বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায়?

বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায়? এর উত্তরগুলো কোরা (Quora) এর ব্যবহারকারীদের থেকে তুলো ধরা হলো।

Md. Parvez Hossain এর মতে বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায় নাকি যায়না:

প্রকৃত বুদ্ধিমান ব্যাক্তি কখনোই বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য বই পড়ে না বরং জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ে।

যখন কেউ কোনো কিছু জানা বা শেখার জন্য বই পড়ে তখন তা জ্ঞান অর্জনের শামিল। কাজেই যে ব্যাক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রয়েছে তিনি প্রকৃত জ্ঞানী বলে বিবেচিত হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি কখনোই বুদ্ধিহীন হতে পারে না। তাহলে বোঝা গেল জ্ঞান অর্জন ও বুদ্ধিমান হয়ে ওঠা একে অপরের পরিপূরক।

তাছাড়াও যে ব্যাক্তি নিয়মিত বই পড়েন, সে নানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। ফলে সে যখন কোনো সমস্যায় পড়ে তখন সে তার অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সহজেই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে ও এভাবে বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে।

যদিও বই পড়ে সরাসরি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠা যায় না কিন্তুু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ঠিকই বুদ্ধিমান হয়ে ওঠা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সঠিক বই বাছায় ও পড়ার মতো পড়া চায়।

Rajib Noor Khan এর মতে বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায় নাকি যায়না:

আমি তর্কে যাবো না। হ্যাঁ বই পড়ে বুদ্ধিমান হওয়া যায়। জ্ঞানী হওয়া যায়। আমি আপনাকে ১০ টা বইয়ের নাম দিচ্ছি। মন দিয়ে এই ১০ টা বই পড়ুন। তারপর নিজেই বুঝতে পারবেন, বই পড়ে বুদ্ধিমান হওয়া যায় কিনা। তবে একটা কথা আপনাকে আমি বলতে পারি- বই পড়ে সাঁতার শেখা যায় না। আর একটা কথা, এই ১০টা বই আমার খুব পছন্দের। খুব প্রিয়। এই বই গুলো আমি বারাবার পড়ি। ভালো লাগে।

১। ‘দি আদার সাইড অভ মিডনাইট’ লেখক- সিডনি শেলডন। যেহেতু বইয়ের নাম “দ্যা আদার সাইড অফ মিডনাইট “এবং লেখক সিডনি শেলডন, সে হিসেবে আমি এই বইকে একচেটিয়া থ্রিলার বলতে রাজি নই। সামাজিক উপন্যাস? বলা যায়। রোমান্টিক উপন্যাস? সন্দেহ নেই! থ্রিলার? তা তো বটেই!

২। ‘দ্য রান এওয়ে জুরি’ লেখক- জুন গ্রিশাম। ওরা জুরির সদস্য বারোজন নারীপুরুষ। একটা বহু বিলিয়ন ডলার তামাক ক্ষতিপূরণ মামলার রায় বিবেচনার দায়িত্বে আছে ওরা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুই পক্ষের উকিল, জুরি, কনসালট্যান্ট, জুরির প্রতিটি সদস্যের উপর নজর রাখছে, চেষ্টা করছে নাক গলানোর। অনুকুল রায়ের জন্য যে কোন কিছু করতে পারে ওরা। কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক জানে আসল কথা, এই জুরিতে একজন লোক নেপথ্যে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, রায়টা আখেরে সেই ঠিক করবে। দু’নম্বর জুরর হিসেবেই সে পরিচিত, যদিও তার একটা অন্য অতীত পরিচয় আছে এবং বাইরের একটা সুন্দরী মেয়ে তাকে সাহায্য করছে। এবং যখন একটা কর্পোরেট সাম্রাজ্য টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে, যখন একটি পরিবারের দুঃখকে পুঁজি করে উকিলেরা আখের গোছাতে ব্যস্ত তখন দু’নম্বর জুরর এর গোপন অতীত উঠে আসছে, লোভ আর দুর্নীতির চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে।

৩। ‘কামিং অফ এজ ইন সামোয়া’ লেখক- মার্গারেট মিড। এই বইয়ের লেখক ছিলেন একজন আমেরিকান সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ। তিনি ‘সামোয়া’-তে গিয়েছিলেন ১৯২০-এ আমেরিকানদের যৌনতার উপর রিপোর্ট করতে। কিছু মেয়ে মার্গারেটকে তাদের বন্য যৌনতার অভিজ্ঞতার কথা বলে। মার্গারেট সেগুলো সত্যি ধরে নেয় যদিও সেগুলো ছিল বানানো কথা। একটি মেয়ে স্বীকার করে নেয় যে, তারা আসলে তার সাথে মজা করে এগুলো বলেছিলো। এর ফলে আমেরিকার নৃ-বিজ্ঞানিদের উপর ব্যাপারটা অনেক প্রভাব ফেলে।

৪। ‘অ্যান্ড টু থিংক দ্যাট আই স ইট অন মালবেরি স্ট্রিট’ লেখক- সস। ২৩ তম প্রকাশকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হতাশ মনে বইটির পান্ডুলিপি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সস। এ সময়ই মেডিসিন এভিনউতে পুরোনো কলেজের এক দোস্তের সাথে দেখা। তার এই বন্ধুই আবার ভেনগার্ড প্রেসের ছোটদের বইয়ের সম্পাদক। পান্ডুলিপিটা দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন তিনি। ২০ মিনিট বাদে বই প্রকাশের চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন সস। এখন পর্য্ন্ত বইটির বিশটির বেশি সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে।

৫। ‘কনটিকি’ লেখক- রেনাড ম্যাকনেলি। ১৯৫০ সালের কথা। লেখক মেকনেলি বইটি প্রকাশ করতে সম্মত হওয়ার আগে ২০ জন প্রকাশকের দুয়ারে ধরনা দিয়েছিলেন হেয়ারডেল। কিন্তু কেউই ভেলায় চেপে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার দুর্দান্ত এই কাহিনী ছাপার যোগ্য বলে মনে করেন নি। প্রকাশের পরপর দুই বছর শীর্ষ দশ মননশীল বইয়ের তালিকায় ঠাই পায় এই বইটি। এ পর্য্ন্ত বিভিন্ন ভাষায় এর মুদ্রণ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

৬। ‘ভার্টিকাল রান’ লেখক- জোসেফ আর গারবার। একবার ভাবুনতো হঠাৎ যদি পরিচিত পৃথিবীটা পাল্টে যায় আপনার, খুব কাছের মানুষগুলো যদি খুন করতে চায় আপনাকে, কেমন লাগবে আপনার? এমনই ঘটেছে বইটির কাহিনীতে। মাত্র একটি দিনের কাহিনী নিয়ে এমন উপন্যাস আর আছে কিনা মনে করতে পারছি না। অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ডেভ এলিয়ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পজিশনে কাজ করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে। সকাল হওয়ার সাথে সাথে নিঃতেজ নিউইয়র্ক সিটি জেগে উঠছে ধীরে ধীরে। প্রতিদিনের মত আজও ডেভ এলিয়ট সকাল সকাল তার অফিসে পৌছে গেলো। পঞ্চাশ তলা অফিসের ৪৫ তলায় সে বসে।

৭। ‘দ্য টোয়াইলাইট’ লেখক- স্টেফিন মেয়ার। ভিন্ন ধর্মী দুই চরিত্র- বেলা সোয়ান এবং এ্যাডওয়ার্ড কুলিন। বেলা আকর্ষণীয়া, সুন্দরী তম্বী তরুণী,কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড সুদর্শন তরুণ ভ্যাম্পায়ার। এই অসম চরিত্রের দুই তরুণ-তরুণী, একে অপরের ভালোবাসার আবর্তে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। ফরকস্ নামক ছোট্র শহরে দু’জনের ভালোবাসা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা এবং এক রহস্য।

৮। ‘অন দ্যা রোড’ লেখক-জন কেরুয়াক। লেখক জন কেরুয়াকের এই বইটি কৈশর এবং রক্ষণশীল ব্যক্তিদের জন্য নয়। অথবা কে জানে বইটি পড়ার পর হয়তো আপনিও এক জায়গায় আর থিতু হয়ে থাকতে চাইবেন না! অথবা দূর পাল্লার রাস্তায় ইশারা করে লিফট চাওয়ার ব্যাপারটাও পেয়ে বসতে পারে! বইটির বৈশিষ্ট্য মূলত কেরুয়াক এবং তার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী লেখক বন্ধুদের নিয়ে আমেরিকায় ছোট ছোট কিছু ভ্রমণ। আত্মজীবনী নির্ভর এই বইটিতে দুইজন বিবরণ দাতার পরিচয় পাওয়া যায়। সমস্ত পথে গান, কবিতা এবং ড্রাগের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও ডিন মরিয়ার্টির জীবন এবং নারীদের প্রতি লালসা গল্পে একটি অসাধারণ গতি তৈরি করে।

৯। ‘ম্যাডাম বোভারি’ লেখক- গুস্তাভ ফ্লবার্ট। একজন চিকিৎসক নারীর জীবনের নানা বর্ণিল দিকগুলোর অসাধারণ উপস্থাপন উপন্যাসটিকে হৃদয়ছোঁয়া করেছে পাঠকদের কাছে। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের আড়ালে একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজে নতুন করে স্বপ্নবোনা এবং সব প্রতিকূলতাকে উপড়ে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার গল্প উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে পাঠকদের প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়ে যাওয়ার পেছনের আসল শক্তি।

১০। ‘জোনাথন লিভিংস্টোন সিগাল’ লেখক- রিচার্ড বাখ। দ্রুতগতিতে উড়ে চলা একটি গাঙচিলকে নিয়ে লেখা বাখের ১০ হাজার শব্দের এই কাহিনী প্রকাশকের কাছে এতটাই অলাভজনক মনে হয়েছে যে ১৮ জন প্রকাশক এটি ছাপার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারপরেই ম্যাকমিলান বইটি ছাপতে রাজি হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকা বিক্রি ১৯৭২ সালে মাসের সবচেয়ে বিক্রীত বইয়ের সম্মান এনে দেয় তাকে। এভন বইটির পেপারব্যাক সংস্করণ বিক্রি করে ১০ লাখ। ১৯৭৫ সাল পর্য্ন্ত এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় ৭০ লাখ কপির বেশি।

Alfarabi Fairose এর মতে বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায় নাকি যায়না:

বই পড়ে বুদ্ধিমান হওয়া যায় কিনা জানি না, তবে বই অন্য ভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে। সব থেকে বড় কথা, বই পড়লে নিজেকে বুঝতে শিখা যায়।

বই পড়লে আপনি নিজের মধ্যে কিছু না কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেনই।

খাদিজা তুল কোবরা এর মতে বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায় নাকি যায়না:

জ্ঞান আর বুদ্ধির মধ্যে পার্থক্য আছে, জ্ঞান হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে সমকাল্য ধারনা রাখা। আর কোনো কিছু সমস্যা সমাধানের যে মস্তিষ্কের কাজ, তা বুদ্ধি। এখন বই পড়লে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন আর তখন যদি আপনি কোনো সমস্যায় পড়েন এবং বইয়ের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তা সমাধান করতে পারবেন। আর যদি লাইফ হ্যাকস বিষয়ক বই হয় তবে তো কথা নেই।

Bappa Bar এর মতে বই পড়ে কি সত্যিই বুদ্ধিমান হওয়া যায় নাকি যায়না:

বই আপনাকে জ্ঞান দেয়। তবে এটা আপনাকে বুদ্ধিমান করে তুলতে পারে না।একমাত্র আপনার অভিজ্ঞতাই আপনাকে বুদ্ধিমান করে তুলতে পারে।