পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ
পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক নিরূপণ
ভূগোলের ধারণাঃ
আমরা পৃথিবীতে বাস করি। পৃথিবী আমাদের আবাসভূমি। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। ইংরেজিতে Geography শব্দটি থেকে ভূগোল শব্দ এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস প্রথম Geography শব্দ ব্যবহার করেন। Geo ও Graphy শব্দ দুটি মিলেই হয়েছে Geography। Geo শব্দের অর্থ ভূ বা পৃথিবী এবং Graphy শব্দের অর্থ বর্ণনা। সুতরাং Geography শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা। পৃথিবী আবার মানুষের আবাসভূমি। অধ্যাপক ম্যাকনি মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে বলেছেন ভূগোল। কোন কোন ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ, কেউ বলেছে পৃথিবীর বিজ্ঞান। Professor carl Ritter ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।
ভূগোলকে একদিকে প্রকৃতিবিজ্ঞান আবার অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান।
প্রকৃতিক, পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান হল ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এই পৃথিবীতে তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদনদীর, সাগর, খনিজ সম্পদ তার জীবনযাত্রা বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে। তার ক্রিয়া-কলাপ তার পরিবেশে ঘটায় নানান রকম পরিবর্তন। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর -বন্দর, নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশের বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত করে। বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম ও শহরের লোকালয়। খাল, বিল, পুকুর ভরাট হয়। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এই মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে। এই এই সম্বন্ধের মূলে আছে কার্যকারণের খেলা । ভূগোলের প্রধান কাজ হল এ কার্যকারণ উদঘাটন করা। পৃথিবীর পরিবেশের সীমার মধ্যে থেকে মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম চলছে সেই সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় ভূগোল।
পরিবেশের ধারনাঃ
মানুষ যেখানে বাস করুক তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সকল দান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ।নদ নদী, নালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত বন-জঙ্গল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, উদ্ভিদ, প্রাণী, মাটি,পানি ও বায়ু নিয়ে গড়ে উঠে পরিবেশ। কোন জীবের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদানের সর্বসমেত প্রভাব ও সংঘটিত ঘটনা হলো জীবের পরিবেশ। পরিবেশ বিজ্ঞানী Arms এর মতে, জীবসম্প্রদায় পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।
পার্ক (C.C.Park) বলেছেন, পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোন নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফল বোঝায়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশনও পরিবর্তিত হয়। যেমন- শুরুতে মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়ে ছিল মানুষের পরিবেশ। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলী। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের পরিবেশ।
পরিবেশের উপাদানঃ
পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার। যেমন – জড় উপাদান ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়, যাদের বৃদ্ধি আছে, জন্ম আছে, মৃত্যু আছে তাদের বলে জীব। গাছপালা, পশুপাখি,কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হল জীব। এরা পরিবেশের উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, সাগর, আলো, পাহাড়-পর্বত নদী-নালা, আদ্রতা, উষ্ণতা হলো জড় পরিবেশের উপাদান। এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
[Join]ভূগোলের পরিধিঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন, চিন্তাধারার বিকাশ, সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ভূগোলের পরিধিকে অনেক বিস্তৃত করেছে। এখন নানান রকম বিষয়। যেমন- ভূমিরূপবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, মৃত্তিকাবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ভূগোলের শাখাঃ
[Ads]ক) প্রাকৃতিক ভূগোলঃ
ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। পৃথিবীর ভূমিরূপ, এর গঠন প্রক্রিয়া, বায়ুমণ্ডল, বারিমন্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
১। ভূমিরূপবিদ্যাঃ ভূমিরূপ বিদ্যার একটি গ্রহের নগ্নীভবন ও ক্ষয়ীভবনের ভূমিরূপের পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করে।
২। জলবায়ু বিদ্যাঃ জলবায়ু বিদ্যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার ধরন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।
৩। জীব ভূগোলঃ পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রাণীজগৎ এবং উদ্ভিদের বন্টন নিয়ে জীব ভূগোল আলোচনা করে।
৪। মৃত্তিকা ভূগোলঃ মৃত্তিকা ভূগোলবিদগণ অশ্মন্ডলের উপরিভাগের মৃত্তিকা এবং এর বন্টন বিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করে।
৫। সমুদ্রবিদ্যাঃ পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ, সমুদ্র পৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুনাগুন ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সমুদ্রবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
খ) মানব ভূগোলঃ
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কিভাবে বসবাস করছে, কিভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, তার কার্যকারণ অনুসন্ধান মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
১। অর্থনৈতিক ভূগোলঃ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যেসব অর্থনৈতিক কাজ করে তা অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। এসব কাজ হল কৃষিকাজ, পশুপালন, সম্পদ, খনিজ সম্পদ সংগ্রহ, ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ইত্যাদি।
২। জনসংখ্যা ভূগোলঃ জনসংখ্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি প্রকৃতি, তার কার্যকারণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর এর প্রভাব জনসংখ্যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
৩। আঞ্চলিক ভূগোলঃ অঞ্চলভেদে পৃথিবীর ভূ প্রকৃতি, জলবায়ু, উদ্ভিদ, জীবজন্তু,মানুষ ও মানুষের জীবনধারণ প্রণালী বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক বিষয়বস্তু অনুসরণ করা আঞ্চলিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।
৪। রাজনৈতিক ভূগোলেঃ রাজনৈতিক বিবর্তন রাজনৈতিক বিভাগ ও পরিসীমা এবং বিভাগের মধ্যেস্থিত ভৌগলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।
৫। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোলঃ ভূগোলের এই শাখায় সংখ্যাতাত্ত্বিক কৌশল এবং মডেল ব্যবহার করে প্রমাণার্থ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি ভূগোলের অন্যান্য শাখা ব্যবহার করা হয়। কিছুকিছু ভূগোলবিদ শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ হন।
৬। পরিবহন ভূগোলঃ পরিবহন ভূগোলবিদরা সরকারি, বেসরকারি, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং মানুষ ও পণ্যের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর সম্পর্কে আলোচনা করে।
৭। নগর ভূগোলঃ ভূগোলের এ শাখায় নগরের উৎপত্তি ও বিকাশ, নগর ও শহরের শ্রেণীবিভাগ, নগর পরিবেশ, নগরের কেন্দ্রীয় এলাকা, নগরীর বস্তি ইত্যাদি বিষয় চর্চা করা হয়।
৮। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস, দুর্যোগ থেকে পরিবেশ সহ সমুদ্রের প্রকৌশল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আলোচ্য বিষয়।
পরিবেশের উপাদান গুলোকে শনাক্ত করে এগুলো যেভাবে মানুষের সাথে সম্পৃক্ত তা উল্লেখ করা হলোঃ
পরিবেশের অসংখ্য জীব ও জড় উপাদান রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উপাদান আলোচনা করা হলোঃ
- গাছপালাঃ গাছপালা পরিবেশের জীব উপাদান।গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। আর আমরা সে অক্সিজেন গ্রহণ করি।এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। এছাড়া উদ্ভিদ ও গাছপালা আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
- বিভিন্ন ধরনের প্রাণীঃ প্রাণীরা পরিবেশের জীব উপাদান। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী।,যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া ইত্যাদির দুধ ও মাংস মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটায়।
- পানিঃ পানি পরিবেশের জড় উপাদান।বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণী এবং গাছপালা বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য।
- মাটিঃ মাটি পরিবেশের জড় উপাদান।মাটিতে গাছপালা ও তরুলতা জন্মায় এবং মানুষ মাটিতে ফসল চাষ করে তাদের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক ও মানবিক উপাদানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কঃ
প্রাকৃতিক ও মানবিক উপাদান অর্থাৎ জীব ও জড় উপাদানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
- জীব উপাদানের স্বাভাবিক বিস্তারের জন্য জড় উপাদান অপরিহার্য।
- পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্ব অত্যাধিক।
- প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশের সমন্বয়ে মানুষের সকল কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভৌগোলিক পরিবেশে মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ভৌগোলিক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে।
- Class 10 3rd Week Assignment 2022 Answer
- SSC Biology Assignment 2021 & 2022
- SSC Islam Assignment 2022
- SSC English Assignment Answer 2022
- SSC Hinduism Assignment 2022
- SSC 9th Week Assignment Answer 2022
- SSC 4th Week Assignment 2021 & 2022
- SSC Math Assignment 2022 Answer
- SSC History of Bangladesh and World Civilization Assignment
- SSC Accounting Assignment 2021 & 2022
Vai amake ki ssc er sobgulu assiment er link dite parben, dile khub help hobe.