পাঠ ৩- প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি পরিবারের দায়িত্ব
প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জানার আগে প্রতিবন্ধী শিশুটির কারণে পরিবারটি কী ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে, আমরা তা জেনে নিই –
সমস্যা ১
পরিবারটি যখন সন্তানের অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারেন, তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যায়। চিকিত্সকের কাছে সন্তানের প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে শােনার পর মাবাবা বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। তখন তারা বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছােটাছুটি করেন। এতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে প্রারম্ভিক উদ্দীপনা ও বিশেষ যত্ন পেতে শিশুটির বিলম্ব হয়। সব পিতামাতার মনে প্রশ্ন জাগে, আমার সন্তানটি কবে ভালাে হবে? সে কি কোনাে দিন কথা বলতে পারবে? কবে থেকে সে বয়স অনুযায়ী আচরণ করবে?
তারা মনে করেন, অন্যান্য রােগের মতাে প্রতিবন্ধিতাও চিকিৎসার মাধ্যমে সারানাে সম্ভব। তাদের শেষ | পর্যন্ত বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হয় যে, তাদের সন্তানের এই প্রতিবন্ধিতা সারা জীবনের জন্য বহন করতে হবে।
সমস্যা ২
প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম হওয়ায় বিভিন্ন কারণে মায়ের মন ভেঙে যায়। যেমন- অনেক ক্ষেত্রে মাকে এ রকম সন্তান জন্ম দেওয়ায় দোষারােপ করা হয়। সন্তানের দেখাশােনার জন্য মায়ের ওপর প্রচণ্ড কাজের চাপ পড়ে। তখন সন্তানটির প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ পান না।
সমস্যা ৩
প্রতিবন্ধী শিশুটির চিকিৎসা, বিশেষ যত্ন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত শ্রম, সময়, ধৈর্য এবং যথেষ্ট পরিমাণে অর্থের প্রয়ােজন হয়। এগুলাের ব্যবস্থা করতে পরিবারটিকে সমস্যায় পড়তে হয়।
সমস্যা ৪
অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে নানা রকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। অতিরিক্ত চঞ্চলতা, জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা, একই কাজ বারবার করা ইত্যাদি আচরণের কারণে সব সময় তাকে দেখে রাখার দরকার হয়। ফলে প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে গেলে আত্মীয়স্বজনেরা অনেক সময় বিরক্ত হন।
প্রতিবন্ধী শিশুর পরিবারের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি সমস্যার কথা তােমরা জানলে। তােমরা আগের পাঠে জেনেছ যে, শিশুর উপযুক্ত বিকাশের জন্য দরকার উন্নত পারিবারিক পরিবেশ। প্রতিবন্ধী শিশুটির ক্ষেত্রেও উন্নত পারিবারিক পরিবেশ ও বিশেষ যত্নের প্রয়ােজন হয়। এজন্য যা যা করণীয়-
- প্রতিবন্ধী শিশুটিকে অন্য মাভাবিক শিশুর মতােই ভালােবাসা দিতে হবে। পরিবাজের মধ্যে মা-বাবা, ভাই-বােনের কাছে যদি সে ভালােবাসা পায়, তৰে ধষ্ঠিবেশী, আত্মীয়-স্বজনেরাও তাকে সেভাবে ভালােবাসবে।
- শিশুর প্রতিক্ষিত বেকার পর য াাদি সম্ভব তার প্রতিক্ষিতার ধরন অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যথা করতে হবে। এ শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকে তাকে জীবনযাপনের প্রয়ােজনীয় কাজ শিখতে সাহায্য করা একভার ক্ষমা অনুযারী শিক্ষা কার্যক্রম দেওয়া বকখাকমা।
- শিশুর জন্য বিশেষ যত্ন, চিকিসা সেবা ও সহায়ক উপকরপের ক রতে হবে। যেমন- মল মাত্রায় এক বিধীয় সম বা সহায়ক যন্ত্র, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য চশমা, মুক্তি, শারীরিক প্রতিকবীর জন্য ক্ৰচ, মুইল চেয়ার, শাঠি, বিশেষ মশার চেয়ার, জুতা ইত্যাপি।
- যে কোনাে অনুষ্ঠানে পরিবারে সবার সাথে তাকে বেড়াতে নিতে যাবে। যেমন- পিকনিক,বিয়ে, শিশু পার্ক, মেলা ইভ্যাদি। সেখানে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, তাদের সাথে কথা কাছে ফল, যা কিনতু সেগুলাে বুঝিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিধী শিশুটি সহজেই সবার সাথে খাপ খাওয়াতে শিখবে। অনেক সময় বাড়িতে অভিৰি এলেও শিশুটিকে সামনে আনা য় না, একা ঘরে খায়। এটা ভাল বিকালের জন্য ক্ষতিকর।
- প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের স্কুলনায় অপুষ্টির শিকার বেশি হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে অপুষ্টির কারণে প্রতিবন্ধী হতে দেখা যায়। যেমন-“ভিটমিন এ এর অভাবজনিত কারনে দৃষ্টি প্রতিবঙ্কিা দেখা দেয়। এজন্য সাভাবিক শিশুর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুটির বয়স অসুবামী সুষম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
- পরিবারে বাবামাদের সাথে ভাই-বোন বা অন্যান্য সদস্যদেরও কিশী শিশুটির বিশেষ যত্ন অংহণ করতে হবে। এতে বাবামায়ের বিশ্রাম নেয়ার সুযােগ তৈরি হবে এবং তাঁরা প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রতি আরও বেশি যশীল হতে পারবে।
পাঠ ৪- প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি সমাজের দায়িত্ব
সমাজ কাদের নিয়ে? সমাজ আমাদের নিয়ে, আমাদের চারপাশের সকলকে নিয়ে। প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজে বড়ই অবেহলিত। তাদের অবহেলার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলাে –
- প্রতিবন্ধী শিশুরা কম বুঝতে পারে বলে অনেকেই এদেরকে বােকা, পাগল বলে, হাসি ঠাট্টা করে।
- সমবয়সীরা প্রকাশ্যে তাদের উত্ত্যক্ত করে। খেলায় নেয় না, তার সাথে মেশে না।
- আত্মীয়স্বজন প্রায়ই বেড়ানাের প্রােগ্রামে এদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেন।
- এরা অসুস্থতার কথা ঠিকভাবে বােঝাতে পারে না। এজন্য এদের চিকিৎসায় প্রচুর সময়ের দরকার হয়। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবহেলা দেখা যায়।
- বিশেষ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে শিক্ষক, কর্মচারী আন্তরিক না হলে এদের অযত্ন হয়। যেমন- এদের সাথে ধমকের সুরে কথা বলা, এদের প্রতি মনােযােগের অভাব ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার জন্য কীভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা দরকার?
প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী আমাদের অবশ্যই তাকে বিশেষ শিক্ষা দেওয়ার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন- দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীর জন্য ইশারায় ভাষা শিক্ষা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের নিজের কাজ নিজে করতে পারার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এছাড়া, তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের উপার্জন করার জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যই থাকে শিশুটি যেন আত্মনির্ভর হতে পারে। এই কার্যক্রম তখনই সফল হবে, যখন শিক্ষকেরা তাদের প্রতি যত্নবান হবেন। তাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর, ধৈর্য, আন্তরিকতা একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রশিক্ষণে উৎসাহী করবে, স্কুলে আসতে আগ্রহী করে তুলবে।
তােমরা যদি প্রতিবন্ধী শিশুটির আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহপাঠী কিংবা সমবয়সী হও, তবে তােমরাও তার । উদ্দীপনা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারাে। তােমরা যা যা করতে পারাে-
- যেকোনাে সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুটিকে সঙ্গ দেওয়া, দেখাশােনার দায়িত্ব তুমি নিজে নিতে পারাে।
- প্রতিবন্ধীদের ধরন অনুযায়ী খেলাধুলার আয়ােজন করতে পারাে। যেমন- দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের গল্প । শােনানাে, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাথে দাবা খেলা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সাথে গান, গল্প, ছবি আঁকা ইত্যাদি।
- এলাকায় কোনাে প্রতিবন্ধী দরিদ্র হলে তার জন্য আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিতে পারাে।
- ছােট শিশুরা প্রতিবন্ধী শিশুকে ভয় পায়। তার এই ভয় দূর করার জন্য তুমি ভূমিকা রাখতে পারাে। প্রতিবন্ধী শিশুটির অসুবিধাগুলাে ঠিকভাবে বুঝিয়ে দিলে ঐ স্বাভাবিক শিশুটিও প্রতিবন্ধী শিশুটির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাহায্যকারী হয়ে উঠতে পারে।
- প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রতি ইতিবাচক মনোেভাব নিয়ে নানাভাবে তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারাে।
সমাজ ও পর্ক্সিবারের দ্বার মালিকায় একজন খিী কীভাবে আত্মনির্ভর হতে পারে, তার একটি ঘটনা তােমাদের জানাই, তাবে চোখে দেখে না হেট মেয়ে কাজল। তার মা বাবা যখন জানতে পাল্পলেন তাঁদের সন্তান দৃষ্টি প্রতিকী অখন তঁারা দিশাহারা হয়ে পড়লেন। পাঁচ বার ভাগ আসে তাতে দৃষ্টি নিয়ে যায় দন্ধী বললেন আমিও একজন দৃষ্টি প্রতিকণী। আমি এখনও শব্দ ও শর্শ দিয়ে সব কিন্তু বুঝতে পারি। ওকে এভাবে লেখাতে হবে। ঊন্না নিকটশপামর্শকের সাহায্যে শিশুটিকে শােনায়, অনুকর, কোনাে কিছু গৰ নেওঙ্কার ফুর উদীপনা দিতে শুরু করলেন। দাদী ষ্টার সাথে খর কথা কজন, গান শােনাতেন। তাকে স্পর্শ করে চলাফেরা শেখানাে হলাে। খেলার মাঠে নেওয়া হলাে। তিন চার থেকে সে নিজেই বাথরুমে যেতে পায়। র বয়সে সে বিশেষ স্কুলে যেতে শুরু করল। প্রতিবেশী ছেলেমেয়েরা তাকে সাথে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য আসত। পাড়ার লােকজন যখন তাদেরকে দেখত তারা বুঝতেই পারত না কে সৃষ্টি প্রভিখী।
প্ৰতিবন্ধী শিশুটির পরিবারের প্রতি যুক্তভাবে সৰ সহযােগিতার হাত বাড়ানাে প্রয়োজন। আমাদের সব কাজের মধ্যে বোঝাতে হবে যে প্রতিবন্ধী শিশুটির পাশে আমরাও আছি। সমাজের সবার অফুরন্ত ভালোবাসা তাদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তাদের জগৎটাকে সহজ ও সুন্দর করে তুলবে। যে শিশুর বিকাশ বিলম্বিত বিশেষ যত্ন, মনােযােগ ও ভালােবাসায় সে আরও বেশি সক্ষম ও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারবে।
This is so helpful. Thanks a lot.