0

সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণপূর্বক এ সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে তােমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন। স্তরঃ এস.এস.সি পরীক্ষা ২০২১, বিভাগঃ মানবিক, বিষয়ঃ বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বিষয় কোডঃ ১৫৩, মোট নম্বরঃ ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর-০২।

অধ্যায় ও শিরােনামঃ দ্বিতীয় অধ্যায়: বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রােম)

অ্যাসাইনমেন্টঃ সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণপূর্বক এ সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে তােমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন।

শিখনফল/ বিষয়বস্তুঃ

  • ১. সিন্ধুসভ্যতার আবিষ্কারের কাহিনী ও ভৌগােলিক অবস্থান জানতে পারবে;
  • ২. সিন্ধুসভ্যতার রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা বর্ণনা করতে পারবে;
  • ৩. সভ্যতার বিকাশে সিন্ধুসভ্যতার নগর। পরিকল্পনা, শিল্পকলা ও ভাস্কর্যের বর্ণনা করতে পারবে;

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • ১. সিন্ধুসভ্যতার পটভূমি বর্ণনা, ভৌগােলিক অবস্থান চিহ্নিতকরণ এবং সময়কাল নির্ণয় করা;
  • ২. সিন্ধুসভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ;
  • ৩. সিন্ধুসভ্যতার নগর (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে) এবং তােমার নিজ এলাকার (ওয়ার্ড/পৌর শহর/উপজেলা শহর) নগর পরিকল্পনার সাদৃশ্য সৃজনশীলতার সাথে বিশ্লেষণ করা;
  • ৪. সিন্ধুসভ্যতার নগর (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে) এবং তােমার নিজ এলাকার (ওয়ার্ড/পৌর শহর/উপজেলা শহর) নগর পরিকল্পনার বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা।

2nd Week SSC History of Bangladesh & World Civilization Assignment 2021

সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণপূর্বক এ সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে আমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন।

পটভূমি, ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কাল-

সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণপূর্বক এ সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে আমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন:

পটভূমি:

সিন্ধু নদের অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বলে এই সভ্যতার নাম রাখা হয় সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার সংস্কৃতিতে অনেক সময়ে হরপ্পা সংস্কৃতি বা হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়ে থাকে। এই সভ্যতার আবিস্কার কাহিনী চমকপ্রদ। বর্তমানে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদারাে শহরে উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি ছিল। স্থানীয় লােকেরা বলতাে যে, মড়া মানুষের ঢিবি। বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপধ্যায়ের নেতৃত্বে পুরাতত্ত্ব বিভাগের লােকেরা ঐ স্থানে বৌদ্ধ স্তুপের ধ্বংসাবশেষ আছে ভেবে মাটি খুঁড়তে থাকে। অপ্রত্যাশিতভাবে বেরিয়ে আসে তাম্র-বােণ্ড যুগের নিদর্শন। একই সময়ে ১৯২২-২৩ খ্রিষ্টাব্দে দয়ারাম সাহানীর প্রচেষ্টায় পাঞ্জাবের পশ্চিম দিকে মন্টোগােমারী জেলার হরপ্পা নামক স্থানেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিস্কৃত হয়। জন মার্শালের নেতৃত্বে পুরাতত্ত্ব বিভাগ অনুসন্ধান চালিয়ে আরাে বহু নিদর্শন আবিস্কার করেন।

ভৌগলিক অবস্থান:

উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতার নাম সিন্ধু সভ্যতা হলেও এর বিস্তৃতি ছিল বিশাল এলাকাজুড়ে। মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পাতে এই সভ্যতার নিদর্শন সবচেয়ে বেশি আবিস্কৃত হয়েছে। তা সত্বেও ঐ সভ্যতা শুধু সিন্ধু নদীর অববাহিকা বা ঐ দুটি শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। পাকিস্তানের পাঞ্জাব সিন্ধু প্রদেশ ভারতের পাঞ্জাব রাজস্থান, গুজরাটের বিভিন্ন অংশে এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে পাঞ্জাব থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভৌগােলিক এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

সময়কাল:

সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। পণ্ডিতগণের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতার উত্থান-পতনের কাল। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, আর্য জাতির আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টাব্দপূর্ব ১৫০০ অথবা ১৪০০ অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটে।

সিন্ধুসভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা-

রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা:

সিন্ধু সভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবন ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মহেঞ্জোদারাে হরপ্পার নগর বিন্যাস প্রায় একই রকম ছিল। এগুলাের ধ্বংসাবশেষ দেশে নিশ্চিতভাবে বােঝা যায় যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উঁচু ভিতের উপর শহরগুলাে নির্মাণ করা হয়েছিল। শহরগুলাের এক পাশে উচু ভিত্তির উপর একটি করে নগরদুর্গ নির্মাণ করা হতাে। চারদিক থাকত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের শাসনকর্তারা নগর দুর্গে বসবাস করতেন। প্রশাসনিক বাড়িঘরও দুর্গের মধ্যে ছিল, নগরের ছিল প্রবেশদ্বার। সিন্ধু সভ্যতার যুগে মানুষ সমাজবদ্ধ পরিবেশে বসবাস করত। সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চালু ছিল। সিন্ধু সভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণীবিভাগ ছিল। সব লােক সমান সুযােগসুবিধা পেত না। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকেরা গ্রামে বসবাস করত । শহরে ধনী এবং শ্রমিকদের জন্য আলাদা-আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

অর্থনৈতিক অবস্থাঃ

সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষি এবং উৎপন্ন ফসলের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া অর্থনীতির আর একটি বড় দিক ছিল পশুপালন। কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি মৃৎপাত্র নির্মাণ ধাতুশিল্প বয়নশিল্প, অলংকার নির্মাণ পাথরের কাজ ইত্যাদিতেও তারা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। এই উন্নতমানের শিল্প পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সিন্ধু সভ্যতার বণিকরা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ রক্ষা করে চলত। বণিকদের সাথে আফগানিস্তান বেলুচিস্তান মধ্য এশিয়া পারস্য, মেসােপটেমিয়া, দক্ষিণ ভারত রাজপুতনা, গুজরাট প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ ছিল।

সিন্ধু সভ্যতার অবদান:

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলাের মধ্যে একটি হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতা। নিম্নে এই সভ্যতার অবদান আলােচনা করা হলাে: নগর পরিকল্পনা: সিন্ধু সভ্যতার এলাকায় যেসব শহর আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে সবচেয়ে বড় শহর। ঘরবাড়ি সবই পােড়া মাটির বা রােদে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলাের বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বােঝা যায় যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা উন্নত ধরনের নাগরিক সভ্যতায় অভ্যস্ত ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাের নগর পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। পথের ধারে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপােস্ট।

শিল্প: সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের শিল্প সম্পর্কে আলােচনা করতে গেলে প্রথমেই মৃৎশিল্পের কথা বলতে হয়। তারা কুমারের চাকার ব্যবহার জান্ত এবং তার সাহায্যে সুন্দর মাটির পাত্র বানাতে পারত। পাত্রগুলাের গায়ে অনেক সময় সুন্দর সুন্দর নকশা আঁকা থাকত। তাছাড়া সােনা, রুপা, তামা ইলেকট্রাম ও ব্রোঞ্জ ইত্যাদি ধাতুর অলংকার তৈরিতে তারা পারদর্শী ছিল। অলঙ্কারের মধ্যে আংটি, বালা নাকফুল গলার হার, কানের দুল বাজুবন্দ ইত্যাদি ছিল উল্লেখযােগ্য। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা লােহার ব্যবহার জানত । হাতির দাঁতসহ অন্যান্য হস্তশিল্পেরও দক্ষ কারিগর ছিল।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য: সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন রেখে গেছে। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পচিশ কক্ষের বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে। আবার কোথাও দুই তিন তলা ঘরের অস্তিত্ব আবিস্কৃত ২.য়ছে। হরপ্পাতে বিশাল আকারের শস্যাগারও পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদারােতে একটি বৃহৎ স্নানাগার এর নিদর্শন পাওয়া গেছে যার মাঝখানে বিশাল চৌবাচ্চাটি ছিল সাঁতার কাটার উপযােগী। ডাস্কর্যশিল্পেও সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের দক্ষতা ছিল।

সিন্ধু সভ্যতার ( মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পা) নগরের সাথে আমার এলাকার নগর পরিকল্পনার সাদৃশ্য নিম্নে দেয়া হলাে:

  • ১ ) রাস্তাঘাটঃ প্রাচীন সভ্যতা হলেও সিন্ধু সভ্যতার নগরী ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা ছিল । আমার এলাকার রাস্তাগুলাে পাকা ।
  • ২) জল নিষ্কাশনঃ সিন্ধু সভ্যতায় জল নিষ্কাশন এর জন্য ছােট ছােট নর্দমা গুলা কে বড় নর্দমার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হতাে। আমাদের এলাকায় কিছু কিছু ছােট ছােট নর্দমা রয়েছে যেগুলােকে বড় খালের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে ।
  • ৩ ) আমাদের এলাকার পাকা রাস্তার ধারে বাতি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে রাতের বেলায় লােকজন স্বাচ্ছন্দ্যের চলাফেরা করতে পারে । এমনিভাবে সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাে নগরীর রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে ল্যাম্পপােস্ট ব্যবহার করা হতাে ।

সিন্ধু সভ্যতার ( মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পা) নগরের সাথে আমার এলাকার নগর পরিকল্পনার বৈসাদৃশ্য নিম্নে দেয়া হলাে:

Get All SSC History of Bangladesh and World Civilization Assignment 2021 Answer