0

নবায়নযোগ্য শক্তির গল্প: বিভব শক্তির ধারণা, কর্মদক্ষতা নির্ণয়, শক্তির এক একক থেকে অন্য এককের রূপান্তর, পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় শক্তির প্রধান উৎসসমূহের অবদান। এসএসসি পদার্থ বিজ্ঞান ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান।

নবায়নযোগ্য শক্তির গল্প: পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় শক্তির প্রধান উৎসসমূহের অবদান

বিভব শক্তির ধারণা, কর্মদক্ষতা নির্ণয়, শক্তির এক একক থেকে অন্য এককের রূপান্তর, পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় শক্তির প্রধান উৎসসমূহের অবদান

ক)
কোনো বস্তুর অবস্থা বা অবস্থানের জন্য যে শক্তি তৈরি হয় তাকে বিভবশক্তি বলে। যে অবস্থানে জলের উচ্চতা সবচেয়ে কম, সেখানে জলের ন্যূনতম বিভবশক্তি রয়েছে। 
 
খ)
দেওয়া আছে,
মোট প্রদত্ত শক্তি =  5.0×10‌‌^9 J  
লভ্য কার্যকর শক্তি = 4.5×10^9 J
 
সুতরাং, 
শক্তির রূপান্তরকরণের দক্ষতা =(লভ্য কার্যকর শক্তি ÷ মোট প্রদত্ত শক্তি)  ×100%
=(4.5×10^9 ÷ 5.0×10^9)×100%
= 90%
 
গ)
বৈদ্যুতিক শক্তি 4.5×10^9J কে ওয়াট (W) এককে প্রকাশ করা হলো:
ক্ষমতা = W÷t
  = 4.5×10^9 ÷ 30×60
= 25,00,000 W
 
ঘ)
বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব বিশ্লেষণ:
অর্থনৈতিক সুবিধা
 
জলবিদ্যুতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল অন্যান্য বিদ্যুতের তুলনায় এটি অনেক সস্তা। তাছাড়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানী-নির্ভর বিদ্যুৎ থেকে অনেক দীর্ঘস্থায়ী। এখনো কিছু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যা 50-100 বছর আগে তৈরি হয়েছিলো। যেহেতু এটা স্বয়ংক্রিয়, তাই শ্রমিক খরচও কম পড়ে। তাছাড়া এর নির্মাণ ব্যয়ও কম।
 
স্বল্প গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন:
 
যেহেতু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোনো ধরনের জ্বালানী পোড়ানো হয় না, তাই এখান থেকে সরাসরি কোনো কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয় না। যদিও সামান্য কিছু কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বানাতে অর্থাৎ যন্ত্রপাতি তৈরি করতে। ফলে এর গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী জ্বালানীনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুবই কম।  গবেষণা অনুযায়ী জলবিদ্যুৎ অন্য যেকোনো বিদ্যুৎ-উৎস থেকে কম গ্রীনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে। এ তালিকায় দ্বিতীয় হলো বায়ু শক্তি, তৃতীয় পারমাণবিক শক্তি এবং চতুর্থ সৌরশক্তি। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হয় অধিক তাপমাত্রায়। কারণ তাপ বাড়লে পানির প্রসারণ ঘটে এবং আয়তন বাড়ে। ফলে পানির চাপ বাড়ে, আর চাপই হলো জলবিদ্যুতের চালনশক্তি। এছাড়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, জলক্রীড়া আয়োজন করার মাধ্যমে পর্যটনশিল্পেও ভূমিকা রাখে। ফসলের জমিতে অবিচ্ছিন্ন সেচ দিতে বাঁধের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বড় বাঁধগুলোর সাহায্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তাছাড়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন: বাঁধ ধ্বসে পড়া। বাঁধ ধ্বসে পড়া মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি ভালো নকশা দ্বারা প্রস্ত‌ুতকৃত বাঁধও শতভাগ নিরাপদ নয়। অনেক মানুষ গৃহহীন হয়। ভুল জায়গায় বাঁধ স্থাপনের কারণে, বাঁধ অনেক ভয়ানক দুর্যোগও বয়ে আনতে পারে। নদীতে বাঁধ দেওয়ার ফলে দুইপাশে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে না। ফলে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ওঠে।  জলজপ্রাণী তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
 
ঙ)
জলবিদ্যুৎ পড়ন্ত বা স্রোত আছে এমন নদীর পানির চাপকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস।  এটি নবায়নযোগ্য শক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। একবার যদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয়, খুব কম শক্তি ব্যয়ের মাধ্যমে এটি চালানো যায়। এবং এটা জীবাশ্ম জ্বালানী, যেমন: তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুব কম পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে। পানিবিদ্যুৎ পৃথিবীর মোট বিদ্যুতের ২০% এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ৮৮%।
 
নবায়নযোগ্য শক্তি বা রিনিউয়েবল এনার্জি হলো এমন শক্তির উৎস যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন: সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি (জৈবভর), ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ দেশ তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি সমূহ পরিবেশ বান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ মুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি টেকশই জ্বালানি ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী আন্দোলনসমূহ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ অব্যহত রেখেছে।
বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির অধিকাংশ ব্যয় হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে, মোটরযান চলাচলে এবং বাসা বাড়ির তাপ-উৎপাদনে। এজন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে টেকশই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, টেকশই যানবাহন ব্যবস্থা এবং গ্রিন টেকনোলজি সমৃদ্ধ শক্তি সাশ্রয়ী গৃহস্থালি পণ্য প্রবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রক্রিয়াধীন আছে।
 
নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমান বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। এ বিশ্বের জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি আমাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনপদগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তির চাহিদাও ততই বাড়ছে। শক্তির টেকসই স্তর বজায় রাখতে এবং আমাদের গ্রহকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা করার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর উদ্ভাবন ও এর সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 
নবায়নযোগ্য শক্তি হলো, সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শক্তি উৎপাদন করার একটি উপায়। নবায়নযোগ্য শক্তিকে কখনো কখনো সবুজ শক্তি বা পরিষ্কার শক্তি নামে অভিহিত করা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির বিভিন্ন উৎস যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদি ব্যবহারের সাথে সাথে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায়। অপরদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারের সাথে সাথে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় না এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য।
 
এ জন্য নবায়নযোগ্য শক্তিকে জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তির বিপরীত হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি সিএফসি বা এইচসিএফসিভিত্তিক প্রচলিত বাষ্প-সংকোচন শক্তি পদ্ধতির একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। কারণ, এটি নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ও প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করে। ওই কারণে সারা বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং অনেক গবেষক এটিকে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য গবেষণার মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
বিদ্যুৎ উপাদন, বিশ্বে বায়ু দূষণের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। আমাদের বিদ্যুতের বেশির ভাগ অংশ কয়লা, পারমাণবিক এবং অন্য নন-পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসে। এই সংস্থাগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের পরিবেশকে মারত্মক ক্ষতি করে এবং বায়ু, জমি এবং পানিকে দূষিত করে। বিশ্ব জুড়ে দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত মজুদ এবং পরিবেশের উপার তাদের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন এবং শক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখন সৌর, বায়ু, জৈবিক, জলবিদ্যুৎ, ভূতাত্ত্বিক ও সমুদ্র শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি দিকে ঝুঁকছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
 
পৃথিবীর সব শক্তি ব্যবস্থায় যে রূপান্তর ঘটছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সৌর, বায়ু ও পানিবাহী শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তিগুলো। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে, বায়ু দূষণ কমাতে এবং শক্তি উৎপাদন বাড়াতে তাদের ক্রমবর্ধমান স্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলো আমাদের গ্রহের অন্যতম প্রাচুর্য এবং অবাধে উপলব্ধ শক্তির উৎস। এক ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর পৃষ্ঠে যে পরিমাণ সৌর শক্তি পৌঁছে যায় তা পুরো বছরের জন্য গ্রহের মোট শক্তির প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।
নবায়নযোগ্য শক্তি ভবিষ্যতের অগ্রগতি এবং বিকাশের জন্য আকাঙ্খিত কারণ এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাস করছে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো পরিবেশের উপর কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসগুলোর প্রভাব হ্রাস করা। এ ধরনের সুবজ শক্তির ব্যবহার বেছে নেয়ার ফলে কেবল দীর্ঘমেয়াদী ব্যয় সাশ্রয় হবে না, সাথে সাথে জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণের বিপদ থেকে বায়ুমণ্ডলকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। নবায়নযোগ্য শক্তি সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য সরকারি পর্যায়ে জ্বালানি সংরক্ষণ সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করতে হবে।
[Join]

Very bad