নতুন কারিকুলাম বাতিলের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন অভিভাবকরা। আগস্ট মাসের মধ্যেই এ কারিকুলাম বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা। একই সঙ্গে অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে একজন দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে।
নতুন কারিকুলাম বাতিলের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন অভিভাবকরা। আগস্ট মাসের মধ্যেই এ কারিকুলাম বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা। একই সঙ্গে অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে একজন দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আগস্টেই নতুন করে পাঠ্যবই ছাপিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে কোনো অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষাবিদদের মতামত নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচার পদ্ধতিতে এটা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা ধ্বংসকারী এ কারিকুলাম বাতিল, পরবর্তী সময়ে সংশোধনের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন করেছি, কিন্তু দুই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও নওফেল তা মানেননি।
দাতা সংস্থার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের এই কারিকুলাম অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়ে অভিভাবকরা বলেন, আওয়ামী লীগের শিক্ষা ধ্বংসকারী কারিকুলাম মানি না। সবার মতামত নিয়ে দ্রুত এই কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হবে। না হয় ছাত্র-জনতা যেভাবে স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করেছে, প্রয়োজনে আবার আওয়ামী কারিকুরাম বাতিলের জন্য সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মাঠে নামবেন।
একজন অভিভাবক বলেন, এনসিটিবির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের একজন এমপির চাচা। বিতর্কিত এই কারিকুলাম প্রণয়নের তিনি মূল হোতা। তার নেতৃত্বে বিতর্কিত এই কারিকুলাম জাতির ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার শেষ সময় তাকে ফের এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে শুধু এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করে যাওয়ার জন্য। এর আগে তিনি দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কারিকুলাম বাস্তবায়ন করেছেন। তাই অবিলম্বে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে একজন দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত একটি কমিটি গঠন করে কারিকুলাম দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন প্রয়োজনে পুরো কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষা ধ্বংসকারী নতুন কারিকুলাম নিয়ে এতদিন সমালোচনা করলে আওয়ামী লীগ সরকার অভিভাবকদের পুলিশ দিয়ে, জেল-জরিমানা করে হয়রানি করেছে। তার মধ্যেও আমরা প্রতিবাদ করেছি, রাস্তায় থেকেছি। আমাদের অনেক অভিভাবক-শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন। তবুও আমরা মাঠে থেকেছি, আন্দোলন করেছি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সেজন্যই জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছি।
এখন দেশের পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরাও স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ কারিকুলাম বাতিল করবে। এ থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার মতো একটি বিজ্ঞানভিত্তিক যুগোপযোগী কারিকুলাম জাতিকে উপহার দেবে।
এদিকে, আজকের মানববন্ধন থেকে আগস্ট মাসেই নতুন কারিকুলাম বাতিলের ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো : দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ এবং শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবকদের সমন্বয়ে শিক্ষা কারিকুলাম বিষয়ে একটি দাবি বা রূপরেখা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়া।
অভিভাবকদের ৮ দফা দাবি :
১. অবিলম্বে কারিকুলাম-২০২১ সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ববর্তী কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে।
২. প্রাথমিক স্তরে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক এখনো প্রণীত হয়নি। তাই সেগুলো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত সক্রিয় শিখন পদ্ধতি অনুযায়ী নির্মাণ করতে হবে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি অনুযায়ী নয়।
৩. যেহেতু শিক্ষাবর্ষের অর্ধেকের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তাই ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বর্তমান কারিকুলাম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকগুলোই ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলবে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার কথা চিন্তা করে পূর্বতন কারিকুলাম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকগুলো এ মাসের মধ্যে (আগস্ট) মুদ্রণ করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে।
৪. বিগত কারিকুলাম অনুযায়ী প্রণীত মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবক নিজ দায়িত্বে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পুরোনো পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার করলে ও মূল্যায়ন করলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না।
৫. পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করতে হবে এবং বৃত্তির পরিমাণ স্কুল বেতনের সঙ্গে সংগতি রেখে বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত পরিমার্জনা ব্যতীত নতুন করে কোনো কারিকুলাম বা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা যাবে না।
৭. যারা আমাদের সন্তানের শিক্ষাজীবন ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ওপর জুলুম করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৮. ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ প্রক্রিয়া চালুর কথা রয়েছে।
এনএম/কেএ