পরিচিত হয় ‘বঙ্গ’ নামে। প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুইটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায় – একটি বিক্রমপুর আর অন্যটি’নাব্য’। বর্তমানে নাব্য বলে কোনাে জায়গার অস্তিত্ব নেই। ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিচু জলাভূমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন বঙ্গ জনপদ ছিল খুব শক্তিশালী অঞ্চল বঙ্গ থেকে বাঙালি জাতির উৎপত্তি ঘটছিল।
Answer Image Download Download Answer PDF [Join]