সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশে বিরাজমান ঋতু পরিবর্তন বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন;, এসএসসি ভূগোল ও পরিবেশ ৩য় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর.
স্তরঃ এস.এস.সি পরীক্ষা ২০২১, বিভাগঃ মানবিক, বিষয়ঃ ভূগোল ও পরিবেশ, বিষয় কোডঃ ১১০, মোট নম্বরঃ ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর-০২
অধ্যায় ও শিরােনামঃ দ্বিতীয় অধ্যায়: মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী;
অ্যাসাইনমেন্টঃ সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশে বিরাজমান ঋতু পরিবর্তন বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন;
শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারবে;
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
- ১. প্রয়ােজনে পাঠ্যপুস্তুক, শিক্ষক (ফোনে/অনলাইনে), ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে;
- ২. ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। ঋতু পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর চারটি অবস্থার চিত্রসহ ব্যাখ্যা করতে হবে;
- ৩. সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশে বিরাজমান ঋতুর ব্যাখ্যা করতে হবে;
এসএসসি ভূগোল ও পরিবেশ ৩য় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ উত্তর
সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তন
ঋতু পরিবর্তনঃ
তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে সারা বৎসর কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।এ প্রতিটি ভাগকে একেকটি ঋতু বলে। তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে সারাবছরকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল,
শীতকাল ও বসন্তকাল। আমরা জানি, সমগ্র পৃথিবীকে দুটো গোলার্ধে ভাগ করা হয়েছে। নিরক্ষরেখার উপরের দিকের অংশকে উত্তর গোলার্ধ এবং নিচের দিকের অংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ ধরা হয়। উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল। এরকম ঋতু পরিবর্তনের কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
- পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিবারাত্রি তারতম্যের জন্য উত্তাপের হ্রাস বৃদ্ধিঃ
ঘূর্ণনের কারণে সূর্য পৃথিবীর যে গোলার্ধের নিকট অবস্থান করে তখন সেই গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত ছোট। পৃথিবী দিনের বেলায় তাপ গ্রহণ করে ফলে ভূপৃষ্ঠে উত্তপ্ত হয় এবং রাতের বেলায় বিকিরণ করে শীতল হয়। তখন একটি স্থানে বড়দিনে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে ছোট রাতে সে তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারেনা। ঐ স্থানে সঞ্চিত তাপের কারণে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং তাতে গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। বিপরীত গোলার্ধে রাত বড় এবং দিন ছোট হওয়াতে দিনের বেলায় যে তাপ গ্রহণ করে রাতের বেলায় সব তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা অনুভূত হয় তখন শীতকাল।
- পৃথিবীর গোলাকার আকৃতিঃ
পৃথিবী গোল, তাই পৃথিবীর কোথাও সূর্যরশ্মি লম্বাভাবে পড়ে আবার কোথাও তীর্যকভাবে পড়ে। ফলে তাপমাত্রার পার্থক্য হয় এবং ঋতু পরিবর্তিত হয়। - পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথঃ
আবর্তন পথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব কমবেশি হয়। এতে তাপমাত্রার পার্থক্য হয়, তাই ঋতু পরিবর্তিত হয়। - পৃথিবীর কক্ষপথের কৌণিক অবস্থানঃ
সূর্যকে পরিক্রমণ এর সময় নিজ কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর মেরু রেখা সমকোণে না থেকে ৬৬.৫°কোণে হেলে একই দিকে অবস্থান করে। এতে বছরে একবার পৃথিবীর উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু সূর্যের নিকটবর্তী হয়। যে গোলার্ধে যখন সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে সেগুলোতে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। তার তাপমাত্রা তখন বেশি হয় এবং দূরে গেলে তাপমাত্রা কম হয়, ফলে ঋতু পরিবর্তন ঘটে। - বার্ষিক গতির কারণেঃ
পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য সূর্যকিরণ বিভিন্ন স্থানে কমবেশি পড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা পার্থক্য ঘটছে। ফলে জলবায়ুর বিভিন্নতা হয়। একে ঋতু পরিবর্তন বলে।
আমরা জানি, পৃথিবীতে চারটি ঋতু- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল। আমরা এখন দেখব ঋতু কীভাবে পরিবর্তিত হয়। সূর্যকে পরিক্রমণ কাল এ পৃথিবীর চারটি অবস্থা থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালঃ
২১ মার্চের পর থেকে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মেরু ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে যতদিন যায় তত উত্তর মেরুতে আলোকিত অংশ বাড়তে থাকে। এভাবে ২১ শে জুন এ গিয়ে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে ২১ শে জুন উত্তর গোলার্ধে বড় দিন এবং ছোট রাত হয়। ঐদিনই সূর্যের উত্তরায়ন এর শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য দক্ষিণ দিকে আসতে থাকে।
দিন বড় হওয়ার কারণে উত্তর গোলার্ধে ২১শে জুনের দেড় মাস পূর্ব থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হয় এবং পরের দেড় মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকালে স্থায়ী হয়। এই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক বিপরীত অবস্থা দেখা যায় অর্থাৎ শীতকাল অনুভূত হয়।এ সময় সূর্য হেলে থাকার কারণে এ গোলার্ধে সূর্য কম সময় ধরে কিরণ দেয়। ফলে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। দিনে ভূপৃষ্ঠ যতটুকু উত্তপ্ত হয়, রাতে তাপ বিকিরণের ফলে তা ঠান্ডা হয়ে যায়। এখানে তখন শীতের আবহাওয়া বিরাজ করে। দক্ষিণ গোলার্ধে এ সময়কে শীতকাল বলে (চিত্র ১)।
উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকালঃ
২১ শে জুন থেকে দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। উত্তর গোলার্ধের অংশগুলো কম কিরন পেতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে অংশগুলো বেশি সূর্যকিরণ পেতে থাকে। এভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। তাই এ সময় পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়। দিনের বেলায় যে তাপ আসে রাত সমান হওয়ায় একই পরিমান তাপ বিকিরিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে আবহাওয়াতে ঠান্ডা গরমের পরিমাণ সমান থাকে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে। ২৩ এ সেপ্টেম্বরের দেড় মাস আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধের শরতকালের সূচনা হয় এবং দেড় মাস পর পর্যন্ত এই শরৎকাল স্থায়ী থাকে।
উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালঃ
২৩ সেপ্টেম্বরের পর দক্ষিণ গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এসময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসতে থাকে। উত্তর গোলার্ধ দূরে সরতে থাকে। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য লম্বভাবে এবং উত্তর গোলার্ধে কোণ করে কিরণ দিতে থাকে। এতে উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে। এর মধ্যে ২২ শে ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেই দিন উত্তর গোলার্ধে ছোট দিন ও বড় রাত হওয়াতে শীতকাল। ঐ দিনেই সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য উত্তর দিকে আসতে থাকে। ২২ এ ডিসেম্বরের দেড় মাস পূর্বেই উত্তর গোলার্ধে শীতকাল শুরু হয় এবং পরের দেড় মাস পর্যন্ত বিরাজ করে। এই সময়টাতে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল।
উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকালঃ
পৃথিবী তার কক্ষপথে চলতে চলতে ২২ এ শে ডিসেম্বরের পর থেকে ২১ শে মার্চ পর্যন্ত এমন স্থানে ফিরে আসে যখন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে।ফলে ২১ শে মার্চ পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত্রি সমান হয়। দিনের বেলায় সূর্যকিরণের কারণে ভূপৃষ্ঠের বায়ুরস্তর গরম হয় এবং রাত্রিবেলায় বিকিরিত হয়ে ঠান্ডা হয়। এসময় উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল। ২১ এ মার্চ পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত্রি সমান হয় এবং ঐ দিনটিকে বাসন্ত বিষুব বা মহাবিষুব বলে (চিত্র ২)
ঋতু পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতুঃ
বাংলাদেশ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং এ দেশের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা বয়ে গেছে তাই আবহাওয়ার পরিবর্তন অবস্থা প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত। বিভিন্ন ঋতুর বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
গ্রীষ্মকালঃ
এপ্রিল মাসের মধ্যভাগ থেকে জুন মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত অর্থাৎ বাংলা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস গ্রীষ্মকাল হয়। এ সময় সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় তাই প্রচন্ড গরম থাকে। এ ঋতুতে দিন বড় হয় আর রাত ছোট হয় ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মের দাবদাহে নদী-নালা, খাল-বিলসহ জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যায়। এসময় পশ্চিমা মৌসুমি বায়ু দেশের উপর দিয়ে বইতে শুরু করে। আবার পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ুও প্রবাহিত হয়। মহাসাগর থেকে আগত মেঘতারিত বায়ু প্রবাহের সঙ্গে শীতল ও শুষ্ক বায়ু মুখোমুখি সংস্পর্শে এলে তা প্রবল ঝড়ের রূপ নেয় যা ‘কালবৈশাখী’ নামে পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশের ফলের ঋতু বলা হয় গ্রীষ্মকালকে। কারন -আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, লিচু, তরমুজ প্রভৃতি সুস্বাদু ফল এ ঋতুতেই জন্মে।
শরৎকালঃ
বর্ষার অবসানে শরৎ এক অপূর্ব শোভা ধারণ করে আবির্ভূত হয়। বাংলা বর্ষের ভাদ্র, আশ্বিন এ দুই মাস অর্থাৎ আগস্ট মাসে মধ্যভাগ থেকে অক্টোবর মাসে মধ্যরাত পর্যন্ত শরৎকাল এর বিস্তৃতি। এ সময় দিন রাত সমান প্রায় থাকে তাই শীত ও গরমের পরিমাণ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। এ সময় নীল আকাশে সাদা মেঘে ভেসে বেড়ায়, তবে তখনও মাটিতে বর্ষার সরসতা।ভাদ্র মাসে তাপমাত্রা আবার বৃদ্ধি পায়, আর্দ্রতা ও সর্বোচ্চে পৌঁছে। শরতের ভোর বেলায় ঘাসের ডগায় শিশির জমে। শরতের শেষে রোদের তেজ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
হেমন্তকালঃ
শরতের শেষে হেমন্তকাল। অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ বাংলা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে হেমন্তকাল। মূলত হেমন্তকাল হচ্ছে শরৎ ও শীতকালের মধ্যবর্তী একটি পরিবর্তনশীল পর্যায়। দিনের দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় দিনের শেষে তাপমাত্রার ব্যাপক পতনে ফলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিকেলে হিম পড়তে শুরু করে।মাঝে মাঝে কুয়াশাও দেখা যায় এ সময় চাষিরা ধান কেটে ঘরে তোলে এবং ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব শুরু হয়।
শীতকালেঃ
এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে বলে বাংলাদেশে সূর্যের রশ্মি তীর্যকভাবে পতিত হয় এবং তাপমাত্রার পরিমাণ থাকে কম।শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য বড় আর রাত্রি ছোট হয়। মূলত ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুসারে পৌষ ও মাঘ এ দু মাস শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডা অনুভূত হয়। জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১১-১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়ে থাকে। শীতকালে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে উচ্চ তাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়।উচ্চ তাপ কেন্দ্র থেকে পূর্বমুখী শীতল বায়ুর একটি প্রবাহ গতিশীল হয় এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোন দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় প্রচুর ঠান্ডা অনুভূত হয়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত জলীয়বাষ্প পূর্ণ বায়ুর প্রভাবে শীতকালে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়।