0

“রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদান”- এই শিরোনামে নিম্নের সংকেত অনুসরণ করে সর্বোচ্চ ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ লেখ।

“রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদান”- এই শিরোনামে নিম্নের সংকেত অনুসরণ করে সর্বোচ্চ ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ লেখ।

সংকেত:

১. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে তোমার দৃষ্টিতে অধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ

২. অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ার কারণ

৩. রাষ্ট্র গঠনের উপাদান সমূহ

৪. তোমার দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

৫. উক্ত উপাদানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা।

“রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদান” প্রবন্ধ

ভূমিকাঃ

রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মানুষ কোন না কোন রাষ্ট্রে বসবাস করে। আমাদের এই পৃথিবীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ টি রাষ্ট্র আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রের আছে নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং জনসংখ্যা। এছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আরো আছে সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। মূলত এগুলো ছাড়া কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।

অধ্যাপক গার্নার বলেন, সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, সুসংগঠিত সরকারের প্রতি স্বভাবজাত ভাবে আনুগত্যশীল, বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণে হতে মুক্ত স্বাধীন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে। এটি সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভূগোলিক সীমার ভিতরে বসবাসকারী সমাজের সদস্য শাসনের জন্য নিয়মকানুন তৈরি করে।

রাষ্ট্রের উৎপত্তিঃ

রাষ্ট্র কখন, কিভাবে উৎপত্তি লাভ করছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অতীত ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কতগুলো মতবাদ প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ

১।ঐশী মতবাদ।
২।বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ
৩।সামাজিক চুক্তি মতবাদ ও
৪।ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ।

ঐশী মতবাদঃ

এটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ। এ মতবাদে বলা হয়- বিধাতা বা স্রষ্টা স্বয়ং রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি শাসক প্রেরণ করেছেন। শাসক তার প্রতিনিধি এবং তিনি তার কাজের জন্য একমাত্র স্রষ্টা বা বিধাতার নিকট দায়ী, জনগণের নিকট নয়। শাসক যেহেতু স্রষ্টার নির্দেশে কাজ করে, সেহেতু শাসকের আদেশ অমান্য করার অর্থ বিধাতার নির্দেশ অমান্য করা। এ মতবাদ অনুসারে শাসক একাধারে যেমন রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যদিকে তিনিই আবার ধর্মীয় প্রধান। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই মতবাদকে বিপজ্জনক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক বলে সমালোচনা করেন। তাদের মতে যেখানে জনগণের নিকট শাসক দল থাকে না সেখানে স্বৈরশাসন সৃষ্টি হয়। এই মতবাদকে বিধাতার সৃষ্টি মূলক মতবাদ বলা হয়।

[ArticleAds]

বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদঃ

[ArticleAds]

এই মতবাদের মূল বক্তব্য হল- বল বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে এবং শক্তির জোরে রাষ্ট্র টিকে আছে। এ মতবাদে বলা হয় – সমাজের বলশালী ব্যক্তিরা যুদ্ধ-বিগ্রহ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বলের উপর নিজেদের আধিপত্য স্থাপনের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা করে। এ মতবাদে আরও বলা হয় – সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এভাবেই যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। সমালোচকরা এই মতবাদকে অযৌক্তিক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেন, শক্তির মাধ্যমে যদি রাষ্ট্র টিকে থাকতো তাহলে শক্তিশালী রাষ্ট্রের পাশাপাশি সামরিক দিক থেকে দুর্বল রাষ্ট্রটিকে থাকতে পারত না। আসলে শক্তির জোরে নয় বরং সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এবং টিকে থাকে।

সামাজিক চুক্তি মতবাদঃ

এই মতবাদের মূল কথা হলো – সমাজে বসবাসকারী জনগণের পারস্পরিক চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। ব্রিটিশ রাষ্ট্র দার্শনিক টমাস হবস্ ও জন লক এবং ফরাসি দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশো সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন। এ মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করত। তারা প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলত এবং প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যে আইন অমান্য করলে শাস্তি দেয়ার কোনো কর্তৃপক্ষ ছিলনা। ফলে সামাজিক জীবনের অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষ হয়ে ওঠে স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। প্রকৃতির রাজ্যে এই অরাজকতা পূর্ণ অবস্থা দেখে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে এবং নিরাপত্তা বিনিময়ে নিজেদের উপর শাসন করার জন্য স্থায়ীভাবে শাসকের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে।

[Join]

ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদঃ

এই মতবাদের মূল বক্তব্য হলো রাষ্ট্র কোন একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের বিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন শক্তির উপাদান ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে হতে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। যেসব উপাদান এর কার্যকারিতা ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে সেগুলো হলো – সংস্কৃতের বন্ধন, রক্তের বন্ধন, ধর্মের বন্ধন, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা ও কার্যকলাপ। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সম্পর্কে ডঃ গার্নার বলেছেন, রাষ্ট্র বিধাতার সৃষ্টি নয়, বল প্রয়োগের মাধ্যমেও সৃষ্টি হয়নি বরং ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ এর মধ্যে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ। এ মতবাদে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আসলে বর্তমানের রাষ্ট্র বহুযুগের বিবর্তনের ফল।

[Ads]

সুতরাং, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আমার দৃষ্টিতে অধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ হচ্ছে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ।

ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ার কারণঃ

বিবর্তনবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। রাষ্ট্র আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়ন বা কোন এক অলৌকিক শক্তিও রাষ্ট্র সৃষ্টি করেনি। রাষ্ট্র হল মানব সমাজের নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ের ফসল। বিবর্তনবাদের এই ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানসম্মত।

রাষ্ট্র গঠনের উপাদান সমূহঃ

রাষ্ট্র গঠনের উপাদান চারটি। যথা-

১। জনসমষ্টি,

২। নির্দিষ্ট ভূখন্ড,

৩। সরকার,

৪।সার্বভৌমত্ব।

জনসমষ্টিঃ

রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদান জনসমষ্টিকোন ভূখণ্ড একটি জনগোষ্ঠী স্থায়ীভাবে বসবাস করলেই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে । তবে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য কি পরিমাণ জনসমষ্টি প্রয়োজন এর কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেমন বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি, ভারতে ১২১ কোটি, ব্রুনাইয়ে প্রায় ২ লক্ষ। তবে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে, একটি রাষ্ট্রের সম্পদ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনসংখ্যা থাকা বাঞ্ছনীয়।

নির্দিষ্ট ভূখন্ডঃ

রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখন্ড আবশ্যক। ভূখন্ড বলতে একটি রাষ্ট্রের স্থলভাগ, জলভাগ ও আকাশসীমা কে বোঝায়। রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ছোট বা বড় হতে পারে। যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল 2015 সালের 31 জুলাই 1,47,570 বর্গ কিলোমিটার। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থলসীমানা চুক্তি অনুযায়ী2015 সালের 31 জুলাই দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডে10, 041.25 একর জমি যোগ হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা মামলার রায় বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানের সমুদ্রে 1 লক্ষ 11 হাজার 813 বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণচীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রকৃতি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রফল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়।

সরকারঃ

রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরকার। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রম বলি সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সরকার গঠিত হয় তিনটি বিভাগ নিয়ে যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ। সকল রাষ্ট্রের সরকার গঠন একই রকম হলেও রাষ্ট্রপতিদের সরকারের রূপ ভিন্ন ভিন্ন। যেমন বাংলাদেশের সংসদীয় সরকার আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। রাষ্ট্র যাবতীয় শাসনকাজ সরকারি পরিচালনা করে থাকে।

সার্বভৌমত্বঃ

রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি রাষ্ট্রের চরম ও পরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর দুটি দিক রয়েছে যথা- অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের সাহায্যে রাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারির মাধ্যমে ব্যক্তি ও সংস্থার উপর কর্তৃত্ব করে। অন্যদিকে বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্রদোহিতা আত্মনিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত রাখে।

আমার দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব।
উক্ত উপাদানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবার যুক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হলোঃ

স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হলো একটি অবস্তুগত বৈধ সত্তা, যা একটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাষিত এবং যার একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড সার্বভৌম বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি স্থায়ী জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সীমা সরকার এবং অপর কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা থাকলে তাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলা হয়। সাধারণ অর্থে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র অন্য কোন শক্তি বা রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল বা অন্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত নয়। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত একটি আইনগত প্রত্যয়। রাষ্ট্র সত্তার ঘোষণামূলক তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়াও একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে অস্বীকৃত রাষ্ট্র সমূহ কখনো কখনো অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অপরাগ হয়। তাই বলা যায়, রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।