গৌতম বুদ্ধ ও অহিংসা নীতি
[Tapos]বুদ্ধ অহিংসবাদী ছিলেন। তাই বৌদ্ধধর্মকে অহিংসার ধর্ম বলা হয়। অহিংসা শব্দের সাধারণ অর্থ হলো হিংসা না করা। কিন্তু বৌদ্ধশাস্ত্রে ‘অহিংসা’ শব্দটির বিভিন্ন রকম অর্থ রয়েছে। বৌদ্ধমতে অহিংসা শব্দের অর্থ হলো হিংসা না করা, কায়-মন-বাক্যে হিংসা বর্জন, কারো অনিষ্ট না করা, প্রাণিহত্যা হতে বিরত থাকা, সকল জীবকে রক্ষা করা, মানবতা,কোমলতা, দয়া, করুনুণা প্রভৃতি। বুদ্ধ বলেছেন, “শুধু নিজেকে ভালোবাসলে হবে না, ভালোবাসতে হবে সকল জীবকে।’ বুদ্ধ এ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। এখানে একটি অহিংসা বিষয়ক কাহিনী তুলে ধরা হলো।
বৃদ্ধ মা ও বউ
অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে কাত্যায়নী নামে একজন মহিলা বসবাস করতেন। তাঁর একটি মাত্র ছেলে ছিল। ছেলেটি ছিল তাঁর খুবই আদরের। তিনি পরম মমতায় তাকে লালন-পালন করেন। মায়ের বয়স হলে ছেলেটিও তাঁর সেবা ও যত্ন করুনত। মায়ের বিপদ-আপদকে নিজের বিপদ-আপদ মনে করুনত। বলা যায়, খুব যত্নসহকারে মায়ের দেখাশোনা করুনত। এভাবে মা ও ছেলে দুজনই সুখে দিন অতিবাহিত করতে থাকেন। একদিন মা মনে করুনরেন, আমি আর কত দিন বাঁচব- এ ভেবে এক সুন্দরী মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিলেন। বিয়ের পরেও ছেলে আগের মতোই তার মায়ের সেবা-যত্ন করতে থাকে। মায়ের প্রতি এ ধরনের ভালোবাসা দেখে সুন্দরী বউয়ের মনে খুব হিংসা উৎপন্ন হলো। কিন্তু হিংসা স্বামীকে দেখাতে পারত না। এভাবে স্ত্রীর হিংসা প্রতিদিন আরো বাড়তে থাকে। হিংসাবশত স্বামীর সাথে সে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ করুনত। একদিন ঝগড়ার সময় স্ত্রী স্বামীকে বলল, “তোমার মায়ের সাথে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব তোমার মাকে চলে যেতে বলো, নতুবা আমি চলে যাব।”
ছেলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ত্রীর মন রক্ষার জন্য বলল, “মা তুমি আমার স্ত্রীর সাথে রোজই ঝগড়া করুনো। যেদিকে তোমার মন চায় চলে যেতে পারো।” মনের দুঃখে মা দূর সম্পর্কের একজন আত্মীয়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। দিন-রাত পরিশ্রম করার বিনিময়ে মা নিজের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিলেন। একদিকে বউয়ের একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করুনল। নাতি হয়েছে শুনে মা খুবই খুশি হলেন। তবে মনে ব্যথা পেলেন। তবে মনে ব্যথা পেলেন। তিনি ভাবলেন: আমার আদরের নাতিকে আমি আজও দেখতে পেলাম না। বিনা অপরাধে আমি ঘরছাড়া। পৃথিবীতে কি ধর্ম বলতে কিছুই নেই? এরূপ বলে মা আক্ষেপ করলেন। মা স্থির করলেন ধর্মপূজা করবেন। থালায় সাজালেন নানাবিধ ফুল, পানি, সুগন্ধি আর প্রদীপ। এদিকে দেবরাজ ইন্দ্র অসহায় মায়ের করুনুণ অবস্থা দেখলেন। অতঃপর ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে তিনি উপস্থিত হলেন। ব্রাহ্মণ বললেন, ‘বুড়িমা, তুমি কী করুনছ?’ বুড়িমা উত্তর দিলেন, ‘আমি ধর্মপূজা করুনছি।’ তখন বুড়িমা ছেরে ও বউয়ের সব কথা খুলে বললেন। ইন্দ্র বললেন, ‘মা, তুমি দুঃখ করুনো না। খুব শীঘ্রই তোমার বউ ও ছেলের মনের পরিবর্তন হবে। কারন তাদেরও একটি ছেলে হয়েছে। তুমি ঘরে যাও। আমি দেবরাজ ইন্দ্র।’
দেবরাজ ইন্দ্রকে মা ভক্তি সহকারে প্রণাম জানিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হলেন। এদিকে তাঁর বউয়ের যে সহিংসা মনোভাব ছিল, তা আর নেই। বউয়ের মন দমিত হলো। নিজের হিংসাকে সে প্রশমিত করুনল। পথের অর্ধেক যেতে না যেতেই মা দেখলেন ছেলে আর বউ নাতি নিয়ে এগিয়ে আসছে। ছেলেটি বৃদ্ধ মায়ের কোলে নাতিকে তুলে দিল। ওরা দুজনে বলল “মা, দেখ তোমার নাতি। বউ তার কৃতকরুন্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুনল। মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেল। নিজের হিংসা ত্যাগ করে আবার সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।”