0

প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা নিশ্চিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অপরিহার্যতা নিরূপণ। এইচএসসি ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।

প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা নিশ্চিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অপরিহার্যতা নিরূপণ

অ্যাসাইনমেন্ট: প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা নিশ্চিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অপরিহার্যতা নিরূপণ।

এইচএসসি ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর

ব্যবস্থাপনার ধারণা

ইংরেজি Management  শব্দটি ইতালীয় শব্দ Maneggiare শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। যার অর্থ “To train up the horse” – ঘোড়াকে পরিচালনা করা। আবার অনেকের মতে এটি ফরাসি শব্দ “Manager I Manage” শব্দদ্বয় থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ যথাক্রমে পরিচালনা করা (To direct the household) ও প্রদর্শন কাজ (An act of guiding or leading)। সাধারণভাবে বলতে গেলে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে অন্যদের দ্বারা প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেয়ার কৌশলকে ব্যবস্থাপনা বলে। ব্যবস্থাপনার ধারণাটি উদ্ভব হয়েছে ব্যবসায়ী সমাজের ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি থেকে। নিউম্যানের মতে, “ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি কার্যক্রম যা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করে”। ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বা কৌশল যাতে সকল ধরনের জনবল ও উপকরণ সম্মিলিতভাবে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

ব্যবস্থাপনা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। ব্যবস্থাপনা শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যমান থাকে না। অব্যবসায়িক সংগঠন যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সকল ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। ব্যক্তি-জীবনেও ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দিনে দিনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর কাজের ধরন জটিল আকার ধারণকরেছে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠান কতকগুলো সুফল অর্জন করতে পারে। এ কারণে ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হলো:

. উৎপাদন বৃদ্ধিঃ প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিরাজ থাকলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সকলেই তাদের সকল শক্তি নিয়োগ করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়।

. সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণঃ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল মানবীয় ও অমানবীয় বস্তুগত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়।

. কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান থাকলে নিয়োজিত কর্মীরা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এতে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

. নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাঃ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনে কিংবা ব্যবসায় বাণ্যিজ্যের ভূবনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে যিনি নিয়োজিত থাকেন, তাকে সর্বদা সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। তিনি মূলত ব্যবস্থাপক। ব্যবস্থাপক দক্ষতার সাথে তার কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হলে সংগঠনে শৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ব্যবস্থাপক তার মুন্সিয়ানা প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানে নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এতে শৃঙ্খলা আসে।

. গবেষণা উন্নয়নঃ গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত ও আধুনিক করে। এতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়।

. পরিবেশ উন্নয়নঃ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের পরিবেশ ভালো হয়। ব্যবস্থাপনীয় কার্যাবলি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল পক্ষের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ব্যবস্থাপনার  কার্যাবলী 

পরিকল্পনা (Planning) – পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক এবং প্রাথমিক কাজ। ভবিষ্যত কার্যবলী সম্পাদনের জন্য অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে পরিকল্পনা বলে। যে কোন কার্য সম্পাদনের পূর্বে – সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়াদির পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। কোনদিন, কোথায়, কোনকার্য, কার দ্বারা, কিভাবে সম্পন্ন হবে তা স্থির করাই হচ্ছে পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যবলী নির্ধারণ এবং এদের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল, নীতি, পলিসি, কর্মসূচী ইত্যাদি নির্ধারণই পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত।

সাধারণত অতীত অভিজ্ঞতা, বর্তমান পারিপার্শিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শক্তি, সামর্থ্য, দুর্বলতা ইত্যাদি উপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা প্রণীত হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ন্যায় পরিকল্পনা প্রণযনে বিভিন্ন বিকল্পসমূহ হতে সর্বোত্তমটি বেছে নেয়া হয়। মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির পরিকল্পনা প্রনয়ন সর্বোচ্চস্তরে হয়ে থাকে। এদের আলোকে মধ্যস্তর ও নিম্নস্তরে ব্যবস্থাপকগণ ও স্ব স্ব পরিকল্পনা প্রনয়ন করে থাকেন।

সংগঠন (Organising) –  লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগ্রহীত উপাদান ও মানবশক্তির সুশৃংখল বিন্যাসকে সংগঠন বলে। সংগঠন হচ্ছে একটি কাঠামো বিশেষ।সংগঠনের আওতায় কর্মিদের মধ্যে দায়িত্ব  ও কর্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে বন্টন করে দেয়া হয়। ফলে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য কর্মিরা সহজে অনুধাবন করে কার্য সম্পাদন করতে পারে। সংগঠন হলো অভীষ্ঠ্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি, জিনিশপত্র, যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম ও কার্যক্ষেত্রে সুসংবদ্ধ সমাহার।

কর্মসংস্থান (Staffing) – সংগঠন কাঠামোতে মানবশক্তির অভাব পূরণের জন্য যে ব্যবস্থাপকীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তাকে কর্ম  সংস্থান বলে। এক্ষত্রে ব্যবস্থাপনা কার্য বিবরণ অনুযায়ী বিভিন্ন পদে কর্মি নিয়োগ, তাদের কাজের মূল্যায়ন, বেতন ও মজুরী নির্ধারণ ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করে থাকে। প্রয়োজনীয় কর্মি নিয়োগ এব নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মিদের যতাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য ও অভিজ্ঞ করে তোলা না হলে ব্যবস্থাপকীয় কার্যাবলী পালনকরা সম্ভবপর হয় না। তাই এই  বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনার সাংগাঠনিক কাঠামো প্রনয়নের পর কর্মি সংস্থাপনের ব্যবস্থা করে থাকেন।

নির্দেশনা  (Direction) – পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংগঠন কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত কর্মিদেরকে যে আদেশ, উপদেশ বা পরামর্শ প্রদান করা হয়, তাকেই নির্দেশনা বলে। এটি এমন একটি সঞ্জিবনী শক্তি যার সাহায্যে ব্যবস্থাপক কি চান, তিনি কর্মিদের কাছ হতে কখন, কিভাবে, কি প্রত্যাশা করেন ইত্যাদি যথাযথভাবে তাদেরকে অবহিত করেন। কর্মিদের বোধগম্যতার জন্য সহজ ও সরল ভাষায় নির্দেশনার বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করতে হয়। কি করতে হবে- তা কর্মিদের অবহিত করা এবং তারা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করাই নির্দেশনা

সমন্বয় সাধন (Coordination) – সমন্বয় দলগত সমঝোতার একটি মাধ্যম,প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও বিভাগসমূহকে প্রতিষ্ঠানেরর মূল উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের স্ব স্ব কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয়। যেহেতু সকলের মূল উদ্দেশ্যে এক ও অভিন্ন তা্ই তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় বা ঐক্য স্থাপন করা অপরিহার্য। অন্যথায় উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তবায়ন ব্যহত হয়।  ফলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগ ও বিভাগে নিয়োজিত কর্মিদের কাজের মধ্যে সংহতিও সামঞ্জস্য বিদান করে থাকে। 

প্রেষণা সৃষ্টি (Motivation) – প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মিদের মধ্যে কাজ করার উৎসাহ, উদ্দীপনা ও পরিতৃপ্তি বিধানের ব্যবস্থাপকীয় কার্যকে প্রেষণা বলা হয়। প্রেষণা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যা কাংখিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কাজ সম্পাদনের প্রতি কর্মিদের আগ্রহ উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। প্রেষণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন ধরণের আর্থিক ও কল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করে। এদের মধ্যে উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান, চাকুরির নিরাপত্তা বিধান, আনুষঙ্গিক ভাতাদি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেয়ার সূযোগ, আমোদ প্রমোদরে ব্যবস্থা ইত্যাদি অন্যতম। প্রেষণার ফলে কর্মিদের কাজে আগ্রহ, অনুপ্রেরণা ও মনোবল বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজের মান ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ কর্মিদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে উঠে।

নিয়ন্ত্রণ (Controling) – ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রন হচ্ছে সর্বশেষ ধাপ। পরিকল্পনা মাফিক প্রতিষ্ঠানের গুণগত ও পরিমানগত যাবতীয় কার্যাবলীর সম্পাদনের কাজকে নিয়ন্ত্রন বলা হয়। নিয়্ন্ত্রণ উদ্দেশ্য  অর্জনকে সুনিশ্চিত করে। নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা, জারিকৃত নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী কার্য পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তার পরীক্ষা করা।

বিদ্যালয় কোন বানিজ্যিক বা মুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সামজিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হয়। তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার সাথে কেবল পেশাগত লোকজনই জড়িত নয়। https://newresultbd.com একটি বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানশিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক অভিবাবক কমিটি, স্বানীয় সরকার, শিক্ষা বিভাগসহ নানাধরণের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত থাকতে হয়। তাই বিদ্যালয়ের সফলতার জন্য এর সাথে সম্পর্কিত সকল অংশীজনের প্রত্যাশা ও আকাংখাকে ধারণ করে এর সাথে পেশাগত ধ্যান-ধারণার সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন। তবেই ‍বিদ্যালয় তার অভীষ্ঠ্ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

ব্যবস্থাপনার আওতা 

ব্যবস্থাপনা একটি সর্বজনীন বিষয়। মানব জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই কোন না কোনভাবে ব্যবস্থাপনার অস্তিত্ব বিরাজমান। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যেমন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, তেমনি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, রাষ্ট্র পরিচালনায়, এমনকি শিক্ষা, সামরিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সুতরাং ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত।

. সাংগঠনিক দৃষ্টিতে ব্যবস্থাপনার আওতাঃ কোন ব্যক্তির জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা প্রয়োগযোগ্য আবার পারিবারিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রয়োগযোগ্য। নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি মেনে ব্যক্তি জীবনকে যেমন সমৃদ্ধশালী করা যায়, তেমনি সামাজিক সংগঠন (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতি ও ধর্মীয় সংগঠন) পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার রীতি-নীতি অনুসরণযোগ্য। ব্যবসা সংগঠনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকলে সফলতার সাথে ব্যবসায় কার্য-পরিচালনা করা যায় না। সুতরাং এটা ধ্রুব সত্য যে, কোন সংগঠন ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনভাবেই চলতে পারে না।

. ব্যবস্থাপনার প্রকৃতির ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার আওতাঃ নানা রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের প্রকৃতিভেদে প্রতিটি ব্যবস্থাপনার ধরন ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের কাজ রয়েছে। কাজের প্রকৃতির কারণেই ব্যবস্থাপনা ভিন্ন হতে পারে। উৎপাদন কার্যের জন্য

প্রয়োজন উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, আর অফিস কার্য সম্পাদনের জন্য অফিস ব্যবস্থাপনা। অনুরূপভাবে, শ্রমিক-কর্মী নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্মী ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ সম্পর্কিত কার্যের জন্য বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সিদ্ধান্তগ্রহণ কার্য নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

. কার্যাবলির ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার আওতাঃ  ব্যবস্থাপক একই সাথে ব্যবসায় পরিচালনা, ব্যবস্থাপকদের ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক-কর্মী পরিচালনা- এ তিনটি কাজ করে থাকেন।

ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। ব্যবস্থাপক শ্রমিককর্মীদের সঠিক নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে আত্মনিয়োগ করে।

. কৌশল প্রয়োগের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার আওতা

দিন যায় পরিবেশ বদলায় এর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। যেমন, পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বাজেট প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ, নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিদর্শন এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন ইত্যাদি।

. ব্যবস্থাপনার স্তরের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার আওতা 

একটি প্রতিষ্ঠানে স্তরভেদে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থাপক থাকেন। যথা-উচ্চস্তর, মধ্যস্তর এবং ইনভেস্তর। উচ্চস্তরে ব্যবস্থাপকগণ নীতি নির্ধারণ করেন, মধ্যমস্তরের ব্যবস্থাপকগণ নীতির উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করেন এবংনিম্ন স্তর ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের  তত্ত্বাবধান বা সুপারভিশন করেন। 

প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনের দক্ষ ব্যবস্থাপনার অপরিহার্যতা 

ব্যবস্থাপনা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। ব্যবস্থাপনা শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যমান থাকে না। অব্যবসায়িক সংগঠন যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সকল ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। ব্যক্তি-জীবনেও ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দিনে দিনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর কাজের ধরন জটিল আকার ধারণ করেছে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠান কতকগুলো সুফল অর্জন করতে পারে। এ কারণে দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

  • প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যবস্থাপনা বিরাজ থাকলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সকলেই তাদের সকল শক্তি নিয়োগ করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়।
  • প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল মানবীয়ও অমানবীয় বস্তুগত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়।
  • প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান থাকলে নিয়োজিত কর্মীরা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এতে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। 
  • দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত ও আধুনিক করে। এতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়।