পাঠ-৪ প্রতিবন্ধীদের প্রতি আচরণ, পারিবারিক গােপনীয়তা রক্ষা
আমরা আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ দেখি যাদের হাত-পা নাই, চোখে দেখে না, কানে শােনে না, কথা বলতে পারে না, দেহে পঠন স্বাভাবিক নয়, বুদ্ধি কম। কারে অনেক কষ্ট। তবে তাদের এই অবস্থার জন্য কিন্তু দার্মী নয়। সবাই চায় সুন্দরভাবে বাঁচতে। এই ধরনের প্রতিবন্ধীদের প্রতি তােমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
তােমাদের সুন্দর আচরণই প্রতিবন্ধীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিবে। তাই তারা যাতে অবহেলিত না হয়, যাতে সমাজের একজন হতে পারে, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারে, পড়াশােনা শিখতে পারে। সেজন্য আমাদের সবার এদের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।
রতনদের স্কুলে প্রতিবন্ধী একজন ছাত্র রয়েছে। ছেলেটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। নাম মিলন, সে হুইল চেয়ারে করে স্কুলে আসে। রতন ও তার সহপাঠীরা হুইল চেয়ার ঠেলে অনেক কষ্ট করে তাকে বারান্দায় তুলে ক্লাসে নিয়ে যায়। রতন চিন্তা করল একটা র্যাম্প থাকলে তাদের এত কষ্ট হতাে না। বিষয়টি নিয়ে সে শ্রেণি শিক্ষকের সাথে আলাপ করে এবং তারা কয়েক বন্ধু মিলে মাটি দিয়ে ঢাল তৈরি করে। পরবর্তীতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার উপরে ইট বিছিয়ে সিমেন্ট করে র্যাম্প তৈরি করে দেয়। ফলে মিলনকে তার সহপাঠীরা সহজেই হুইল চেয়ার ঠেলে ক্লাসে নিয়ে যেতে পারে। সহপাঠী, শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাই মিলনকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়। সমাজে অনেক দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। তােমরা সব সময় তাদের সাথে ভালাে ব্যবহার করবে, প্রয়ােজনে সহযােগিতা করবে, খেলাধুলা করবে, সঙ্গ দিবে, রাস্তা ঘাট পারাপারের সময় সাহায্য করবে। তাদের সাথে এমন আচরণ করবে যাতে তারা নিজেদের অসহায় মনে না করে।
পারিবারিক গােপনীয়তা রক্ষা
তােমরা সবাই মা-বাবা, ভাই-বােন নিয়ে পরিবারে বাস কর। অনেকের পরিবারে আত্মীয়-স্বজনও থাকে। পরিবারে তােমাদের মধ্যে নিবিড় যােগাযােগ ও স্নেহ, ভালােবাসার দৃঢ় বন্ধন থাকে। তারপরেও পরিবারে একত্রে বাস করতে গেলে সদস্যদের মধ্যে মনােমালিন্য, মতবিরােধ দেখা দিতে পারে। তােমাদের উচিত এই বিষয়গুলাে গােপন রাখা। কারণ বাইরে প্রকাশ পেলে পরিবারের মান, মর্যাদা ও সম্মান নষ্ট হতে পারে। এছাড়া অর্থ সংক্রান্ত ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে যদি তােমরা কিছু জেনে যাও, তাহলে সেটা নিজের মধ্যেই গােপন রাখবে। এই বিষয়গুলাে বাইরের মানুষ জেনে | গেলে পরিবারের নিরাপত্তা নষ্ট হয়, বিপদও ঘটার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং যে বিষয়গুলাে পরিবারের বাইরের কেউ জানলে পরিবারের মান, মর্যাদা, সম্মান নষ্ট হতে পারে বা পরিবারে বিপদ আসতে পারে সেগুলােই পরিবারের গােপন বিষয়। তােমরা একটি গল্প শুনলেই বিষয়টি ভালােভাবে বুঝতে পারবে।
প্রমির মা-বাবার মধ্যে একদিন মতবিরােধ হয়। প্রমি সে কথা প্রতিবেশী বান্ধবীকে বলে। বান্ধবী তার মায়ের সাথে গল্প করতে গিয়ে প্রমির মা-বাবার বিষয়টি বলে ফেলে। কয়েকদিন পর প্রমির মায়ের সাথে বান্ধবীর মায়ের দেখা হয়। বান্ধবীর মা মতবিরােধের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করে। এতে প্রমির মা বেশ লজ্জাবােধ করেন। এই ঘটনা থেকেই তােমরা বুঝতে পারছ পরিবারের এমন কিছু বিষয় আছে যা বাইরে আলােচনা করা উচিত নয়। তাই পরিবারের একান্ত বিষয়গুলাে নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই থাকা আবশ্যক। তবে তােমরা অনেক সময় বন্ধুদের সাথে নিজ নিজ পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলাপ কর। সেই ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবে বন্ধুর কাছে যেন তােমার পরিবারের সদস্যদের মান মর্যাদা কমে না যায়। তবে পরিবারের একান্ত গােপন যে বিষয়গুলাে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি ঘটায় বা ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে পারে বলে তােমার মনে হয়, সেটা তুমি মা-বাবা কিংবা পরিবারের বয়ােজ্যষ্ঠ বা নির্ভরযােগ্য সদস্যের সাথে খােলামেলা আলােচনা করতে পার। কারণ পরিবারের যে ঘটনাগুলাে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, সেটা খােলামেলা আলােচনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানাে যায় এবং পরিবারের শান্তি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়। পরিবারের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তােমারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।