পােশাকের যত্ন ও সংরক্ষণ
পাঠ ১- পোশাকের যত্ন
সভ্য সমাজে আমরা সবাই পোশাক পরিধান করি। কিন্তু সঠিক উপায়ে সবাই পােশাকের যত্ন নিতে পারে না। তােমরা কি নিজেদের পােশাকের যত্ন নাও? কিভাবে পােশাকের যত্ন নেওয়া উচিত বলে তুমি মনে কর?
পােশাক পরিধানে ময়লা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ময়লা পােশাকটি সঠিক নিয়মে ধুয়ে, যথাযথ উপায়ে ভঁজ করে, নির্দিষ্ট জায়গায় তুলে রাখাই হচ্ছে পােশাকের যত্ন। আবার সব সময় যে পােশাক পরিধান করলেই ময়লা হবে বা ধুতে হবে, এ ধারণা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারের পর অযথা ফেলে না রেখে যথাযথ উপায়ে ভাঁজ করে, নির্দিষ্ট জায়গায় তুলে রাখতে হবে। ব্যবহার করার ফলে যদি পােশাকটি ছিড়ে যায় বা পােশাকটিতে যদি দাগ লেগে যায় তাহলে সেই ত্রুটি দূর করাও পােশাকের যত্নের অন্তর্ভুক্ত হবে।
পােশাক-পরিচ্ছদ কতটুকু সুন্দর দেখাবে এবং কতদিন টিকে থাকবে তা তােমার উপরই নির্ভর করবে। তুমি যদি তােমার পােশাক অযত্নে রাখ, তাহলে অনেক সময় দামি পােশাকও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। পােশাকের যত্নকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন
১. পোশাকের দৈনিক যত্ন প্রতিদিন পােশাকের যে যত্ন নিতে হয় ছাই হচ্ছে পােশাকের দৈনিক যত্ন। তােমরা প্রতিদিন যে পােশাক পরিধান কর তা গােসলের সময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে এবং বাইরের ব্যবহৃত পােশাকগুলাে দেওয়ার প্রয়ােজন না থাকলে রােদে শুকিয়ে যথাযথ স্থানে তুলে রাখতে পার। নতুবা প্রয়ােজনের সময় হাতের কাছে পাবে না।
২. পােশাকের সাপ্তাহিক যত্ন- সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে বােতাম লাগানাের প্রয়ােজন থাকলে বােম লাগাবে, | পােশাক ঘেঁড়া থাকলে মেরামত করবে এবং নিজের পােশাক নিজে ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখবে। জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি এই দিনেই পরিষ্কার করতে পার। পােশাকের সাপ্তাহিক যত্ন সংক্রান্ত কাজের সময় বিনােদনের কোনাে ব্যবস্থা রাখলে ভালাে হয়। যেমন- গান শুনতে শুনতে এ কাজগুলাে করলে কাজে ক্লান্তি আসবে না। পােশাকের সাপ্তাহিক যত্ন নিলে পরবর্তী সপ্তাহের পােলাকের জন্য তােমার কোনাে চিন্তা থাকবে না।
৩. মৌসুমি যত্ন আমাদের দেশ ষড় ঋতুর দেশ হলেও তিনটি ঋতুতে পােশাকের যে যত্ন নিতে হয় তাকেই | মৌসুমি যত্ন বলে। ভােমার পােশাকের মৌসুমি যত্ন তুমি নিজেই নিতে পারবে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মের শেষে পাতলা
সুতির পােশকগুলাে ধুয়ে ইস্ত্রি করে নির্ধারিত জায়গায় তুলে রাখবে। বর্ষার শেষে কৃত্রিম তন্তুর পােশাকগুলাে ধুয়ে যথাযথ জায়গায় ভাজ করে রাখলেই হয়, ইস্ত্রি কার প্রয়ােজন হয় না। অন্যদিকে শীতের শেষে পশমি সােয়টার, জ্যাকেট, মােজা, মাফলার, টুপি ইত্যাদি পােশাক ধুয়ে অথবা দেওয়ার প্রয়ােজন না থাকলে রােদে শুকিয়ে আলগা ময়লা অপসারণ করে ভাজ করে উঠিয়ে রাখতে হয়। এতে করে পরবর্তী বছর পুনরায় নতুন করে পােশাক কিনতে হয় না এবং প্রয়ােজনের সময় সব কিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়।
পাঠ ২- পােশাক সংরক্ষণ
পূর্বের পাঠে তােমরা পােশাকের যত্নের প্রয়ােজনীয়তা ও যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনেছ। পােশাকের যত্নের অন্তর্ভুক্ত আরও একটি বিষয় হচ্ছে পােশাক সংরক্ষণ। অব্যবহৃত জামা কাপড় উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখলে পােকামাকড়, ধুলাবালি ও জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু পােশাক একটি ব্যয়বহুল সামগ্রী, তাই যথাযথভাবে এগুলাে সংরক্ষণ না করলে পােশাকের আয়ু কমে যায় এবং অর্থেরও অপচয় ঘটে। তাই পােশাক যেন সুন্দর ও পরিপাটি রাখা যায় সেজন্য তােমাকে নিচের বিষয়গুলাের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে
১. পােশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার করে ধােওয়া ও ভালােভাবে শুকানাের পর সংরক্ষণ করতে হবে। দেওয়ার সময় পােশাকটি কোন তন্তুর তৈরি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একেক তন্তুর বস্ত্র পােওয়ার পদ্ধতি একেক রকম। যেমন
ক) সুতি ও লিনেন বন্ত্রের পােশাক একসাথে থােওয়া যেতে পারে। পরিষ্কার করার জন্য সাবান, সােড়া, রিঠার পানি, ক্লোরিন, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। উন্নতমানের সুতি, লিনেন বস্ত্রের পােশাকের ক্ষেত্রে মৃদু ঔড়া সাবান ব্যবহার করতে হবে। সাদা কাপড়কে আরাে ধবধবে করার জন্য নীল দেওয়া হয়। প্রয়ােজন হলে এরূপ বস্ত্রে মাড় দেওয়া যায়। এ ধরনের বস্ত্রে গরম পানি ব্যবহার করলেও ক্ষতি নেই। রােদে শুকালে ভালাে হয়। তবে রঙিন বস্ত্র ছায়ায় শুকানাে উচিত।
খ) রেশমি পােশাক হালকা গরম পানির সাথে মৃদু সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুতে হয়। এরূপ বস্ত্রাদির পােশাক খুব চাপ দিয়ে ধােওয়া উচিত না। আলতােভাবে ধুয়ে ছায়ায় শুকাতে দিতে হয়। পশমি বস্ত্রেও হালকা গরম পানির সাথে মৃদু সাবান ব্যবহার করতে হয়। তবে কানাের সময় হ্যাঙ্গারে না ঝুলিয়ে সমতলে বিছাতে হয়। নতুবা এদের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাবে। রেশমি ও পশমি বস্ত্রের পােশাক কখনও মােচড় দিয়ে নিংড়ানাে যাবে না।
২. সুতি ও লিনেন বাদির পােশাক দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে হলে মাড় দিবে না, এতে করে পােকামাকড়ের উন্দ্র হতে পারে।
৩. সিল্ক কাপড়ের পােশাক ধুয়ে ইস্ত্রি করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। ইস্ত্রি করার সময় তােমাকে
বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। যেমন
ক) সুতি ও লিনেন বাদির পােশাক হালকা ভেজা থাকতে ইস্ত্রি করতে হয়। কাপড়টি যদি শুকিয়ে যায় তাহলে পানির ছিটা দিয়ে তন্তু নরম করে নিতে হয়।
খ) রেশমি-পশমি বন্ত্রের উপর পাতলা একটি ভেজা কাপড় রেখে হালকা চাপ ও তাপে ইন্ত্রি করতে হবে।
গ) যে কোনাে পােশাকই ইস্ত্রি করার সময় তােমাদের ভাজের কৌশলের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ হাতার ভঁজ বা পােশাকের চূড়ান্ত ভঁজ যদি সঠিক না হয় তাহলে সম্পূর্ণ পােশাকটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
৪. পশমি বন্ত্রের পােশাক দেওয়ার প্রয়ােজন না থাকলে রােদে শুকিয়ে ভাঁজ করে রাখতে হয়।
৫. পােশাক সংরক্ষণের স্থানটিতে আলাে-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্ধকার ও সঁতসেঁতে স্থানে রাখলে পােকামাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. সংরক্ষণের আগে সংরক্ষণের স্থানটি ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করে কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করে নিলে ভালাে
৭, দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে হলে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে ন্যাপথলিন, কালিজিরা, মথবল, কনাে নিমপাতা ইত্যাদি দিতে হবে।
৮, বর্ষা ঋতুর আগে ও পরে সংরক্ষিত কাপড়গুলাে রােদে ভালাে করে মেলে শুকিয়ে নিলে অনেকদিন যাবত কাপড় ভালাে থাকে।