0

প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে ব্যাপন ও অভিস্রবণ এর দুটি করে ঘটনা

ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য

তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যপ্ত হয়ে উচ্চ ঘনত্বের এলাকা থেকে নিম্ন ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলা হয়। অর্থাৎ যতক্ষণ দুই এলাকায় ঘনত্ব সমান না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপন চলতে থাকে।

ব্যাপনকারী পদার্থের পরমাণুর গতি শক্তির প্রভাবে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় যাকে ব্যাপন চাপ বলে।

  • ডিফিউশন হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পদার্থের চলাচল প্রক্রিয়া।
  • এ প্রক্রিয়ায় উচ্চ ঘনত্বের অঞ্চল থেকে নিম্নের দিকে চলে।
  • এটি দরকারী অণুগুলির চলাচলে সহায়তা করে।
  • জীবের শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাপন প্রক্রিয়া ঘটে। যেমন- উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সময় বাতাসের কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই অত্যাবশ্যকীয় কাজ ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়।

আমার প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে ব্যাপনের দুটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. ঘরে সেন্ট বা আঁতর ছড়ালে বা ধুপ জ্বালালে সমস্ত ঘরে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপনের কারণে ঘটে থাকে। ধূপের ধোঁয়া ও সেন্টের অণুগুলো অধিক ঘনত্ব সম্পন্ন হওয়ায় সম্পূর্ণ ঘরে কম ঘনত্ব সম্পন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত ঘর সুবাসে ভরে যায়।
  2. রুম ফ্রেশনারের স্প্রে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে যার মাধ্যমে আমরা গন্ধ অনুভব করতে পারি।

অভিস্রবণের বৈশিষ্ট্য

[ArticleAds]

একই দ্রব্য ও দ্রাবক বিশিষ্ট দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক থাকলে যে ভৌত প্রক্রিয়ায় দ্রাবক কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্ব দ্রবণের দিকে ব্যাপিত হয় তাকে অভিস্রবণ বলে। একই বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও তাপ মাত্রা বিশিষ্ট একটি দ্রবণ ও তার বিশুদ্ধ দ্রাবক যদি একটি বৈষম্যভেদ্য দ্বারা পৃথক করে রাখা যায় তবে বৈষম্যভেদ্য পর্দা ভেদ করে বিশুদ্ধ দ্রাবক এর অধিক ঘন দ্রবণে প্রবেশকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিক হতে যে পরিমাণ চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় তাকে উক্ত দ্রবণের অভিস্রবণিক চাপ বলে।

  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্লাজমা পর্দা দিয়ে পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ লবণ কোষের মধ্যে প্রবেশ করে বা বাইরে আসে।
  • কোষের মধ্যে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া গুলো কে সচল রাখার জন্য অভিস্রবণ এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • এ প্রক্রিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করতে পারে।
  • কান্ড ও পাতাকে সতেজ এবং খাড়া রাখতে সাহায্য করে।
  • তাছাড়া প্রাণীর অন্ত্রে খাদ্য শোষিত হতে পারে।

আমার প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে অভিস্রবণ এর দুটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. কিসমিস এর ভেতরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কিসমিস গুলো কুঁচকে যায়। কিসমিস গুলো পানিতে রাখলে পানি শোষণ করে সেগুলো ফুলে ওঠে। কারণ কিশমিশের ভেতরে শর্করার গাঢ় দ্রবণ একটি পর্দা দ্বারা পানি থেকে পৃথক থাকে। ফলে কিশমিশের মধ্যে পানি প্রবেশ করলে দ্রাবক পানি তার কম ঘনত্বের এলাকা থেকে বেশি ঘনত্বের এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়ে তাই কিসমিস গুলো ফুলে ওঠে।
  2. একটি ফানেলের চওড়া মুখ মাছের পটকায় ঢুকিয়ে তাকে পানি দ্রবণে রেখে, ফানেলের চও্ড়া মুখে চিনির দ্রবণ নিলে দেখা যাবে কিছুক্ষন পর চিনির দ্রবণ ফুলে উঠছে। এতে বুঝা যায় অভিস্রবণ ঘটছে। কারণ এক্ষেত্রেপফটকা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে। তখন পানি তার কম ঘনত্বের এলাকা থেকে বেশি ঘনত্বের এলাকার দিকে ব্যাপিত হয়। ফলে চিনির দ্রবণের উচ্চতা বেড়ে যায়।

অভিস্রবণ এর একটি পরীক্ষা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

কাজঃ অভিস্রবণের পরীক্ষা।

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ থিসল ফানেল, মাছের পটকা, বিকার, চিনির দ্রবণ, স্ট্যান্ড ক্ল্যাম্প।

পদ্ধতিঃ থিসল ফানেলের চওড়া মুখটি মাছের পটকায় ঢেকে সুতা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে এবং বিকারটিতে অর্ধেক পানি নিতে হবে। বিকারে পানি নেওয়ার পর থিসল ফানেলের নল দিয়ে চিনির গাঢ় দ্রবণ ঢালতে হবে। এবার ফানেলের চওড়া মুখটি বিকারের পানিতে সম্পুর্ন ডুবিয়ে ফানেলটিকে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ড এর সাথে আটকে রাখতে হবে। এরপর ফানেলের নলে মার্কার পেন দিয়ে চিহ্নিত করে পরীক্ষা ব্যবস্থাটিকে একটা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণঃ কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে থিসল ফানেলের নলের দ্রবণের তল উপরের দিকে উঠে গেছে। আরও কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো পানির তলার উপরে উঠছে না।

সিদ্ধান্তঃ এ থেকে বুঝা যায় উক্ত প্রক্রিয়াটি অভিস্রবণ। কারণ এক্ষেত্রে পটকা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে, তখন পানি তার কম ঘনত্বের এলাকা থেকে বেশি ঘনত্বের এলাকার দিকে ধাবিত হয়, তাই চিনির দ্রবণের উচ্চতা বেড়ে যায়।
সুতরাং প্রক্রিয়াটি অভিস্রবণ।