0

সূরা বাকারার ১-৩ আয়াতের অর্থ, শিক্ষা ও মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য। এইচএসসি ইসলাম শিক্ষা ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ সমাধান।

সূরা বাকারার ১-৩ আয়াতের অর্থ, শিক্ষা ও মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য

অ্যাসাইনমেন্ট: সূরা বাকারার ১-৩ আয়াতের অর্থ, শিক্ষা ও মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য।

এইচএসসি ইসলাম শিক্ষা ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর

সূরা আল বাকারা থেকে ৩ নং আয়াতের অনুবাদ

১. আলিফ লাল মীম।

২. এটা সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী আল্লাহ ভীরুদের জন্য।

৩.যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে ও সালাত কায়েম করে এবং তাদের আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর

রাস্তায়) ব্যয় করে।

৩ নং আয়াতের শিক্ষা

 আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুত্তাকীদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন তারাই মুত্তাকী যারা গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি (আল্লাহ) যে ধনসম্পদ তাদের দান করেছি, তা থেকে সৎ পথে খরচ করে। অদৃশ্য বা গায়েব বলতে সাধারণত মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধিতে যে সমস্ত বিষয় বোধগম্য হয় না,সেগুলোই বুঝানো হয়েছে। অদৃশ্য বিষয়াবলির মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম, আরশ, কুরসী, লাওহ্, কলম, কিয়ামত, পুলসিরাত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এ সকল গায়েবের ওপর বিশ্বাস করা ও ঈমানআনা মুত্তাকীদের প্রথম বৈশিষ্ট্য।

সালাত হল ঈমানের পর আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত। ঈমান এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী ইবাদাত হল এই সালাত। হাদীস শরীফে আছে, সালাত হল দীনের খুঁটি বা স্তম্ভ। যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করল সে যেন গোটা দীনকেই কায়েম করল, আর যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করল সে যেন গোটা দীনকেই ধ্বংস করে ফেলল। অতএব সালাত কায়েমের মাধ্যমে কুরআন থেকে যারা হিদায়াত চায় তারা পায়। আর যারা চায় না তারা পায় না।

আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা থেকে সৎপথে ব্যয় করা হল মুত্তাকীদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বা গুণ। এ আয়াত দ্বারা যাকাত দেওয়াকে বাধ্যতামূলক করা হলেও এখানে শুধু যাকাতের কথাই বলা হয়নি বরং ধন-সম্পদসহ মানব জাতিকে আল্লাহ অন্য যত কিছু দান করেছেন তার সবই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। মুত্তাকী হিসেবে আল্লাহর নিকট পরিগণিত হতে হলে আমাদেরকেও এ সকল গুণাবলি অর্জন করতে হবে।

মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য

মুত্তাকী ব্যক্তির প্রথম পরিচয় হলো তারা গায়ব বা অদৃশ্য বিষয়সমূহে ঈমান পোষণ করে। আর গায়ব হলো এমন বিষয় যা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না। সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায়।

মুত্তাকীর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন- وَيُقِىْمُوْنَ اصٌَلٰوتَঅর্থ: আর তারা সালাত কায়েম করে (সুরা আল-বাকারা: ৩)। মুত্তাকীর সালাত কায়েম করার অর্থ হলো সে নিজে সমস্ত নিয়ম মেনে বিনয়-নম্রতা ও নিষ্ঠার সাথে সালাত আদায় করে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সালাতের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, হারাম, মাকরুহ প্রভৃতি বিধান পালনের মধ্যমে সমাজে নামাজ পতিষ্ঠা করা।

মুত্তাকীর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন- وَمِمٌَا رَزَقْنَهُم يُنفِقُوْنَ

অর্থ: আর তাদের যে জীবিকা দেওয়া হয়েছে, তারা সেখান থেকে ব্যয় করে (সুরা আল-বাকারা: ৩)। মুত্তাকীর ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করার অর্থ হলো তারা জাকাত-সাদাকাহ আদায় করে। মানুষের যেকোনো কল্যাণে নিজেদের সম্পদ ব্যয় অব্যাহত রাখে।

মুক্তাকী আসমানি কিতাব এর সত্যতায় বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ বলেন- “আর যারা আপনার প্রতি যা আমি নাজিল করেছি তার প্রতি ইমান রাখে। যা আপনার পূর্বে নাজিল করেছি তার প্রতিও বিশ্বাস পোষণ করে (সুরা আল-বাকারা: ৪)। এক্ষেত্রে অবশ্য বিশ্বাসের ধরনে পার্থক্য রয়েছে। মুক্তাকীরা রাসুলুল্লাহ (স) এর পূর্বে নাজিলকৃত আসমানি কিতাবগুলো যে আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাজিল হয়েছে সে বিশ্বাস রাখে, কিন্তু এগুলোর অনুসরণ ও অনুশীলন করে না।

মুত্তাকীরা পরকালে সুদৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করে। আল্লাহ বলেন- وَبِا لْاٰ خِرَتِ هُمْ يُوْ قِنُوْن

অর্থ: আর তারাই পরকালে ইয়াকিন বা বিশ্বাস পোষণ করে (সুরা আল-বাকারা: ৪)। ইয়াকিন হলো অত্যন্ত সুদৃঢ় বিশ্বাস। মুত্তাকীরা বিশ্বাস করে- পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী। এখানে মানুষ মাত্র কিছুকাল অবস্থান করবে। পৃথিবীতে তারা মূলত প্রস্তুতি নেবে পরবর্তী জীবনের জন্য। সে জীবন অনন্তকালের।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুত্তাকী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নৈতিক জীবন গঠনে ও নীতি-নৈতিকতা রক্ষায় মুত্তাকীর প্রভাব অনস্বীকার্য। মুত্তাকী সকল সৎগুণের মূল। ইসলামি নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো মুত্তাকী। মুত্তাকী মানুষকে মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিতে উদ্বুদ্ধ করে। হারাম বর্জন করতে এবং হালাল গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগায়। মুত্তাকি ব্যক্তি সদাসর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন, শোনেন, জানেন, এ বিশ্বাস পোষণ করেন। ফলে তিনি কোনোরূপ অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করতে পারেন না। কোনোরূপ অশ্লীল ও অশালীন কথা, কাজ ও চিন্তাভাবনা করতে পারেন না। কেননা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, পাপ যত গোপনেই করা হোক না কেন, আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন ও জানেন। কোনোভাবেই আল্লাহ তায়ালাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে মুত্তাকীবান ব্যক্তি সকল কাজেই নীতি-নৈতিকতা অবলম্বন করেন এবং অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা পরিহার করেন।

মুত্তাকী মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং সচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে। সকল সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে। ফলে মুত্তাকিগণ সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত হন। অন্যদিকে যার মধ্যে মুত্তাকী নেই, সে নিষ্ঠাবান ও সৎকর্মশীল হতে পারে না। সে নানা অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত থাকে। নৈতিক ও মানবিক আদর্শের পরোয়া করে না। ফলে তার দ্বারা সমাজে অনৈতিকতা ও অপরাধের প্রসার ঘটে। বস্তুত মুত্তাকী হলো মহৎ চারিত্রিক গুণ। নৈতিক চরিত্র গঠনে এর কোনো বিকল্প নেই।

মুত্তাকী হওয়ার পথে বাধা সমূহ উত্তরণের উপায়

মুত্তাকীহীন মানুষ সব মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশে ডুবে থাকে। প্রবৃত্তির খেয়ালখুশি ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করে থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করে বসে। মুত্তাকীহীন মানুষ ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচণা, প্রতারণা, প্রলোভন, পদস্খলন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো চলে৷ কাউকে পরোয়া করে না। পরিবার ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজের কোনো নিয়মনীতি মানে না।

এসকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবসময় আল্লাহর কথা স্মরণ করতে হবে। যখনই কোনো খারাপ চিন্তা মাথায় আসবে সাথে তওবা করা। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা সবসময় আমাদের দেখছেন এবং তার আজাবের কথা স্মরণ করে পা ফেলেছে হবে। [https://newresultbd.com] মনে রাখতে হবে দুনিয়াতে আমাকে পাঠানো হয়েছে শুধু তার ইবাদত করার জন্য। এই পৃথিবীর কিছুই আমার নয় এমনকি আমার নিজের দেহের মালিকও আমি নিজে নই, আমি শুধু এর আমানতকারী। তাই নিজের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঠিক ব্যবহার করতে হবে যাতে কোনো পাপ কাজ না হয়। মুত্তাকী অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে কারণ মুত্তাকী হলো আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। মনে খারাপ চিন্তা ভাবনা আসলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে এবং এ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে।

মোটকথা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আজাবের কথা স্মরণ করতে হবে। তাহলে একজন মুত্তাকীহীন মানুষ আল্লাহর ভয় অর্থাৎ মুত্তাকী অর্জন করতে পারবে।