0

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ। এইচএসসি ২০২১ ভূগোল তৃতীয় সপ্তাহের এসাইনমেন্ট সমাধান।

এইচএসসি ভূগোল তৃতীয় সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২১

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ

আসাইনমেন্টঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ

জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান

জনসংখ্যার পরিবর্তন বলতে কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার আকারগত পরিবর্তনকে বুঝানো হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন পযলোচনার মাধ্যমে জনমিতিক ভারস্যম্য নিরীক্ষণ করা যায়। এতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রগণ ও বাস্তবায়ন সহজ হয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের মুখ্য নিয়ামক হলো জন্ম, মৃত্যু এবং অভিগমন। জন্ম ও মৃত্যুহার পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি যথাক্রমে স্থুল জন্ম এবং স্থুল মৃত্যুহার।জনসংখ্যার পরিবর্তন নির্ভর করে জন্ন ও অভিগমনের ফলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং মৃত্যু ও অভিগমনের ফলে জনসংখ্যার হ্রাসমূলক সংখ্যাত্নক পার্থক্যের উপর। জনসংখ্যা আকার প্রতিনিয়ত পরিবর্তত হচ্ছে।সাধারণত জনসংখ্যা পরিবর্তনের তিনটি নিয়ামক রয়েছে। এগুলো হলো ক.জন্মহার খ.মৃত্যুহার এবং গ. অভিবাসন।

ক.জন্মহার(Birth Rate): জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হলো জন্মহার ।মানুষের মরণশীলতার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা সন্তান জন্মের মধ্যমে পূরণ হয়। কোনো নির্দিষ্ট একটি বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে জন্মহার বলে। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়স পযন্ত নারীদের প্রয়জন ক্ষমতা থাকে। এটি নির্ণয়করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

সাধারণ জন্মহার=

তবে প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থুল জন্মহার বা Crude Birth Rate (CBR)। এ পদ্ধতিতে কোনো বছরে জন্মিত সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মিত সন্তান সংখ্যা জানা থাকা প্রয়োজন। তবে প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থুল জন্মহার বা (Crude Birth Rate)।এ পদ্ধতিতে কোনো বছরে জন্মিত সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন দিয়ে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মিত সন্তান সংখ্যা জানা থাকা প্রয়োজন। স্থুল জন্মহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

স্থল জন্মহার=

খ. মৃত্যুহার (Death Rate): মরণশীলতাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। কিন্তু জন্মহার অপেক্ষা মৃত্যুহার কম হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর মরণশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থুল মৃত্যুহার বা Crude Birth Rate(CBR)।নির্দিষ্ট কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে স্থুল মৃত্যুহার পাওয়া যায়। স্থুল  মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে মৃতের সংখ্যা জানা থাকা প্রয়োজন। স্থুল মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

স্থুল মৃত্যুহার=

গ. অভিগমন (Migration):স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য উৎসস্থল থেকে গন্তব্যস্থলে যাওয়াকে অভিগমন বলে।বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় জনসংখ্যা পরিবর্তনে অভিগমনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোনো দেশ বা অঞ্চল থেকে ভ্যাপকহারে লোক গমন আগমন করলে জনসংখ্যা পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে যখন একই দেশের অভ্যন্তরে পরিবর্তন হয়। আবার যখন একদেশ থেকে অন্যদেশ গমন করে তখন আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে জনসংখ্যা পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বহির্গমনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং বাহরাগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।সাধারণত অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে উন্নত দেশসমূহ অভিগমনের প্রবণতা দেখা যায়।বর্তমানে ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অভিগমন অত্যস্তসহজ হয়েছে।

অভিগমন ও প্রকারভেদঃ আমাদের চরপাশের অসংখ্য মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থানে, একদেশ থেকে অন্যদেশ গমন করছে।যেমন-কর্মসূত্রে একস্থান থেকে অন্যস্থান গমন, জীবিকানির্বাহের জন্য গমন,ব্যাবসা,ব্যণিজ্যের জন্য গমন প্রভৃতি।মানুষের এই গমন কখনো স্থায়ী আবার কখনোবা অস্থায়ী হয়ে থাকে। এ সকল যাওয়া – আসার ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষ নিজেরআবাসস্থল পরবির্তন করে অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে বসবাস করে। মানুষের এরূপ স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাসের পরিবর্তনই হলো অভিগমন।জাতিসংঘের মতে ,এক বা একাধিক বছরের জন্য বাসস্থানের পরিবর্তনকে অভিগমন বলে। Brain Goodall এর মতে,‘‘Migration is the permanent or semi permanent change of a person’s place of residence’’ E.S. Lee অভিগমন সম্পর্কে বলেন, ‘‘বাসস্থানের বা অস্থায়ীপরিবর্তনই হলো অভিগমন।’

অভিগমনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. প্রকৃত অনুযায়ী অভিগমন এবং খ. স্থানভেদে অভিগমন।

ক. প্রকৃত অনুযায়ী অভিগমনঃ অনেক সময় মানুষ নিজের ইচ্ছায় একস্থান থেকে অন্যস্থন গমন করে থাকে। আবার অনেক সময় নিজ বাসস্থানত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই এ ধরনের অভিগমনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঅবাধ অভিগমন এবং বলপূর্বক অভিগমন।

খ.স্থানভেদে অভিগমনঃ স্থানভেদে অভিগমনকে প্রধনত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যথা- অন্তরাষ্ট্রীয় অভিগমন এবং আন্তর্জাতিক অভিগমন।

১. অন্তরাষ্ট্রীয় অভিগমন (Inter-state Migration): অন্তরাষ্ট্রীয় অর্থ্যৎ একটি রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি যখন আবাসস্থান পরিবর্তন করে তখন তাকে অন্তরাষ্ট্রীয় অভিগমন বল।ে এ ধরণের অভিগমন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। যেমন- ঠাকুরগাঁও থেকে কেউ যদি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এসে বসবাস করে তখন তাকে অন্তরাষ্ট্রীয় অভিগমন বলে।

২.আন্তর্জাতিক অভিগমন (International Migration): কোনো দেশের মানুষ যখন নিজ দেশের ভৌগলিক মীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করে তখন তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে।অর্থ্যৎ আন্র্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভৌগলিক সীমানা অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলেই আন্তর্জাতিক অভিগমন করা যায় না। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অীভগমনের উৎস এবং গন্তব্যহল উভয়ের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক অভিগড়মন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ,চীন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র ও অঞ্চলের মধ্যে।

অভিগমনের কারণঃ মানুষ সাধারণত প্রয়োজনের তাগিদেনতুবা বাধ্য হয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। আদিকাল থেকেই মানুষের এই গমন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তখনকার দিনে মানুস খাবার ও নিরাপত্তর প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াতো। কালক্রমে মানুষের চাহিদার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিগমনের কারণও বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে। অভিগমন প্রক্রিয়ায় একদিকে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান হিসাবে গন্তব্যস্থলের সুযোগ-সুবিধা, অর্থনৈতিক সম্ভবনা ইত্যাদি আকর্ষণ করে।

১. অর্থনৈতিকঃ মানুষ তার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য একস্থান থেকে অন্যস্থান গমন করে থাখে। অর্থের প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরে অথবা দেশের বাইরেও অভিগমন করতে পারে। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ বা অঞ্চলে মানুষ অধিক গমন করে থাকে।

২. জীবকিার সন্ধানঃ জীবিকার সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থান ছুটে চলেছে। যেমন-বাংলাদেশেরঅভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর প্রভৃতি শহরে ঝীবিকার সন্ধানে মানুষ ছুটছে। আবার আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,মালেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জীবিকার সন্ধানে অভিগমন করছে।

৩. চাকুরিঃ সরকারি- বেসরকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত লোকজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে যা অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ।বর্তমান বহুমুখী চকুরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার এটি অভিগমনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়নঃ গ্রামের তুলনায় শহরে,ছোট শহরের তুলনায় বড় শহরে, অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে জীবনযাত্রার মান ভালো হওয়ায় মানুষ এ সকল স্থানের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চেষ্টা করে।

৫. বিশ্বায়নঃ অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ বিশ্বয়ান।বিশ্বায়নের ফলে মানুষের কাছে সবকিছুই সহজ হয়েছে। মার্শাল ম্যাক লুহান পৃথিবীকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

৬. নগরায়ন ও শিল্পায়নঃ নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেলে গ্রিামীণ এলাকা থেকে মানুষ নগরে এসে বসবাস শুরু করে। সাধরণত সুযোগ-সুবিধা অধিক থাকায় মানুষ নগরমুখী হয়ে থাকে। যা নগর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। নগর এলাকায় ব্যবসা-ব্যণিজ্য, শিল্প-কারখানা,অফিস-আদালত প্রর্তির আধিক্য থাকায় তা সহজেই মানুষকে অভিগমনে আকৃষ্ট করে থাকে। নগর এলাকায় শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রর আশেপাশে মানুষের ঘনত্ব বেশি হয়ে থাকে এবং শ্রমজীবি মানুষের একটি বড় অংশ বস্তিতে নিম্নতর জীবনযাপন করে।

অভিগমনের প্রভাবঃ অভিগমনের ফলে আর্থ-০সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধি প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । নিম্নে অভিগমনের উল্লেখযোগ্য প্রভাবসমূহ বর্ণনা করা হলো।

১. জনসংখ্যার পরিবর্তনঃ অভিগমনে উৎস ও গন্তব্যস্থলের জনসংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এর ফলে যত লোক উৎসস্থল ত্যাগ করে তত সংখ্যাক লোক গন্তব্যস্থল যুক্ত হয়। এতে উৎসস্থলে লোক কমে গিয়ে গন্তব্যস্থলে বৃদ্ধি পায় । যেমন- বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোক রাজধানী ঢাকার দিকে গমন করছে এবং ধারণ ক্ষমতায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা বহন করছে।

২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনঃ সাধারণত কর্মের সন্ধানে মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে। গন্তব্যসস্থলে কোনো ধরণের কর্মই হোক না কেনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এতে অভিগমনকারী জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়। কবে বস্তি এলাকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের জীবনযাত্রার মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে অভিগমনকারী পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয় এবং অভিবাসীদের  প্রেরিত রেমিট্যাস্নেদেশের অর্থনেতিক ভিত মজবুত হয়।

৩. শহর বেকারত্ব বৃদ্ধিঃ যেসব শহরে অধিক হারে অভিগমনকারী আগমন করে সেসব শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।কারণ অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।

৪. অর্থনেতিক গতিশীলতাঃ অভিগমনের ফলে অভিগমনকারীর পরিবারে অর্থনেতিক গতিশীলতা দেখা যায়। যেমন- কোনো ব্যক্তি গ্রাম থেকে শহরে গমন করলেশহর থেকে গ্রামে অর্থ পেরণ অথবা বিদেশে অভিগমন কররে দেশে বসবাসরত পরিবারের জন্য অর্থ প্রেরণ করে। এতে গ্রামীণ বা শহরে পরিবারটি  অর্থনেতিকভাবে গতিশীল হয়।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্টঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত অনুযায়ী ১৬ কোটি ৫৭ লাখ । এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটার প্রায় ১১১৬ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট বাদে) এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০-২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৬%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ ভছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি। বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩ টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান । পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের ইপজাতি গুলো মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য । দেশের ৯৮% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্টভাষা। সরকারী কাজ কর্মে ইংরেজিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ১৯৮৭ সাল হতে কেবল বৈদেশিক যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কর্মকান্ডে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের জনগোষ্টির প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (৯০.৪%)। এরপরেই রয়েছে হিন্দু ধর্শ (৮.৫%), বৌদ্ধ (০.৬%) , খ্রীষ্টান (০.৩%) এবং অন্যন্য(০.১%)। মোট জনগষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৬% গ্রামাঞ্চরের অধিবাসী। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক দৈনিক  মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)। ২০০৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষারতার হার প্রায় ৪১% । উনিসেফের ২০০৪ সালের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষারতার হার ৫০% এবং নারীদের মধ্যে ৩১%।

জনমিতিক ট্রানজিশন মডেল ও বাংলাদেশঃ জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে । উনানয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে এদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের সাথে জনসংখ্যার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের আলোকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ জনসংখ্যা উত্তরণের কোন পযায়ে রয়েছে তা স্পষ্ট বুঝা যায়। সারণি-তে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও এর বৃদ্ধির হার দেখানো হলো।

সাল

জনসংখ্যার মিলিয়ন

জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার (%)

১৯১১

৩১.৬

০.৮৭

১৯২১

৩৩.২

০.৬০

১৯৩১

৩৫.৬

০.৭৪

১৯৪১

৪২.০

১.৭০

১৯৫১

৪৪.২

০.৫০

১৯৬১

৫৫.২

২.২৬

১৯৭১

৭৬.৪

২.৪৮

১৯৮১

৮৯.৯

২.৩৩

১৯৯১

১১১.৫

২.১৭

২০০১

১৩০.৫

১.৪৮

২০১১

১৪৪.১

১.৪৭

২০১৬

১৬১.৭

১.৩৭

সারণি পযলোচনা করলে দেখাযায় যে , ১৯১১ সালে থেকে ১৯৫১ সাল পযন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ছিল প্রথম পযায়ের। এ সময় জন্মও মৃত্যুহার উচ্চছিল বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম ছিল। ১৯৫১ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পযন্ত  জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি থাকায় মোট জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪৪.২ মিলিয়ন যা ১৯৯১ সালে দ্বিগুণের বেশি হয়ে  দাঁড়িয়েছে ১১১.৫ মিলিয়ন। বিশ শতকের ৬০ থেকে ৯০ এক দশকে বাংলাদেমের চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমাম্বয়ে উন্নত হতে থাকে । এসময় মৃত্যুহার হ্রাস পেতে থাকলেও সে তুলনায় জন্মহার হ্রাস পায়নি। ফলে এ সময়ে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রামান্বয়ে কমতে থাকে যা ২০১১ সালে ১.৪৭% এ দাঁড়ায়। এ সময় জন্ম ও মৃত্যুহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশ জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের দ্বিতীয় পযায়েরশেষ প্রান্তে এবং তৃতীয় পযায়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ দ্রুত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। শিল্পক্ষেত্রেও অগ্রগতি লাভ করছে এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা ক্ষেত্র্রও অনেক দূর এগিয়েছে মৃত্যুহার কমছে। মানুষের মধ্যে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা শুরু হয়েছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে। এতে জন্ম ও মৃত্যুহার মুখী হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুতই জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের তৃতীয় পযায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।

Get HSC Geography Assignment Answer