ক্লাস নাইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা এসাইনমেন্টের প্রশ্ন। প্রাচীন ও মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
Assignment Question Of Bangladesh And World Civilization For Class Nine Commerce Students. Make a comparative analysis of important dynasties and regimes of ancient and medieval times.
প্রাচীন ও মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ শাসন ব্যবস্থা
গুপ্ত শাসন এর পূর্বে প্রাচীন বাংলার রাজ্য শাসন পদ্ধতি সম্বন্ধে সঠিক কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। এদেশে গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে কৌম সমাজ ছিল সর্বসেরা। তখন রাজা ছিল না রাজত্ব ছিল না। তবে শাসন পদ্ধতি সামান্য মাত্রায় ছিল। কৌমদের মধ্যে পঞ্চায়েতী প্রথায় পঞ্চায়েত দ্বারা নির্বাচিত দলনেতা স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিতেন।
মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশ: আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের মাত্র দুই বছর পর ৩২১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ভারতের এক বিশাল অঞ্চলের ওপর মৌর্য বংশের প্রভুত্ব স্থাপন করেন। উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে। ভারতে গুপ্ত বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় ৩২০ খ্রিস্টাব্দে। তখন বাংলায় কিছু স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে। গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালেই উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে।
স্বাধীন গৌড় রাজ্য: গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ষষ্ঠ শতকে ‘পরবর্তী গুপ্ত বংশ’ বলে পরিচিত গুপ্ত উপাধিধারী রাজাগন উত্তর বাংলা, পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশ ও মগধে ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন। ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলই গৌড় জনপদ নামে পরিচিত।
শশাঙ্ক: গুপ্ত রাজাদের অধীনে বড় কোন অঞ্চলের শাসন কে বলা হত ‘মহীসামন্ত‘। ধারণা করা হয় শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্তের একজন ‘মহীসামন্ত‘ এবং তার পুত্র অথবা ভাতুষ্পুত্র।
[প্রশ্ন সমাধান করেছেন NewResultBD.Com]
মাৎস্যন্যায় ও পাল বংশ: শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার ইতিহাসে এক অন্ধকার যুগের সূচনা হয়। দীর্ঘদিন বাংলায় কোনো যোগ্য শাসক ছিলেন না। দীর্ঘদিনের অরাজকতায় বাংলার মানুষের মন বিধিয়ে গিয়েছিল। এ চরম দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভের জন্য দেশের প্রাচীন নেতাগণ স্থির করলেন যে, তারা বিবাদ-বিসম্বাদ ভুলে গিয়ে একজনকে রাজা পদে নির্বাচিত করবেন এবং সকলেই স্বেচ্ছায় তার প্রভুর স্বীকার করবেন। এর ফলে গোপাল নামের এক ব্যক্তি রাজপথে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে পাল বংশের শাসন আমল শুরু হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার স্বাধীন রাজা: পাল যুগের অধিকাংশ সময়ই দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা স্বাধীন ছিল। তখন এ জনপদ ছিল বঙ্গ জনপদের অন্তর্ভুক্ত। অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেশকিছু রাজ বংশের রাজারা কখনো পাল রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনভাবে তাদের এলাকার শাসন করতেন আবার কখনো পাল রাজাদের অধীনতা স্বীকার করে চলতেন।
চন্দ্র বংশ: দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী স্বাধীন রাজবংশ ছিল চন্দ্রবংশ। দশম শতকের শুরু থেকে এগারো শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ বংশের রাজারা শাসন করেন।
বর্ম বংশ: এগারো শতকের শেষ দিকে পাল বংশ দুর্বল হয়ে পড়লে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বর্ম উপাধিধারী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়।
সেন বংশ: পাল বংশের পতনের পর বার শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশ সেন রাজবংশের সূচনা হয়।
প্রাচীন যুগের শাসন ব্যবস্থা
গুপ্তদের সময় বাংলার শাসন পদ্ধতির পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় না। আনুমানিক দুই-তিন শতকে উত্তরবঙ্গ মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
বাংলাদেশের যে অংশ সরাসরি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল তা কয়েকটি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত ছিল। এই সকল প্রশাসনিক বিভাগ যথাক্রমে ভূক্তি, মণ্ডল এবং গ্রামে বিভক্ত ছিল। গ্রামে ছিল সবচেয়ে ছোট শাসন বিভাগ। গুপ্ত সম্রাট নিজের ভুক্তির শাসনকর্তা নিযুক্ত করতেন। কোন কোন সময়ে রাজ পরিবার বা রাজকুমার থেকেও ভক্তির শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হতো। ভুক্তিপতিকে বলা হত ‘উপরিক’।
গুপ্তদের সময়ে রাজতন্ত্র ছিল সামন্তনির্ভর, এ আমলে তার পরিবর্তন হয়নি। গুপ্ত রাজাদের মত বাংলার সামন্ত রাজাগণও ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এরাও বিভিন্ন শ্রেণীর বহুসংখ্যক রাজ কর্মচারী নিয়োগ করতেন।
পাল বংশের চতুর্থ শতকে রাজত্বকালে বঙ্গে তাদের শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পূর্বের মতো পাল যুগেও শাসন ব্যবস্থার মূল কথা হল রাজতন্ত্র। এখানে বিভাগের সর্বোচ্চ হলেন রাজা স্বয়ং। রাজার ছেলে রাজা হতেন। রাজ্যের সকল প্রকার শাসনকার্যের জন্য কতগুলো নির্দিষ্ট শাসন বিভাগ ছিল। এর প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন অধ্যক্ষ নিযুক্ত থাকতেন। রাজা, মন্ত্রী ও আমত্যগণের সাহায্যে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করতেন। পিতা জীবিত থাকলেও অনেক সময় যুবরাজ শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
পাল রাজ্যের যে শাসন পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছিল তা পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ ও সেন রাজত্বকালে রাষ্ট্র শাসনের আদর্শ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এসময় রানীকে রাজকীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। শাসনকার্যে যুবরাজদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। জ্যেষ্ঠ রাজকুমার যুবরাজ হতেন।
মধ্যযুগে গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থা
মুসলমান শাসনের সূচনা কালকে বাংলার মধ্যযুগের শুরু বলা হয়।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ-বিন-বখতিয়ার খলজী: তের শতকের শুরুতে তুর্কি বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ-বিন-বখতিয়ার খলজি বাংলার উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশের সেন শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুসলমান শাসনের সূচনা করেন। বখতিয়ার খলজি স্বীয় কর্মশক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
বাংলায় তুর্কি শাসনের ইতিহাস: বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন বখতিয়ার খলজি। এ পর্বের পর্যায়ে ছিল (১২০৪-১৩৩৮) খ্রিস্টাব্দ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন খলজি: সুলতান গিয়াসউদ্দিন খলজি নিঃসন্দেহে খলজি মালিকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। বখতিয়ার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলার মুসলমান রাজ্যকে শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করতে তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন।
বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের ইতিহাস: দিল্লির সুলতানগণ ১৩৩৮ থেকে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২০০ বছর বাংলাকে তাদের অধিকারে রাখতে পারেননি। ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর মাধ্যমে স্বাধীনতার সূচনা হলেও ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতানদের হাতে বাংলা প্রথম স্থিতিশীলতা লাভ করে।
ইলিয়াস শাহী বংশ: সোনারগাঁয়ে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ যখন স্বাধীন সুলতান তখন লখনৌতির সিংহাসন দখল করেছিলেন সেখানকার সেনাপতি আলী মোবারক। সিংহাসনে বসে তিনি ‘আলাউদ্দিন আল শাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন।
হাবসি শাসন: বাংলায় হাবসি শাসন মাত্র ছয় বছর স্থায়ী ছিল। এ সময়ে দেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশায় পরিপূর্ণ। এ সময়ে চারজন হাফসি সুলতানদের মধ্যে তিন জনকেই হত্যা করা হয়।
আফগান শাসন ও বারো ভূঁইয়া: মুঘল সম্রাট বাবর ও তারপুত্র হুমায়ুন হোসেন শাহী যুগের শেষের দিকে থেকেই চেষ্টা করছিলেন বাংলাকে মুঘল অধিকারের নিয়ে আসতে। সমগ্র ভারতের অধিপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল শের খানের। তাই গোপনে তিনি নিজের শক্তির বৃদ্ধি করতে থাকেন।
সম্রাট আকবর সমগ্র বাংলার উপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বাংলার বড় বড় জমিদার মুঘলদের অধীনতা মেনে নেননি, জমিদারগণ তাদের নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। তাদের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী ও নৌবহর ছিল। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা একজোট হয়ে মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বাংলার ইতিহাসে এ জমিদারগণ বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
পরিশেষে আমরা প্রাচীন ও মধ্যযুগের রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থার ইতিহাস পড়ে উভয় যুগের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করি। শাসন ব্যবস্থা পদ্ধতি, রাজবংশের মানুষ, প্রজা, সাধারন জনগন সবার চলাফেরা, অর্থনীতি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
আরও দেখুন–
Riding
A book